মহাপৃথিবী

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: বুধ, ২৮/০১/২০১৫ - ৯:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধানের রসের গল্প পৃথিবীর—পৃথিবীর নরম অঘ্রান
পৃথিবীর শঙ্খমালা নারী সেই—আর তার প্রেমিকের ম্লান
নিঃসঙ্গ মুখের রূপ, বিশুষ্ক তৃণের মতো প্রাণ,
জানিবে না, কোনোদিন জানিবে না; কলরব করে উড়ে যায়
শত স্নিগ্ধ সূর্য ওরা শাশ্বত সূর্যের তীব্রতায়।
— জীবনানন্দ দাশ, সিন্ধুসারস (মহাপৃথিবী)

আমরা কি সম্ভাব্য সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বে বাস করি? জার্মান গণিতবিদ গটফ্রিড লাইবনিৎস তাই মনে করতেন; ১৭১০ সালে তিনি লিখেছিলেন, পৃথিবী "সম্ভাব্য সর্বোত্তম বিশ্ব" (Die beste aller möglichen Welten)। লাইবনিৎসের ধারণাকে পরবর্তিতে পুরোদস্তুর অবৈজ্ঞানিক অভিলাষী কল্পনা হিসেবে বাতিল করেছেন অনেকে, বিশেষ করে ফরাসি সাহিত্যিক ভলতেয়ার, তার মান্যুমোপুস কাঁদিদ এ। তারপরও অন্তত এক গোত্রের বিজ্ঞানীদের সাথে লাইবনিৎসের মতাদর্শ বেশ ভালই মিলে যায়—সেইসব জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গোত্র যারা কয়েক দশক ধরে সৌরজগতের বাইরের অন্যান্য আকর্ষণীয় গ্রহ খোঁজার ক্ষেত্রে পৃথিবীকে আদর্শ নমুনা হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।

পৃথিবীবাসীরা যেহেতু কেবল একটাই বাসযোগ্য বিশ্ব চেনে—আমাদের বিশ্ব—সেহেতু অন্যত্র প্রাণ খুঁজতে গিয়ে পৃথিবীর মতোই আরেকটা গ্রহ (যেমন বৃহস্পতির জলময় উপগ্রহ ইউরোপা এবং মঙ্গল) অনুসন্ধানকে আর যাই হোক অযৌক্তিক বলা যাবে না। কিন্তু এখন আমাদের সূর্য ছাড়া অন্যান্য তারার চারদিকে আবর্তনরত গ্রহ অর্থাৎ বহির্গ্রহ আবিষ্কার আমাদেরকে এই চিরায়ত ভূকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করতে বাধ্য করছে।

গত কয়েক দশকে জ্যোতির্বিদরা ১৮০০-র ও বেশি বহির্গ্রহ আবিষ্কার করেছেন এবং পরিসংখ্যান বলে আমাদের গ্যালাক্সিতেই অন্তত আরো এক হাজার কোটি বহির্গ্রহ আছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া গ্রহগুলোর খুব কমই পৃথিবীর মতো। বরং তারা বহুবৈচিত্র্যময়; তাদের কক্ষপথ, আকার, গঠন একেবারে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের এবং তারা একেবারে অন্য রকমের তারাকে আবর্তন করে যাদের কোনো কোনোটি সূর্যের চেয়ে অনেক ছোটো ও নিস্তেজ। বহির্গ্রহের এত শত বৈচিত্র্য দেখে অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন পৃথিবী বাসযোগ্য গ্রহের আদর্শ উদাহরণ হতেই পারে না। এমনকি আমাদের চেয়ে অনেক ভিন্ন কোনো গ্রহে সুস্থির জীবমণ্ডল সৃষ্টির ও বজায় থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশিও হতে পারে। বহির্জাগতিক বা বহিঃসৌর প্রাণানুসন্ধানের জন্য এসব "অতিবাসযোগ্য বিশ্ব" কেই লক্ষ্য হিসেবে নেয়া উচিত, ভূসদৃশ (পৃথিবীসদৃশ) গ্রহদেরকে নয়।

একটি ত্রুটিপূর্ণ গ্রহ

অবশ্যই আমাদের গ্রহের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলোকে প্রথম দর্শনে প্রাণের জন্য খুব আদর্শ মনে হয়। পৃথিবী একটা অনুদ্বেল, মধ্যবয়সী তারাকে আবর্তন করে যে শত শত কোটি বছর ধরে সমতালে কিরণ দিয়ে আসছে, যার ফলে এখানে প্রাণ উৎপন্ন ও বিবর্তিত হওয়ার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। সূর্যের "বাসযোগ্য অঞ্চলের" (যেখানে তারার আলো অতিবেশিও না আবার অতিকমও না) মধ্যে থাকায় এতে জীবনদায়ী পানির সমুদ্র আছে। তারার আরো কাছে থাকলে সব পানি ফুটে বাষ্প হয়ে যেত আর আরো দূরে থাকলে সব জমে বরফ হয়ে যেত। পৃথিবীর আকারটাও প্রাণবান্ধব: মহাকর্ষীয় বল দিয়ে একটা উল্লেখযোগ্য আকারের বায়ুমণ্ডল ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট বড়, কিন্তু আবার এত বড় নয় যে অতিমহাকর্ষের কারণে গ্রহের চারদিকে ঘন গ্যাসের একটা শ্বাসরোধী, অনচ্ছ আস্তরণ গড়ে উঠে। পৃথিবীর আকার ও শিলাময় (পাথুরে) কাঠামো বাসযোগ্যতার আরো কিছু শর্ত পূরণ করে, যেমন জলবায়ু-নিয়ন্ত্রক টেক্টোনিক প্লেট এবং এমন একটা চৌম্বক ক্ষেত্র যা ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি থেকে জীবমণ্ডলকে রক্ষা করে।

তারপরও বিজ্ঞানীরা এই গ্রহের বাসযোগ্যতা নিয়ে যত বেশি গবেষণা করছেন একে ততই কম আদর্শ মনে হচ্ছে। বর্তমানে ভূপৃষ্ঠের একেক জায়গার বাসযোগ্যতা একেবারে একেক রকম এবং একটা উল্লেখযোগ্য অংশে কোনো প্রাণই নেই—যেমন শুষ্ক মরুভূমি, পুষ্টিবিহীন মুক্তসমুদ্র এবং হিমশীতল মেরু অঞ্চল। সময়ের সাথেও পৃথিবীর বাসযোগ্যতা পরিবর্তিত হয়। উদাহরণ হিসেবে আনুমানিক ৩৫ থেকে ৩০ কোটি বছর পূর্বে বিদ্যমান অঙ্গারবহ (Carboniferous) যুগের কথাই ধরা যাক, সে সময় আমাদের গ্রহ বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ, আর্দ্র ও অক্সিজেনসমৃদ্ধ ছিল। তখন সমুদ্রে খোলকী প্রাণী, মাছ এবং প্রাচীরনির্মাতা প্রবালের আধিক্য ছিল, মহাদেশগুলো জুড়ে ছিল বিশাল বিশাল সব বন, এবং পোকামাকড় ও অন্যান্য স্থলচর প্রাণীরা আকারে ছিল অনেক বড়। অঙ্গারবহ পৃথিবী সম্ভবত বর্তমান পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি জীব ধারণ করত, যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে পৃথিবী অতিপ্রাচীন যুগের চেয়ে বর্তমানে অনেক কম বাসযোগ্য।

তার উপর আমরা এটাও জানি যে পৃথিবীর বাসযোগ্যতা ভবিষ্যতে আরো কমবে। আজ থেকে আনুমানিক পাঁচশ' কোটি বছর পর আমাদের সূর্য তার কেন্দ্রভাগের সব হাইড্রোজেন জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়ার পর হিলিয়াম পোড়ানো শুরু করবে এবং ফলশ্রুতিতে সে আকারে কয়েকগুণ বেড়ে "লোহিত দানবে" পরিণত হবে এবং পৃথিবীকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে একটা বিকট অঙ্গারে পরিণত করবে। তার অনেক আগেই অবশ্য পৃথিবীর সব জীব বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া উচিত। হাইড্রোজেন পোড়াতে থাকার কারণে সূর্যের কেন্দ্রভাগের তাপমাত্রা দিনদিন বাড়তে থাকবে যার ফলে তার সামগ্রিক প্রভা দিনদিন বাড়বে এবং তার উজ্জ্বলতাও প্রতি একশ কোটি বছরে আনুমানিক ১০ শতাংশ করে বাড়তে থাকবে। এ ধরণের বিবর্তনের অর্থ সূর্যের বাসযোগ্য অঞ্চল স্থির নয় বরং পরিবর্তনশীল, অর্থাৎ দিনদিন তার বাসযোগ্য অঞ্চল আরো দূরে সরে যেতে থাকবে এবং একসময় পৃথিবী আর সেই অঞ্চলের ভিতরেই থাকবে না। আরো ভয়ের কথা হচ্ছে, সর্বাধুনিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে পৃথিবী এখনো সূর্যের বাসযোগ্য অঞ্চলের ঠিক মাঝখানে নয় বরং ভিতরের প্রান্তে অবস্থিত এবং অচিরেই তার এই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।

আজ থেকে মাত্র পঞ্চাশ কোটি বছরের মধ্যেই সূর্যের উজ্জ্বলতা এত বেশি হবে যে গোটা পৃথিবী মরণজ্বরে আক্রান্ত হবে এবং জটিল বহুকোষী জীবের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। আর আজ থেকে প্রায় ১৭৫ কোটি বছর পর সূর্য এতই উজ্জ্বল হবে যে পৃথিবীর সব সমুদ্র বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রাণের শেষ চিহ্নটিও মুছে যাবে। আসলে পৃথিবী ইতিমধ্যেই তার বাসযোগ্যতার সুবর্ণসময় পেরিয়ে এসেছে এবং বেশ দ্রুত তার জীবন-নাট্যের গ্রন্থিমোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সব দিক বিবেচনা করে তাই বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলা যায় যে আমাদের গ্রহ বর্তমানে খুব ক্ষীণভাবে বাসযোগ্য।

একটি অতিবাসযোগ্য বিশ্বের সন্ধানে

কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের ডক্টরেটোত্তর গবেষক রনে হেলার ২০১২ সালে গ্যাস-দানব গ্রহদের (যেসব গ্রহ আকারে বিশাল ও মূলত গ্যাস দিয়ে গঠিত; যেমন, বৃহস্পতি) বিশালকায় উপগ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করার সময় পৃথিবীর চেয়ে বেশি বাসযোগ্য গ্রহ কেমন হতে পারে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম উপগ্রহ বৃহস্পতির গ্যানিমিড, যার ভর পৃথিবীর মাত্র ২.৫ শতাংশ যা প্রাণ ধারণোপযোগী বায়ুমণ্ডল ধরে রাখার পক্ষে খুবই ছোটো। কিন্তু হেলার লক্ষ্য করেন, অন্যান্য তারার বাসযোগ্য অঞ্চলে অবস্থিত গ্যাসীয় অতিদানব গ্রহগুলোর চারদিকে পৃথিবীর প্রায় সমান আকারের উপগ্রহ গঠিত হতে পারে এবং তেমন উপগ্রহে প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশের সম্ভাবনাও কম নয়।

এমন বিশালকায় বহিশ্চাঁদ (exomoon, বহির্গ্রহের উপগ্রহ) অতিবাসযোগ্য হওয়া উচিত, কারণ তাদের শক্তির উৎস অনেকগুলো। পৃথিবী যেখানে কেবল সূর্য থেকেই সিংহভাগ শক্তি পায়, সেই উপগ্রহগুলো সেখানে তাদের মাতৃতারা থেকে শক্তি আহরণের পাশাপাশি তাদের মাতৃগ্রহ থেকে প্রতিফলিত আলো ও তাপ পাবে এবং এমনকি গ্রহটির মহাকর্ষীয় শক্তিও ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারবে। দানবীয় গ্রহের চারদিকে আবর্তনরত উপগ্রহের ভূত্বক গ্রহটির জোয়ার বলের কারণে প্রসারিত ও সংকুচিত হবে এবং তার ফলে সৃষ্ট ঘর্ষণ উপগ্রহটির অভ্যন্তরে তাপ তৈরি করবে যা শক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। বৃহস্পতির ইউরোপা এবং শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস এ ভূত্বকের নিচে যে সমুদ্র আছে বলে ধারণা করা হয় তা সৃষ্টির কারণ হিসেবে এই জোয়ার-উষ্ণায়ন (tidal heating) কেই দায়ী করা যায়। অবশ্য এটাও মনে রাখতে হবে যে জোয়ারোষ্ণায়নের বিপদও অনেক; শক্তির উৎসসমূহের মধ্যে সামান্য ভারসাম্যহীনতাই উপগ্রহটাকে চিরতরে বাসের অযোগ্য করে দিতে পারে।

এখন পর্যন্ত বাসের যোগ্য বা অযোগ্য কোনো ধরণের বহিশ্চাঁদই নিশ্চিতভাবে আবিষ্কার করা যায়নি, যদিও তার জন্য আর বেশিদিন হয়ত অপেক্ষা করতে হবে না, এমনকি নাসা'র কেপলার নভোদূরবিনের পুরনো উপাত্ত বিশ্লেষণ করলেই হয়ত কিছু চাঁদের খবর বেরিয়ে আসবে। এখন পর্যন্ত এসব চাঁদের অস্তিত্ব বা প্রকৃতি নিয়ে বলা কথাবার্তাগুলো যৌক্তিক অনুমানের পর্যায়ে থাকতেই বাধ্য।

অন্যদিকে অতিবাসযোগ্য বহির্গ্রহের আবিষ্কার হয়ত আমাদের হাতের মুঠোতেই রয়েছে, হয়ত ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত বহির্গ্রহগুলোর কোনো কোনোটাই অতিবাসযোগ্য। ১৯৯০ এর দশকের মাঝের দিকে আবিষ্কৃত বহির্গ্রহগুলোর প্রায় সবগুলোই আকারে ও গঠন-কাঠামোয় ছিল প্রায় বৃহস্পতির মতো, কিন্তু প্রাণ ধারণের পক্ষে তারা তাদের মাতৃতারার বড্ড বেশি কাছে অবস্থিত। তবে গ্রহ সনাক্তকরণ পদ্ধতির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা দিনদিন এমন সব বহির্গ্রহ খুঁজে পাচ্ছেন যেগুলো আকারে তুলনামূলক ছোটো এবং অপেক্ষাকৃত মৃদুভাবাপন্ন কক্ষপথে আবর্তনশীল। গত কয়েক বছরের মধ্যে আবিষ্কৃত অধিকাংশ গ্রহই "মহাপৃথিবী" (super-Earth) প্রকৃতির, অর্থাৎ ভরের দিক দিয়ে পৃথিবীর ১০ গুণের মতো এবং ব্যাসার্ধ্যের দিক দিয়ে পৃথিবী ও নেপচুনের মাঝামাঝি। অন্যান্য তারার চারপাশে এমন গ্রহের ছড়াছড়ি অথচ আমাদের সৌরজগতে তেমন একটাও নেই, যা থেকে মনে হয় আমাদের সৌরজগৎ বেশ ব্যতিক্রমী ধরণের।

মহাপৃথিবীগুলোর মধ্যে যেগুলো আকারে ও ভরে বেশি বড় তাদের বায়ুমণ্ডল সম্ভবত পুরু ও স্ফীত, অনেকটা নেপচুনের মতো, যেক্ষেত্রে তাদেরকে বিশালকায় পৃথিবী না বলে "ক্ষুদে নেপচুন" বলা উচিত। কিন্তু যারা একটু ছোটো, যেমন যেগুলো পৃথিবীর চেয়ে দুই গুণের মতো বড় পৃথিবীর মতোই সেগুলোর মূল গাঠনিক উপাদান লোহা ও শিলা হতে পারে এবং তারা যদি তাদের মাতৃতারার বাসযোগ্য অঞ্চলের মাঝে থাকে তাহলে তাদের পৃষ্ঠে প্রাণ বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত তরল পানিও থাকতে পারে। এমন বেশ কিছু পৃথিবীসদৃশ শিলাময় গ্রহ পাওয়া গেছে যারা মূলত 'এম' বামন ও 'কে' বামন (K dwarf) ধরণের তারাদের আবর্তন করে যে তারারা সূর্যের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোটো, কম উজ্জ্বল এবং দীর্ঘজীবী। অনেকাংশে মাতৃতারাদের এই দীর্ঘ জীবনের জন্যই এই গ্রহগুলোর অতিবাসযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি যা হেলার তার আরেক সহকর্মীর সাথে মিলে কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন।

দীর্ঘজীবিতার সুবিধা

হেলার ও তার সহকর্মীরা তাদের সিমুলেশন করার ক্ষেত্রে ধরে নিয়েছিলেন যে, অতিবাসযোগ্যতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি দীর্ঘজীবী তারা, একটি প্রায়-শাশ্বত সূর্য; হাজার হোক তারা মরে গেলে একটি গ্রহের তার পুরো জীবমণ্ডল নিয়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। আমাদের সূর্যের বয়স ৪৬০ কোটি বছর এবং তার মৃত্যু ঘটবে আনুমানিক ১০০০ কোটি বছর বয়সে। তবে আকারে আর একটু ছোটো হলেই তার আয়ু অনেক বেড়ে যেত এবং তখন তাকে বলা হতো একটা 'কে' বামন ধরণের তারা। অপেক্ষাকৃত ভারী তারাদের তুলনায় 'কে' বামনদের কম জ্বালানি থাকে কিন্তু সেটা তারা খুব কার্যকরভাবে ব্যবহার করে বলে তাদের আয়ু বেশি। বর্তমানে আমরা যেসব মধ্যবয়সী 'কে' বামন তারা দেখি তাদের বয়স সূর্যের চেয়ে বেশি এবং সূর্য মারা যাওয়ার পরও শত শত কোটি বছর ধরে তারা আলো দিয়ে যাবে। সেসব তারার চারপাশে থাকা গ্রহগুলোতে প্রাণ বিবর্তনের মাধ্যমে বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি সময় পাবে।

'কে' বামনদের আলো সূর্যের তুলনায় একটু বেশি লালাভ যেহেতু তাদের বর্ণালি অবলোহিতের দিকে সরে যায়, কিন্তু তারপরও তারা যেসব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিকিরণ দেয় তা গ্রহপৃষ্ঠে সালোকসংশ্লেষণ বিক্রিয়া ঘটানোর উপযোগী। 'এম' বামন তারারা আরো ছোটো এবং আরো মিতব্যয়ী এবং তারা ধীরস্থিরভাবে হাজার হাজার কোটি বছর ধরে জ্বলতে পারে, কিন্তু তাদের আলো এতই ক্ষীণ যে বাসযোগ্য অঞ্চলটি তাদের খুব কাছে এবং সে কারণে সেখানে থাকা কোনো গ্রহের উপর নাক্ষত্রিক ঝড়ের মতো বিপজ্জনক ঘটনার প্রভাব অনেক বেশি পড়ে। 'কে' বামনরা দীর্ঘজীবী কিন্তু অতিক্ষীণ নয় যে কারণে অতিবাসযোগ্য গ্রহ তাদের চারদিকে থাকার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।

বর্তমানে এ ধরণের অনেক দীর্ঘজীবী তারার চারদিকে এমন সব শিলাময় মহাপৃথিবী থাকতে পারে যেগুলো ইতিমধ্যেই আমাদের সৌরজগতের চেয়ে কয়েক শত কোটি বছর বেশি পুরনো। এমনও তো হতে পারে যে, পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই এ ধরণের অনেক গ্রহে শত কোটি বছর ধরে প্রাণ পূর্ণোদ্যমে বিকশিত হচ্ছিল। পৃথিবীতে জীবের উদ্ভবের পর সেই জীবেরা পৃথিবীর বাসযোগ্যতা সময় সময় আরো বৃদ্ধি করেছে এবং এই ব্যাপারটা অতিবাসযোগ্য গ্রহেও ঘটতে পারে যা খুব আশার কথা। পৃথিবীতে এমন ঘটনার একটা আদর্শ উদাহরণ ২৪০ কোটি বছর আগের গ্রেট অক্সিজেনেশন ঘটনা যখন আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রথম উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অক্সিজেন জমা হতে শুরু করে। সেই অক্সিজেন সম্ভবত সামুদ্রিক শৈবাল থেকে এসেছিল এবং তাদের বদৌলতেই পরবর্তিতে আরো কার্যকর বিপাকক্রিয়া বিশিষ্ট জটিল জীব জন্মাতে পেরেছিল। মহাসাগর থেকে উত্থিত হয়ে জীবদের গোটা পৃথিবীকে উপনিবেশে পরিণত করার যে মহাযজ্ঞ তা শুরুই হতে পারত না যদি না গ্রেট অক্সিজেনেশন ঘটত। এলিয়েন জীবমণ্ডলগুলোতেও যদি এমনটা ঘটে তাহলে একথা বেশ নিশ্চয়তার সাথেই বলা যায় যে, বর্ষীয়ান গ্রহগুলো অতিবাসযোগ্য হওয়ার জন্য আমাদের চেয়ে আরো অনেক বেশি সময় পাবে।

যেসব গ্রহ সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোটো ও দীর্ঘজীবী তারার চারপাশে আবর্তন করে এবং যারা ভরের দিক দিয়ে পৃথিবীর চেয়ে বড় তাদেরই অতিবাসযোগ্য হয়ে উঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। শিলাময় গ্রহরা বয়স বাড়ার পর সবচেয়ে ভয়ানক যে দুটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় তা মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত ভরটা খুব দরকারি। আমাদের পৃথিবী যদি একটা ছোটো 'কে' বামনের বাসযোগ্যাঞ্চলে থাকত তাহলে তার অন্তর্ভাগ তারাটির মৃত্যুর অনেক আগেই একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গিয়ে গ্রহটিকে জীব বসবাসের একেবারে অনুপযোগী করে দিত। গ্রহের অভ্যন্তরীন তাপ তার আগ্নেয় ও টেক্টোনিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে, আর এই কর্মকাণ্ডগুলো আবার নিয়ন্ত্রণ করে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা। এই প্রক্রিয়াগুলো যদি না থাকত তবে বৃষ্টির মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ু থেকে বেরিয়ে নিরন্তর মাটিতে প্রবেশ করতে থাকত এবং বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের পরিমাণ দিনদিন কমতেই থাকত। পরিশেষে কার্বন ডাই অক্সাইড এতই কমে যেত যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া চিরতরে বন্ধ হয়ে যেত, গ্রহটি নিজেকে উষ্ণ রাখার কোনো উপায় না দেখে একটা বিকট বরফকুণ্ডে পরিণত হতো, তার ত্বকে কোনো তরল পানিই অবশিষ্ট থাকত না আর ফলশ্রুতিতে তা হয়ে পড়ত বাসের পুরোপুরি অযোগ্য।

তাপ যোগানদাতা গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া বন্ধ হওয়া ছাড়াও গ্রহের অন্তর্ভাগ ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার আরেকটি কুপ্রভাব আছে: চৌম্বক ক্ষেত্রের মৃত্যু। পৃথিবীর অন্তর্ভাগের ঘূর্ণনশীল, পরিচলনশীল, মহাউত্তপ্ত, গলিত লোহা ডায়নামো হিসেবে কাজ করে একটা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করেছে যা তাকে বহির্বিশ্বের অনেক ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। আমাদের গ্রহের জন্মের সময় উৎপন্ন তাপের অবশিষ্টাংশ এবং বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ক্ষয় থেকে উদ্ভূত তাপ লোহাকে তরলাবস্থায় রাখে। কোনো শিলাময় গ্রহের অভ্যন্তরীন তাপোৎপাদক গুলো যদি ফুরিয়ে যায় তাহলে তার কেন্দ্রভাগ তরল থেকে কঠিন হয়ে যাবে, ডায়নামোটা বন্ধ হয়ে যাবে, চৌম্বক ক্ষেত্রের ঢালটা আর থাকবে না, এবং এর ফলে নাক্ষত্রিক ঝড় ও মহাজাগতিক রশ্মি বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বাংশ ক্ষয় করে ফেলবে এবং ভূপৃষ্ঠেও আক্রমণ চালাবে। এ কারণেই সব প্রবীণ ভূসদৃশ গ্রহ একসময় তাদের বায়ুমণ্ডলের উল্লেখযোগ্য অংশ হারাবে এবং তাদের পৃষ্ঠে প্রাণের জন্য ভয়ংকর সব রশ্মি আনাগোনা শুরু হবে।

অন্যদিকে পাথুরে মহাপৃথিবী গুলো—যাদের ভর পৃথিবীর দুই গুণ পর্যন্ত হতে পারে—পৃথিবীর চেয়ে অনেক মার্জিতভাবে বুড়ো হয়; তাদের অভ্যন্তরীন তাপ অনেক বেশি সময় পর্যন্ত বজায় থাকে। ভর আবার খুব বেশি হলেও সমস্যা। যেমন পৃথিবীর চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ ভারী গ্রহদের ভূত্বকে চাপ ও সান্দ্রতা এত বেশি হবে যে অভ্যন্তর থেকে কোনো তাপ পৃষ্ঠে বেরোতে পারবে না এবং সেখানে কোনো প্লেট টেক্টোনিক্স থাকার সম্ভাবনাও থাকবে না। পৃথিবীর চেয়ে দুই গুণের মতো ভারী গ্রহে প্লেট টেক্টোনিক্স থাকতে কোনো বাধা নেই এবং তাদের ভূতাত্ত্বিক চক্র ও চৌম্বক ক্ষেত্রও পৃথিবীর চেয়ে কয়েক শত কোটি বছর বেশিকাল বজায় থাকবে। সেরকম গ্রহদের ব্যাসও পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি হবে যার ফলে সেখানকার জীবেরা বসবাসের জন্য পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৫৬ শতাংশ বেশি জায়গা পাবে।

অতিবাসযোগ্য মহাপৃথিবীতে জীবনধারা

অতিবাসযোগ্য গ্রহ দেখতে কেমন হতে পারে? পৃষ্ঠাভিকর্ষ (surface gravity) বেশি হওয়ার কারণে মহাপৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে একটু বড় হবে এবং তার পাহাড়গুলো অপেক্ষাকৃত দ্রুত ক্ষয় হবে। অর্থাৎ তেমন গ্রহের বায়ুমণ্ডল হবে অপেক্ষাকৃত পুরু আর পৃষ্ঠ হবে অপেক্ষাকৃত সমতল। সমুদ্র যদি থেকে থাকে তাহলে সমতল পৃষ্ঠের কারণে তার জল অসংখ্য ছোটো ছোটো অগভীর প্রণালীতে আবদ্ধ হবে, আমাদের মতো সুবিশাল সুগভীর মহাসাগর বলে কিছু তৈরি হতে পারবে না। অর্থাৎ পুরো গ্রহটিই দেখতে হবে মালয় অঞ্চলের মতো—সরু সরু জলাধার দিয়ে আলাদা হয়ে থাকা ছাড়া ছাড়া দ্বীপ; হবে বাংলার সারসাকীর্ণ নিচু নিচু জলাভূমির একটা বড় সংস্করণের মতো। পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি সৈকতের কাছাকাছি অগভীর জলে, আর সেই দ্বীপপুঞ্জখচিত গ্রহটা পুরোটাই হবে এমন; সেখানে জীববৈচিত্র্য কত ব্যাপক হতে পারে তা বোঝাই যাচ্ছে। তাছাড়া ওয়ালেসের মালয় দ্বীপপুঞ্জ বা ডারউইনের গালাপাগোস এর উদাহরণ থেকে আমরা খুব ভাল করেই জানি এরকম অঞ্চল বিবর্তন ত্বরান্বিত করা ও জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে কতটা সহায়ক।

অবশ্য বড় কোনো মহাদেশ না থাকার কারণে এরকম দ্বীপখচিত গ্রহে মোট ভূমির পরিমাণ কম হবে যা মনে হতে পারে স্থলচর প্রাণীদের জন্য সুবিধার কথা নয়। কিন্তু সমস্যা তো মহাদেশবিশিষ্ট গ্রহেরও আছে: মহাদেশগুলোর মধ্যাঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ, আর্দ্র সামুদ্রিক বাতাস থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে অনেক সময় বিরান মরুভূমিতে পরিণত হয় (সাহারা আর মধ্য-এশীয় মরুপানে চান)। উপরন্তু, একটা গ্রহের পৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসযোগ্যতা তার আবর্তনতলের (গ্রহটা যেই তলে থেকে তারাকে আবর্তন করে) সাপেক্ষে তার ঘূর্ণন অক্ষের (গ্রহটা নিজে তার যে অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরে) নতির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। যেমন পৃথিবী যদি তার আবর্তনতলের দিকে ২৩.৪ ডিগ্রি হেলে না থাকত তাহলে তার বিষুবীয় অঞ্চল ও মেরু অঞ্চলের মধ্যে তাপমাত্রা ও পরিবেশের পার্থক্য আরো অনেক বেশি হতো, অর্থাৎ তখন গ্রহটির আরো অনেক অঞ্চল চরম প্রতিকূল হয়ে পড়ত। কোনো মহাপৃথিবীর ঘূর্ণনাক্ষের নতি যদি অনুকূলে থাকে তাহলে তার পরিবেশ পৃথিবীর চেয়ে বেশি জীববান্ধব হতে পারে, বিষুবীয় অঞ্চলের মতো তার মেরু অঞ্চলেও বরফহীন বাসযোগ্য দ্বীপ থাকতে পারে এবং গ্রহের মোট বাসযোগ্য এলাকার আয়তন পৃথিবীর চেয়ে বেশি হতে পারে।

সব দিক বিবেচনা করে তাই বেশ নিশ্চয়তার সাথেই বলা যায় যে অতিবাসযোগ্য গ্রহরা ভরে পৃথিবীর চেয়ে কিছুটা বড় হবে এবং সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল ও ছোটো (ও সূর্যাপেক্ষা শাশ্বত) একটা তারার চারদিকে আবর্তন করবে। এই অনুসিদ্ধান্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়, কারণ ছোটো তারার চারদিকে আবর্তনরত ভারী গ্রহ আবিষ্কার করা সূর্যের মতো তারার চারদিকে আবর্তনরত ভূসদৃশ গ্রহ আবিষ্কারের চেয়ে সোজা। বহির্গ্রহ জরিপের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে আমাদের গ্যালাক্সিতে ছোটতারা-ভারীগ্রহ জুটির সংখ্যা সূর্য-পৃথিবী জুটির চেয়ে অনেক বেশি। তার মানে প্রাণানুসন্ধানের জন্য এখন আমাদের হাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি জায়গা আছে।

এক্ষেত্রে সবার আগে মনে আসে কেপলার নভোদুরবিনের অন্যতম সেরা আবিষ্কার কেপলার-১৮৬এফ গ্রহটির কথা। ২০১৪ সালের এপ্রিলে আবিষ্কৃত এই শিলাময় গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ১১ শতাংশ ভারী এবং একটি 'এম' বামন তারার বাসযোগ্যাঞ্চলে আছে। এর বয়স সম্ভবত কয়েক শত কোটি বছর, হয়ত পৃথিবীর চেয়েও বেশি। আমাদের থেকে প্রায় ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকায় ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এর বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, কিন্তু কিছুটা অভিলাষী যুক্তির আশ্রয় নিয়ে একে অতিবাসযোগ্য দ্বীপখচিত গ্রহ বলাই যায়।

বর্তমানে এমন কিছু নভোদুরবিনের পরিকল্পনা চলছে যারা ভবিষ্যতে আরো কাছের অতিবাসযোগ্য বহির্গ্রহ আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি'র প্লেটো মিশন যা ২০২৪ সালে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। জরিপের মাধ্যমে আবিষ্কৃত সম্ভাব্য অতিবাসযোগ্য গ্রহগুলোকে পরবর্তিতে শক্তিশালী দুরবিন দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং এক্ষেত্রে নাসা'র জেমস ওয়েব নভোদুরবিন অনেক কাজে আসতে পারে যা ২০১৮ সালে কাজ শুরু করবে। তাই বলতে দ্বিধা নেই,

পালে হাওয়া পেলে আমরা অচিরেই মহাশূন্যের একদিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বলতে পারব:
ওই যে মহাপৃথিবী, ওটা পৃথিবীর চেয়ে উত্তম;
ওখানে সূর্য প্রখর নয়, ওখানে সূর্য স্নিগ্ধ;
ওখানে সূর্য অবিনশ্বর নয়, কিন্তু এত দীর্ঘজীবী যে শাশ্বত বলে ডাকতে ইচ্ছা করে;
ওখানে অযুত নিযুত কোটি দ্বীপে খর্ব নিখর্ব বরণের সারসেরা যে কলরব করে
তা পৃথিবীর কবিদের স্বপ্নেও অদৃষ্ট, নবীদের স্বপ্নেও অশ্রুত।

* * * * *

ইহা রনে হেলার এর Better than Earth প্রবন্ধটির স্বেচ্ছাচারী বঙ্গানুবাদ।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেকদিন পরে লিখলেন। আপনার লেখা বরাবরই ভালো লাগে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শিক্ষানবিস এর ছবি

হ্যাঁ অনেকদিন পর। আবার শুরু করতে পেরে ভাল লাগছে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি ওয়েল্কাম্ব্যাক দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শিক্ষানবিস এর ছবি

ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

চমৎকার লাগলো পড়ে।

কিন্তু মহাপৃথিবী শ্রেণীর গ্রহগুলো অপেক্ষাকৃত সমতল হবে, এটা কি জোর দিয়ে বলা যায়? গ্রহপৃষ্ঠের বন্ধুরত্ব সম্ভবত এর ভূত্বকখণ্ডগুলির মিথষ্ক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। মহাপৃথিবীর অভ্যন্তরের তাপমাত্রা বাড়তি অভিকর্ষের কারণে বেশি থাকবে, কাজেই ভূত্বকখণ্ডগুলো একে অন্যের সংঘর্ষে পর্বত পয়দা করতে থাকবে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

ধন্যবাদ।
হুম, বন্ধুর যে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মনে হয় লেখক বুঝাতে চেয়েছেন আমাদের হিমালয়ের মতো উঁচু কিছু সেখানে থাকা সম্ভব হবে না। কারণ পৃষ্ঠাভিকর্ষ বেশি হওয়ার কারণে পাহাড় ক্ষয়ের হার বেশি হবে। কোনো পাহাড়ই বেশি উঁচু হওয়ার সুযোগ পাবে না।

পুতুল এর ছবি

সুন্দর হয়েছে লেখা। মেলা দিন বাদে লিখলেন।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শিক্ষানবিস এর ছবি

ধন্যবাদ।

এক লহমা এর ছবি

খুব ভাল লাগল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

শিক্ষানবিস এর ছবি

ধন্যবাদ।

মন মাঝি এর ছবি

আজ থেকে মাত্র পঞ্চাশ কোটি বছরের মধ্যেই....

মাত্র "পঞ্চাশ কোটি"? মাত্র?

****************************************

শিক্ষানবিস এর ছবি

জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে বসলে এই এক মজা; ৫০ কোটিও অতিমাত্র হয়ে যায়।

মাসুদ সজীব এর ছবি

দারুণ ভিন্নতার একটি লেখা দিয়ে প্রর্তাবর্তন ঘটলো সচলে, আশা করি আগের চেয়ে একটু বেশি নিয়মিত হবেন হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

ধন্যবাদ। আমিও আশা করি।

শাব্দিক এর ছবি

অসাধারণ লাগল চলুক

একটা বোকার মত প্রশ্ন করি?

এ ধরণের বিবর্তনের অর্থ সূর্যের বাসযোগ্য অঞ্চল স্থির নয় বরং পরিবর্তনশীল, অর্থাৎ দিনদিন তার বাসযোগ্য অঞ্চল আরো দূরে সরে যেতে থাকবে এবং একসময় পৃথিবী আর সেই অঞ্চলের ভিতরেই থাকবে না।

এ অঞ্চলটির ব্যাসার্ধ দিন দিন কমছে ব্যাপারটা কি এরকম কিছু?

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

শিক্ষানবিস এর ছবি

ধন্যবাদ।
না, ঠিক ব্যাসার্ধ্য কমার কথা বলা হচ্ছে না। সূর্য থেকে যে দূরত্বসমূহে (বহুবচন টা লক্ষ্য করুন) পানি তরল থাকতে পারে সেটাই বাসযোগ্যাঞ্চল, এটা সূর্যের চারদিকে একটা নির্দিষ্ট বৃত্ত নয় বরং একটা প্রশস্ত ব্যান্ড। পৃথিবী সেই ব্যান্ডের ভিতরের প্রান্তে আছে। বুধ-শুক্র আছে ব্যান্ডের বাইরে, সূর্যের আরো কাছে; আর মঙ্গল-শনি-বৃহস্পতি-ইউরেনাস-নেপচুন আছে ব্যান্ডের বাইরে, সূর্যের আরো দূরে। এখন সূর্যের উজ্জ্বলতা যদি বাড়তে থাকে তাহলে এই ব্যান্ডটা সূর্য থেকে আরো দূরে সরে যাবে। কারণ, তখন সূর্য আরো দূরের পানিকেও ফুটিয়ে বাষ্প করে দিতে পারবে। এখন যেখানে কেবল শুক্র গ্রহ পর্যন্ত তার ফুটনক্ষমতা প্রকাশিত হয়, তখন সেখানে পৃথিবীর পানিও সে বাষ্প করে দিতে সক্ষম হবে। পৃথিবী যেখানে আছে সেখানেই থাকবে, কিন্তু ব্যান্ড দূরে সরে যাওয়ার কারণে পৃথিবী আর বাসযোগ্যাঞ্চলে থাকবে না। হয়ত তখন মঙ্গল বাসযোগ্যাঞ্চলে ঢুকে যাবে।

শাব্দিক এর ছবি

বিস্তারিত এবং চমৎকারভাবে বুঝালেন। ধন্যবাদ। হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

রায়হান আবীর এর ছবি

চমৎকার লাগলো অনুবাদখানা। ওয়েলকাম্ব্যাক!

সবজি মামা এর ছবি

সুন্দর হয়েছে লেখা। ধন্যবাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।