কোন ক্লাস এর বইয়ে যেন আর্মস্ট্রং-অলড্রিন-কলিন্স এর চন্দ্রাভিযানের বর্ণনা পড়েছিলাম। সেখানেই প্রথম "শান্তির সাগর" নামটার সাথে পরিচয়। অ্যাপোলো ১১ চাঁদে "শান্তির সাগর" নামে একটা জায়গায় অবতরণ করেছিল। প্রথমবার পড়ার পর অন্য অনেকের মত আমিও ভেবে বসেছিলাম, এটা বোধহয় পৃথিবীর মত কোন সাগর। কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না, মাটি বাদ দিয়ে নভোযান কেন সমুদ্রের মাঝখানে অবতরণ করবে। সেসব কনফিউশন এর কথা ম...কোন ক্লাস এর বইয়ে যেন আর্মস্ট্রং-অলড্রিন-কলিন্স এর চন্দ্রাভিযানের বর্ণনা পড়েছিলাম। সেখানেই প্রথম "শান্তির সাগর" নামটার সাথে পরিচয়। অ্যাপোলো ১১ চাঁদে "শান্তির সাগর" নামে একটা জায়গায় অবতরণ করেছিল। প্রথমবার পড়ার পর অন্য অনেকের মত আমিও ভেবে বসেছিলাম, এটা বোধহয় পৃথিবীর মত কোন সাগর। কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না, মাটি বাদ দিয়ে নভোযান কেন সমুদ্রের মাঝখানে অবতরণ করবে। সেসব কনফিউশন এর কথা মনে হলে আজও হাসি পায়। কনফিউশন দূর হতে অবশ্য বেশিদিন লাগে নি। একসময় বুঝেছিলাম, এসব নাম নাসা বিজ্ঞানীদের রসিক মন আর ল্যাটিন-প্রীতিরই পরিচায়ক।
অনেকদিন পর হঠাৎ এই কথা মনে হওয়ার কারণ একটা ব্রেকিং নিউজ। বর্তমানে মহাকাশ অভিযান এবং গ্রহ বিজ্ঞানের গবেষকদের জন্য সবচেয়ে উত্তেজনাকর খবর হচ্ছে, চন্দ্রপৃষ্ঠে পানির সন্ধান লাভ। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় এই ২৪শে সেপ্টেম্বর চাঁদের পৃষ্ঠতলে হাইড্রক্সিল (OH-) এবং পানির (H2O) অণু আবিষ্কৃত হল। চাঁদে অবশ্যই কোন পানির সাগর নেই, তাত্ত্বিকভাবেই সেটা অসম্ভব। সেখানে পানির বিচ্ছিন্ন অণু মিশে আছে পৃষ্ঠতলীয় পদার্থগুলোর সাথে। যত মেরুর দিকে যাওয়া যায় এই পানির পরিমাণ তত বাড়ে। তবে কমবেশি সব জায়গাতেই পানির অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হচ্ছে। চন্দ্র গবেষকরা এই আবিষ্কারে একেবারে মহাকাশ থেকে পড়েছেন, কারণ ৪০ বছর আগে অনেকে চন্দ্রজলের ভবিষ্যদ্বাণী করলেও গত কয়েক দশকের পশ্চিমা অভিযানগুলো তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ইসরো (ISRO) এবং নাসা-র এই যুগান্তকারী আবিষ্কার তাই সবাইকে বেশ ভালভাবেই চমকে দিয়েছে।
ছোট ছোট কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে একবিংশ শতকের জ্যোতির্বজ্ঞান জগতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আবিষ্কারটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক, কিছু অন্তর্দৃষ্টি এবং দূরদৃষ্টি অর্জন করতে পারলে লাভ বৈ ক্ষতি তো নেই...
কারা আবিষ্কার করল চন্দ্রজল?
চাঁদে সাক্ষাৎ পানির সন্ধান লাভের মূল কৃতিত্ব আমরা কাদেরকে দেব? একটু চিন্তার বিষয়। পত্রিকা পড়লে দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়। পশ্চিমা খবরগুলোতে বেশি ফিচার করা হয় নাসা-র বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র এবং তথ্য বিশ্লেষণ, আর প্রাচ্যের খবর জুড়ে থাকে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মহাবিষ্কার। আমি এখানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবেই থাকছি। কারণ সবকিছু ছাপিয়ে এটা আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ব এবং সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবেই টিকে থাকবে। এভাবেই একে একে প্রমাণিত হচ্ছে যে, মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণাই সবচাইতে বেশি আন্তর্জাতিক চরিত্র অর্জন করতে পেরেছে।
ভারতের সরকারি মহাকাশ সংস্থা "ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন" (ইসরো) চাঁদে প্রথম নভোযান পাঠিয়েছিল ২০০৮ সালের অক্টোবরে। নভোযানের নাম "চন্দ্রযান-১"। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই সিরিজে আরও নভোযান পাঠানোর ইচ্ছা তাদের ছিল। কিন্তু মর্ত্যে অনাহারী মানুষ রেখে স্বর্গারোহনের চিরন্তন ইউটোপিয়ান যুক্তি তাদের যে পরিমাণ ভুগিয়েছিল, তাতে চন্দ্রযান-২ যে অক্কা পেতে বসেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। চাঁদের পানি এসে তাকে শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে দিল আর কি!
নভোযানে গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি থাকে সেগুলোকে বলে পেলোড। চন্দ্রযান-১ এ মোট ১১টি পেলোড ছিল, বিভিন্ন দেশের। এর মধ্যেই একটি পেলোড "মুন মিনারেলোজি ম্যাপার" (M3 - এম টু দ্য পাওয়ার থ্রি), নাসার তৈরি। এটা অতি উন্নতমানের একটি স্পেকট্রোমিটার তথা বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র যা দিয়ে বিভিন্ন তরঙ্গের বর্ণালী বিশ্লেষণ করা হয়, এই বিশ্লেষণের মাধ্যমেই যে উৎস থেকে তরঙ্গটি এসেছে সেই উৎস কি পদার্থ দিয়ে গঠিত তা বের করে ফেলা যায়।
২০০৯ এর অগাস্টে চন্দ্রযান বিকল হয়ে যায়, অর্থাৎ রেডিও সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বিকল হওয়ার আগেই তার পেলোডগুলো পৃথিবীর তথ্য বিশ্লেষণ কেন্দ্রে অনেক অনেক তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেসব তথ্যের বিশ্লেষণ এখনও চলছে। তেমনই একটি বিশ্লেষণের ফলাফল হিসেবে "চন্দ্রপৃষ্ঠে পানির সন্ধান" এল। চন্দ্রযান-১ এর এম৩ বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রের সব তথ্যের বিশ্লেষণ চলছিল নাসাতে, বিশ্লেষণ দলের প্রধান ছিলেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপিকা "কার্ল এম পিটার্স"। পিটার্সই বিশ্ববাসীকে প্রথম তথ্যটি জানিয়েছেন। তারপর থেকে ভারতীয় মহাকাশপ্রেমী মহলে উৎসব চলছে। তবে সবার নিশ্চয়ই খেয়াল আছে, এটা একটি আন্তর্জাতিক অর্জন, আমরা চাই মহাকাশের প্রতিটি অর্জন যেন হয় আন্তর্জাতিক, ভুলক্রমেও যেন কোন একটি অর্জন জাতীয়তাবাদী লেবেল না পেয়ে যায়।
ইসরো-র চন্দ্রযান-১ + নাসা-র এম৩ = চন্দ্রজলের সন্ধান লাভ
এই তথ্য পরর্ব্তীতে নাসার আরও দুটি বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র নিশ্চিত করেছে:
- Visual and Infrared Mapping Spectrometer (VIMS), ক্যাসিনি নভোযানের পেলোড
- High-Resolution Infrared Imaging Spectrometer (HIRIS), ইপক্সি নভোযানের পেলোড
আবিষ্কারটি কিভাবে হল?
বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র কিভাবে কাজ করে তা বুঝলেই এই প্রশ্নের উত্তর বোঝা যাবে। বর্ণালিবীক্ষণ বলতে কোন তরঙ্গের বর্ণালীগুলো ভেঙে ভেঙে বিশ্লেষণ করাকে বোঝায়। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে অবলোহিত তরঙ্গ। চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হয়ে অবলোহিত তরঙ্গ এম৩ তে পৌঁছেছে। কিন্তু চাঁদের পৃষ্ঠে বিভিন্ন পদার্থ সেই তরঙ্গের বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ইতিমধ্যেই শোষণ করেছে। এই শোষণের ফলে তরঙ্গের স্থানে স্থানে বিশোষণ রেখা (absorption line) পাওয়া যায়। তরঙ্গে বিশোষণ রেখার সজ্জা এবং তীব্রতা থেকেই বলে দেয়া সম্ভব সেটা কোন পদার্থের কারণে হয়েছে। এম৩ থেকে পাওয়া বর্ণালী বিশ্লেষণের সাথে পানি এবং হাইড্রক্সিল অণুর বর্ণালী প্যাটার্ন হুবহু মিলে গেছে। এভাবেই পানি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এম৩ এর নামের মধ্যে মিনারেলোজি শব্দটি আছে। তার মানে সে প্রধানত খনিজ পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেছে। চাঁদের খনিজ পদার্থের মধ্যেই পানির অণুগুলো পাওয়া গেছে। নাসা থেকে প্রকাশিত এই ছবিটিতেই খনিজ পদার্থে পানির অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। নীল রং এর মাধ্যমে পানি বোঝানো হয়েছে:
চাঁদে কী পরিমাণ পানি আছে?
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন চাঁদের পুরো পৃষ্ঠ জুড়েই কমবেশি পানির অণু আছে। কিন্তু তরল পানির তুলনায় এই পরিমাণ খুব বেশি না। সূক্ষ্ণভাবে পরিমাণটা এখনও বের করা যায় নি। তবে অনুমান হচ্ছে, চাঁদের মাটিতে প্রতি ১০ লক্ষ অণুতে পানির অণু আছে ১,০০০। বিষয়টা আমাদের স্বজ্ঞার সাথে মিলিয়ে বললে এমন হয়, চাঁদের উপরি পৃষ্ঠের এক টন মাটি প্রক্রিয়াজাত করলে সেখান থেকে ৩২ আউন্স পানি পাওয়া যাবে।
পানির অণুগুলো কোথায় আছে?
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি বিস্মিত। তারা এতদিনের গবেষণায় ধারণাই করতে পারেননি যে, চাঁদের পুরো পৃষ্ঠ জুড়ে এত পানি থাকতে পারে। তবে আগেই বলেছি, কমবেশি। বিষুবীয় অঞ্চল থেকে যতই মেরুর দিকে যাওয়া যাবে চাঁদের পানি অণুর ঘনত্ব ততই বাড়তে থাকবে। মেরু অঞ্চলে থাকবে সবচেয়ে বেশি। এটা অবশ্য আমাদের পর্যবেক্ষণ এবং তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে মিলে যাচ্ছে। কারণ সৌর জগতে গ্রহগুলোর মেরু অঞ্চলে সূর্যের আলো সবচেয়ে কম পৌঁছায় বলে সেখানেই বরফ থাকে সবচেয়ে বেশি। চাঁদের ক্ষেত্রেও পানির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি সেখানে। ভূগোলের ভাষায় বলা যায়, অক্ষাংশ যত বাড়বে সেখানে পানির পরিমাণও তত বাড়বে। বিষুবরেখার অক্ষাংশ ০।
চাঁদে কিভাবে পানি জমেছে, বণ্টিতই বা হচ্ছে কিভাবে?
বিষয়টা নতুন। তাই এখনই শেষ কথা বলা যাচ্ছে না। তবে অনেকে বিভিন্ন প্রকল্প হাজির করেছেন। যেমন কিংস্টন ইউনিভার্সিটি-র ডঃ ক্রিস ওয়েল্চ বলছেন সৌর বায়ুর কথা। সূর্য থেকে আসা বিভিন্ন পদার্থের নিরন্তর স্রোতকেই সৌর বায়ু বা সোলার উইন্ড বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন থাকে। সৌর বায়ু চাঁদ এবং পৃথিবীতেও এসে পৌঁছায়। চাঁদের নিজস্ব কোন বায়ুমণ্ডল নেই, এমনকি কোন পদার্থকে বেঁধে রাখার জন্য চৌম্বক ক্ষেত্রও নেই, যা পৃথিবীর আছে। তাই চাঁদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে তা হল, সৌর বায়ুর হাইড্রোজেন চন্দ্রপৃষ্ঠের খনিজ পদার্থে থাকা অক্সিজেন এর সাথে মিলে পানি এবং হাইড্রক্সিল তৈরি করেছে। এভাবেই পানির মোড়কে চাঁদের বুকে বন্দি হয়েছে হাইড্রোজেন। অবশ্য এটা কেবলই একটি প্রকল্প তথা হাইপোথিসিস।
সৌর বায়ুর প্রভাব যে চাঁদের মেরুতে বেশি তা কিন্তু না। তাহলে প্রায় সব পানিই মেরু অঞ্চলে কেন? এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর এখনও পাওয়া যায় নি। তবে এবারও প্রকল্পের অভাব নেই। কোন প্রকল্পই অবশ্য খুব একটা জোড়ালো না। কিন্তু এ নিয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই যে, বিষুবীয় অঞ্চল ও এর আশপাশ থেকে পানির অণুগুলো মেরু অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং সেখানে বরফ আকারে সংরক্ষিত হয়েছে, খনিজ পদার্থের মধ্যেই। অর্থাৎ চাঁদের মেরুতে আছে বরফ। অনেকে বলছেন, কোন মহাজাগতিক সংঘর্ষের কারণে মেরু অঞ্চলে বেশি পানি চলে গেছে। সূর্যের আলো এবং অবলোহিত বিকিরণ দিয়ে দেখা চাঁদের দুটি ছবি থেকেই বিষয়টা বোঝা যায়: মেরু অঞ্চলে সূর্যের আলো সবচেয়ে কম এবং অবলোহিত বিকিরণের মাধ্যমে সেখানেই পানি পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি।
এই আবিষ্কার থেকে আমরা কি পেলাম?
ডঃ ক্রিস ওয়েল্চ বলছেন, চাঁদের মাটিতে পানি আবিষ্কার মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। অ্যাপোলো অভিযানের পর দীর্ঘ ৪০ বছর নাসা নিষ্ক্রিয় ছিল। সম্প্রতি আবার লুনার রিকনিসন্স অর্বিটার এর মাধ্যমে কাজ শুরু করা হয়েছে। ভারতের চন্দ্রযান এবং যুক্তরাষ্ট্রের লুনার রিকনিসন্স ই হয়ত ভবিষ্যতে চাঁদভিত্তিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সবচেয়ে ভাল অবদান রাখতে পারবে।
পানি অনেক ভারী এবং নভোযানে করে পৃথিবী থেকে চাঁদে পানি নিয়ে যাওয়া একটা লস প্রজেক্ট। কিন্তু চাঁদের পানিকে ঠিকমত কাজে লাগানো গেলে চাঁদে উপনিবেশ স্থাপন খুব কঠিন কিছু হবে না। চাঁদে অবশ্যই তরল পানি নেই, কিন্তু মাটি থেকে পানির অণুগুলোকে আলাদা করে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন সম্ভব। একসময় বলা হচ্ছিল সেখানে ৩০০ মিলিয়ন টন পানি আছে, বর্তমান হিসেবে এই পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে। পানির পাশাপাশি, এই অণু থেকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন আলাদা করে সেটাকে রকেটের প্রপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়া শ্বসনের জন্য চাঁদের অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারার সুবিধা তো আছেই। অনেকে বলছেন, চাঁদের ১ ঘনমিটার মাটি থেকে ১ লিটার পানি পাওয়া সম্ভব। এমনটি হলে ভবিষ্যতে চাঁদে উপনিবেশ স্থাপনে আর কোন বাঁধাই নেই। তবে অবশ্যই সে উপনিবেশ হবে কেবল বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য।
এই আবিষ্কার ভারতের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ১৯৯৯ সালে যখন চন্দ্রযান প্রকল্প উত্থাপিত হয় তখন উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের কথা বলে অনেক রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীই এর বিরোধিতা করেছিলেন। এর পেছনে অনেক যুক্তিও ছিল। এসব মানবতাবাদী যুক্তির সাথে যুদ্ধ করেই ইসরো অসাধ্য সাধন করেছে। তারপরও পদে পদে হোচট খেতে হয়েছে। অবশেষে কাজ শেষ না করেই যখন ২০০৯ এর অগাস্টে চন্দ্রযান বিকল হয়ে যায় তখন ইসরো রীতিমত বিপাকেই পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই আবিষ্কারের পর তারা আবার বুক উঁচিয়ে বলতে পারছে, ইসরো-র চন্দ্রযান প্রকল্প পুরোপুরি সফল হয়েছে। আমারও সেরকমই মনে হচ্ছে।
আমি নিজেও চাঁদের প্রতি বেশ দুর্বল। গত কয়েক মাস ধরেই এমন একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলাম, চাঁদে জ্যোতির্বিজ্ঞান মানমন্দির স্থাপিত না হলে যে প্রজেক্ট সফল হওয়া সম্ভব না। মহাবিশ্বের ইতিহাস নিয়ে আমি অনেক আগে থেকেই আগ্রহী। মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ নিয়ে সচলায়তনে আগে লিখেছিও। কিন্তু এখন বেশি আগ্রহী কয়েক বিলিয়ন বছর আগে থেকে আসা ২১ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একটি সংকেত নিয়ে। এই সংকেত এতই দুর্বল যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং রেডিও ব্যতিচারের কারণে ঠিকভাবে সনাক্ত করা সম্ভব না। কিন্তু চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে একটি রেডিও দুরবিন স্থাপন করতে পারলেই কেল্লা ফতে। মহাবিশ্বের ইতিহাস তখন আমাদের হাতের মুঠোয় এসে যাবে। এছাড়া মঙ্গলকে যদি দ্বিতীয় পৃথিবী বানাতে চাই তাহলে চাঁদকে ডেমো হিসেবে ব্যভহার করার বিকল্প নেই। নাসা-র অবশ্য এরকম পরিকল্পনা রয়েছে। এই সব পরিকল্পনার নতুন চালিকাশক্তি হবে এবার চন্দ্রজল।
নিল আর্মস্ট্রং ও এডুইন অলড্রিন এর চন্দ্রাবতরণের পর চাঁদ নিয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন এই পানির সন্ধান লাভ। আর্মস্ট্রং এর অমর বাণীর সূত্র ধরে টাইমস অফ ইন্ডিয়া যে শিরোনাম ছেপেছে তার সাথে তাই আমি একমত:
One big step for India, a giant leap for mankind.
তথ্যসূত্র:
- Water Present Across The Moon's Surface, New Research Shows, সায়েন্স ডেইলি
- Finding Water On The Moon Has Major Implications For Human Space Exploration, সায়েন্স ডেইলি
- Water Molecules Found on the Moon, নাসা
- Water on the Moon Buoys India's Space Program, টাইম
মন্তব্য
- চাঁদে পানির খবরটা জানা হলো আপনার সৌজন্যে। ভালোও লাগলো জেনে। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
লেখাটা পড়ার সময় একটা জিনিষ ভাবছিলাম, ভারত চান্দে নভোযান পাঠায়া দিলো আর আমরা এখনো 'পাওয়ার-পয়েন্ট' প্রেজেন্টেশন বানিয়ে দেশকে ডিজিটাল বানানোর চেষ্টায় আছি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারত আসলেই অনেক এগিয়ে গেছে। চন্দ্রযানের বিশাল সাফল্যের পর তারা ২০১৩ সালের মধ্যে চাঁদের মাটিতে নভোযান নামিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করছে। তবে যা মনে হচ্ছে চীন ও ভারতের মধ্যে চাঁদ নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে এটা ভাল মনে হলেও এ ধরণের রেস এর সুদূরপ্রসারী ফল বেশ খারাপ। যেমন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া স্নায়ু যুদ্ধ ৬ বার মানুষকে চাঁদে পাঠালেও সুদূরপ্রসারী কোন অবদান রাখতে পারে নি। স্নায়ু যুদ্ধ মরতে শুরু করার সাথে সাথে মহাকাশ অভিযানও মরে গেছে।
আর আমাদের দেশের অবস্থা তো শোচনীয়। SPARRSO এখনও জনকল্যান এবং দেশের উন্নতির জন্যই কৃত্রিম উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল ধরতে পারে নি, দেশের উন্নতিতে কিছু অবদান রাখার পরই কেবল মাত্র মহাআকাশ গবেষণার সুযোগ আসে। ISRO-র জন্মও হয়েছিল আবহাওয়া, কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট আর কৃষিকাজে সাহায্যের জন্য, সেটা ১৯৬৮ সালের কথা। ৪০ বছরের বিবর্তন হয়ে গেছে তাদের। তবে আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে কাজ হলে ভারত নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে মহাকাশ গবেষণায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
খবরটা ইউনিভার্সিটির অ্যাস্ট্রোনোমি ডেপার্টমেন্টের নিউজ লেটারে দেখেছিলাম। এখন বিস্তারিত জানতে পারলাম। ধন্যবাদ বিশ্লেষণসহ লেখাটির জন্য।
অফিস যাবার পথে রেডিওতে খবরটা শুনেছিলাম, খুব সংক্ষিপ্ত আকারে। আপনার সহজ সাবলীল ভাষায় লেখা বিস্তারিত জেনে পুরো ব্যাপারটা আর তার তাৎপর্যটা বুঝলাম। বেশ ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ লেখার জন্য।
বিজ্ঞানের কথা সহজ করে লেখা যে কোন ভাষায়ই কঠিন। বাংলায় খুব কম মানুষই সেটা করেন বা করতে পারেন। বাংলাতে আমার পড়া বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার মধ্যে আপনার লেখা এদিক থেকে একেবারে সামনের কাতারে থাকবে।
আপনার প্রজেক্টের ব্যাপারে বিস্তারিত জানার ইচ্ছে থাকলো। সময় করে লিখবেন আশা করি।
একটা কথা, সী অফ ট্র্যাঙ্কুইলিটি-র বাংলা কি "প্রশান্তির সাগর"-টা বেশি কাছাকাছি হয় না?
হ্যা "প্রশান্তির সাগর" ই হওয়া উচিত। কিন্তু কোন ক্লাসের বইয়ে যেন শান্তির সাগর ছিল। তাই ঐটার কথাই লিখলাম।
আমরা আন্ডারগ্র্যাড এর প্রজেক্ট হিসেবে মহাজাগতিক ২১সেমি সংকেত নিয়ে কিছু তাত্ত্বিক কাজ করছিলাম, আসলে কাজটা এখনও শেষ হয়নি। প্রাথমিক ধারণার জন্য এই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনটা দেখতে পারেন:
- Study of Cosmic Reionization era with redshifted 21cm signal
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভালো লাগলো। আপনার প্রজেক্ট নিয়েও লিখুন না।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
প্রজেক্টের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন এর লিংক উপরের মন্তব্যে দিয়েছি। চাইলে দেখতে পারেন। ভবিষ্যতে এ নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
যথারীতি দারুন!!
-------------------
আমার ফ্লিকার
---------------------
আমার ফ্লিকার
খুব ভালো লাগলো এমন চমৎকার ভাষায় এমন গর্বের খবর পড়ে। আপনাকে ধন্যবাদ।
চাঁদে পানি পাওয়া নিয়ে এতো ঝামেলার কী আছে বুঝলাম না। নভোযানে করে কয়েকটা গাজী ট্যাঙ্ক ভর্তি পানি রেখে আসলেই তো হইতো...
আপনার লেখায় মন্তব্য করার মতো জ্ঞান আমার নাই। তাই একটু ফাইজলামি করলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তাইলে তো অন্য কিছু না পারলেও গাজী ট্যাঙ্ক দিয়া আমরা ভারতরে হেল্প করতে পারি
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
@ পথে হারানো মেয়ে, উদভ্রান্ত পথিক, মূলত পাঠক:
মন্তব্যের জন্য আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
কাগজে আর টিভির খবরে তো দেখছিই সমানে৷ আপনার লেখায় খুব সুন্দর সহজ ভাষায় বোঝানোর জন্য খুবই ভাল লাগল৷ এই অত্যন্ত সহজে বুঝিয়ে বলতে পারাটা আপনার একটা বিশাল কৃতিত্ব৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
চাঁদের বুড়িরে খুইজা পাইছে?
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
তোর মাথায় কি সারাদিন 'বুড়ি' শব্দটা ঘুরে নাকি!
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ইচ্ছে ছিল এটা নিয়ে জানার। কিন্তু কোন লেখা পাচ্ছিলাম না যা থেকে সহজে বুঝা যায়। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার প্রজেক্টের সফলতা কামনা করি।
আমার জ্ঞান এই বিষয়ে এতো কম যে মন্তব্য করার মতো কিছু পেলাম না...
--------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাস কিছু পাওয়া গেলে আওয়াজ দিয়েন
(সহজে বুঝতে পারলাম। খুব ভাল্লাগলো। বেশি বেশি লেখা দিলে তো কেউ পিটায়না। দেন্নাকেন!!!)
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
@ দয়মন্তী, হিমু, অর্জুন মান্না, সুহান রিজওয়ান, অনার্য্য সঙ্গীত:
সবাইকে ধন্যবাদ।
পরীক্ষা টরিক্ষা নিয়ে ঝামেলায় থাকার কারণেই হয়ত বেশি লেখা হয় না। তবে এবার থেকে বেশ নিয়মিতই লিখব...
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
রায়হানাবীর, আমার বক্তব্য ছিন্তাই কর্স্ক্যান?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
চাঁদে পানি আছে কি নেই তার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে মানব জাতির কি উন্নতি সাধন হচ্ছে? পৃথিবীর বহু মানুষেরই সাধারন বিশুদ্ধ খাবার পানি জুটছে না। এসব অর্থহীন কাজে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচের চেয়ে মানুষের উপকারে যে ৫ টাকা খরচ করলেও কাজে লাগত।
ধন্যবাদ সহজ করে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো লেখার জন্য।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
নতুন মন্তব্য করুন