আমাদের পূর্বপুরুষ: আর্ডিপিথেকাস র‌্যামিডাস

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: শনি, ০৩/১০/২০০৯ - ৯:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের চেয়েও উন্নত কোন বহির্জাগতিক সভ্যতার সাথে যোগাযোগ হলে তাদের করা প্রথম প্রশ্নটিই হতে পারে, "তোমাদের কিভাবে জন্ম হয়েছে সেটা কি বের করতে পেরেছ?" আর ২০০ বছর আগে হলেও এই প্রশ্ন শুনে আমাদের লজ্জায় পড়ে যেতে হতো। ডারউইন এসে আমাদেরকে রক্ষা করলেন আর কি! ডারউইন-এর আগেও যে অনেকে বিবর্তন নিয়ে তত্ত্ব দেয়ার চেষ্টা করেন নি তা না। কিন্তু তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত ও পর্যবেক্ষণের দরকার ছিল তা কেবল ডারউইন-ই জোগাড় করতে পেরেছেন। আসলে প্রকৃতির পরিবর্তনশীলতা দেখে বিবর্তনের বাস্তবতা বুঝতে পেরেছিলেন, এমন অনেক পণ্ডিতই ইতিহাসে গত হয়েছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনের মত একটি শক্তিশালী তত্ত্ব দিয়ে সেই বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করাটাই ছিল বৈপ্লবিক।

ডারউইন পর্যবেক্ষণ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ডারউইনের তত্ত্ব প্রকৃতপক্ষে জীবকূলের ইতিহাস বর্ণনা করে। আর ইতিহাস প্রমাণ করার জন্য এমন কিছু প্রয়োজন যা দিয়ে ইতিহাসের গতিধারাটি চোখের সামনে তুলে ধরা যায়, সচিত্র প্রতিবেদনের মত। এভাবে ইতিহাস উদঘাটনের উপকরণগুলো তখন ছিল না। কিন্তু আজ বিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রমাণের সবচেয়ে বড় দুটি উপকরণ আমাদের হাতের মুঠোয়- এক. বংশগতিবিজ্ঞান, দুই. জীবাশ্ম। বংশগতিবিজ্ঞান সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ হলেও এটা আমাদেরকে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে সাহায্য করে না। কিন্তু জীবাশ্ম একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এই ১লা অক্টোবর যখন ৪৪ লক্ষ বছর বয়সী আর্ডিপিথেকাস র‌্যামিডাস (আর্ডি) এর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে টিম হোয়াইট-এর দল ১১টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করল তখন আমি যেন ঠিক একটা ভিডিওচিত্রের মতই মানবজাতির ইতিহাসটা চোখের সামনে দেখতে পেলাম।

autoআদম-হাওয়া র পৌরাণিক কাহিনীর বিপরীতে ডারউইন স্থাপন করেছিলেন তার "জীবনবৃক্ষ"। বলেছিলেন, পৃথিবীর সকল প্রাণ সূতোয় বাঁধা। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সকল জীবকে একটি গাছের সাথে তুলনা করলে গাছের গুড়িটিকে বলতে হবে প্রাণের আদিতম পূর্বপুরুষ। এই গুড়ি থেকে কাণ্ড জুড়ে বড় হয়েছে গাছ, তৈরি হয়েছে একের পর এক শাখা-প্রশাখা। আমরা জীবনবৃক্ষের যে শাখায় আছি, নিজেদের ইতিহাস জানতে হলে সেই শাখা বেয়ে রওয়ানা করতে হবে গুড়ির অভিমুখে। এ অভিযাত্রায় আমাদের বড় সহায় হবে জীবাশ্ম। ১৯৭৪ সালে লুসি (অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস) আবিষ্কারের পরই জীবাশ্ম বিবর্তনকে সর্বসাধারণের চোখের সামনে মেলে ধরতে শুরু করে। হাটুতে জ্ঞান নিয়ে মহাবিশ্বের কথা বলা জাকির নায়েক বা আত্মপরিচয়হীন হারুন ইয়াহিয়া-রা ২৪/৭ ব্যস্ত থাকে ত্রিশূল দিয়ে মানুষের চোখ অন্ধ করে দেয়ার কাজে। আর্ডি বা লুসি-রা সেই অন্ধত্ব নিরসনে আমাদের সাহায্য করে। তাই অন্ধ-দর্শনক্ষম নির্বিশেষে আসুন সবাই শুরু করি সেই মহান অভিযাত্রা-

গন্তব্য: গাছের গুড়ি

বর্তমানে জীবাশ্ম-নৃবিজ্ঞানী দের দেওয়া তথ্য অনুসারে আজ থেকে ৭০ লক্ষ বছর আগে মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) এবং শিম্পাঞ্জিরা তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়েছিল। তাই আমাদের প্রথমেই বুঝে নিতে হবে- আমরা শিম্পাঞ্জি থেকে বিবর্তিত হই নি, শিম্পাঞ্জি এবং আমরা উভয়েই বরং একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছি যারা মানুষও ছিল না আবার শিম্পাঞ্জিও ছিল না। তার মানে ৭০ লক্ষ বছর আগে গাছের একটি শাখা দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল- শিম্পাঞ্জিরা বিবর্তিত হয়েছে একটি শাখা ধরে আর আমরা বিবর্তিত হয়েছি অন্যটি ধরে। এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষ ও শিম্পাঞ্জির সেই সাধারণ পূর্বপুরুষটিকে খুঁজে বের করা।

১৯৭৪ সালে লুসি নামের একটি মেয়েকে আমরা মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করি যার বয়স ছিল ৩৩ লক্ষ বছর। অনেক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা একমত হন যে, সে আমাদেরই পূর্বপুরুষ, কিংবা পূর্বপুরুষদেরই কোন নিকটাত্মীয়। তার মানে লুসি আবিষ্কারের পর মানুষ-শিম্পাঞ্জির সাধারণ জয়েন্ট থেকে আমাদের দূরত্ব থাকে ৩৭ লক্ষ বছর। লুসির সবচয়ে বড় দুটি বৈশিষ্ট্য ছিল:
- সে দুই পায়ে ভর করে হাটতে পারতো যা শিম্পাঞ্জিরা পারে না
- তার মস্তিষ্ক শিম্পাঞ্জিদের থেকে একটু বড় ছিল

এই আবিষ্কার থেকে সহজেই বোঝা যায়, লুসির আগে পৃথিবীতে আমাদের যেসব পূর্বপুরুষ বাস করে গেছে তাদের দুই পায়ে হাটার ক্ষমতা লুসি-র চেয়ে কম হবে, তাদের মস্তিষ্কও হবে অপেক্ষাকৃত ছোট, তবে খুব বেশি ছোট না কারণ এই বিবর্তনটা অনেক ধীরে ঘটেছে। আর্ডিপিথেকাস র‌্যামিডাস আমাদের সেই প্রকল্পকেই সত্য প্রমাণ করল। ২০০৯ সালের ১লা অক্টোবর "নেচার" পত্রিকায় প্রকাশিত ১১টি গবেষণাপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি,
- আর্ডি-ও একটি মেয়ে যার বয়স ৪৪ লক্ষ বছর
- সে দুই পায়ের উপর ভর করে খুব কম দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে
- আবার গাছে গাছেও আনাড়িভাবে ঝোলাঝুলি করতে পারে

autoএই মহা আবিষ্কারের পর সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আমাদের দূরত্ব থাকল আর মাত্র ২৬ লক্ষ বছর। লুসি আবিষ্কৃত হয়েছিল ইথিওপিয়া-তে। আর্ডিও ইথিওপিয়ার। ইথিওপিয়া-ই বোধহয় আমাদেরকে নিয়ে যাবে সেই পূর্বপুরুষের কাছে। উপরের ছবিটিতে (ছবির উপর ক্লিক করলে বড় হবে) জীবাশ্মের আলোকে ৭০ লক্ষ বছর পূর্ব থেকে শুরু করে একেবারে বর্তমান পর্যন্ত মানুষের ইতিহাস দেখানো হয়েছে। কোন প্রজাতিটি কোন সময়ের এবং সেই প্রজাতির কী কী অঙ্গের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে সেটাও ছবির মাধ্যমে বোঝা সম্ভব। বুঝতেই পারছেন- একমাত্র লুসি এবং আর্ডি-রই প্রায় পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল নির্মাণ করা গেছে। বাকিদের মাথা বা দেহের বিভিন্ন অংশের কিছু হাড় পাওয়া গেছে কেবল। ছবিতে ৭০ লক্ষ বছর আগেরও একটি জীবাশ্ম দেখা যাচ্ছে, নাম "সাহেলানথ্রোপাস চাদেনসিস"। এর মাধ্যমে মানুষ-শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরুষ সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যেতো, কিন্তু এর কেবল মাথার খুলিটাই পাওয়া গেছে। মস্তিষ্কের আকার এবং খাবার গ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়া তাই আর তেমন কিছুই জানা যায় নি।

autoপাশের তালিকায় আরেকটু সূক্ষ্ণভাবে আমাদের ইতিহাস দেখানো হল। হোমো স্যাপিয়েন্স পর্যন্ত পাওয়া প্রজাতিগুলোর নাম এবং কোন সময় তারা পৃথিবী বাস করে গেছে সেটা দেখানো হয়েছে।

আবিষ্কারের কাহিনী

১৯৭৪ সালে লুসি আবিষ্কারকারী দলের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন টিম হোয়াইট, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-র জীবাশ্ম-নৃবিজ্ঞান গবেষক। ইথিওপিয়া-র আফার নিম্নভূমিতে হোমিনিনি গোত্রের এত জীবাশ্ম পাওয়া গেছে যে, টিম হোয়াইট রীতিমত এই জায়গার প্রেমে পড়ে যান। সাধে কি আর সারাটা জীবন ইথিওপিয়ার এক বিরান সাভানা-য় কাটিয়ে দিলেন! ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা-র অদূরে "আফার" নামে এক বিরাট নিম্নভূমিতেই লুসি থেকে শুরু করে হোমিনিনি গোত্রের সবগুলো জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। শিম্পাঞ্জি, মানুষ সবাই এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

১৯৯২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর টিম হোয়াইটের প্রাক্তন ছাত্র Gen Suwa হঠাৎ করে আফার এর নিকটবর্তী আরামিস গ্রামের পাশে এক টুকরো হাড় দেখতে পান। দেখার সাথে সাথেই বুঝে গিয়েছিলেন, এটা হোমিনিনি গোত্রেরই কোন একটি প্রজাতির জীবাশ্ম। সেই এলাকা ঘিরেই হোয়াইট দলের অনুসন্ধান শুরু হয়। পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে পাওয়া যায় একটি শিশুর নিম্ন চোয়ালের কিছু জীবাশ্ম। ১৯৯৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে শ্রোণীচক্র, মাথার খুলি, পা এবং মুখের অনেকগুলো খণ্ডাংশ পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হল সবগুলো হাড়ের অবস্থাই ছিল শোচনীয়। তাই এগুলোর উপর ভিত্তি করে প্রকৃত গবেষণা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এ কারণেই তাৎক্ষণিকভাবে বিজ্ঞানীরা সাংবাদিক বা বিজ্ঞানী মহলকে তেমন কিছুই জানায়নি। এরই মধ্যে সর্বমোট ১১০ টিরও বেশি খণ্ডাংশ একত্রিত করে সেগুলোর বিশুদ্ধায়ন চলেছে, তারপর শুরু হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল তৈরির কাজ। উল্লেখ্য, এছাড়া অন্যান্য প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রায় ১৫০,০০০ নমুনাও যুগিয়েছে আফার-এর এই সাইট।

autoইথিওপিয়ায় কঙ্কাল গঠনের পাশাপাশি টোকিও এবং ওহাইয়ো তেও আর্ডি গবেষণা চলেছে সমান তালে। ওহাইয়ো-তে বিজ্ঞানী সি ওয়েন লাভজয় আর্ডির ভৌত মডেল তৈরির কাজ করেছেন আর টোকিওতে Gen Suwa কম্পিউটার মডেল বানিয়েছেন। এই দুই গবেষণাকেন্দ্রেই মাঝেমাঝে কঙ্কালের বিভিন্ন অংশ পাঠানো হয়েছে সিটি স্ক্যান এবং অন্যান্য পরীক্ষার জন্য। ৯ বছরের কাজ শেষে Suwa গর্বভরে বলতে পেরেছেন, "৪৪ লক্ষ বছর আগে ইথিওপিয়া-তে ঠিক এরকম এক আর্ডিপিথেকাস র‌্যামিডাস-ই ঘুরে বেড়াতো।"

কম্পিউটার মডেলিং হয়ে যাওয়ার পর Suwa ও Asfaw সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন আর্ডির সাথে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির সকল প্রজাতির মিল-অমিল খুঁজে বের করার জন্য। কারণ মানবেতিহাসের ঠিক কোন জায়গায় আর্ডির জায়গা হবে সেটা ডেটিং এর মাধ্যমে জানা গেলেও, এর সাথে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের সব তথ্য মিলিয়ে দেখার দরকার ছিল। দেখেশুনে আপাতত এই সিদ্ধান্তেই এসেছেন যে, আর্ডি অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যানামেনসিস দের পূর্বপুরুষ। উল্লেখ্য এর আগে অ্যানামেনসিস এর জীবাশ্ম ছিল প্রাচীনতম। উপরের ছক থেকেই সেটা দেখা যাচ্ছে। তবে অ্যানামেনসিস এর খুব কম জীবাশ্মই পাওয়া গেছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে আফার নিম্নভূমির যে জায়গায় হোমিনিনি সন্ধান করা হয়েছে তার এক ইঞ্চি মাটিও আর অক্ষত নেই। বিজ্ঞানী ও পেশাদার জীবাশ্ম শিকারীরা প্রতিটা ইঞ্চি খুটিয়ে দেখেছেন। এক সাংবাদিক তো লিখে দিয়েছেন, "They sucked the bones out of Afar."

আর্ডি-র বৈশিষ্ট্যসমূহ

শ্বদন্ত

মানুষের উপরের চোয়ালে দুটি এবং নিচের চোয়ালে দুটি তীক্ষ্ণ দাঁত আছে যেগুলোকে শ্বদন্ত বলে। শিম্পাঞ্জিরও এরকম শ্বদন্ত আছে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে শিম্পাঞ্জিরটা মানুষের চেয়েও তীক্ষ্ণ ও ধারালো। সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যাবার পর প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের দিকে বয়ে চলা শাখার প্রজাতিগুলোতে শ্বদন্ত দিন দিন ভোঁতা হয়েছে। আর্ডির শ্বদন্ত হচ্ছে একেবারে মাঝামাঝি। পাশের ছবিতে, একেবারে বামের চোয়াল মানুষের, ডানেরটা শিম্পাঞ্জির আর মাঝেরটা আর্ডির। শিম্পাঞ্জির শ্বদন্তের সাথে অনায়াসেই ছুরির ফলার তুলনা দেয়া যেতে পারে।

autoআরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, মানুষের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের শ্বদন্তের আকার প্রায় একই রকম। কিন্তু এমন অনেক প্রাইমেট প্রজাতি আছে যাদের ক্ষেত্রে পুরুষের শ্বদন্ত নারীর তুলনায় অনেক বড়। এর কারণ পুরুষে-পুরুষে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার কারণ যথারীতি নারী, খাদ্য এবং জমি। বিজ্ঞানীদের মতে শিম্পাঞ্জি ও আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষের শ্বদন্ত অনেক বড় ছিল। কিন্তু মানুষের শাখা বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর অর্থাৎ হোমিনিড-দের মাঝে শ্বদন্ত ভোঁতাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। কারণ মানুষের পূর্বপুরুষরা সন্তান বড় করার ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখতে শুরু করে। মা-কে একা ফেলে না দিয়ে বাবা-রাও সন্তান প্রতিপালনে অংশ নেয়। এ কারণে স্বভাবতই তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কমে আসে আর প্রাকৃতিক নির্বাচন শ্বদন্তকে নির্বাচন করা বাদ দিয়ে দেয়। আর্ডি যখন পৃথিবীতে ছিল তখন এই বাদ দেয়ার প্রক্রিয়াটাই চলছিল।

শ্রোণীচক্র

লাভজয় ও তার দল আর্ডির শ্রোণীচক্র নিয়ে অনেক গবেষণা করে দেখেছেন এর সাথে লুসি-র বেশ ভাল মিল আছে। যেমন লুসি-র মতই আর্ডির শ্রোণীচক্র তার দেহের উর্ধ্বাংশকে বহন করতে পারে। অর্থাৎ শ্রোণীচক্রে ভর দিয়ে দুই পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম ছিল আর্ডি। কিন্তু সে খুব ভালভাবে হাঁটতে পারতো না, আর দৌঁড়াতে পারতো না বললেই চলে। এদিক থেকে সে লুসির চেয়ে ভালই পিছিয়ে। এসব দেখে মনে হয়, আর্ডির সময় থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের বিবর্তন ঘটেছে খুব দ্রুত, মাত্র ১০ লক্ষ বছরের মধ্যেই অস্ট্রালোপিথেকাস এর মত প্রায়-মানুষ প্রজাতির জন্ম দেয়ার জন্য যা আবশ্যক ছিল। উপরের ছবিতে আর্ডি ও লুসির শ্রোণীচক্রও দেখানো হয়েছে। বামে আর্ডি আর ডানে লুসির শ্রোণীচক্রের মধ্যে মিলটা লক্ষ্যণীয়।

পায়ের পাতা ও আঙুল

autoআর্ডির পায়ের পাতাকে বলা যায় opposable কিন্তু rigid. অপোজেবল বলতে বোঝানো হচ্ছে, গাছে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার জন্য ডাল-পালার সাথে পায়ের ঠেক দেয়ার যে পদ্ধতি থাকা দরকার ছিল তার কিছুটা হলেও আর্ডির মাঝে আছে। পায়ের পাঁচটি আঙুলের প্রথমটি অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলি এই ঠেক দেয়ার কাজটি করতো। কিন্তু বাকি চার আঙুলের গঠন খুব শক্ত। দেখে মনে হয় এই আঙুলগুলো মাটিতে সমান্তরালভাবে রেখে তার পক্ষে উঠে দাঁড়ানো সম্ভব। আর্ডিরা এভাবেই হাটতো। একাধারে মাটিতে হাটতে এবং গাছে চড়তে সক্ষম এমন প্রজাতির সন্ধান আমরা এই প্রথম পেলাম। এরকম আরও কিছু প্রজাতির খণ্ডাংশ আগে পাওয়া গেলেও সেগুলো থেকে এত তথ্য পাওয়া সম্ভব ছিল না।

হাতের তালু ও আঙুল

আর্ডির পায়ের সাথে মানুষের পায়ের মিল বেশি হলেও হাতের সাথে বেশি মিল শিম্পাঞ্জির। শিম্পাঞ্জির মতই তার হাত খুব নমনীয় তথা ফ্লেক্সিবল যা গাছে ঝুলে থাকার জন্য আবশ্যক। আঙুল গুলো বেশ লম্বা লম্বা এবং সহজেই বাঁকানো যায়। হাত, পা এবং শ্রোণীচক্রের গড়ন থেকেই বোঝা গেছে যে আর্ডি একাধারে মাটিতে হাঁটতে পারতো এবং গাছে ঝুলতে পারতো, কিন্তু কোনটাতেই সে বিশেষ দক্ষ ছিল না। মনে হতে পারে তার জীবন ধারণ করতে এতে খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু সেটা তো প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিরোধী। সে সময় ইথিওপিয়ার আরামিস অঞ্চলটা কেমন ছিল তা বুঝলেই আর বিরোধ থাকে না। এ অঞ্চলে তখন বন জঙ্গল ছিল, তবে গাছগুলো খুব বড় বড় ছিল না, আর বনের মাঝে মাঝে ঘাসে ভরা ছোটখাট সমভূমিও ছিল। তাই দুটোতেই চলার চেষ্টা করাটা তার জন্য ছিল স্বাভাবিক।

autoএখন কিন্তু আফার অঞ্চলের সেই বন নেই। একসময় এটা হয়ত বিস্তীর্ণ সাভানায় পরিণত হয়েছিল। এখনও অনেকটা সাভানা-র মত, তবে ঘাসের পরিমাণও বেশ কমে গেছে। পাশের ছবিতে কেনিয়ার Kibwezi বন (বামে) এবং আফার নিম্নভূমির (ডানে) ছবি দেখানো হয়েছে। আর্ডি যখন জীবিত ছিল তখন আফার অঞ্চলটিও ছিল Kibwezi-র মত। বনের মাঝে মাঝে অল্প বিস্তর তৃণভূমি। এরকম একটা অঞ্চলেই মানুষের বিবর্তন নতুন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছিল।

১৯৭৪ সালে লুসি আবিষ্কারের পর অনেকদিন জীবাশ্ম মহলের খুব বড় কোন অর্জন ছিল না। এবারের অর্জন লুসি-কেও ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের বিবর্তন কিভাবে হয়েছে তার তাত্ত্বিক ভিত্তি তো ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা অনেকটা তৈরি করে ফেলেছেন। তবে সেটার প্রামাণ্য ভিত্তি দাঁড় করাতেও এখন কোন বাঁধা নেই। কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান চলে সংশয়ের ভিত্তিতে। যেমন, এই ১১টি গবেষণাপত্র প্রকাশের পরই জীবাশ্ম-নৃবিজ্ঞানী মহল অনেক ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এটা দেখছেন। মোটকথা আগামী ১৫ বছর আর্ডিকে নিয়ে মুখর থাকবে বিজ্ঞানী মহল। বাকবিতণ্ডা চলতেই থাকবে। এখনই অনেকে বলছেন, আর্ডিকে সরাসরি অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যানামেনসিস এর পূর্বপুরুষ বলে দেয়ার সময় এখনও আসে নি। জীবাশ্মগুলো আরও পরীক্ষা করার পরই কেবল এ বিষয়ে শতকরা ৯৯ ভাগ নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব, আর এটা তো আমাদের সবারই জানা যে, বিজ্ঞানে ৯৯% নিশ্চয়তাই সর্বোচ্চ।

ডারউইন বিশ্বের তাবৎ জীবকে এক সূতোয় বাঁধতে চেয়েছিলেন, যতটা প্রমাণ থাকলে এই বন্ধনটা অন্যকে বোঝানো সম্ভব ততটা প্রমাণ তিনি জোগাড়ও করেছিলেন। কিন্তু মুখরোচক কিছু না হলে সাধারণ মানুষ সাড়া দেয় না। বিজ্ঞানের চেয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতি-র দিকে মানুষের ঝোঁক অনেক বেশি। এবার সেই জনপ্রিয় সংস্কৃতিরও অংশ হতে শুরু করবে আমাদের পূর্বপুরুষেরা। আমরা আর অদৃশ্য পূর্বপুরুষদের প্রার্থনা করবো না, বরং দৃশ্যমান পূর্বপুরুষদের নিরীক্ষণ করে ইতিহাসের ধ্যান করবো। এই ধ্যান একদিন সত্যিকার অর্থেই এক সূত্রে গেঁথে দেবে আমাদের সবাইকে। তখনও আমরা বেটোফেন এর নাইন্থ সিম্ফনি গাইবো, তবে সে গান কেবল মানুষের নয়, বরং পুরো জীবকূলের প্রতিনিধিত্ব করবে:

ডাইনে ৎসাউবার বিন্ডেন ভিডার
ভাস ডি মোডে স্ট্রেং গেটাইল্ট;
আলে মেনশেন ভের্ডেন ব্রুডার,
ভো ডাইন সাফটার ফ্লুগেল ভাইল্ট।

Your magic binds again
What custom strictly divided.
All men become brothers,
Where your gentle wing rests.

বিবর্তন তত্ত্ব আবার একত্রিত করবে পুরো মহাবিশ্বকে। অ্যাডাম-ইভ এর পুরাণ যে বিশ্বকে একাধিপত্য ভিত্তিক স্বৈরতন্ত্র বানিয়ে দিয়েছিল। যে বিশ্বের মানুষ প্রকৃতি থেকে নিজেদের আলাদা করে নিয়েছিল, নিজেদেরকে ভাবতে শুরু করেছিল অতিপ্রাকৃত বা অতিপ্রাকৃতের প্রতিনিধি।
প্রকৃতির স্রোত অতিপ্রাকৃত নয় বরং প্রাকৃতের দিকেই ধাবমান। প্রকৃতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে, প্রকৃতির মধ্যে যেসব প্রকৃতিবিরোধী প্রাকৃতিক সত্তার বাস তাদের অন্ধত্ব ঘুচিয়ে তবেই সে শান্ত হবে, ডানা মেলে বিশ্রাম করবে...

তথ্যসূত্র:

- Ardipithecus ramidus - অ্যান গিবন্স, সায়েন্স ম্যাগাজিন
- Ardipithecus: We Meet At Last - কার্ল জিমার

ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা - অ্যান গিবন্স এবং কার্ল জিমার


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

দুপুর থেকে অপেক্ষা করছিলাম লেখাটা পড়ার জন্য। শুধু আমি না এই খবর শোনার পর অনেকেই তোর লেখার জন্য অপেক্ষা করে আছে। লেখাটায় আর্ডি ছাড়াও অনান্য জীবাশ্মগুলোর কথা আনাতে ভালো হয়েছে, যার ফলে পুরো ইতিহাসটা সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাওয়া যায়। ধন্যবাদ।


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অপেক্ষায় ছিলাম...

অনেক ধন্যবাদ, অসাধারণ এই পোস্টটার জন্য। চলুক

মূলত পাঠক এর ছবি

দারুণ লেখা, আরো চাই। প্যালিয়েন্টোলজিতে মর্ফোলজিক্যাল ইভল্যুশন নিয়ে পড়তে খুব ভালো লাগতো, ঐ বিষয়ে লিখুন না। কী করে দাঁতের গঠন, খুলির ভেতরের তলে মগজের ভাঁজাভাজির ছাপ ইত্যাদি দেখে মানবেতিহাসের ফাঁক ভরাট করা হয়েছে, এই সব খুব আকর্ষক বিষয় লাগতো।

শিক্ষানবিস এর ছবি

হ্যা, অঙ্গসংস্থান এর বিবর্তন নিয়ে পড়তে আমারও খুব ভাল লাগে। জীবাশ্মের মাধ্যমে কিভাবে সব বলে দেয়া যাচ্ছে সেগুলো শুনলে গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়। আসলে আবিষ্কারের খবরের তুলনায় আবিষ্কারটা কিভাবে হয়েছে তা অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। সময় সুযোগ মত আরও লেখার ইচ্ছা তো আছেই...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইটারে প্রিন্ট কইরা রয়েসয়ে পড়তে হবে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

অনবদ্য! বাইপেডালিটি নিয়ে লাভজয়ের প্রকল্প সম্পর্কেও পড়তে চাই কিছু।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শিক্ষানবিস এর ছবি

আমিও বেশি জানি না, তবে ইচ্ছা আছে। মস্তিষ্কের বৃদ্ধি যতটা ইন্টারেস্টিং বাইপেডালিটি ও তার চেয়ে কোন অংশে কম না। আর লাভজয় কে তো এ বিষয়ে খুব পণ্ডিত মনে হচ্ছে। আরও পড়ে মজা লাগলে লেখার ইচ্ছা রইল।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ওয়াহ কি জটিল তথ্য ভিত্যিক লেখা। গোগ্রাসে গিল্লাম।

আরো চাই এমন লেখা।

---------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দারুণ... সরাসরি প্রিয়তে।
লুসি আর আর্ডির মস্তিষ্কের মাঝে কোন অনুপাত জাতীয় কিছু নির্ণয় হয়েছে কী ?? বলতে চাইছি বৎসর আর মস্তিষ্কের ক্রমবিকাশের মাঝে কোন সাধারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা গেছে কী না ??

---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

শিক্ষানবিস এর ছবি

মস্তিষ্কের আকার-সময় সম্পর্কটা ঠিক জানি না। তবে এরকম অনেক গ্রাফ করা হয়েছে এটা জানি। আমি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে বিভিন্ন প্রজাতির মস্তিষ্কের আকার এমন পেলাম:
আর্ডি - ৩০০-৩৫০ সিসি
লুসি - ৪০০-৪৫০ সিসি
১০ লক্ষ বছরে ১০০ সিসি বেড়েছে। এরপর বিবর্তন হয়েছে বেশ দ্রুত:
auto

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দুর্দান্ত একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ

০২

বিবর্তনের বিষয়গুলো পড়তে গেলে দুটো বিষয় মাথায ঘোরে প্রায়ই

১. মানুষ একইসাথে তৃণভোজী এবং মাংসাশী হলো বিবর্তনের ঠিক কোন পর্যায় থেকে?

২. আমার জানামতে সাঁতার দেবার উপযোগী সব প্রাণীই অটোমেটিক সাঁতার কাটতে পারে। শিখতে হয় না। কিন্তু মানুষের সাঁতারটা শিখতে হয়
এই জিনিসটা বিবর্তনের কোন পর্যায় থেকে মানুষের সাথে যুক্ত হয়েছে?

এই দুটো বিষয় বিবর্তনের ধারাবাহিক ইতিহাসে কোথাও বর্ণনা আছে কি না আমার জানা নেই

বলবেন কিছু?

এনকিদু এর ছবি

তৃণভোজী এবং মাংসাশী আমরা একাই না । শিম্পান্জী, বেবুন এরাও মাংস খায় । জেন গুডওল দেখিয়েছেন, শিম্পান্জীরা স্বজাতীর মাংসও খায় । যেমন অনেক আদিম অবস্থায় কোন কোন মানব সমাজে ছিল । কিন্তু প্রাইমেটরা মাংস খেয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনা কারন উপযোগী দাঁত এবনং মাংস চিবিয়ে নরম করার মত শক্তিশালী পেশীর অভাবে । হজমেও গোলমাল হয় কিছু কিছু । মানুষের পূররবপুরুষ কেউ আগুন হাতে পেয়েছিল, তার পর থেকেই শুরু হল আগুনে ঝলসে নরম করে মাংস খাওয়া । আর সেই সাথে ধুমাধুম মগজের আকার বাড়তে থাকল । ফলাফল আজকের আমরা ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

হিমু এর ছবি

মানুষের পূররবপুরুষ কেউ আগুন হাতে পেয়েছিল, তার পর থেকেই শুরু হল আগুনে ঝলসে নরম করে মাংস খাওয়া । আর সেই সাথে ধুমাধুম মগজের আকার বাড়তে থাকল । ফলাফল আজকের আমরা ।

ঠিক ঐরকম না। মগজের আয়তন একটু অন্যরকম ভ্যারিয়েবল। যেমন নিয়ান্ডার্টালদের মগজের আকার আধুনিক মানুষের মগজের আয়তনের চেয়ে বেশিই ছিলো। কিন্তু গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড যাকে বলে (আমরা যার ফলাফল), তার পেছনে চালিকাশক্তি অন্য কিছু ছিলো। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেসব হোমিনিড ফসিল পাওয়া গেছে, তারা যে আগুন ব্যবহার করতো, তার হদিশ পাওয়া গেছে, কিন্তু তাদের মগজের আকার ছোটোই ছিলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

এনকিদু এর ছবি

যারা সাগরতীরে বসে শামুক, ঝিনুক খেত তাদের কথা বলছেন ?

মগজের আকারের পাশাপাশি নিউরোনের আন্তঃসনংযোগের ব্যপারটাও মনে হয় হিসাবে রাখতে হয় । অনেক কিছুই ভুলে বসে আছি ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শিক্ষানবিস এর ছবি

১। এক্ষেত্রে সাভানা প্রকল্পই এতোদিন পর্যন্ত সেরা ছিল। ওরা বলেছিল, এক সময় আফ্রিকার একটি অংশে বন-জঙ্গল কমে যায়। যার ফলে গাছে গাছে ঘুরে খাদ্য সংগ্রহের সুযোগ কমে আসে। তখনই দুই পায়ে হাঁটা শুরু হতে থাকে। গাছে চরা কমিয়ে দেয়ায় তৃণের প্রতি নির্ভরশীলতা কমে, আর দূরে হাঁটতে যেতে পারায় শিকারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এভাবেই এক সময় তৃণভোজী থেকে মাংসাশী। এক কথায় বলা আর কি! আসল বিষয় অনেক অনেক জটিল।
তবে আর্ডি আসার পর মনে হয় ভাবতে হবে, গাছপালা হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায় নি। দীর্ঘদিন একটা মধ্যবর্তী ধাপ ছিল।

২। মানুষের দেহের তুলনায় মস্তিষ্ক অনেক ভারী বলেই মনে হয় অটোমেটিক পানিতে ভেসে থাকতে পারে না। মাথা ডুবে যায়। তার মানে মস্তিষ্কের আকার বাড়ার সাথেই সাঁতারে অক্ষমতার একটা সম্পর্ক থাকতে পারে।

অনিকেত এর ছবি

বস, দৌড়ের উপর আছি কয়েক দিন থেকে। সচলে এসে মন দিয়ে পড়ার সময় পাচ্ছি না।
তোমার 'চাঁদের জল' নিয়ে লেখাটা দেখেছি---কিন্তু শান্তিমত পড়ব বলে আলাদা করে রেখে দিয়েছিলাম। শান্তিই খুঁজে পাচ্ছি না।

আর্ডি'র খবর শোনার পর থেকেই আশা করছিলাম তোমার লেখা।
তুমি নিরাশ করো নি বস।
তুমি কখনোই নিরাশ করো না!!!

চমৎকার লেখা আর শিক্ষানবিস এখন সমার্থক শব্দ!

বিশ লক্ষ তারা---!!!

শিক্ষানবিস এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ....

এনকিদু এর ছবি

দারুন লেখা । চলুক

আর্ডির খবরটা জানার পর থেকেই মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে । দেখতো, কোন সমাধান দিতে পার কিনা ।

যতদূর মনে আছে, মাংস খাওয়া শুরু করার পরেই মগজের আকার বড় হতে শুরু করে । তৃণভোজী এবং মাংসাশী আমরা একাই না । শিম্পান্জী, বেবুন এরাও মাংস খায় । জেন গুডওল দেখিয়েছেন, শিম্পান্জীরা স্বজাতীর মাংসও খায় । যেমন অনেক আদিম অবস্থায় কোন কোন মানব সমাজে ছিল । কিন্তু প্রাইমেটরা মাংস খেয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনা কারন উপযোগী দাঁত এবনং মাংস চিবিয়ে নরম করার মত শক্তিশালী পেশীর অভাবে । হজমেও গোলমাল হয় কিছু কিছু । মানুষের পূররবপুরুষ কেউ আগুন হাতে পেয়েছিল, তার পর থেকেই শুরু হল আগুনে ঝলসে নরম করে মাংস খাওয়া । আর সেই সাথে ধুমাধুম মগজের আকার বাড়তে থাকল ।

আর্ডির দাঁত মাংস খাওয়ার জন্য বিশেষায়িত বলে মনে হয় না । কিন্তু এই অবস্থা থেকে এগিয়ে যেতে হলে প্রচুর মাংস খাওয়া দরকার । যেহেতু কাঁচা মাংস খেয়ে খুব একটা সুবিধা করা যাবে না, (উপযোগী দাঁতের অভাব, হজমও করতে পারবে না ইত্যদি কারনে) আগুনে ঝলসান মাংস খাওয়া দরকার । আর যদি আগুন নাও পায়, কাঁচা মাংসই খেতে থাকে, দাঁত বদলে যাবে । কিন্তু এর পর দাঁত আর সেদিকে যায়নি, ধীরে ধীরে আজকের চেহারায় এসেছে ।

যদি আর্ডি আসলেই মানুষ ও শিম্পান্জীর সাধারন পূররব্পউরুষ হয়ে থাকে তাহলে আর্ডিই প্রথম (অথবা তার ঠিক পরের প্রজাতী ) আগুন হাতে পেয়েছে । তার মানে আগুন হাতে আসার ঘটনাটা ঘটেছে এতদিন যেরকম ধারনা করা হয়েছে তারও আগে । তাই যদি ঘটে থাকে, তাহলে সভ্যতার ইতিহাস আমরা যা জানি, তার থেকেও আগে শুরু হয়েছে বলতে হবে ।

কোথায় ভুল করছি ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শিক্ষানবিস এর ছবি

আপনি মনে হয় বুঝাতে চাইতেছেন: শি্পাঞ্জি-মানুষ এর সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে মানুষের দিকে বিবর্তনের শাখা আলাদা হওয়ার কারণ ছিল আগুনে পুড়িয়ে মাংস খাওয়া, শিকারের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া, যাতে মস্তিষ্কের আকার বাড়তে পারে। কিন্তু আমার মনে হইতেছে বিষয়টা এরকম না।
মস্তিষ্কের আকার বাড়ার আগে মানুষ দ্বিপদী হয়েছে। আর আর্ডি ও তো মানুষ-শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরুষ না। সাধারণ পূর্বপুরুষ কিন্তু ৭০ লক্ষ বছর আগে ছিল। আর্ডি মূলত মানুষ গাছের যে শাখায় আছে ঐ শাখাতেই, শিম্পাঞ্জির বিবর্তন তখন অন্যদিকে চলছে। আর্ডি বেশি মানবীয় বলেই তাকে মানুষের শাখায় রাখা হয়েছে।

তাহলে কিন্তু সাধারণ পূর্বপুরুষ বা মানুষের দিকে বিবর্তন শুরু হওয়ার জন্য আগুন লাগে না, এমনকি শিকারে খুব দক্ষ হওয়াও লাগে না। কারণ, প্রথম দিকে মস্তিষ্কের বিবর্তন ছিল খুব ধীর। আসলে লুসি-র পরেই মস্তিষ্ক খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। আর মানুষ যখন প্রথম অস্ত্র আবিষ্কার করেছে তারও ২০ লক্ষ বছর আগে আর্ডি ছিল। দাঁত থেকে বোঝা যায় অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও আর্ডিদের মধ্যে সন্তান এর লালন-পালনের নিয়মটা ছিল। সে সময় যদি অস্ত্র তৈরি না হয়ে থাকে তাহলে শিকারও খুব কম হবে, আর আগুনও লাগবে না। এরকমই মনে হচ্ছে।

কামরুল হাসান [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার।

লেখা এবং সেটার জন্যে তোর পরিশ্রম ইর্ষনীয়।

শিক্ষানবিস এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কামরুল ভাই...

সবজান্তা এর ছবি

অসাধারণ একটা লেখা, ধর্মের মতো আজব বিষয়ের জন্য তর্কের কারণে পড়ার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছি। আশা করছি আগামীকাল পড়তে পারবো। আপাতত এতো কষ্ট করে লেখার জন্য অভিনন্দন।


অলমিতি বিস্তারেণ

ফারুক হাসান এর ছবি

অসাধারণ একটা লেখা! চলুক

শিক্ষানবিস এর ছবি

@ লিংকন, রনি ভাই, নজরুল ভাই, কামরুল ভাই, সবজান্তা, ফারুক হাসান:
সবাইকে ধন্যবাদ।

সৌরভ এর ছবি

পড়লাম। চমৎকার লেখা। কঠিন বিষয়কে সহজ করে বোঝানোর এই লেখালেখি অব্যাহত থাকুক।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

স্বাধীন এর ছবি

খুব পরিষ্কার বর্ণনা। তোমার লেখার অপেক্ষায় ছিলাম। দিলাম ফেইসবুকে শেয়ার করে।ঃ))

কীর্তিনাশা এর ছবি

গুরু ! গুরু !

গুরু গুরু

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মাহবুবুল হক এর ছবি

আপনার অসাধারণ লেখার জন্য ধন্যবাদ। এ্যাত্তো পারেন কিভাবে ? আরো কিছু বিষয় নিয়ে আপনার লেখার দাবি উঠেছে আমিও সে দাবির সাথে সহমত।

কী করে দাঁতের গঠন, খুলির ভেতরের তলে মগজের ভাঁজাভাজির ছাপ ইত্যাদি দেখে মানবেতিহাসের ফাঁক ভরাট করা হয়েছে, এই সব খুব আকর্ষক বিষয় লাগতো।
তারপর অঙ্গসংস্থানের ব্যাপার যেটা আপনিই লিখেছেন- এসব নিয়ে লিখুন নয়তো কোথায় সহজে পাবো তার হদিস দিন। শিক্ষানবিশ, একটা লাইনের জন্য আপনাকে স্যালুট না দিয়ে পারছি না -

আমরা আর অদৃশ্য পূর্বপুরুষদের প্রার্থনা করবো না, বরং দৃশ্যমান পূর্বপুরুষদের নিরীক্ষণ করে ইতিহাসের ধ্যান করবো। এই ধ্যান একদিন সত্যিকার অর্থেই এক সূত্রে গেঁথে দেবে আমাদের সবাইকে। তখনও আমরা বেটোফেন এর নাইন্থ সিম্ফনি গাইবো, তবে সে গান কেবল মানুষের নয়, বরং পুরো জীবকূলের প্রতিনিধিত্ব করবে:

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

-আমি তোমার লেখার অপেক্ষায় ছিলাম :-D। ইংরেজিটা পড়ার ধৈর্য্য হচ্ছিল না।
-লেখায় ৫ এ ১০ দেঁতো হাসি
--------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

শিক্ষানবিস এর ছবি

সৌরভ, স্বাধীন, কীর্তিনাশা, মাহবুবুল হক, উদভ্রান্ত পথিক:

সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনাদের ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আর্ডির পরবর্তী আপডেট নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছা রইল...

s-s এর ছবি

চলুক
আমার জানার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য বিনীত কৃতজ্ঞতা জানাই।
কৃতজ্ঞতা।

হিমু এর ছবি

মানুষ আর শিম্পাঞ্জির অভিন্ন পূর্বপুরুষের আসলে একটা নাম দেয়া দরকার, নাহলে পদে পদে ব্যাখ্যা করতে হয় ব্যাপারটা। মনপাঞ্জি [(মনুষ্য + শিম্পাঞ্জি) / ২] রাখলে কেমন হয় হাসি ?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অভিজিৎ এর ছবি

না মনপাঞ্জি ভাল শোনাচ্ছে না। আমার পছন্দ - শিম্পানুষ। এটা কেমন?

শিক্ষানবিস অসাধারণ কাজ করছেন। পশ্চিমের বিজ্ঞান সহজ পাচ্য করে আদের জন্য পরিবেশন করছেন। তার যাত্রা অব্যাহত থাকুক।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মিয়া, দেশে দেখা হৈলে আপনারে শাহবাগের পূবালী ব্যাংকের সামনের ভ্যানগাড়িতে দুইটা পরোটা, সাথে ডাইল-ভাজি খাওয়ামু। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অবাঞ্ছিত এর ছবি

ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্য। এমন আরো লেখা দরকার।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

সাফি [অতিথি] এর ছবি

দারুন। ধন্যবাদ পরিশ্রমী একটা লেখার জন্য

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অসাধারণ লাগলো, যথারীতি! আপনার অনুমতি না নিয়েই আমার ফেসবুকে শেয়ার করলাম।

কিন্তু মুখরোচক কিছু না হলে সাধারণ মানুষ সাড়া দেয়।

এখানে বোধহয় একটা "না" বাদ পড়েছে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

বাক্য ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ঠিক করলাম।

তানভীর এর ছবি

পোস্ট পড়ে প্রথমে মনে হয়েছিল ‘আর্ডি’র সাথে বুঝি শিম্পাঞ্জির অনেক মিল!(কিংবা আমিই হয়তো বাংলা কম বুঝি)। বিবর্তনবাদীরা এতদিন যেমন প্রচার করে এসেছিলেন মানুষ ও শিম্পাঞ্জি গোত্রীয় কমন এনসেস্টর ছিল chimp-like, তাই ফসিল আবিষ্কার হলে সেটাকে শিম্পাঞ্জির সাথে মেলানোর চেষ্টা করা হতো। মাত্র কিছুদিন আগেও এ তত্ত্বের ব্যাপারে বিবর্তনবাদীরা নিঃসন্দেহ ছিলেন যেহেতু শিম্পাঞ্জি ও মানুষের ডিএনএ-এর মধ্যে ৯৫%-৯৯% মিল রয়েছে এবং পূর্ববর্তী ফসিল ‘লুসি’র আবিষ্কার (শিম্পাঞ্জির সাথে অনেক মিল থাকায়) তাকে আরো পোক্ত করেছিল। কিন্তু ‘আর্ডি’র আবিষ্কার বিবর্তনবাদীরা মানুষের বিবর্তন বিষয়ে যে সব থিয়োরি আঁকড়ে ধরেছিলেন সেগুলোকে বিশেষ করে chimpanzee-centric models of human evolution বাতিল করে দিয়েছে। এটা আমার কোন বক্তব্য নয়। আমি ‘Science’-এ প্রকাশিত ‘আর্ডি’র অন্যতম গবেষক ডঃ লাভজয়ের প্রবন্ধ থেকেই উদ্ধৃতি দিচ্ছি—(আশা করি লাভজয়ের সামারি অংশটুকু লিংক থেকে সবাই পড়তে পারবেন)

“The most popular reconstructions of human evolution during the past century rested on the presumption that the behaviors of the earliest hominids were related to (or even natural amplifications of) behaviors observed in these living great apes. One effect of chimpanzee-centric models of human evolution has been a tendency to view Australopithecus as transitional between an ape-like ancestor and early Homo.

Ardipithecus ramidus nullifies these presumptions...”

শিক্ষানবিস দাঁতের বিবর্তনের উদাহরণ দিয়েছেন। ‘লুসি’ যখন আবিষ্কৃত হয়েছিল তখন ধরে নেয়া হয়েছিল যে এ পর্যায়ে এসে অস্ত্র আবিষ্কারের ফলে পুরুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও হিংস্রতা কমে আসে বা খাদ্যাভাসে পরিবর্তন হয়, যার ফলে canine teeth (বাংলা কি শ্বদন্ত?) ছোট হয়ে যায়। কিন্তু আর্ডি আবিষ্কারের পর দেখা যাচ্ছে হোমিনিডের মধ্যে ছোট ক্যানাইন দাঁত লুসির দাঁত বিবর্তনেরও অনেক আগে বা মানুষের অস্ত্র আবিষ্কারেরও অনেক পূর্ব থেকে বিদ্যমান। লাভজয় থেকে আবার উদ্ধৃতি দিচ্ছি-

“For example, the enlarged rear teeth of Australopithecus have long been viewed as adaptations to a rough, abrasive diet. This has led to speculation that canine teeth might have become smaller simply to accommodate the emergence of these other enlarged teeth, or that the importance of canine teeth in displays of male-to-male aggression waned with the development of weapons. Ar. ramidus negates such hypotheses because it demonstrates that small canines occurred in hominids long before any of the dental modifications of Australopithecus or the use of stone tools.”

লাভজয় আরো বলছেন ‘আর্ডি’র আবিষ্কার মানুষের পূর্বপুরুষ যে শিম্পাঞ্জি বা গরিলার মতো ছিল এসব থিয়োরিগুলোকে বাতিল প্রমাণিত করে তার স্বাভাবিক এবং সোজাভাবে হাঁটতে পারার ক্ষমতার মাধ্যমে।

“The discovery of Ar. ramidus also requires rejection of theories that presume a chimpanzee- or gorilla-like ancestor to explain habitual upright walking. Ar. ramidus was fully capable of bipedality and had evolved a substantially modified pelvis and foot with which to walk upright.”

লাভজয় আরো পেরেক ঠুকেছেন এই বলে—মানুষের সাথে শুধুমাত্র কোন Ape-এর তুলনা করে বিবর্তনের প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাবে না কারণ আর্ডি বিবর্তনের যে গতিপথ তুলে ধরেছে তার সাথে কোন Ape—এর বিবর্তনের দূরতম সম্পর্কও নেই।

“Such questions can no longer be addressed by simply comparing humans to extant apes, because no ape exhibits an even remotely similar evolutionary trajectory to that revealed by Ardipithecus.”

কাজেই বলা যায় ‘লুসি’ আবিষ্কারের পর মানুষের বিবর্তন বিষয়ে যে সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গিয়েছিল বা ধরে নেয়া হয়েছিল ‘আর্ডি’তে এসে তা আবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। নতুন আর কোন ফসিল আবিষ্কৃত হলে হয়তো আবার থিয়োরিগুলো পালটে যাবে। ‘আর্ডি’ আবিষ্কার বিবর্তন বিষয়ে নতুন অনেক প্রশ্ন বা বিতন্ডার জন্ম দিয়েছে বা সামনে আরো দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। খ্রিস্টান ক্রিয়েশনিস্টরা অবশ্য দেখলাম 'আর্ডি' আবিষ্কারে বেশ খুশি; একটা লিংক রেখে গেলাম।

পোস্টে ছোটখাট কিছু ত্রুটি-

২০০৯ সালের ১লা অক্টোবর "নেচার" পত্রিকায় প্রকাশিত ১১টি গবেষণাপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি,

‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিনের ২ রা অক্টোবর সংখ্যার কথা মনে হয় বলতে চেয়েছিলেন হাসি

এ কারণেই তাৎক্ষণিকভাবে বিজ্ঞানীরা সাংবাদিক বা বিজ্ঞানী মহলকে তেমন কিছুই জানায়নি।

সঠিক নয়। ‘আর্ডি’ আবিষ্কারের কথা টিম হোয়াইট, জেন সুয়া ১৯৯৪ সালে ‘নেচারে’র সেপ্টেম্বর ২২ সংখ্যায় জানিয়েছিলেন। আর্টিকেল লিংক।

৯ বছরের কাজ শেষে Suwa গর্বভরে বলতে পেরেছেন...

নয় বছর পরে কোন ফলাফল বের হয়েছিল কিনা খোঁজ পাই নি। ১৯৯২ সালে আবিষ্কৃত হবার পরে দীর্ঘ ১৭ বছরের কাজ শেষে এর ফলাফল প্রকাশিত হয়।

এখনই অনেকে বলছেন, আর্ডিকে সরাসরি অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যানামেনসিস এর পূর্বপুরুষ বলে দেয়ার সময় এখনও আসে নি। জীবাশ্মগুলো আরও পরীক্ষা করার পরই কেবল এ বিষয়ে শতকরা ৯৯ ভাগ নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব।

শুধু অনেকে বললে বিষয়টা হালকা হয়ে যায়। আর্ডির মূল আবিষ্কারক টিম হোয়াইটকেই আমি টিভিতে সংবাদ সম্মেলনে এ সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখেছি। এবং শুধু জীবাশ্মগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা নয় বরং অন্যান্য সাইটে যদি আরো জীবাশ্ম পাওয়া যায় তবেই ‘আর্ডি’র সাথে ‘লুসি’ বা মানুষের যোগসূত্র নির্ণয় করা যেতে পারে। বার্কলের প্রেস রিলিজ থেকেও হোয়াইটের বক্তব্য দেখে নিতে পারেন-

White admits that the relationship between Ar. ramidus and the Australopithecus fossils the team has found about 80 meters higher in the strata of the Ethiopian desert is tentative. Nevertheless, he said Ardi's species could be the direct ancestor of Lucy's species, which could be the direct ancestor of modern humans. Without additional fossil evidence, however, connecting the individual or species dots is hazardous, White said.

"Ardipithecus ramidus is only known from this one productive site in Ethiopia," White said. "We hope others will find more fossils, in particular fossils from the period of 3 to 5 million years ago, to test this hypothesis of descent."

শিক্ষানবিস এর ছবি

অনেক কিছু শুধরে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আসলে তাৎক্ষণিকভাবে লিখেছি বলে আবেগটাই বেশি এসেছে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার তুলনায় বেশী নাটকীয় হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের আগে কিছুই জানানো হয় নি- জাতীয় কথাবার্তা নাটকীয়তা করতে গিয়ে এসে পড়েছে। ঠিক হয় নি। তথ্যগত ত্রুটিগুলো ঠিক করে দিচ্ছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।