প্রায় ৫ লক্ষ বছর পূর্বে মানুষের জীবাশ্ম হোমো ইরেক্টাস কঙ্কাল থেকে কিছু দিক দিয়ে পৃথক হতে শুরু করেছে। যেমন মানুষের কঙ্কালে অপেক্ষাকৃত বড়, গোলাকার ও কম কৌণিক আকৃতির করোটির উদ্ভব ঘটেছে। সে সময় আফ্রিকা ও ইউরোপের করোটিগুলোর আকার-আকৃতি একই ছিল এবং তাদের সাথে আধুনিক মানুষের সাদৃশ্যই বেশী ছিল। এ কারণে হোমো ইরেক্টাসের বদলে তাদেরকে আমাদের প্রজাতি তথা হোমো স্যাপিয়েন্সের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বিভাজন অবশ্য খুব একটা যৌক্তিক নয়, কারণ হোমো ইরেক্টাসই তো আসলে হোমো স্যাপিয়েন্সে বিবর্তিত হয়েছে। যাহোক, এই আদি হোমো স্যাপিয়েন্সও কঙ্কালের খুটিনাটি কিছু দিক দিয়ে আমাদের থেকে আলাদা এবং তাদের মস্তিষ্কের আকারও আমাদের তুলনায় অনেক ছোট। আর স্বভাব ও ব্যবহৃত উপকরণের দিক দিয়ে তারা একেবারে অন্যরকম ছিল। হোমো স্যাপিয়েন্সরা যেসব পাথরের উপকরণ ব্যবহার করতো সেগুলো ছিল অশোধিত, আধুনিক পাথরের যন্ত্রপাতি নির্মনাণকারী মানুষ যেমন ইয়ালির দাদার দাদারা হয়ত ৫ লাখ বছর আগের এসব পাথরের উপকরণকে অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করতো। ৫ লাখ বছর আগের এই মানুষেদের সংস্কৃতিতে অন্য যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উদ্ভব ঘটেছিল তা হল আগুনের ব্যবহার। তারা যে আগুনের ব্যবহার জানতো এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আদি হোমো স্যাপিয়েন্সদের কাছ থেকে আমরা কঙ্কালের অবশেষ আর অশোধিত পাথরের উপকরণ ছাড়া আর কিছুই পাইনি, কোন শিল্প, হাড়ের যন্ত্রপাতি বা অন্য কোন কিছুই পাওয়া যায়নি। সে সময়ও অস্ট্রেলিয়াতে কোন মানুষ ছিল না। কারণ খুবই সাধারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য নৌকা ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। আর সমগ্র আমেরিকায় তো মানুষ থাকার প্রশ্নই উঠে না। কারণ, আমেরিকায় যাওয়ার জন্য প্রথমে ইউরেশিয়ার যে অংশ আমেরিকার কাছে সে অংশে (সাইবেরিয়া) উপনিবেশ স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। তার সাথে সম্ভবত নৌকা বানানোর কৌশল জানারও প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, সাইবেরিয়ার শীতল পরিবেশে বেঁচে থাকা এবং নৌকা বানিয়ে আমেরিকার পথে পাড়ি জমানো এই আদিম হোমো স্যাপিয়েন্সদের আওতার বাইরে ছিল। অবশ্য নৌকা বানানোর কৌশল জানার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, ধারণা করা হয় আলাস্কা থেকে সাইবেরিয়াকে পৃথক করে রাখা বেরিং প্রণালী বরফ যুগে মাটির সেতুতে পরিণত হয়েছিল। বরফ যুগে সমুদ্রের পানির স্তর ব্যাপক উঠানামা করে, সে সময় বেরিং প্রণালীর সব পানি নেমে গিয়ে ভূমিকে উন্মুক্ত করে দেয়াটা তাই খুবই স্বাভাবিক।
৫ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের মানুষেরা কঙ্কালের খুটিনাটি গঠনের দিক দিয়ে একে অপরের থেকে পৃথক হতে শুরু করে, আবার তারা উভয়ে পূর্ব এশিয়ার মানুষদের থেকেও আলাদা হতে শুরু করে। ১৩০,০০০ বছর পূর্ব থেকে ৪০,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার জনগোষ্ঠীর কঙ্কাল বিভিন্ন গড়ন লাভ করে। এদেরকে একত্রে নিয়ানডার্থাল ও কখনও কখনও Homo neanderthalensis নামে অভিহিত করা হয়। অনেক কার্টুন ও ব্যাঙ্গ রচনায় তাদেরকে এইপদের মত আকৃতিবিশিষ্ট হিংস্র গুহাবাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, অথচ তাদের মস্তিষ্কের আকার আমাদের চেয়েও কিছুটা বড় ছিল। তার উপর তারাই প্রথম মানুষ যারা মৃতদের সমাধিস্থ করতো এবং অসুস্থদের সেবা করতো বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবশ্য তাদের ব্যবহৃত পাথরের হাতিয়ার আধুনিক নিউ গিনির আদিবাসীদের পলিশ করা পাথরের উপকরণের তুলনায় অশোধিতই ছিল। তাছাড়া নিয়ানডার্থালরা পাথর দিয়ে বিভিন্ন ধরণের হাতিয়ার তৈরী করতে পারতো না, যার একটি থেকে অন্যটিকে পৃথক করা যায়।
আফ্রিকায় নিয়ানডার্থালদের সমসাময়িক যে গুটিকয়েক কঙ্কাল পাওয়া গেছে সেগুলোর সাথে নিয়ানডার্থালদের তুলনায় আধুনিক মানুষের কঙ্কালের মিল বেশী। পূর্ব এশিয়া থেকে সে সময়কার আরও কম কঙ্কাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তার পরও যেগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো থেকে বোঝা যায় তারা আফ্রিকান ও নিয়ানডার্থালদের তুলনায় পৃথক ছিল। সে সময়কার জীবনধারা সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায় আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের কিছু স্থান থেকে পাওয়া পাথরের হাতিয়ার ও শিকারের হাড়। এগুলো ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ১০০,০০০ বছর পূর্বে এই আফ্রিকানদের কঙ্কাল নিয়ানডার্থালদের তুলনায় উন্নত হলেও তাদের পাথরের হাতিয়ারের আকার-আকৃতি অশোধিতই ছিল। তাদের তৈরী উপকরণগুলোতেও নির্দিষ্ট আকৃতি দেখা যায় না, যা দিয়ে একটি থেকে অন্যটিকে পৃথক করা সম্ভব। তারা কোনরকম শিল্প সংরক্ষণেও আগ্রহী ছিল না। তাদের শিকার করা পশুগুলোর হাড় থেকে বোঝা যায়, শিকারের ক্ষেত্রেও তারা খুব বেশী পটু ছিল না। সহজে ধরা যায় এমন পশুদেরই তারা শিকার করতো। মহিষ বা শুকরের মত ভয়ংকর প্রাণী শিকার তারা তখনও শুরু করেনি। এমনকি তারা মাছও ধরতে পারতো না। তাদের সমুদ্রোপকূলবর্তী উপনিবেশগুলোতে তেমন কোন মাছের হাড় বা মাছ ধরার বড়শি পাওয়া যায়নি। তাই এই আফ্রিকান ও নিয়ানডার্থালদের আধুনিক মানুষের চেয়ে বেশ অনুন্নত হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
আনুমানিক ৫০,০০০ বছর পূর্বে মানব ইতিহাসের ব্যাপক অগ্রগতির সন্ধান মিলে। একে আমি "গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড" হিসেবে আখ্যায়িত করেছি। এই অগ্রগতির প্রথম সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় পূর্ব আফ্রিকার স্থানগুলোতে। এখানেই প্রথম নির্দিষ্ট আকৃতিবিশিষ্ট পাথরের হাতিয়ার ও সংরক্ষিত অলংকারের (অস্ট্রিচের বহিরাবরণ দিয়ে তৈরী গুটিকা) দেখা মিলে। এর কিছু সময়ের মধ্যেই নিকট-প্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ইউরোপে এ ধরণের উন্নতির আভাস পাওয়া যায়। আনুমানিক ৪০,০০০ বছর পূর্বে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপেও এ ধরণের উন্নয়ন ঘটে। এখানে সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষের কঙ্কালের সাথে বিপুল পরিমাণ হাতিয়ার পাওয়া গেছে। এই মানুষদের নাম ক্রো-ম্যাগনন। এর পর থেকে জীবাশ্মবিজ্ঞান গবেষণার স্থানগুলোতে জড়ো করা নমুনা দিন দিন কেবল বিস্ময়কর হতে থাকে। বিপুল পরিমাণ নমুনার বিশ্লেষণ থেকে আমরা নিশ্চিত বুঝতে পারি যে, আমরা জৈবিক গঠন ও স্বভাব, উভয় দিক দিয়ে সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষদের নিয়েই কাজ করছি।
ক্রো-ম্যাগননদের আবর্জনার স্তূপে পাথরের যন্ত্রপাতির পাশাপাশি হাড়ের উপকরণও পাওয়া যায়। হাড় দিয়ে যে অনেক ভাল আকৃতির যন্ত্রপাতি তৈরী করা যায় এটা আগের যুগের কোন মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি। ক্রো-ম্যাগননরা হাড় দিয়ে মাছ ধরার বড়শি তৈরী করে। এছাড়া তারা হরেক রকমের উপকরণ তৈরী করে। এগুলোর মধ্যে গুটিকতক আমরা আধুনিক যুগেও ব্যবহার করি। যেমন, সুই, চামড়া ছেদা করার জন্য ব্যবহৃত আরা, খননের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ ইত্যাদি। একটিমাত্র টুকরো দিয়ে তৈরী যন্ত্রের পাশাপাশি তারা একাধিক টুকরো দিয়েও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরী করে। ক্রো-ম্যাগনন জীবাশ্ম প্রাপ্তির স্থানগুলোতে পাওয়া একাধিক টুকরোবিশিষ্ট উপকরণগুলোর মধ্যে রয়েছে হারপুন, বর্শা নিক্ষেপক এবং এভাবে একসময় তীর-ধনুক। এই তীর-ধনুকই কিন্তু আধুনিক যুগের রাইফেল ও অন্যান্য নিক্ষপযোগ্য অস্ত্রের পূর্বপুরুষ। তীর-ধনুকের মত অস্ত্রগুলোর মাধ্যমে নিরাপদ দূরত্বে থেকে শিকার করা সম্ভব হয়। ফলে ক্রো-ম্যাগননরা অপেক্ষাকৃত ভয়ংকর ও চতুর জন্তু শিকার শুরু করে। যেমন, গণ্ডার ও হাতি। এর পাশাপাশি লম্বা রশি, জাল, সুতা ও ফাঁদ উদ্ভাবনের কারণে মাছ ও পাখি শিকার শুরু হয়। আর আমাদের নিত্যদিনের খাবারে দুটি নতুন পদ যোগ হয়। সে যুগের বাড়িঘর ও সেলাই করা কাপড়ের অবশেষ থেকে বোঝা যায়, তারা শীতল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করেছিল। আর অলংকার ও যত্নের সাথে সমাধিস্থ করা কঙ্কালের অবশেষ থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে সে সময়ই নৈসর্গ্যিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার জন্ম হচ্ছিল।
ক্রো-ম্যাগননদের ব্যবহার্য যা কিছু পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তাদের শিল্পকর্ম। এর মধ্যে আছে তাদের বিস্ময়কর গুহাচিত্র, মূর্তি ও বাদ্যযন্ত্র। এই উপকরণগুলোকে আমরা আজও শিল্পের উৎকৃষ্ট উপাদান হিসেবে সম্মান করি। যে কেউ Lascaux গুহায় ক্রো-ম্যাগননদের আঁকা জীবন্ত ষাঁড় ও ঘোড়ার ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন, এগুলো যারা একেছে তারা মন ও কঙ্কাল উভয় দিক দিয়ে বর্তমান মানুষের মতই আধুনিক।
আজ থেকে ১০০,০০০ বছর পূর্ব থেকে শুরু করে পরবর্তী ৫০,০০০ বছর মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যে অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, এ নিয়ে আর কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই "গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড" আমাদের সামনে দুটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যেগুলোর উত্তর এখনও সঠিকভাবে দেয়া যায়নি। একটি প্রশ্ন এই অগ্রগতির কারণ নিয়ে, আর অন্যটি অগ্রগতি কোন ভৌগলিক স্থানে হয়েছে তা নিয়ে। এই অগ্রগতির কারণ বিষয়ে আমি আমার "দ্য থার্ড শিম্পাঞ্জি" বইয়ে লিখেছিলাম, কণ্ঠ বাক্সের পরিপূর্ণতা লাভ এবং এর মাধ্যমে আধুনিক ভাষার জৈবিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার উপর মানুষের সৃজনশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে, তাই একেই গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। অনেকেই অবশ্য বলেছেন, মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তিত না হয়ে বরং মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীন সংগঠন পরিবর্তিত হওয়ার কারণে আধুনিক ভাষার সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।
এবার গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের স্থান সম্বন্ধে ভাবা যাক। এই অগ্রগতি কি কোন নির্দিষ্ট স্থানে কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ঘটেছিল এবং পরবর্তীতে এই অগ্রগামী মানুষেরা তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পরে সেখানকার অনগ্রসর মানুষদের প্রতিস্থাপিত করেছিল? নাকি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একইসাথে এই অগ্রগতি ঘটেছিল আর বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে বসবাসকারী মানুষেরা সে স্থানে অগ্রগতি অজর্নকারী মানুষদেরই উত্তরপুরুষ? ১০০,০০০ বছর পূর্বে আফ্রিকাতে বসবাসকারী মানুষের করোটির জীবাশ্ম নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রথম ধারণাটাই সঠিক। অর্থাৎ মানুষের গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড কেবল আফ্রিকাতেই ঘটেছিল। প্রথম দিকে করা আণবিক গবেষণার (তথাকথিত "মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ") মাধ্যমেও মানুষের উৎপত্তি ও গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড আফ্রিকাতেই ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। অবশ্য এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে বর্তমানে সংশয় দেখা দিয়েছে। অপরদিকে কয়েক শত হাজার বছর পূর্বে চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী মানুষের করোটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এর সাথে সে অঞ্চলে বর্তমানে বসবাসকারী মানুষের করোটির মিল আছে। ভৌত নৃবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া আদিম করোটির কিছু বৈশিষ্ট্য অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের করোটিতেও উপস্থিত আছে। চীনে পাওয়া করোটির জীবাশ্মের কিছু বৈশিষ্ট্যও আধুনিক চীনাদের মধ্যে উপস্থিত আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দাবী প্রমাণিত হলে, আধুনিক মানুষের সমান্তরাল বিবর্তন ও একইসাথে একাধিক অঞ্চলে তাদের উৎপত্তির তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠা পাবে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন "এডেনের উদ্যান"-এ মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশের ধারণাটিও পরিত্যাক্ত হবে। এ নিয়ে এখনও কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি।
ইউরোপের ক্ষেত্রে কিন্তু একটি নির্দিষ্ট স্থানে মানুষের উৎপত্তি, সেখান থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ স্থাপন এবং এই অগ্রগামীদের দ্বারা অন্যান্য মানুষের প্রতিস্থাপনের বিষয়টিই সত্য। এই প্রকল্পের অনেক শক্তিশালী প্রমাণ আছে। এ হিসেবে ৪০,০০০ বছর পূর্বে ক্রো-ম্যাগননরা আফ্রিকা থেকে ইউরোপে আসে। তাদের কঙ্কাল, ব্যবহৃত অস্ত্র ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যাদি সে সময় ইউরোপে বসবাসকারী গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় উন্নত ছিল। ক্রো-ম্যাগননদের আগমনের মাত্র কয়েক হাজার বছরের মধ্যে ইউরোপ থেকে নিয়ানডার্থালরা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। অথচ এই নিয়ানডার্থালরাই কয়েক শত হাজার বছর ধরে সমগ্র ইউরোপ অধিকার করে ছিল। আগমন ও বিলুপ্তির এই ধারাবাহিকতা থেকে বোঝা যায়, ক্রো-ম্যাগননরা তাদের অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রযুক্তি, ভাষার দক্ষতা ও মস্তিষ্কের মাধ্যমে কোন না কোনভাবে নিয়ানডার্থালদের মাঝে মারণ রোগের সংক্রমণ ঘটিয়েছে, তাদের মেরে ফেলেছে অথবা তাদেরকে প্রতিস্থাপিত করেছে। এমনকি ক্রো-ম্যাগনন ও নিয়ানডার্থালদের মাঝে সংকরায়নের কোন প্রমাণ নেই বললেই চলে।
[চলবে...]
মন্তব্য
**********************
ভাই শিক্ষানবিস,
খুব সময় উপযুগী একটা লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
একটি অনুরোধ; লেখাটি আরো ছোট ছোট পর্বে ভাগ করে দিলে ভাল হয়। আমার মনে হয় লেখাটি সবাই পড়া উচিৎ। সে ক্ষেত্র ছোট পর্ব হলে বেশীর ভাগ পাঠক পড়বেন।
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ওহ্হো, ভুল হয়ে গেল। আরও ছোট করে দেয়া উচিত ছিল। প্রথম পর্বটা অবশ্য বেশ ছোট করেই দিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য কেন জানি এবার একসাথে বেশী দিয়ে দিলাম।
অবশ্য শুধরানোর সময় চলে যায়নি। সম্পাদনা করে অর্ধেক করে দিলাম। এখন থেকে ছোট ছোট করেই ছাড়বো।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। আরো ছাড়েন ভাই, তাড়াতাড়ি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আগ্রহ নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পুতুল বললেন, এই লেখাটা সবার পড়া দরকার। আমিও তা-ই মনে করি। এজন্যই অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছিলাম। মাত্র বিশ পৃষ্ঠার মধ্যে কয়েক লক্ষ্য বছরের ইতিহাস সুন্দর করে আর কোথাও পাইনি।
প্রতিদিনই এক পর্ব করে ছাড়ছি। আরও ৩-৪ কিস্তি লাগবে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
অনুবাদ ভাল হচ্ছে খুব। হ্যাঁ, ছোট ছোট পোস্টে দিলেই সুবিধা। চলুক।
তুমি কি ফ্রেন্ডস দেখসো? জোয়ী'র একটা জোক মনে পড়ল। পুরাপুরি মনে নাই, তবে অনেকটা এইরকম...
জোয়ী কোন এক লেকচার শুনতে যায় মনে হয় রস-এর সাথে, যেখানে "হোমো স্যাপিয়েন্স" কথাটা শোনে ও। শুনে তো ও খালি হাসে। রস বিরক্ত হয়। হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে যে, লেকচারার "হোমো" শব্দটা বলসে। রস তখন অবাক হয়ে বলে, "জোয়ী... দে আর পিপল, লাইক আস!"
জোয়ী তখন সাফাই গাওয়ার ভঙ্গিতে বলে, "আয়্যাম নট জাজিং দেম!"
_______________
বোকা মানুষ
অনুবাদ ভাল হচ্ছে!!!?? বড় শান্তি পেলাম। অনুবাদ করার সময় আমার খুব অস্বস্তি লাগে। খালি মনে হয়, আক্ষরিক হয়ে যাচ্ছে। তবে একটা বিষয় লক্ষ করতেছি, দিন দিন লেখার ভাষা সহজ হইতেছে। চেষ্টা করতেসি আর কি।
ফ্রেন্ড্স দেখি নাই। জোক্সটা ভাল ছিল।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
হ্যাঁ, অনুবাদটা আসলেই ভাল হচ্ছে। এইসব খটমটে বিষয়ও খুব সহজ ভাষায় লিখসো, এইটাই আসল কথা। আর আক্ষরিক হোক বা না হোক, পড়তে আরাম লাগতেসে, এইটুকুই বলতে পারি। চালায়া যাও
_______________
বোকা মানুষ
লেখাটা পড়ে চোখ ব্যাথা হয়ে গেল ... কিন্তু তবুও পড়া ছাড়তে পারি নাই
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
লেখাটা একটু ফাস্ট। অনেক তথ্য তাড়াতাড়ি বলার কারণেই এমনটি হচ্ছে। অবশ্য একটু অতিরিক্ত মনোযোগ দিলে সে সমস্যা কেটে যায়।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
এত্তোগুলো ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের নাম আলাদা আলাদা করে মনে রেখে পড়তে সমস্যা হচ্ছে ঃ(
লেখা অতি interesting হয়েছে। বাকিটুকু তাড়াতাড়ি দিয়ে দিন।
তা ঠিক। অনেকগুলো স্থান আর প্রজাতির নাম মনে রেখে এগুনোটা কষ্টকর। সবার সুবিধার্থে আমি একটা সারাংশ টানার চেষ্টা করছি।
- ৫ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকাতে হোমো ইরেক্টাসরা উন্নত হয়ে হোমো স্যাপিয়েন্সে পরিণত হয়।
- ৫ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকা, ইউরেশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার মানুষেরা একে অপরের থেকে আলাদা হতে শুরু করে।
- ১৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত ইউরেশিয়ায় নিয়ানডার্থালরা বিবর্তিত হয়। তাদের মস্তিষ্ক আমাদের চেয়ে বড় ছিল।
- ৫০,০০০ বছর পূর্বে আফ্রিকায় গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড শুরু হয়।
- ১০০,০০০ থেকে ৫০,০০০ বছর পূর্বের সময়ের মধ্যে আফ্রিকায় ক্রো-ম্যাগননদের উদ্ভব।
- ৪০,০০০ বছর পূর্বে ক্রো-ম্যাগননরা আফ্রিকা থেকে ইউরোপে আসে। তারা ইউরোপের নিয়ানডার্থালদেরকে বিলুপ্ত করে দেয়।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
কয়েকবার পড়ে পড়তে হইছে। বেশি দ্রুতগতির লেখা। অবশ্য সেটা ডায়মণ্ড সাহেব করে গেছেন। তোর হাতে নাই।
এই লেখা সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ঠিক, লেখাটা সমাজবিজ্ঞানেরই। সমাজবিজ্ঞানে যেমন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব আর নৃবিজ্ঞান থেকে তথ্য নিয়ে তার বিশ্লেষণ করা হয় এখানেও তেমনটি করা হচ্ছে। প্রথম অধ্যায়ে তেমন নেই। পরের অধ্যায়গুলোতে গভীর বিশ্লেষণ আছে। সমাজকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে পারার জন্যই বোধহয় জ্যারেড ডায়মন্ড পুলিৎজার পেয়েছিলেন।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
নতুন মন্তব্য করুন