বানিয়ে বানিয়ে বলা গল্প - ২

শেখ জলিল এর ছবি
লিখেছেন শেখ জলিল (তারিখ: রবি, ২১/১০/২০০৭ - ১২:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ছেলের বয়স যখন দেড় বছর তখন থেকেই গল্প শোনাতে হতো ওকে। প্রতিদিন নতুন গল্প শোনানো চাট্টিখানি কথা নয়। ভীষণ রকম কসরৎ করতে হতো আমাকে। কখনও কখনও জানা গল্প, কখনও বা বানানো গল্প বলতাম ওকে। ও দারুণ মজা পেতো আমার কাছে গল্প শুনে। দিনের অবসরে বা রাতে ঘুমানোর আগে ছেলে আমার বায়না ধরতো গল্প শোনার। আর আমি প্রতিদিন ভাবতাম- কী নতুন গল্প শোনাবো ওকে! এরকম দু'একটা বানানো গল্প বা জানা-অজানা মিশেল গল্প এখনও স্মৃতিতে ধরে রেখেছে আমার ছেলে। এখন আমি সেইসব গল্প শুনি ওর কাছ থেকেই। এরকম দু'একটি বানানো গল্প একটু ঘষামাজা করে শোনাচ্ছি আজ আপনাদের।

গল্প-২: গরিলা মানব / শেখ জলিল

একবার অনেক দূরদেশের একটি প্লেন যাচ্ছিলো আফ্রিকার গহীন জঙ্গলের উপর দিয়ে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির লোকজন ছিলো প্লেনের ভেতর। এক দম্পতির ছোট্ট একটি শিশু সন্তানও ছিলো। হঠাৎ বিকট আওয়াজ। প্লেন ভেঙে খানখান হয়ে লুটিয়ে পড়লো জঙ্গলের উপর। যাত্রীদের সবাই মারা গেলো। কিন্তু বেঁচে গেলো সে শিশুটি। জঙ্গলের একটি গাছের ডালের সাথে জীবন্ত অবস্থায় ঝুলে রইলো ছোট্ট সে ছেলেটি।

জঙ্গলের ভেতর দিয়ে তখন যাচ্ছিলো গরিলাদল। এক মা গরিলা শুনতে পেলো এক শিশুর কান্না। হাজার হলেও মায়ের প্রাণ! প্রাণটা আঁতকে উঠলো তার। একটু এগিয়ে গিয়ে অবাক চোখে দেখলো এক মানব শিশু। ছোট্ট গাছের ডালের সাথে আটকে আছে সে ছেলেটি। আর হাত-পা ছুড়ে কান্না করছে। ছেলেটিকে দেখে খুব মায়া হলো তার। গাছের ডাল থেকে মুক্ত করে কোলে তুলে নিলো তাকে। ছেলেটির পেটে তখন প্রচন্ড ক্ষুধা। মা গরিলার কোলে উঠে দুধ খাওয়ার জন্য আকুপাকু করতে লাগলো সে। অগত্যা মা গরিলা তার নিজের বুকের দুধ মুখে দিতেই ছেলেটি খেতে লাগলো নির্দ্বিধায়। আর একটু পরে সে মা গরিলার কোলে ঘুমিয়ে পড়লো।

এরপর ঘটে গেলো আরেক কান্ড। মা গরিলা তাকে কোলে করে গরিলাদলে ফিরে গেলো। অন্য গরিলারাও খুব খুশি। যেন নতুন এক সন্তান এসেছে তাদের ঘরে। সবাই মানব শিশুটিকে খুব আদর করে। অন্য জীব-জন্তু যেমন- বাঘ, সিংহ, হায়েনা এদের হাত থেকে তারা তাকে সবসময় আগলে রাখে। ধীরে ধীরে মানব শিশুটি বড় হতে থাকলো। সে হয়ে গেলো এক গরিলা মানব। গরিলাদলের সাথে সে সারা বন ঘোরে। গরিলাদের মতো দু'একটা শব্দ করতে শিখলো সে। এক মানব সন্তানের ভাষা হয়ে গেলো বনের গরিলাদের ভাষা। গরিলা মানবের কিশোর বয়স এলো। গরিলাদের মতো আহার সংগ্রহ, শিকার ধরতে শিখলো সে। তার গায়ের রঙও হয়ে গেলো অনেকটা গরিলাদের মতোই। বেশ আরামে কেটে গেলো আরও অনেক বছর।

গরিলা মানব যখন যুবক তখন ঘটে গেলো এক কান্ড। একদিন বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো একদল সুসভ্য মানুষ। যারা বনের প্রাণীদের উন্নতির জন্য কাজ করছিলো বনে বনে। সে সভ্য মানুষদের দলে ছিলো একটি সুন্দর মেয়ে। সেও হাঁটছিলো তাদের সাথে সাথে। দলের অন্য সদস্য পুরুষদের চেয়ে তাকে একটু আলাদা মনে হলো গরিলা মানবের। বনের আড়াল থেকে খুব খেয়াল করে তাকে দেখছিলো সে। মেয়েটি একটু পিছনে পড়ায় হঠাৎ খুব কাছে এসে তাকে দেখতে লাগলো সে খুটিয়ে খুটিয়ে। আর যায় কোথায়? মেয়েটি তাকে দেখতে পেয়ে খুব ভয় পেয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে মারলো এক বিকট চিৎকার। দলের অন্য পুরুষ সদস্যগণ ততণে হাজির হলো সেখানে। কিন্তু তারা প্রাণীদের কল্যাণে জঙ্গলে কাজ করতো বলে গরিলা মানবকে গুলি করে মারলো না সেদিন। দূর থেকে একটা জাল ছুড়ে তাতে আটকিয়ে ফেললো গরিলা মানবকে।

সভ্য মানুষদের দলনেতা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো গরিলা মানবকে। তার কাছে সন্দেহ হলো- এতো গরিলা নয়, এ যে মানব সন্তান। কেমন করে এলো এ জঙ্গলে! বনের মানচিত্র দেখলো, ইতিহাস ঘেঁটে দেখলো- একবার অনেক আগে এ বনে একটি প্লেন ক্রাস করেছিলো। শুধু ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কাউকেই জীবিত পাওয়া যায়নি তখন। তবু সে প্লেনের যাত্রীদের লিস্ট উদ্ধারের চেষ্টায় রইলো।

এদিকে গরিলা মানবকে বেঁধে শহরে চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হলো। প্রতিদিন প্রচুর মানুষের সমাগম হতে লাগলো সেখানে। মুখে শুধু গরিলাদের মতো আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারতো না গরিলা মানব। লোক সমাগম হলে সে শুধু চটে যেতো, খুব রেগে যেতো। তাই চিড়িয়াখানার কিউরেটর তাকে রাখার স্পেশাল ব্যবস্থা করলো। এদিকে বনের পরিবেশ উন্নয়নের কর্মী যে দল তাকে খুঁজে পেয়েছিলো তাদের দলের মেয়েটি একদিন হাজির হলো চিড়িয়াখানায়। গরিলা মানবের দূরাবস্থা দেখে তার খুব মায়া হলো। তাকে দেখাশোনার সম্পূর্ণ ভার নিতে চাইলো সে। সঙ্গে সঙ্গে কিউরেটর রাজি হয়ে গেলো।

এভাবে আরও অনেক বছর কেটে গেলো। ধীরে ধীরে গরিলা মানব মানুষের মতো কথা বলতে শিখেছে এখন। বেশ লেখাপড়াও শিখে ফেলেছে সে। অন্যান্য সবার মতো স্বাভাবিক খাবারও এখন খেতে পারে। আর এসবের পিছনে একমাত্র কৃতিত্ব ছিলো সেই মেয়েটির যাকে দেখতে গিয়ে গরিলা মানব ধরা পড়েছিলো সভ্য মানুষদের হাতে। তবু গরিলা মানবের টান রয়ে গেলো বনের পরিবেশের প্রতি, গরিলাদল ও অন্যান্য বন্য প্রাণীদের প্রতি। তার মাঝে মাঝে মনে পড়তো সেই মা গরিলার কথা- খুব ছোট্টকালে যে ছিলো তার প্রকৃত মা। তাই সে ঠিক করলো জঙ্গলের প্রাণীদের ভালোর জন্য সব ধরণের কাজ করে যাবে আজীবন। একদিন সেই মেয়েটিকে নিয়ে সে বেরিয়ে পড়লো দূরের বনে। মেয়েটিও গেরিলা মানবকে খুব ভালোবাসতো। বনের উন্নতি এবং প্রাণীদের রা করার কাজে তারা দুজনই খুব নাম করলো শেষে। ভালোবেসে একদিন তারা দুজন বিয়েও করে ফেললো। তাদের ঘরে এলো এক ছোট ফুটফুটে শিশু। গরিলা মানবকে প্রথম যে বনে পাওয়া গিয়েছিলো সে বনের পাশেই বড় হতে থাকলো শিশুটি। আর গরিলাদের আবাসস্থলের কাছেই পত্তন হতে থাকলো সভ্য মানুষের নিবাস- যারা সত্যি সত্যিই বন্য প্রাণীদেরকে ভালোবাসে।
১০.১০.২০০৭


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

গল্প বানানোর ভূমিকাটুকু, মানে বাচ্চার প্রসঙ্গটুকু এই পোস্টেও দিয়ে দিন।
হঠাৎ করে মনে হতে পারে, আরে, এইরকম টারজান-টারজান গল্প কেনো?
ভাল লাগছে।


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মজার তো ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।