গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় আমাদের পূর্বপুরুষরা আরেকটি বড় ধরণের ঔপনিবেশিক বিস্তৃতি শুরু করেছে। ইউরেশিয়ার পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ঔপনিবেশিক অভিযাত্রা। এই ঔপনিবেশিক বিস্তৃতি ঘটেছে নিউ গিনি ও অস্ট্রেলিয়াতে, সে সময় এ দুটি একসাথে যুক্ত থেকে একটিমাত্র মহাদেশ গঠন করে ছিল। তেজস্ক্রিয় কার্বনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অনেকগুলো স্থানে পাওয়া জীবাশ্মের বয়স ৪০,০০০ থেকে ৩০,০০০ বছর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে সে সময়ই প্রথম মানুষ পা রেখেছিল। এরও আগে সেখানে মানুষের উপস্থিতির কিছু দাবী আছে, কিন্তু সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। এই মহাদেশে প্রথম মানুষ আসার পর খুব দ্রুতই তারা সমগ্র মহাদেশ অধিকার করে নিয়েছে, এর পরিবেশের সাথে নিজেদের অভিযোজিত করে নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা নিউ গিনির ক্রান্তীয় বৃষ্টিপ্রধান বন ও উঁচু পর্বতমালা থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক কেন্দ্রীয় অঞ্চল ও সিক্ত দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বসতি স্থাপন করে ফেলেছে।
বরফ যুগের সময় মহাসাগরের অনেক পানি হিমবাহের মাঝে আটকা পড়ে যাওয়ায় সমুদ্রের পানির স্তর বর্তমানের তুলনায় কয়েক শত ফুট নিচে নেমে যায়। এর ফলে বর্তমান এশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, বোর্নিও, জাভা ও বালি দ্বীপের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী অগভীর সমুদ্রটি শুষ্ক ভূমিতে পরিণত হয়। বেরিং প্রণালী ও ইংলিশ চ্যানেলের মত অগভীর প্রণালীগুলোও সে সময় জলশূন্য হয়ে পড়েছিল। তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূমির প্রান্তসীমা ছিল বর্তমানের তুলনায় আরও ৭০০ মাইল পূর্বে। বালি ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় দ্বীপগুলো তখনও পানি দ্বারা বেষ্টিত ছিল। কারণ এদের চারদিকে অবস্থিত প্রণালীগুলো ছিল বেশ গভীর। এ কারণে এশিয়ার মূলভূমি থেকে অস্ট্রেলিয়া বা নিউ গিনিতে যেতে হলে তখনও অন্তত আটটি প্রণালী পার হতে হতো, এর মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্তটির প্রস্থ ছিল অন্তত ৫০ মাইল। এই প্রণালীগুলো দ্বারা পৃথক হয়ে থাকা দ্বীপগুলোর একটি থেকে অন্যটি দেখা যেত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিশাল দ্বীপ তখনও অদৃশ্য ছিল। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত ইন্দোনেশীয় দ্বীপ তিমোর ও তানিমবার থেকেও অস্ট্রেলিয়া দেখা যেতো না। তাই সে সময় অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি দখল করাকে এক বিশাল সফলতা হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। কারণ এর জন্য তাদের নৌ-চালনার বিদ্যা আয়ত্ত করতে হয়েছিল। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষ নৌকা চালাতে শিখেছে মাত্র ১৩,০০০ বছর পূর্বে। ৪০,০০০ বছর পূর্ব থেকে ১৩,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্য কোন মানুষই এই বিদ্যা আয়ত্ত করতে পারেনি।
প্রথমে জীবাশ্মবিদরা ধারণা করেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি আবিষ্কার সম্ভবত দুর্ঘটনার মাধ্যমে হয়েছে। ইন্দোনেশীয় দ্বীপে বসবাসকারী কিছু মানুষ হয়ত ভেলায় করে মাছ ধরার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং সমুদ্রে ভেসে ভেসে অস্ট্রেলিয়ার দিকে চলে যায়। এই মতের আরও চূড়ান্ত রূপে বিশ্বাসীরা তো মনে করেন, এ অঞ্চলে প্রথম উপনিবেশ স্থাপন করেছিল কেবল একজন গর্ভবতী নারী যার গর্ভে ছিল একটি ছেলে সন্তানের ফিটাস। কিন্তু এ ধরণের আকস্মিক উপনিবেশ তত্ত্বে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা কিছু আধুনিক আবিষ্কার দেখে বিস্মিত হচ্ছেন। সম্প্রতি জানা গেছে নিউ গিনিতে উপনিবেশ স্থাপনের পরপরই অর্থাৎ আনুমানিক ৩৫,০০০ বছর আগে নিউ গিনির পূর্বে অবস্থিত দ্বীপগুলোতেও মানুষ বসতি স্থাপন করেছে। এই দ্বীপগুলোর মধ্যে আছে বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জের নিউ ব্রিটেন ও নিউ আয়ারল্যান্ড এবং সোলোমন দ্বীপপুঞ্জের বুকা। বুকা-কে এর পশ্চিম দিকে অবস্থিত সবচেয়ে কাছের দ্বীপ থেকেও দেখা যায় না। এখানে পৌঁছতে হলে অন্তত ১০০ কিলোমিটার প্রশস্ত সমুদ্র পেরোতে হয়। এ থেকে মনে হয়, অস্ট্রেলীয় ও নিউ গিনীয়রা সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই দৃশ্যমান দ্বীপগুলোতে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতো। অদৃশ্য দ্বীপগুলো সম্বন্ধে তারা জানতো না, কিন্তু তাদের নৌ-চালনাবিদ্যা এতোটাই সমৃদ্ধ ছিল যে অনিচ্ছাকৃতভাবে তারা সে পর্যন্ত চলে যেতো পারতো। এভাবেই অনেক দূরের আপাত অদৃশ্য দ্বীপগুলোতে তারা উপনিবেশ স্থাপন করেছে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে মানুষের বসতি স্থাপনের সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত যাকে মানুষের দ্বারা সংঘটিত প্রথম গণ-বিলুপ্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। তাই বলা যায়, প্রথম নৌ-চালনাবিদ্যা আয়ত্তকরণ এবং ইউরেশিয়ার পর প্রথম কোন মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপনের পাশাপাশি এর মাধ্যমে মানুষ আরেকটি বিষয় প্রথমবারের মত ঘটিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির বৃহৎ আকৃতির প্রাণী প্রজাতিগুলো সম্ভবত মানুষের কারণেই বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে আমরা আফ্রিকাকে বড় স্তন্যপায়ীদের মহাদেশ বলে আখ্যায়িত করি। ইউরেশিয়াতেও বেশ কিছু বড় আকৃতির স্তন্যপায়ী দেখা যায় যদিও আফ্রিকার সেরেন্গেটি সমভূমির স্তন্যপায়ীদের তুলনায় তারা নগণ্য। এক্ষেত্রে এশিয়ার গণ্ডার, হাতি ও বাঘ এবং ইউরোপের চমরি গাই, ভালুক ও সিংহের (বর্তমানে সিংহ খুব বেশী নেই) নাম করা যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির দিকে লক্ষ্য করুন, সেখানে এ ধরণের কোন বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী নেই। প্রকৃতপক্ষে সেখানে ১০০ পাউন্ড ভরবিশিষ্ট ক্যাঙ্গারুর চেয়ে বড় কোন স্তন্যপায়ীই নেই। অথচ অনেক আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে বড় বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। যেমন, বড় ক্যাঙ্গারু, ডাইপ্রোটোডন্ট নামে পরিচিত গণ্ডার আকৃতির মার্সুপিয়াল (আকারে প্রায় গরুর সমান) এবং এক প্রজাতির মার্সুপিয়াল চিতা বাঘ। এছাড়া এ অঞ্চলে ৪০০ পাউন্ড ভরবিশিষ্ট অস্ট্রিচের মত পাখি ছিল যারা উড়তে পারতো না। ছিল কিছু আকর্ষণীয় ও বিশাল সরীসৃপ; যেমন, এক টন ভরের টিকটিকি, বিশার আকারের অজগর সাপ এবং মাটিতে বসবাসকারী কুমির।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির মেগাফনা নামে পরিচিত সেই দানবদের কেউই আজ নেই। মানুষের আবির্ভাবের পরই তারা বিলুপ্ত হয়েছে। ঠিক কোন সময়ে তারা বিলুপ্ত হয়েছে এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কিছু হাজার হাজার বছর বয়সী জীবাশ্মবিজ্ঞান গবেষণা স্থানে অনেক আগের প্রাণীদের হাড়ের প্রচুর অবশেষ পাওয়া গেছে। এগুলো খুব যত্নের সাথে উত্তোলন করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন, এ ধরণের বিশাল আকারের প্রাণীদের হাড়ের এমন কোন অবশেষ নেই যার বয়স ৩৫,০০০ বছরের কম। অর্থাৎ গত ৩৫,০০০ বছরে এদের কারও অস্তিত্বই ছিল না। এ থেকে বোঝা যায়, সম্ভবত মানুষ আসার পরই এই মেগাফনার বিলুপ্তি ঘটেছে।
মানুষের আবির্ভাবের সাথে বৃহৎ প্রজাতির বিলুপ্তির সময়ের এই মিল দেখে একটি প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক, কি কারণে এই বিলুপ্তি ঘটেছিল? একটি অবশ্যম্ভাবী উত্তর হচ্ছে, তারা নিশ্চয়ই মানুষের হাতে নিহত হয়েছে কিংবা মানুষের পরোক্ষ অংশগ্রহণে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে গেছে। এখানে আমাদের আবার মনে রাখতে হবে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে মানব শিকারীরা আসার আগে কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে সেখানকার বড় বড় প্রাণীগুলো সঠিকভাবেই বিবর্তিত হচ্ছিল। আমরা এটাও জানি, গালাপাগোস ও অ্যান্টার্কটিকার পাখি ও স্তন্যপায়ীরা একেবারে আধুনিক যুগে এসে মানুষের দেখা পেয়েছে। মানুষের উপস্থিতি ছাড়াই তারা দীর্ঘদিন যাবৎ বিবর্তিত হয়ে আসছে। বর্তমানে তাদেরকে বেশ পোষ্য বলে মনে হয়। অথচ সংরক্ষণবাদীরা খুব দ্রুত প্রাণী সংরক্ষণের নীতিমালা প্রয়োগ না করলে এই প্রাণীগুলোও বিলুপ্ত হয়ে যেতো। আধুনিক কালে আবিষ্কৃত অন্যান্য যে দ্বীপগুলোতে যথাসময়ে এ ধরণের সংরক্ষণ নীতি প্রয়োগ করা হয়নি সেখানে বিলুপ্তি ঘটেছে। মরিশাস দ্বীপের ডোডো এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ডোডোকে বর্তমানে বিলুপ্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। মহাসাগরের যে দ্বীপগুলোতে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে তার সবগুলোতেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। মানুষেরা এই দ্বীপগুলোতে প্রথমবারের মত উপনিবেশ স্থাপনের পরপরই সেখানকার কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেমন নিউজিল্যান্ডের moas, মাদাগাস্কারের বিরাট আকৃতির লেমুর, হাওয়াইয়ের বিশালকায় রাজহংসী যারা উড়তে পারতো না। আধুনিককালে যেমন মানুষ মরিশাসে গিয়ে সেখানকার ডোডোদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবেই হয়ত প্রাচীনকালে মানুষ নিউজিল্যান্ড বা মাদাগাস্কারে গিয়ে সেখানকার বড় প্রাণীগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
তাই অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির বড় স্তন্যপায়ীদের বিলুপ্তি বিষয়ক একটা প্রকল্প বলছে, ৪০,০০০ বছর পূর্বে মানব শিকারীদের আগমনের কারণে তাদের ভাগ্যে এই একই ঘটনা ঘটেছিল। অথচ আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ার অধিকাংশ বড় বড় স্তন্যপায়ীই কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকে আছে। এর কারণ সম্ভবত এই যে, তারা কয়েক শত হাজার বা মিলিয়ন বছর ধরে প্রাক-মানবদের সাথে একই সাথে বিবর্তিত হয়েছে। এভাবে মানুষকে ভয় পাওয়ার প্রবণতা গড়ে তোলার জন্য তারা যথেষ্ট সময় পেয়েছে, কারণ আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে সে সময় শিকারের তেমন ভাল কোন উপকরণ ছিল না। অন্যদিকে বর্তমানের ডোডো বা প্রগৈতিহাসিক কালে অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি বা নিউজিল্যান্ডের বড় প্রাণীরা সে সুযোগটা পায়নি। তারা হঠাৎ করেই মানুষের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে, বিবর্তনের মাধ্যমে তারা কোনরকম প্রস্তুতি নিতে পারেনি। আর এ মানুষদের হাতে শিকারের বেশ উন্নত উপকরণ ছিল, তাদের দক্ষতাও ছিল বেশী।
অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে মানুষের মাধ্যমে স্তন্যপায়ীদের মৃত্যুর এ প্রকল্পকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সমালোচকরা একটি বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেটা হচ্ছে: এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির বিলুপ্ত প্রাণীগুলোর এমন কোন হাড় পাওয়া যায়নি যাতে মানুষ কর্তৃক হত্যার যথেষ্ট প্রমাণ আছে, এমনকি তারা মানুষের সাথে কিছুকাল হলেও একত্রে বাস করছে এমন কোন প্রমাণও পাওয়া যায়নি। যারা মানুষের মাধ্যমে তাদের বিলুপ্তির প্রকল্পকে সমর্থন করে তারা এই চ্যালেঞ্জের উত্তরে বলছে: বিলুপ্তির ঘটনাটা যদি খুব দ্রুত এবং অনেক কাল আগে সংঘটিত হয় তাহলে হত্যার স্থানগুলো খুঁজে পাওয়ার আশা করা ঠিক না, এই বিলুপ্তিগুলো কিন্তু সেরকমই; ৪০,০০০ বছর আগে ঘটে যাওয়া খুব দ্রুত বিলুপ্তি। সমালোচকরা এরও জবাব দিয়েছেন। তাদের বিরোধী প্রকল্পটি হচ্ছে: অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ সে সময় এমনিতেই শুষ্ক ছিল, তার উপর কোন ক্ষরার কারণে জলবায়ুতে যে বিশাল পরিবর্তন এসেছে তার কারণেই হয়ত প্রাণীগুলো মারা গেছে। এভাবে বিতর্ক চলছেই।
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই ভেবে কোন কিনারা করতে পারিনি যে, মানুষের আগমনের আগে কয়েক মিলিয়ন বছরের অসংখ্য খরায় অস্ট্রেলিয়ার যে প্রাণীদের কিছু হয়নি তারা কেন মানুষের আগমনের ঠিক পরের খরাতেই একযোগে মৃত্যুবরণ করার সিদ্ধান্ত নেবে। এই অঞ্চলে প্রথম মানুষের আগমন ও এখানকার বড় বড় স্তন্যপায়ীদের মৃত্যুর ঘটনা দুটি কিন্তু এতোটাই সমকালিক। আর শুধু যে অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক মধ্যাঞ্চলের প্রাণীরাই বিলুপ্ত হয়েছে তা তো নয়, নিউ গিনি ও দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার সিক্ত অঞ্চলেও তো একই ঘটনা ঘটেছে। মরুভূমি থেকে শুরু করে শীতল বৃষ্টিপ্রবণ বনাঞ্চল বা ক্রান্তীয় বৃষ্টিপ্রবণ বন, সকল স্থানের বড় বড় স্তন্যপায়ীরাই বিলুপ্তির শিকার হয়েছে। এর কোন ব্যতিক্রম নেই। তাই মানুষই তাদের বিলুপ্তির কারণ, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত মনে হয়। হয় মানুষ সরাসরি তাদের হত্যা করেছে নয়তো আগুনের ব্যবহার ও সম্পূর্ণ নতুন আবাসন গড়ে তোলার কারণে পরিবেশে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তার কারণে তারা সবাই মারা গেছে। মানুষের দ্বারা মৃত্যু বা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিলুপ্তি, যে প্রকল্পই সত্য হোক না কেন, এই বিলুপ্তি যে পরবর্তীতে মানব ইতিহাসে বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই অঞ্চলের বড় বড় সব বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে যাদের অনেকে পরবর্তীতে মানুষের পোষও মানতে পারতো। অর্থাৎ গৃহপালিত হতে পারতো এমন জন্তুরাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ কারণেই, সমগ্র অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির অধিবাসীদের একটিও গৃহপালিত জন্তু ছিল না। এখানে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় জন্তুদের কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির স্থানীয় কোন জন্তুকে সেখানকার মানুষেরা গৃহপালিত করতে পারেনি।
[চলবে...]
মন্তব্য
অনুবাদ জন্য প্রশ্ন করছি না। দেখি ... হয়তো পরবর্তী পর্বগুলোতে উত্তর পেয়েও যেতে পারি। এটার উপর আলোচনাও হতে পারে।
একটা বিষয়ে একটু অবাক হচ্ছি যে প্লেট টেকটনিক নিয়ে তেমন কোন কথা নাই .... অগভীর সাগর এবং নৌচালনা বিদ্যার উপরই জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোথাও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন প্রাণী ছড়িয়ে পড়ার সপক্ষে প্লেট টেকটনিকের কথা উল্লেখ করা হয়। অবশ্য মানুষের বিকাশ যখন শুরু হল সেই সময়ের ব্যাপ্তির সাথে প্লেট-টেকটনিকের কারণে সরে যাওয়া মহাদেশের সময়টা অনেক আলাদা হতে পারে। ঝাপসা জ্ঞান দিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্ঘটনা, বিশেষত ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেকসময় একটি বা দুইটি জাতের জীবিত প্রাণী পৃথিবীর এক-প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা একটা আশ্চর্য ঘটনা যে কিভাবে ওগুলো বৃষ্টিপাতের মত ঝড়ে পড়ার সময় পর্যন্ত জীবিত থাকে। কিন্তু এটা বাস্তব; এবং এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এরকম বৃষ্টির সাথে বিভিন্ন জীবিত প্রাণী পড়তে দেখা যায়। কে জানে, মানুষও ওভাবে মহাসাগর পার হয়ে নতুন নতুন জায়গায় চলে গেছে কি না।
অনুবাদ চলুক। অনুমানের চেয়ে যুক্তি ও প্রমাণ নির্ভর কথাই বেশি গ্রহণযোগ্য।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
টেকটোনিক প্লেট (এর একটা বাংলা প্রতিশব্দ দরকার) এর "উল্লেখযোগ্য নড়াচড়া" মানুষের উদ্ভবেরও অনেক আগের ঘটনা। আফ্রিকা থেকে মানুষের ছড়িয়ে পড়ার যে দু'টি ঘটনার আলামত পাওয়া গেছে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচিঙের বদৌলতে, তাতে আসলে টেকটোনিক প্লেট মুভমেন্টের তেমন একটা গুরুত্ব নেই। তবে আরো প্রাচীন সব প্রজাতির ক্ষেত্রে টেকটোনিক প্লেট এর সরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন অ্যান্টার্কটিকায় উটপাখি জাতীয় পাখির ফসিল পাওয়া গিয়েছে। একটা সময় ছিলো, যখন উষ্ণ বিষুবীয় স্রোত পুরো অ্যান্টার্কটিকাকে গরম রাখতো, এবং সেখানে স্বাভাবিক ভেজিটেশন ছিলো, তখনকার কথা। পরবর্তীতে অ্যান্টার্কটিকা মূল মেগাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, এবং দক্ষিণমুখী বিষুবীয় স্রোত বিরত হওয়ায় তা ক্রান্তীয় আবহাওয়া হারিয়ে পুরোপুরি হিমায়িত হয়ে পড়েছে, এবং তাতে বসবাসকারী প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়েছে। আবার যেমন ধরুন, দক্ষিণ আমেরিকার সাথে অস্ট্রেলিয়ার মারসুপিয়ালদের সাদৃশ্য। মানুষ সেই স্কেলে অনেক সাম্প্রতিক একটি প্রাণী, সে নিজের পায়ে ভর করেই অনেকদূর চলে গেছে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
লেখার সময় অমনই হবে বলে মনে হচ্ছিল, তারপরও এ্যামন একটা পরিশ্রমী এবং সুন্দর লেখায় পাঠক কম মনে হওয়ায় (সম্ভবত রবিবার সিন্ড্রোম), একটু জোর করেই মন্তব্য ধরায় দিলাম।
ধন্যবাদ প্লেট টেকটনিকের টাইম-স্কেলের ব্যাপারটা ভেঙ্গে বলার জন্য।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
মানুষ দৌড় দিয়ে দিয়ে গেছে!
ভাবলে খুব গর্ব হয়। কি বা ছিলো তার, না কোনো ম্যাপ, না কোনো রাস্তা, না কোনো তেমন ভালো কমুনিকেশান! কিছুই জানা ছিলো না সামনে কি। তবু এগিয়েছে!
শাবাশ!
সত্যিই গর্ব হয়। আজকের বেহাল অবস্থার কথা ভেবে দুঃখও হয়। মহাকাশ অভিযানে এতোদিনে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আশাকরি ভবিষ্যতে কোন মহাকাশ বিপ্লবের জন্ম হবে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির অধিবাসীদের একটিও গৃহপালিত জন্তু ছিল না এমনটা বলেছেন কিন্তু একটা সময়ে কিন্তু ডিংগো বা ট্যাসমানিয়ান ডেভিলের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীগুলো গৃহ পালিত ছিলো, লেখক হয়তো আরো অনেক আগের কথা বলছেন? জীববৈচিত্র্যে বিশাল অস্ট্রেলিয়ার শিকার কাজে ব্যবহারে অনেক প্রাণীদের গার্হস্থীকরণ করা হয়েছিলো শুনতে পাই। জানাবেন তো একটু। পর্বগুলো পড়ছি, দারূণ লাগছে!
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
একটা বিষয় ঠিক ধরেছেন, লেখক অনেক আগের কথা বলছেন। পাশাপাশি তিনি অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রাণীদের কথা বলছেন।
- ডিংগোর উৎপত্তি অস্ট্রেলিয়াতে হয়নি। গত ৫,০০০ বছরে নৌচালনায় অভ্যস্ত এশীয় লোকেরা এশিয়ার মূল ভূমি থেকে এদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে গেছে। লেখক ৪০,০০০ বলছেন বছর আগের কথা।
- তাসমানিয়ান ডেভিলের বিলুপ্তির ঘটনাও মাত্র ৪০০ বছর আগের।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বিষয়বস্তু নিয়ে কিছুই বলার নাই, কারণ আমার জ্ঞান সীমিত (একেবারে নাই বলতে লজ্জা লাগলো)। তাই শুধু অনুবাদ সম্পর্কে বলি, চমৎকার!
ধন্যবাদ, প্রহরী ভাই।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ঠিকঠাক বুঝছি কিনা বুঝতে পারছি না (), তবে পড়ছি। এবার পরের পর্বটা পড়ে আসি।
নতুন মন্তব্য করুন