বিকেল চারটে থেকে চারটে তিন মিনিট পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী ছিলো। তিন মিনিটের জন্য থমকে যাওয়া দেশ। সবখানে, সবখানে একটা দাবীতে সোচ্চার কোটি কোটি মানুষ। ব্যাপারটাই কি অদ্ভুত!
সেদিন স্কুলে ছিলো অ্যাডমিশন টেস্ট। বছরের শেষ বেলায়, তবুও স্টুডেন্ট এর কমতি ছিলো না। এটার রেজাল্ট যখনই দেয়া হোক না কেন, যেদিন পরীক্ষা নেয়া হয়, সাথে সাথেই খাতা দেখা, টেবুলেশন আর মেরিট লিস্ট করে ফেলা হয়। কাজেই বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা।
গোসল-খাওয়া সেরে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি তিনটা মেসেজ। তারমধ্যে একটা ফ্লেক্সিলোড। অবাক হলাম। আমি লোড করতে দেইনি তো। টাকার পরিমাণ দেখে টাশকি খেলাম। এক হাজার!
এপ্রিলের চমৎকার একটা সকাল। টোকিওর সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেটের সামনে জনবহুল একটা রাস্তায় তাকে আমি প্রথম দেখি। আমার স্বপ্নের মেয়েটাকে। দুই মিনিট পরে সে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আর আমি দেখতে থাকি পুরোপুরি একশো ভাগ মনের মতো, স্বপ্ন থেকে নেমে আসা সেই মেয়েটাকে।
কোথাও বেড়ানো হোক বা না হোক, এই পবিত্র কাজের জন্য আমি যে সবসময় এক পা বাড়িয়ে থাকি, সে খবর এতোদিনে স্কুলেরও জানা হয়ে গেছে। সেজন্যই কি না জানি না, এখানে ওখানে কোথাও পাঠাতে হলে কর্তৃপক্ষ প্রথমেই আমাকে খোঁজে।
“আরে, আপনি আপনার কার্ডটা ফেলে যাচ্ছেন, স্যার! মিস্টার বেগ?” পেছন থেকে চেঁচালো জেরিন। তারপর পিছু পিছু ছুটলো। কিন্তু ততক্ষণে দরজা ঠেলে রাস্তার ভীড়ে মিশে গেছে মাঝবয়েসি লোকটা, জালাল বেগ। কী আর করা। কার্ডটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো ও। ফিরে এসে আবারো কাউন্টারে বসলো।
একটু পরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো ঝকঝকে চেহারার এক যুবক। ওর মনমোহিনী হাসিই বোধহয় টেনে আনলো যুবককে তার কাউন্টারে। সোজা এসে জেরিনকে বললো সে,
আজ ক্লাস করবো না। এই বিষয়ে বাচ্চাদের বাহানার অন্ত নেই। এতোদিন পর ক্লাস শুরু হলো, আজ পড়বো না। কাল থেকে তো ছুটি শুরু, আজকে নাহয় পড়া থাক। কারেন্ট চলে গেছে, গরম খুব, পড়বো না এখন। কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে, এর মধ্যে কি পড়া যায়?
লোকজনের বোকামি দেখে আমি মাঝেমাঝে খুবই বিরক্ত হই।
আজকের কথাই ধরুন, বিরক্ত হয়েই সিদ্ধান্তটা আমাকে নিতে হলো। গ্যাস নেবার পর সবুজ রঙের গাড়িটা স্টার্ট করতেই লাফাতে শুরু করলো, লাফাক। আমার আপত্তি নেই। কিন্তু তাই বলে কাদা ছিটিয়ে দেবে আমার গায়ে! আবার প্যাঁ পোঁ করে হর্ণ দিচ্ছে তো দিচ্ছেই। কানের বারোটা বাজিয়ে দিলো। এই বেকুব লোকটা আমার সামনেই কেন তখন এই কাজ করতে গেলো, কে জানে।
কাল রাতে আমাদের শহরে লন্ডভন্ড করা বৃষ্টি হয়েছে। সকালে যখন স্কুলে যাই, তখনো তার রেশ পুরোপুরি কাটেনি। গাছপালা, রাস্তাঘাট সবই ভেজা ভেজা। ভালোবাসা তারপর দিতে পারে গত বরষার সুবাস... বৃষ্টির গন্ধেই বোধহয় গতবছরের এরকম একটা দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার। কিছু কিছু দিন কাটে সত্যি অন্যরকম...
সেই প্রাচীনকাল থেকে যে কোনো বিচার-শালিশ, মিটিং-দরবার ইত্যাদি ইত্যাদি জায়গায় কোনো না কোনো মাষ্টারের থাকাটা অতি-আবশ্যিক একটা ব্যাপার। কারণ যে ঠিক কোনটা, ঠিক বুঝি না। জ্ঞান-গরিমা, প্রচুর কথা বলতে পারার ক্ষমতা, সভার শোভাবর্ধন, যে কোনোটাই হতে পারে। তবে বাংলাদেশে লোডশেডিং কম হয়, এটা শুনলে যেমন অনুভূতি হয়, ঠিক একই অনুভূতি হয় যখন শুনি, মাষ্টাররা কথা কম বলে । অথচ এইরকম অভিযোগ আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়।