বানিয়ে বানিয়ে বলা গল্প -১

শেখ জলিল এর ছবি
লিখেছেন শেখ জলিল (তারিখ: সোম, ১৫/১০/২০০৭ - ৯:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ছেলের বয়স যখন দেড় বছর তখন থেকেই গল্প শোনাতে হতো ওকে। প্রতিদিন নতুন গল্প শোনানো চাট্টিখানি কথা নয়। ভীষণ রকম কসরৎ করতে হতো আমাকে। কখনও কখনও জানা গল্প, কখনও বা বানানো গল্প বলতাম ওকে। ও দারুণ মজা পেতো আমার কাছে গল্প শুনে। দিনের অবসরে বা রাতে ঘুমানোর আগে ছেলে আমার বায়না ধরতো গল্প শোনার। আর আমি প্রতিদিন ভাবতাম- কী নতুন গল্প শোনাবো ওকে! এরকম দু'একটা বানানো গল্প বা জানা-অজানা মিশেল গল্প এখনও সামৃতিতে ধরে রেখেছে আমার ছেলে। এখন আমি সেইসব গল্প শুনি ওর কাছ থেকেই। এরকম দু'একটি বানানো গল্প একটু ঘষামাজা করে শোনাচ্ছি আজ আপনাদের।

গল্প-১: এক্সিডেন্ট

অনীক বাবা-মার খুব আদরের ছেলে, খুব ভালো ছাত্র। ক্লাসে সবসময় প্রথম বা দ্বিতীয় হবেই সে। কিন্তু দুষ্টুমিতেও অনিক ছিলো সবার সেরা। বাবা-মার চোখের আড়াল হলেই এক দৌড়ে চলে যেতো ঘরের বাইরে। অনিকদের বাসা ঢাকা শহরের ব্যস্ত এলাকায়। বাসার সামনেই একটি ছোট্ট সরু রাস্তা। সবসময় রিক্সা বা গাড়ি চলে সে রাস্তায়। তাই অনিকের বাবা-মা একা একা সে রাস্তায় যেতে নিষেধ করে তাকে। কারণ অনিকের বয়স তখন সবেমাত্র পাঁচ বছর।

কিন্তু অনিক বাবা-মার কথা শুনতে চাইতো না। সুযোগ পেলেই রাস্তার ওপারে মজুমদার আঙ্কেলের দোকান বা দর্জি নানুর দোকানে যেতো। চকলেট, মিমি, আইসক্রিম এনে চুপি চুপি খেতো। অনিকের বাবা না করে দিলেও মজুমদার আঙ্কেল তাকে খুব আদর করতেন বলে অনিক চাইলেই সবকিছু দিয়ে দিতেন তিনি। তাই কে শোনে কার কথা? বাবা অফিসে কিংবা মা দুপুরে একটু রেস্ট নিতে গেলেই অনিক চুপি চুপি চলে যেতো দোকানে। আর মজা করে খেতো আইসক্রিম, চকলেট এসব।

এরকম এক দিনের কথা। অনিকের মা দুপুরে খাবার পর একটু শুয়েছে বিছানায়। অনিক ভালো করে দেখলো তার মা এখন ঘুমিয়ে গেছে। চুপি চুপি পা টিপে টিপে উঠে এলো বিছানা থেকে। তারপর গেট খুলেই ভোঁ দৌড়। রাস্তার অপর পারেই তো মজুমদার আঙ্কেলের দোকান। এদিক ওদিক না দেখেই অনিক দিলো এক দৌড়। হঠাৎ এক রিক্সা ওঠে গেলো অনিকের পায়ের উপর। অনিক ছিটকে চিৎকার দিয়ে পড়ে গেলো রাস্তায়। ততণে তার হাত-পা-শরীর কেটে-ছিঁড়ে গেছে। অনিক আর দাঁড়াতে পারছে না। তার মানে অনিকের বাম পা ভেঙে বেঁকে গেছে।

মজুমদার আঙ্কেল দৌড়ে এলো। দর্জি নানু এলো দোকান থেকে বেরিয়ে। রাস্তায় লোকজন জড়ো হয়ে গেলো। সবার চিৎকারে অনিকের মার ঘুম ভেঙে গেলো। গেট খুলে অনিকের অবস্থা দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলো সে। সবাই মিলে ধরাধরি করে মা ও ছেলেকে বাসার ভেতরে নিয়ে এলো। অনিকের বাবাকে ফোন দেয়া হয়েছে। তিনি সরাসরি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসেছেন। অনিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। তার কাটা-ছেঁড়া হাত-পায়ে, শরীরে সেলাই পড়লো। ডাক্তাররা বেশ যতœ করে ড্রেসিং করে দিলো, ইনজেকশন দিলো ব্যথা কামানোর। অনিকের ভাঙা পা এক্স-রে করে প্লাস্টার করে দেয়া হলো। অনিককে যদিও ছেড়ে দেয়া হলো হাসপাতাল থেকে কিন্তু বাসা ছেড়ে আর কোথাও যাওয়া হলো না তার। অর্থাৎ পুরোপুরি রেস্ট, ঘরের বাইরে যেতে মানা।

পুরো তিন সপ্তাহ তাকে শুয়ে-বসে থাকতে হলো। স্কুলও মিস হয়ে গেলো তার। বেশ ক'টি ক্লাস টেস্ট দেওয়া হলো না অনিকের। ক'দিন পরেই অনিকের ফাইনাল পরীক্ষা। অনিক ঠিকমতো পড়ালেখা পারলো না সেবার । তাই সে ক্লাসে তৃতীয় হলো। রেজাল্ট শুনে অনিকের সে কী কান্না! বাবা-মা অবশ্য তাকে কোনো বকাই দিলো না। কিন্তু মনে মনে এক প্রতিজ্ঞা করলো অনিক। সে আর কখনও দুষ্টুমি করবে না। বাবা-মার কথা ছাড়া একা একা আর কখনও বাসার বাইরে যাবে না। কিছু খেতে ইচ্ছে হলে বাবা-মাকে আগেভাগে বলবে। তারপর তারা যাই কিনে দেবে তাই খাবে। না দিলে খাবে না কখনও।

পরের ক্লাসে উঠেছে অনিক। ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেলো। অনিক আবার প্রথম হলো। এখন আগের মতোনই খুব ভালো ছাত্র সে। টিচাররা অনিককে খুব পছন্দ করে। ভালো খেলাধুলাও পারে সে। বাবা-মা অনিককে খুব আদর করে। আর পাড়ার সবাইকে গর্ব করে ভালো ছেলে অনিকের কথা বলে বেড়ায় শুধু।

১০.১০.২০০৭


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

ছেলেবেলায় আমারো গল্প শোনার নেশা ছিল। এক গল্প হাজারবার শুনতেও আপত্তি ছিল না।
কিছু গল্প শুনতে শুনতে এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে গল্পে কিছু বাদ গেলে সেট আমিই ধরিয়ে দিতাম।


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়লাম।
শিরোনাম ইংগিত দিচ্ছে সিরিজ হবে। অপেক্ষায় - - -

বিবাগিনী এর ছবি

মজার তো!

আমারও অমিতের মত দশা হত।পরে মা বিরক্ত হতেন বলে খুব ছোটবেলাতেই নিজেই বই পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম গল্পের লোভে।‌‌

::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।