এই দেশ, এ মাটি যেন আমার মায়েরই সমান। এ দেশের প্রতিটি মায়ের জীবন যেন একই সূত্রে গাঁথা। মা যখন হয়ে ওঠেন এই বাংলার সার্বজনীন মা-
ছেঁড়া কাপড়ের মলিন সাজে
ভরদুপুরের রোদের মাঝে
ঢেঁকির পিছায় রেখে শক্ত দু'পা
ধান ভানে কে বলতে পারো-
এই বাংলাদেশের পল্লীগাঁয়ের মা
এমন মা যে আর নেইতো কারো।।
ঝড় বাদলের শংকা ভুলে
মাটির চুলায় রান্না তুলে
ধূয়ার কালোয় দু'চোখ পুড়িয়ে
খাদ্য জোগায় কে বলতে পারো-
এই ভাটির দেশের পূন্যময়ী মা
এমন স্নেহের বুক নেইতো কারো।।
পৌষ পাবানের মিষ্টি ভোরে
খেঁজুর গুড়ের পায়েস গড়ে
নিজের হাতে খাইয়ে ছেলেকে
সবচে' কে হয় খুশি বলতে পারো-
এই শ্যামল দেশের জন্মময়ী মা
এমন সুখের ধন নেইতো কারো।।
-পল্লী গাঁয়ের মা/১৭.০৩.১৯৮৯
অনেক সময় মা'র কথা চিন্তা করতাম। কৈশোরে কেমন ছিলেন মা? কেমন কেটেছে তাঁর সংসার জীবন? যখন মা জীবিত ছিলেন তখন লিখেছিলাম-
মা আমার, চির-দুঃখিনী মা যে আমার!
যখন কিশোরী ছিলে তুমি মা-বাবার আদরে
ডুব-সাঁতারে পুকুরে ভাসতে যখন- করতে জলের খেলা
কিম্বা গাছে চড়ে পারতে পেয়ারা আঁচলটা ভ'রে
সারা পাড়া চষে বেড়াতে দারুণ দুষ্টুমিপনায়
ঠিক তখনই পেতেছিলে সংসার-
মা আমার, চির-দুঃখিনী মা যে আমার!
কতোটা পেয়েছো সুখ স্বামীর সংসারে?
কখনো বলোনি তুমি কতো ঘানি টেনেছো জীবনে
ঢেঁকির পিছায় রেখে শক্ত দু'পা কতো রাত করেছো প্রভাত
সকলের উদর-ভোজন শেষে কতোদিন জোটেনি আহার
শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ীর মুখকালা উপহাস শুনেছো কতোটাবার
কখনো বলোনি গল্পটি যে তার-
মা আমার, চির-দুঃখিনী মা যে আমার!
নয়-নয়টি সন্তান করেছো মানুষ তুমি
নিজের খাবার খাইয়ে ছেলেকে পাঠিয়েছো স্কুলে
জ্বালতে শিক্ষার আলো ক্ষয়েছে জীবনীশক্তি
জঠরের তাপ শুধু তুমিই করেছো অনুভব
করতে পারোনি ভাগ সংসারে অন্যের সাথে
ছিলো ছেলে-মেয়ে বেশি দায়িত্ব অপার-
মা আমার, চির-দুঃখিনী মা যে আমার!
অনেক হয়েছে বড়ো ছেলে-মেয়ে সকলই তোমার
পেতেছে সংসার তারা ভিন্ন পাতে ভিন্ন সঙ্গী নিয়ে
অথচ তোমার কাছের মানুষ জমিয়েছে পাড়ি
চিরকাল থাকবে তোমার যে জীবনে ও মরণে
রাখেনি কথাটি তার বলেছিলো সেই একদিন
সাথী করে আছো তাই একান্ত আঁধার
মা আমার, চির-দুঃখিনী মা যে আমার!
এ ঘর ও ঘর ঘুরছো তুমি যে আশার প্রদীপ হাতে
একটু নিরালা ছায়া একটু বিশ্রাম দিনান্তের আলো
কী ছেলে কী মেয়ে কেউ জ্বালতে পারেনি তাও
সকলই ঝাপসা লাগে ছানিপড়া চোখেতে তোমার
নিজের জীবন করেছো আঁধার সবার সুখের জন্য
ষাটোর্ধ বয়সী এক মহীয়সী মা তুমি সবার-
মা আমার, চির-দুঃখিনী মা যে আমার!
-চির-দুঃখিনী মা আমার/২১.০৩.২০০৬
মা বেঁচে নেই। জমে আছে তাঁর স্মৃতি। আমার পথচলা, কথা বলা, যাপিত জীবন সবখানেই মায়ের ছোঁয়া। মা বেঁচে আছেন আমার গানে, আমার কবিতায়-
১.
বৃষ্টির পরে ভেজা মাটিতে গন্ধ যেমন লেগে থাকে
তোমার গায়ের গন্ধ মাগো ভরে আছে এই বুকে
আমাকে কাঁদিয়ে কোথায় গেলে মা কোন্ সে অচিনলোকে!।
শেষ দেখাটি করে গেলে মা তোমার প্রিয় সে গ্রামে
ফিরলে না আর দেখতে আমায় এ পোড়া সুখের ধামে
সেই যাওয়া যে শেষ যাওয়া হলো রাখতে পারিনি রুখে।।
তোমার গায়ের গন্ধ মাগো আজো পাই এই ঘরে
যে ঘর তোমার আপন ছিলো ব্যস্ততার শহরে
বলো না তুমি কোথায় থাকো মা আমাকে ভাসিয়ে দুখে।।
২৬.০৫.২০০৮
২.
আমি খুঁজে ফিরি মায়েরই মুখ
গাঁয়ের কুটিরে
মা যে আমার বেঁচে আছে
সবার অন্তরে।।
গরীব-দুঃখী আসতো যদি
আমার মায়ের পাশে
ফিরে যেতে দেখিনিতো
হাত পেতে তার কাছে
মায়ের শোকে তারাও কাঁদে
কতো দুঃখ করে।।
শহর ছেড়ে গ্রামে যদি
যাই বেড়াতে আমি
হারিয়ে তারে এখন বুঝি
মা যে কতো দামী
মায়ের প্রিয় মুখগুলোকে
খুঁজি প্রতি ঘরে।।
০১.০৬.২০০৮
আজ ২৪ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এদিনেই মা চলে গেছেন আমাদের সবাইকে ছেড়ে। পৃথিবীর কোনো বন্ধনই আটকাতে পারেনি তাঁকে!
মন্তব্য
...........................
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খুব ভালো লাগলো মা কে নিয়ে আপনার এই কাব্য উপাখ্যান।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
মা'র জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ।
- আহারে মা...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
......................
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
মার জন্য শ্রদ্ধা !
মায়ের জন্য ভালবাসা আর শ্রদ্ধা।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
যাদের মা বেঁচে আছেন, তারা যদি একবার বুঝতে পারতেন, মা হারানোর বেদনা কী!
কোন মন্তব্য নেই জলিল ভাই ! মা'কে ছেড়ে তেরো নদী আর সমুদ্দুর সাত- এইপারে থাকি, আপনার লেখায় চোখ কেবল ভিজে ভিজে ওঠে !!
---------------------------------------------------------
'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
মায়ের জন্যই আপনি ভালো থাকুন, জলিল ভাই।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন