আগে যাচ্ছেতাইভাবে স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু দিনে দিনে অনেক ম্যাচ্যুরিটি এসেছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু জিনিস আগের চেয়ে এলোমেলো হয়েছে, কিছু জিনিস আবার গোছালো হয়েছে। এই যেমন, স্বপ্নের বিষয়টা। এখন দুই ভাগে ভাগ করে স্বপ্ন দেখি: বাস্তব স্বপ্ন এবং অবাস্তব স্বপ্ন। ক্লাস নাইন-টেনে থাকতে অবাস্তব মনে হতো এমন কিছু স্বপ্ন অবশ্য এখন বাস্তব স্বপ্নে পরিণত হয়েছে, উল্টোটাও যে হয়নি তা না। তবে সোজাটার কথাই বলছি। সরল সূত্র মেনে তেমনই একটা বাস্তব স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। এই স্বপ্নের জন্ম আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে: একটা রেডিও দুরবিন (radio telescope) বানানোর স্বপ্ন।
ইঞ্জিনিয়ারিং এ অনার্স করতে গেলে, ফোর্থ ইয়ারে সবাইকেই একটা প্রজেক্ট করতে হয়। আমি সব দেখেশুনে ১ বছর বয়সী স্বপ্নটাকেই প্রজেক্টে রূপ দিলাম। আমরা তিনজন মিলে এক গ্রুপ: আমি, রায়হান আবীর (সচল) এবং ইমন (ব্লগিং করে না)। প্রজেক্ট সুপারভাইজার একজন আছেন, কিন্তু তিনি আমাদের তেমন কোন সাহায্যই করতে পারবেন না। তাই বেশ একা একা লাগছে। "বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন" এবং "বাংলাদেশ বিজ্ঞান জাদুঘর" সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। তারপরও সব বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ, এই কাজটা আগে করেছেন এমন কাউকেই পাচ্ছি না। সব ভেবেচিন্তে তাই সচলদের শরণাপন্ন হলাম। যদি পরামর্শ দেয়ার মত কাউকে পেয়ে যাই! রেডিও দুরবিন প্রজেক্টের জন্য আমরা কি ধরণের পরিকল্পনা করেছি এবং কি ধরণের সাহায্য লাগবে তা লিখব। এখানে আইইউটি-র বেশ ক'জন বড় ভাই আছেন, তারা আশাকরি প্রজেক্টের অর্থ সংকুলান এবং অন্যান্য পরামর্শ দেবেন। এছাড়া টেলিকমিউনিকেশন এর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন, আছেন বিজ্ঞানী এবং বিশুদ্ধ বিজ্ঞানে আগ্রহী অনেকে। তাদের সবার কাছেই পরামর্শ চাইছি...
আমাদের পরিকল্পনা
বহির্জাগতিক উৎস (পৃথিবী ছাড়া মহাবিশ্বের অন্য যেকোন বস্তু) থেকে আসা রেডিও তরঙ্গ সনাক্ত করাই রেডিও দুরবিনের কাজ। আলোক দুরবিন যেমন উৎস থেকে আসা দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ সনাক্ত করে, তেমনি রেডিও দুরবিন সেগুলো থেকে আসা রেডিও তরঙ্গ সনাক্ত করে। ১৯৩১ সালেই মার্কিন প্রকৌশলী কার্ল জি জান্স্কি প্রথম রেডিও দুরবিন তৈরী করেছিলেন। কিন্তু আমার জানামতে, বাংলাদেশে এখনও কোন রেডিও নেই। ১৯৯৯ সালের দিকে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশনের কয়েকজন সদস্য একটি লো-কস্ট রেডিও দুরবিন তৈরী করেছিলেন যা এখন আর নেই। আমরা লো-কস্ট বাদ দিয়ে একটি সেমি-প্রফেশনাল রেডিও দুরবিন তৈরীর পরিকল্পনা করেছি। কারণ লো-কস্ট দুরবিন আসলে স্কুলেই মানায়, ভার্সিটির প্রজেক্টের সাথে ঠিক যায় না। আর কথা না বাড়িয়ে মূল পরিকল্পনায় প্রবেশ করি:
"ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি" এবং "Fraunhofer-Institut für Integrierte Schaltungen" এর যৌথ প্রচেষ্টায় ইউরোপে একটি সেমি-প্রফেশনাল "Ku-band রেডিও দুরবিন" তৈরী করা হয়েছিল, ২০০৫ সালে। এটা তৈরী করা হয়েছিল স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষা এবং রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনপ্রিকরণের জন্য, কোন গবেষণার জন্য নয়। আমরা এই প্রজেক্টেরই বাংলাদেশী সংস্করণ করতে চাচ্ছি। তৈরী করার পরই আসল কাজ শুরু হবে, অর্থাৎ চাঁদ-সূর্য সহ আরও ছয়টি জ্যোতিষ্ক থেকে আসা তরঙ্গ সনাক্ত করা। একই সাথে আকাশগঙ্গার কেন্দ্র এবং অতিবৃহৎ কৃষ্ণবিবর থেকে আসা তরঙ্গ সনাক্ত করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।
স্কিম্যাটিক ডায়াগ্রাম
যে যন্ত্রপাতিগুলো লাগছে
আমরা সাধারণ স্যাটেলাইট ডিশ (অবশ্যই সলিড) এবং রিসিভার দিয়ে প্রজেক্ট করব। এগুলো বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি, কিন্তু নিশ্চিত নই। অ্যান্টেনা থেকে তাহলে যন্ত্রপাতির নাম দেয়া শুরু করি:
১. স্যাটেলাইট ডিশ - অ্যান্টেনা। ক্ষুদ্র শক্তির রেডিও তরঙ্গ প্রতিফলিত করে কেন্দ্র বরাবর স্থাপিত এলএনবি-তে পাঠাবে। C/N ratio খেয়াল করতে হবে।
২. এলএনবি - লো-নয়েজ ব্লক। প্রতিফলিত কেইউ ব্যান্ডের রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ করে তাকে এল ব্যান্ডে রূপান্তরিত করবে। অর্থাৎ ১২-১৮ গিগাহার্জের তরঙ্গ ৯৫০-২১৫০ মেগাহার্জের ইন্টারমিডিয়েট তরঙ্গে রূপান্তরিত হবে।
৩. ডিশ মাউন্ট
৪. ডিশ সাপোর্ট ফ্রেইম
৫. স্যাটেলাইট কেবল - এলএনবি থেকে সিগনাল রিসিভারে নিয়ে আসবে
৬. পজিশনার - এটার সাহায্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিশের অ্যাজিমুথ ও এলিভেশন পরিবর্তন করা যাবে। কম্পিউটারের মাধ্যমে এটা করা হবে।
৭. পজিশনারের কম্পিউটার ইন্টারফেইস - এটা দিয়ে পজিশনার পিসির সাথে লাগবে
৮. AWG18 কেবল - পজিশনার হয়ে ইন্টারফেসে কানেকশন দেয়ার জন্য
৯. স্যাটেলাইট রিসিভার
১০. ওভারলোড প্রটেকশনের যন্ত্রপাতি
১১. সার্জ প্রটেকশনের যন্ত্রপাতি
সফ্টওয়্যার
এখানটায় আমাদের কোন খরচ হবে না। কারণ সবগুলো সফ্টওয়্যারই ওপেন সোর্স। এগুলো দিয়ে কাজ করলে আইইউটি অথরিটি গ্রহণ করে কিনা সন্দেহ আছে। সেক্ষেত্রে আমরা ম্যাটল্যাবে যেতে পারি। তবে প্রাথমিকভাবে এই সফ্টওয়্যারগুলোই ব্যবহার করার কথা ভাবছি:
১. অপারেটিং সিস্টেম - উইন্ডোজ এক্সপি বা লিনাক্স
২. RadioAstro - পজিশনার এবং রিসিভারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য (XP)
৩. Gnuplot - রিসিভারে পরিমাপের যে ফলাফল আসবে তা প্রাথমিকভাবে প্রদর্শনের জন্য (Linux)
৪. Les cartes du Ciel - পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করার জন্য (XP)
যে ধরণের সাহায্য লাগবে
এগুলো নতুন কিনতে গেলে অনেক টাকা লাগার কথা। আইইউটি এর আগে ইন্টারনেটের জন্য স্যাটেলাইট ডিশ ব্যবহার করতো। তার একটা এখনও স্টোর রুমে পড়ে আছে। যদি কিনতে না পারি তাহলে সেই পুরনোটা দিয়েই কাজ চালাতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্য নয়েজ অনেক বেশী হবে। আর বহির্জাগতিক রেডিও তরঙ্গের শক্তি খুব কম হওয়ায় নয়েজের প্রভাব অনেক বেশী হবে। এছাড়া নিচের বিষয়গুলোতে পরামর্শ পেলে উপকৃত হব।
- এই যন্ত্রপাতিগুলো বাংলাদেশের কোথায় পাওয়া যেতে পারে?
- এগুলোর দাম কেমন হতে পারে? সেকেন্ড হ্যান্ড পাওয়ার উপায় আছে কি?
- আইইউটি থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা দিতে পারে? (আইইউটি-র বড় ভাইদের জন্য প্রশ্ন)
- এখানে পজিশনারের মাধ্যমে ডিশ ঘোরানো হবে। এটা না থাকলে কি কোন অসুবিধা আছে? সেক্ষেত্রে দাম অনেকটা কমে যেত আর কি। (এই প্রশ্নটা টেলিকমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞদের জন্য)
- এই প্রজেক্টের কোন স্পন্সর (আইইউটি ছাড়া) জোগাড় করার উপায় আছে?
এছাড়া অন্য যেকোন বিষয়ে পরামর্শ ও উপদেশ সানন্দে গ্রহণ করা হবে।
ডিসক্লেমার
কেবল রেডিও দুরবিন নির্মাণের কথা বললে এটা কোন মৌলিক প্রজেক্ট না। আন্ডারগ্র্যাড লেভেলে মৌলিক কিছু করার কথা আমি ভাবতেও পারি না। এই একই দুরবিন ইতিমধ্যে তৈরী করা হয়েছে। আমরা কেবল বাংলাদেশে পরীক্ষাটা চালাতে চাচ্ছি। আমি যেভাবে যন্ত্রপাতি জোগাড় করে দুরবিনটা বানাবো ঠিক সেভাবেই যদি অন্য কোন বানাতে চান তাতে আমার কোন আপত্তি নেই, আমি বরং সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করবো। বর্তমানে তো সেই সহযোগিতার অভাবটাই আমাকে সবচেয়ে বেশী ভোগাচ্ছে।
রেডিও দুরবিন তৈরী হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ডিটেকশন ও বিশ্লেষণ শুরু হবে। সেখানে হয়ত মৌলিক কিছু করে দেখাতে পারব। সেটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু বানানো পর্যন্ত সবকিছুই সবার কাছে উন্মুক্ত থাকুক। এই নির্মাণকৌশল তাই ওপেন সোর্স এবং এটা পাবলিক ডোমেইনের আওতায়ই থাকছে।
আরেকটা বিষয়: আমাদের গ্রুপে তিনজনের কেউই পড়াশোনার ব্যাপারে তেমন সিরিয়াস না। তাহলে বছরের শুরুতেই কেন প্রজেক্ট নিয়ে উঠেপড়ে লাগলাম, সেটা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিতে পারে। উত্তর হচ্ছে, এটাকে আমি শখের বাস্তবায়ন হিসেবে নিয়েছি। কেবল ফোর্থ ইয়ারের প্রজেক্ট না, এর সাথে একটা স্বপ্ন এবং একটা শখও জড়িয়ে আছে। উচ্চতর পড়াশোনায় এটা কাজে লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে। কিন্তু, বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রসারের জন্য এটা কাজে লাগবে বলে বিশ্বাস করি। এছাড়া আইইউটি-তে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশনের "স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চ" খোলা হচ্ছে। রেডিও দুরবিনটি তাই সবসময় এই ব্রাঞ্চের অধীনে থাকবে। আসছে মার্চে ঢাকায় "স্পেসফেস্ট" হতে যাচ্ছে। তৈরী করতে পারলে এটা সেই উৎসবে প্রদর্শিত হবে। এছাড়া পরবর্তীতে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন বা বিজ্ঞান জাদুঘর এই দুরবিনকে যেকোন অলাভজনক কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
মন্তব্য
কনট্যাকট্ সিনেমাটা দেখে জানতে পেরেছিলাম অডিও দূরবিনের ব্যাপারে। দারুন একটা জিনিস।
আমি বিজ্ঞানের কেউ না, তাই আপনাদের প্রজেক্টের ব্যাপারে কোন সাহায্যে আসবো না। তবে শুভ কামান রইলো - সফল হোক আপনাদের প্রজেক্ট।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হ্যাঁ, কন্টাক্টেই রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান সবচেয়ে ভাল দেখিয়েছে। মূল উপন্যাসটা তো কার্ল সেগান লিখেছিলেন। সেগানকে রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চারও অগ্রদূত বলা যায়। চন্দ্র ও মঙ্গল অভিযান থেকে শুরু করে অনেক অভিযানেই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। নভোযান পরিচালনার বিষয়টাও রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর অনেকটা নির্ভরশীল।
কন্টাক্ট ভাল লেগেছিল। তবে সিনেমাটা বোধহয় আরও ভাল করা যেত। ব্যাক টু দ্য ফিউচার এর সাথে তুলনা করলে রবার্ট জেমেকিস এর এই সিনেমাটা খুব বেশী প্রশংসা পাবে না। ক্যস্টিং ভাল ছিল, কিন্তু পরিচালনা ও ভিজ্যুয়াল স্টাইলে দুর্বলতা লক্ষ্যণীয়। তারপরও প্রশংসা পাবে, কারণ এ ধরণের সিনেমা আর হয়নি।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
নাশা ভাই
শুভ কামান-টাই কিন্তু বেশি দরকার!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
"শুভ কামান" এর দরকারটা আসলেই উপেক্ষা করার মত না
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
কি আর করা কামনা করতে গিয়া যখন কামান দিয়া ফালাইছি তখন আর কিই বা করা যাবে!
এখন সমানে কামান দাগান
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
গোলাগুলো জায়গামতো পড়লেই হয়। নইলে যে সব ভেস্তে যাবে। একেবারে ফ্রন্ট লাইনে কামান দাগাতে হচ্ছে, বুঝেনই তো
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
পড়তে বসলাম 'রেডিও দূরবীন' জিনিসটা কী জানবো। পড়া শুরু ক'রে দেখি এটা এখনো আবিষ্কারই হয় নাই। আশা ভেঙে গেলো।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
ভাঙা টুকরোগুলো রেখে দিয়েন। আবিষ্কার হওয়ার পর তাহলে আবার জোড়া লাগাতে পারবেন।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ওকে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
দুর্দান্ত একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছ। আমারও ইচ্ছা ছিল ব্যতিক্রমী কিছু একটা করব, শেষ পর্যন্ত ওই টেলিকম রিলেটেড প্রজেক্টই করতে হয়েছিল। তোমার স্বপ্ন, ইচ্ছার কথা জেনে খুব ভাল লাগল। আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস- অনেক দূর এগোবে তুমি।
আমার টেকনিক্যাল নলেজ খুব খারাপ, তাই সেদিক দিয়ে হয়ত সাহায্য করতে পারব না, তবে অন্য কোনও কাজে যদি লাগতে পারি, তাহলে অবশ্যই জানাবা।
আবারও বলছি, খুব ভাল লাগল তোমাদের আইডিয়া। একদমই নতুন, এবং ঠিকমত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে, শেষ হওয়ার পর এটা শুধু বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে থাকবে না, বরং এটা থেকে অনেক ভাল কিছু পাওয়া যাবে।
তোমাদের টীমের তিনজনের জন্যই অনেক অনেক শুভকামনা।
অনেক ধন্যবাদ রনি ভাই।
ঠিকই বলেছেন, টাকা০পয়সার বিষয়টা নিয়ে ইয়াহু গ্রুপে ডিটেইল্স আলাপ করা উচিত। এখনও মেইল করিনি। আজকে ভাবছি ধোলাইখাল যাব। ধোলাইখাল থেকে এসেই মেইল করব IUTIANS এ।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
তোমরা সাহস করে এই কাজে হাত দিয়েছে জেনে খুব ভাল লাগছে । শাবাশ !
যন্ত্রপাতির জন্য আমার পছন্দের জায়গা হল ধোলাইখাল । যদি নিজে কখনো গিয়ে থাক তাহলে আর নতুন করে বলার কিছু নাই । আর যদি না গিয়ে থাক, তাহলে আমি অনুরোধ করব কম করে হলেও পাঁচবার যেন ধোলাইখালে যাও । আমাদের ১-১ এর টার্ম ফাইনাল অনেক দিনের জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল । সেই সুযোগে আমার ধোলাইখালে ঘুরাঘুরি শুরু হয় । ইচ্ছা ছিল একটা উইন্ডমিল বানিয়ে আমার মোবাইল ফোনটা চার্জ করব । তার জন্য যন্ত্রপাতি খুঁজতে যেতাম । উইন্ডমিল শেষ পর্যন্ত একটা দাঁড়িয়েছিলও, তবে মোবাইল চার্জ করার মত যথেষ্ট না ।
ধোলাইখালে ঘুরে ফিরে অনেক রকম যন্ত্রপাতি, ভাঙ্গা, আস্ত অনেক কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে । হয়তো একটা সমস্যা সমাধানের জন্য তুমি ভাবলে একটা অ্যাসেম্বলি ব্যবহার করবে । কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলে আরো ভাল সমাধান দাঁড়া করানর মত যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে ।
ধোলাইখালে দামদর করার ব্যাপারে খুব-খুব সাবধান । একই বল বেয়ারিং আমি শুরুতে ৫০ টাকায় একটি কিনেছি, একমাস পর ৫ টাকায় একটি করেও কিনেছি । অভিজ্ঞতা । নতুন লোক চিনতে পারলেই অনেক রকম ভুজুং ভাজুং দিবে । ভাল হয় যদি পয়লা রাতে বেড়াল কাটার মত কিছু করতে পার । আমি প্রথমবার গিয়েছি একটা মটর কিনতে । জানইতো মটর দিয়ে জেনারেটরের কাজও করা যায় । এক যায়গায় দুইটা মটর দেখলাম, আমার কাজে লাগারমত । জিজ্ঞেস করি কত আরপিএম ইত্যাদি, দোকানদার কিছু বলতে পারেনা, শুধু বলে জিনিস ভাল । একদাম সাতশ টাকা । আমি তারপর ব্যাগ থেকে মাল্টিমিটার বের করলাম, ইচ্ছা ছিল শ্যাফট ঘুরিয়ে একবার দেখব কত ভোল্ট উঠে । দোকানদার আমার হাতে মাল্টি মিটার দেখে ভেবেছে আমি হয়ত পেশাদার টেকনিশিয়ান । বলে, আমার জন্য দাম কমিয়ে দুইশতে নামতে রাজি আছে, যদি আমি দুইটা মটর কিনি ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আপনের কাছ থেকে অনেক তথ্য জানলাম। খুব কাজে দেবে। আজই ধোলাইখাল যাব, প্রথমবারের মত। জায়গাটার নাম তো সবাই শুনেছে। কিন্তু খুব ম লোকই গেছে। এবার না গিয়ে উপায় নেই। আজ শুধু দেখে আসব আমার কাজে লাগার মত কি কি পাওয়া যায়। পরে ভার্সিটি প্রশাসনের সাথে আলাপ করে আবার যাব। আমি আশা করছি, স্বল্প মূল্যে সব পেয়ে যাব। আমি অবশ্য দামাদামি তেমন একটা করতে পারি না। তবে সাথে রায়হান আবীর এবং অন্য কয়েকজন থাকবে নিশ্চয়ই। ওরাই সেটা চালিয়ে নিতে পারবে বোধহয়।
বুঝলাম ধোলাইখালের কেউ টেকনিক্যাল বিষয় বুঝবে না। সেক্ষেত্রে ডিশের হাল-হকিকত আমাকেই বুঝে নিতে হবে। দেখি কতদূর কি করা যায়।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
শিক্ষানবিস
স্যাটেলাইটের ব্যাপারে আমার জ্ঞান খুবই নীচু স্তরের, টেলিকম্যুনিকেশন কোর্সের আন্ডারে যতটা পড়ানো হয় আর কী ! তবে অতোটুকুতে যা জানি, স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে C/N ratio অর্থাৎ ক্যারিয়ারের পাওয়ার আর নয়েজ পাওয়ারের একটা স্ট্যান্ডার্ড রেশিও আছে, সে'টা মেইনটেইন করতে হয়, আর সে'খানেই মূল বিপদ। কারণ রিসিভিং আর্থ স্টেশনের রিসিভার ব্লক যে'টা ( অর্থাৎ LNA, down converter ইত্যাদি যেখানে থাকে ) সেখানের ফিল্টার যদি ভালো কাজ না করে, কিংবা যেই IF Amplifierগুলি ব্যবহার করবে, সেগুলি যদি লো নয়েজের না হয়, তাহলে স্কাই নয়েজের সাথে রিসিভারের নয়েজ মিলে লেজে গোবরে অবস্থা হবে।
বাংলাদেশে বসে কিছু কিছু কাজ করা আসলেই খুব কষ্টকর। এই সেমিস্টারে বায়োমেডিক্যাল প্রোজেক্টের আন্ডারে প্রোজেক্ট করলাম, আইবল মুভমেন্ট কন্ট্রোলড মাউস-এর উপর। বাংলাদেশে যে ধরণের যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়, সেগুলি দিয়ে লো এম্পলিচুডের সিগন্যাল ডিটেক্টশন এবং প্রসেসিং বেশ ঝামেলার কাজ। আমাদের হার্ডওয়্যার ইম্পলিমেন্টশন ১০০ ভাগ ঠিক ভাবে কাজ না করায়, ডিরেক্ট ভার্সিটির দামি ECG Machine দিয়ে সিগন্যাল বিন ফাইলে রাইট করে, সে'টাকে ম্যাটল্যাবে প্রসেস করেছিলাম আমরা। তোমাদের সিগন্যাল যদিও লো এম্পলিচুডের না, তবুও আমার শংকা রিসিভার এন্ডের নয়েজ নিয়ে হ্যাপা পোহাতে হতে পারে।
এর বাইরে আসলে বলার মত খুব বেশি জ্ঞান নেই, তবু কখনো কিছু জানতে পারলে নিশ্চয়ই জানাবো।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
প্রথমেই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
C/N ratio র কথা তুলে খুব ভাল করেছেন। বিষয়টা আসলেই দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। আমি কয়েক মাস আগে আম্রিকার "Society of Ameteur Radio Astronomers" এর গুগল গ্রুপের সদস্য হয়েছিলাম। ওদের ওখানে ডিশ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক মেইল আসে। তার মধ্যে অধিকাংশই থাকে: "নিয়মমতোই তো সব করলাম, কিন্তু কিছুই আসছে না, কেবলই নয়েজ।"
বাংলাদেশের নকল যন্ত্রপাতি দিয়ে আমরা যেটা বানাবো তাতে নয়েজ ছাড়া আদৌ কিছু থাকবে কি-না সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এজন্যই আমরা আইইউটি-র পুরনো স্যাটেলাইট ডিশ ব্যবহার করতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু ধোলাইখালের মালও যে সেরকম হবে না, তার গ্যারান্টি পাচ্ছি না। দেখা যাক কি হয়।
IF amplifier নিয়েও ঝামেলা আছে। আগে খুব সরল একটা রেডিও দুরবিনের প্ল্যান করেছিলাম। সেটাতে অ্যামপলিফায়ারগুলো নিজেদের করতে হতো। কিন্তু এবার তো এগুলো স্যাটেলাইট রিসিভারের মধ্যেই থাকছে। তাই রিসিভার খুব ভাল হতে হবে। কিন্তু দাম নিয়েও সমস্যা আছে। এটার দামই সবচেয়ে বেশী।
পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়লে আপনাকে জানাবো।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বাংলাদেশের বাজারের এম্পলিফায়ারের অবস্থা বেশ করুণ। পাটুয়াটুলি হচ্ছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের স্বর্গ। সেখানে দেখবে টেলিকম স্পেয়ার্স নামে একটা দোকান আছে, ওদের ওখানেই মোটামুটি সব ধরণের আই সি পেয়ে যাবে, বিশেষত দুষ্প্রাপ্য আইসি গুলি।
তবে লো নয়েজ এম্পলিফায়ার পাওয়াটা খুব কষ্টের। নয়েজ তো এমনই এক জিনিশ, ঘরের মধ্যে পাওয়ার লাইন থাকলেও নয়েজ যোগ হয়। কাজেই এ ব্যাপারটা খুব সাবধানে হ্যান্ডেল করতে হবে।
রিসিভারের মধ্যে IF Amplifier থাকে ঠিকই, কিন্তু তেমন পারফেক্ট রিসিভারের দাম যে কেমন হয়, সেটাও কিন্তু চিন্তার।
আর ধোলাইখাল কিংবা পাটুয়াটুলিতে অনেক শস্তায় অনেক ভ্যারিয়েশনের যন্ত্র পাওয়া যায় - এটা অস্বীকার করতে পারবো না। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, হাই প্রিসিশনের কাজ করার মত যন্ত্র বাংলাদেশে পাওয়া দুষ্কর, অন্তত আমি করতে পারি নি।
তবে শেষ কথা হল, ঝামেলা থাকবেই কিন্তু তার মধ্যেও বাংলাদেশের ছেলে মেয়েরা দারুন সব কাজ করছে এসব যন্ত্রাংশ দিয়েই। কাজেই কষ্ট হলেও তোমার দূরবীন কাজ করবে, আমি নিশ্চিত।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আশা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। কাজ চালিয়ে যাব, যতটুকু পারি আর কি!
হ্যা, ওরকম পারফেক্ট রিসিভার পাওয়াটা বোধহয় কষ্টকর হয়ে যাবে। টাকার ঝামেলা তো আছেই।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
শুভকামান (নাশুদার কামান না, এটা দ্রোহীর কামান) শিক্ষানবিস ও তার দলের জন্য।
দুই দুইটা শুভকামান পেয়ে গেলাম। ঠিকমতো কাজে লাগাতে না পারলে সেই লজ্জা রাখিব কোথায়...
সত্যি বলি, একটু একটু ভয় করছে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
প্রজেক্ট কইরা কী হইবো- মর্তে তো একদিন হবেই।
=============================
অ্যাম্নেই প্রেশারে আছস। তার উপর মরণের কথা মনে করলে কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে। আপাতত, এই ৩-৪ মাসের জন্য মৃত্যু বিষয়টারে ভুইলা যা। ভুলে গেলেই তো আর পালিয়ে যাবে না...
সো নো টেনশন
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আরেকটা ভালো কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, সে'টা হচ্ছে বৃষ্টি ! স্যাটেলাইটের সিগন্যালের যম হচ্ছে বৃষ্টি। বিশেষত Ku Band এ অপারেট করা সিগন্যালের ক্ষেত্রে। আপলিংকে শুধু সিগন্যাল attenuate করে, কিন্তু ডাউনলিংকে সিগন্যাল তো attenuate করেই, সেই সাথে প্রচুর নয়েজও বেড়ে যায় বৃষ্টির কারণে। কাজেই বৃষ্টির জন্যও তোমাদের একটু খাটা লাগবে মনে হয়।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনি একেবারে ভাইটাল বিষয়গুলো তুলে আনছেন। এজন্যই আপনার মন্তব্যের অপেক্ষা করছিলাম।
বৃষ্টিটাও দেখছি অনেক ঝামেলা করবে। এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকব। বৃষ্টির ঝামেলাটা জানতাম, কিন্তু এটা যে Ku band এর জন্য আরও ক্ষতিকর হয়ে উঠে তা জানা ছিল না। কি জানি হয়।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভাইরে, আমার জ্ঞান খুবই সামান্য। বৃষ্টি সবার জন্যই ক্ষতিকর, আমি Ku Band এর কথা বললাম কারণ আমি নিজে পড়েছি মূলত Ku Band এর সিগন্যাল নিয়েই, আর তোমার লেখাতেও এই ব্যান্ডের কথাই পড়লাম।
তবে বৃষ্টি অনেক পরের চিন্তা, যদি রোদেলা আকাশেও কাজ করে, তাহলেই তোমাদের কাজ বিশাল কাজ হয়ে যাবে।
বেস্ট অভ লাক...
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
শিক্ষানবিস এবং সাথীরা,
আমার নিরন্তর শুভ কামনা রইল। কোন কাজে লাগতে পারলে জানিও। বিশেষ করে Matlab নিয়ে।
আর দেখলাম Gnuplot ব্যবহারের কথা লিখেছ। যতদূর জানি সেইটা linux based. তোমাদের OS দেখলাম XP. কেমনে কি?
Windows এ অবশ্য তুখোড় একটা graphing software আছে যা আমরা বেদম ব্যবহার করি। Microlab এর Origin।
তোমরা নিশ্চয়ই নাম শুনেছ। বেসিক লেভেলের এবং এডভান্সড লেভেলের কিছু এনালাইসিস তুমি এইটা দিয়ে ভালই করতে পারবে।
সাহায্য লাগলে জানিও।
আসলে Gnuplot এর কথা একটা ম্যানুয়ালে পেয়েছি। এটা নিয়ে আর ঘাটাইনি। আর এই সফ্টওয়্যার খুব বেশী লাগবেও না।
কিন্তু যদি দেখি, এটাই লাগছে তাহলে লিনাক্সে শিফ্ট করে ফেলতে পারি। পিসিতে দুটাই আছে। Origin এর কথা তোলার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এটা দিয়ে কিছু করা যায় কি-না দেখব।
সাহায্য লাগলে অবশ্যই জানাবো। Matlab নিয়েও আপনার দ্বারস্থ হব। রেডি থাইকেন...
আমাদের ম্যাটল্যাব জ্ঞান খুব সীমিত, যদিও দুটা কোর্সে ছিল। কিন্তু ভার্সিটির কোর্সের জন্য ম্যাটল্যাব নিয়ে তেমন কিছুই ঘাটাইনি।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
সফল হোক আপনাদের প্রচেষ্টা।
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
লেখা মন্তব্য সবি মাথার ওপর দিয়ে গেল
তবু শুভ কামান
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আমার মন্তব্যটাও?
=============================
হুম
রায়হান আবীরের মন্তব্যটা কাঁধের ওপর দিয়ে গেলো।
মানে কিরামান কাতিবান ভাইয়েরা কলকল করলো
রানা, মর্তে তো একদিন হবেই
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হারামজাদা!
গালিটা ক্যান দিলাম বুইঝা ল।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
অলরেডি গালিটা ফিরায়া দিছি।
তারপরও প্রজেক্ট যদি সফল না হয় তাইলে কিন্তু তোর খবর আছে....
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
নতুন মন্তব্য করুন