মা ডাকের বিকল্প কিছু খুঁজে পাইনি আজো। পৃথিবী ঘুরে মা ডাকের বিকল্প অনেক ডাক শোনা যায় বিভিন্ন ভাষাভাষিদের কাছ থেকে। তবে মা ডাক মধুর, মা ডাক চিরন্তন বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে। আমি কোনো সময়ই মাকে আম্মু, আম্মা, আম্মি বা মাম্মী অথবা বাবাকে আব্বু, আব্বা বা আব্বাজান বলে সম্বোধন করতে পারিনি। মা বেঁচে থাকাকালীন দু'জন একসাথে থাকলে একটু ভিন্নতার জন্য শ্বাশুড়ীকে আগে আম্মা বলে ডাকলেও এখন মা বলেই সম্বোধন করি। কারণ আমার মা-বাবা বলতে এখন একমাত্র উনিই জীবিত আছেন। আমার নিজ মা মারা গেছেন গত বছর ২৪, অক্টোবর। সত্যিকারে অক্টোবর মাস আমার খুব কষ্টের মাস। আমার বাবার মৃত্যুদিবসও এই অক্টোবরেরই ৬ তারিখ।
আমার বাবাকে মনে পড়ে সত্যিকারের একজন আদর্শ বাবা হিসেবে। কারণ নিজে তেমন শিক্ষিত না হলেও সব ছেলেমেয়েকে শিক্ষার আলো দেখিয়ে গেছেন উনি। ফলশ্রুতিতে আমরা প্রায় প্রত্যেকটি ভাই-ই শিক্ষিত এবং বেশ ভালো চাকুরীজীবি। বাবার কথা মনে হলেই চোখে ভাসে আমার ছোট্টবেলার কথা, শৈশব, বালক বা কিশোরবেলার মধুর স্মৃতিগুলো। খুব ভালো ছাত্র ছিলাম, খুব দুষ্টুও ছিলাম। লাউ গাছের গোড়া কাটা, পাখির বাসা দেখতে গাছে ওঠা, কবুতরের খোপে কবুতরের ডিম দেখা- আরও কতো কী যে করতাম! বাবা আমার খুব রেগে যেতেন, তাই বাবার মারধোরও খেতাম প্রচুর। তবু বাবাই আমার আদর্শ।
অন্যদিকে মা আমাকে কোনোদিন মারেননি। বাবার বকা, মার খাওয়া থেকে সারাজীবন শুধু সামলিয়ে গেছেন সব ছেলেমেয়েদেরকে। মনে পড়ে খুব ছোট্টবেলার কথা। মার সাথে বাড়ির পাশের নদীতে গোসল করতাম। ক্ষেতের আল ধরে হেঁটে হেঁটে কাঁচা-পাকা ধান দেখতাম। সাঁতার শেখার আগ পর্যন্ত মা-ই আমাকে সাথে নিয়ে গোসলে যেতেন। বর্ষাকালে বাড়ির উঠানে কেঁচোর কিলবিল দেখে ভাত খেতে পারতাম না আমি। শুধু বমি আসতো পেট মুচড়িয়ে। তাই মা আমাকে ঘরের ভেতর শাড়ি দিয়ে পর্দা করে চৌকির উপর ভাত খেতে দিতেন।
মা মারা যাবার আগে গত রোজার মাসে আমার কাছেই ছিলেন। আমার ছোট্ট মেয়েটিকে একটু বেশি আদর করলে মা আমাকে শাসাতেন- ছেলের আদর যেন কমে না যায়। কারণ আমার ছেলেটি তাঁর খুব ভক্ত ছিলো। মা মারা যাবার পর সবচেয়ে বেশি কেঁদেছে আমার ছেলেটিই। গত রোজার আগে মা চলে গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়ি। সেহরী খেয়ে ঘুমানোর পর ঘুমের মধ্যেই মার ব্রেন স্ট্রোক হয়। আর জ্ঞান ফেরেনি তাঁর। উপজেলা থেকে জেলা হাসাপাতাল তারপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল। আর ফেরানো যায়নি তাঁকে। ঈদের ঠিক দুইদিন আগে আমার মা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান পরপারে।
এ বছরও রোজা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। রোজা-ঈদ এলেই মনে পড়বে মা'র কথা। আর বাবাও চলে গেছেন আজ থেকে আট বছর আগে অক্টোবর মাসেই। আমরা সব ভাইবোন হয়তো একত্রিত হবো গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু কখনো আর দেখতে পাবো না মাকে, বাবাকে। নিয়তির বিধান মেনে নিয়ে মা-বাবার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। তাঁদের পূণ্যি আর সবার দোয়াই যেন হয় উনাদের বেহেশতবাসী হবার পথ- এটাই কাম্য এখন।
০১.১০.২০০৭
মন্তব্য
মায়ের বিকল্প কেউই হয়না। লেখা পড়ে মন খারাপ হল আবার বাবা-মায়ের জন্যও মনটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। মহান আল্লাহ সব মা-বাবাদের শান্তিতে রাখুন।
কিছু কিছু লেখায় মন্তব্যের কিছু থাকেনা কেবল খুব নীরবে নিজের ভেতর অনুভব করা ছাড়া ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
গত বছর এসময়টায় আপনার পোস্টের কথা মনে পড়ছে, জলিল ভাই। ভালো থাকবেন।
কেনো এতো মন খারাপ করে দেন?...আপনার বাবা-মাকে অনেক শ্রদ্ধা।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন