মাঝরাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার । খুব স্পেশাল না হলে বেশি রাতের কলগুলো রিসিভ করি না আমি । অচেনা নাম্বার । মোবাইলটাকে মুঠোয় জড়িয়ে আলতো করে চাপ দিতেই থেমে গেল । মিউট । একটু পরে আবার এবং তারপর আবার । ফোনটা ধরলাম আমি । বিরক্ত গলায় বললাম, হ্যালো...
অন্যপাশের অদ্ভুত সুন্দর আর বিশুদ্ধ ইংরেজি উচ্চারণ আমার বিরক্তি কাটিয়ে খানিকটা আগ্রহ জাগিয়ে তুলল ।
: এটা কি প্রবালের নাম্বার ?
: সরি.. রঙ নাম্বার
: কিন্তু আমি যে ওকে খুজছিলাম
: নাম্বার কনফার্ম না জেনেই ?
: আসলে আমি অনেকদিন পর দেশে ফিরেছি তো , আমার জানা ডিজিটগুলো বোধহয় উল্টাপাল্টা হচ্ছে
: সরি.. হেল্প করতে পারছি না
কেটে দিলাম । একটু পরে আবার ফোন
: ম্যাম, খুব বেশি প্রবলেম না হলে আমি কি আপনার সাথে ৫ মিনিট কথা বলতে পারি ?
: কেন ?
: কোন কারণ নেই ম্যাম, আমার ইচ্ছে করছে । শুধু ৫ মিনিট । মে আই...?
: ওকে, শুধু ৫ মিনিট
এভাবে হিমেল আমার সাথে কথা বলতে শুরু করে । মাত্র ২ দিন আগে আমেরিকা থেকে ফেরা ২৩ বছরের ছটফটে সতেজ এক তরুন । ইংরেজির সাথে ভাঙা ভাঙা বাঙলায় ওর কথাগুলো শুনতে বেশ লাগত । দেশের প্রথম সারির একজন শিল্পপতির ছেলে । ব্যবসার একটা অংশ দেখবে আর পাশাপাশি এমবিএ টা শেষ করবে । এত রাত জেগে থাকার কারন জানতে চাইলে জানালো তাহাজ্জত নামাজ পড়ে ঘুমুতে যাওয়াটা ওর অভ্যাস । অবাক হলাম ।
যাই হোক, এরপর ও মাঝেমাঝেই ফোন করে । কিন্তু বেশি রাতে কখনোই না কড়াকড়ি নিষেধ থাকল । ওর কৌতুহল বাচ্চাদের মতই লাগামহীন । আমার কাজ, অবসর, ভাল লাগা না লাগা, পরিবারের অন্যদের সাথে আমার সম্পর্কের ধরন...সবকিছু জানতে চাইত ও । মাঝে মাঝে উচ্ছসিত গলায় বলত
: জানো, আমি দুটো নতুন শব্দ শিখেছি
: তাই ?
: হ্যাঁ...বিসমিতো আর উস্ঠা খাওয়া
হাসতে হাসতে উচ্চারণ ঠিক করে দিতাম ওর । কখনো কখনো কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতীয় শব্দ দিয়ে নাস্তানাবুদ করতাম ওকে । ঠান্ডায় অ্যালার্জি আমার । দুটো হাঁচি দিলেই ’মেডিসিন নাও মেডিসিন নাও’ করে অস্থির হয়ে যেত ।
এভাবে চলছিল । কখনো টানা কয়েকদিন, কখনো বা ৫/৭ দিন পরপর কথা বলত । আবার কখনো বা মাসখানেক কোন পাত্তা নেই । মাঝে মাঝে অভিযোগ করত আমি ওকে ফোন করি না কেন । আসলে ও যখন ফোন করত একটা সতেজ ভালোলাগা কাজ করত বাট ওইভাবে মিসিং ফিলিংস কখনো কাজ করেনি॥ তবে বিভিন্ন অকেশনে উইশ করতাম মেসেজে । ও আবার কখনো মেসেজ লিখত না । এভাবে পার হলো বেশ কিছুদিন । এরপর একদিন ফোন করল আমাকে । একদম অন্যরকম গলায়.. বিষন্ন আর ভারী
: কি হয়েছে?
: আজ আমার মায়ের জন্মদিন
: তাই নাকি ? গ্রেট ! উইশ করলে কিভাবে মাকে?
: করিনি
: হেই কেন?
অনেক’খন চুপ করে থাকার পর বলল
: আমার মা যে গাড়িটা আজ উপহার পেয়েছে, ওটার দাম ২৫ লাখ টাকা
: দারুন ! এতে আপসেট হবার কি আছে ?
আবারো থেমে থেমে বলল ও
: ওটা তার বয়ফ্রেন্ডের দেয়া। তুমি চিন্তা করতে পারো, একটা মানুষকে কতটা আনন্দ দিতে পারলে সে তার পেছনে এরকম টাকা খরচ করতে পারে?
: হিমেল ! মায়ের কথা কেউ এভাবে বলে ? ছি !
: তুমি তো তাকে দেখোনি । স্লিভলেস, লো কাট বলাউজ, ভীষন পাতলা শাড়ী, আর তার অ্যাটিচুড... সো এক্সপোজিং...উফফ...এই মহিলাকে মা বলতে আমার কষ্ট হয় জানো?
: এসব কথা থাক । তুমি বরং তোমার ভার্সিটির কথা বলো
ও বিষন্ন হয়েই থাকে । একসময় অপরাধী গলায় জানায় নিজের মাকে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলার জঘন্যতম অনুভূতি । মায়ের আচরণ কখনোই ওর কাছে মাতৃসুলভ মনে হয়নি । মহিলা সবসময় তার পার্টি আর বয়ফ্রেন্ড নিয়েই মেতে আছে । মনোযোগ কখনোই পায়নি ও॥ বাবার কথায় জানালো ওর বাবাও একইরকম॥ মেয়েবাজ । এমনকি এদের কাউকে মাঝে মাঝে সে ঘরেও নিয়ে আসে । মদ খায়, ফুর্তি করে । এগুলো মেনে নিতে পারে না ও ।
আমি বলি, ’হিমেল, তোমার বাবা মা তো কেউ কাউকে ইন্টারফেয়ার করছে না । যদিও ব্যাপারটা আনইউজুয়াল, তবু এটাও কিন্তু একধরনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং । তুমি ওদেরকে যারযার মত ছেড়ে দাও না কেন ? আর ছোটবেলা থেকে তুমি যদি এগুলো দেখেই বড় হয়ে থাকো , ব্যাপারটা তোমার কাছে নরমালই মনে হবার কথা । এগুলো নিয়ে বেশি চিল্ললাফাললা করি আমরা মধ্যবিত্তরা । সমাজের খুব উঁচু আর নিচু লেভেলে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে কেউ ভাবে বলে আমার কখনো মনে হয় না॥
: আমাদেরকে তুমি খুব নোংরা ভাবো, না ?
: আমি এ কথা বলিনি । পার্টিকুলার একটা সমাজে পার্টিকুলার কিছু নরম্স ডমিনেট করার কথা বলেছি
আবার কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলে ও ।
: আমি মনে মনে কতবার আমার মাকে মাফ করে দেই, কিন্তু আবারো তার নতুন কোন কান্ড আমার বাঁধ ভেঙে দেয় । আমার পুরোনো জখমগুলোসহ জাগিয়ে তোলে । মা বাবা নাকি মানুষের আশ্রয়, অথচ আমার কথা ভাবো । আচ্ছা..আমি নিজেও যদি আমার বাবার মত আচরণ করি, তাহলে কি লোকটা লজ্জা পাবে ?
আমি ওকে বলি তারচে বাবার সাথে সরাসরি কথা বললেই তো হয় । তাও নাকি করেছিল একবার । বাবা তার নিজের চরকায় তেল দিতে বলেছে । হতাশ গলায় জানায় কোন পথ নেই
আবার অনেকদিন চুপ । তারপর একদিন ফোন । কোন কথা নেই । শুধু ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ । অনেক সময় পার করে জানা গেল বাবার নষ্টিফষ্টির একটা সিডি সে দেখে ফেলেছে । যেখানে তার বাবা প্রায় কিশোরী একটা মেয়ের সাথে...
অবসন্ন গলা ওর । ওরই সাথে কেন বারবার হয় এরকম ? ও বারবার জানতে চায় কি করা উচিত ওর । আমি কি করে বলি কি করবে ও ।
এরপর আর দুবার ওর সাথে কথা হয়েছে আমার । সেই প্রথমদিকের চপলতা ছিল না আর ওর মধ্যে । কেমন বিষন্ন সবসময় । মরে যেতে চাইত মাঝে মাঝে। জীবন খুব দুঃসহ লাগে ওর কাছে । আমি ওকে আবার বাইরে চলে যেতে বলতাম । বলতাম এসব নিয়ে না ভাবতে , পাত্তা না দিতে । ও বলত, পারি না যে...
নিজের বাবা মা হলে আসলে বোধহয় পারা যায়ও না ।
হিমেল আমাকে ফোন করে না বহুদিন । অনেকটা সময় পার হয়ে গেলে আমি ফোন করেছিলাম ওর দুটো নাম্বারেই । ওরা দুঃখিত । ও কি চলে গেছে ? যাবার আগে কি আমাকে বলে যাবার কথা ছিল ? সবচেয়ে কাছের দুটো আশ্রয় হারিয়ে একজন মানুসের আসলে কেমন থাকার কথা....
মন্তব্য
ভালো লিখেছেন
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
ধন্যবাদ দেয়া বাকি ছিলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ছেলেটির জন্যে বিষণ্ণ লাগছে।
সুন্দর করে লিখেছেন।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
তখনো অতোটা চেনা হয়নি আপনাকে, জুবায়ের ভাই।
আজকের দিনটাতে ধন্যবাদ জানাই, আন্তরিকভাবে।
যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
পড়লাম। ভাল লাগলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সুন্দর লেখা।
বকেয়া থেংকু নিয়ে নেন, স্নিগ্ধাজী।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
চমৎকার। লেখা ভালো লাগলো।
এসব বাবা মার স্ন্তান তাদের মতো হলে ই ভাল ছিল। তাহলে হয়তো যন্ত্রনায় পুড়তো না। কিন্তু প্রায়ই উল্টোটা ঘটে।
এসব বাবা মার কোনদিন কী উপলব্ধি হবে?
আমার কিন্তু অন্য একটা প্রশ্ন আছে এসব ক্ষেত্রে
ছেলে মেয়ে জন্ম দিয়ে দিলেই কিংবা ছেলে মেয়ে বড়ো হয়ে গেলেই কি মা বাবার নিজস্ব জগত কিংবা ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে দিতে হবে?
তাদের নিজস্ব ইচ্ছা কিংবা ভাললাগা বলতে কি কিছু থাকবে না?
সব সময় ছেলেমেয়েদের পছন্দ মতো করে তাদেরকে চলতে হবে?
এটা কোন ধরনের কথা?
ছেলেটার বোঝা দরকার কিংবা তাকে বোঝানো দরকার যে তার বাবা মা শুধু তার বাবা মাই নন
তারাও আলাদা মানুষ
তাদেরও আলাদা জগত আছে এবং
ম্যাচিউর সব ছেলেমেয়েরই উচিত বাবা মাকে আলাদা মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া
তাহলেই এই ঝামেলা আর থাকে না
লীলেন,আপনি যেভাবে বল্লেন আমদের সমাজ সংসার কী এত সহজ নিয়ম মেনে চলে?নিজেদের আলাদা অস্তিত্ব প্রমাণ করতে এত extremist হলে চলবে? নিজস্ব অস্তিত্ব বজায় রাখার নিশ্চয়ই অনেক পথ আছে ।এক ছাদের নীচে থেকে সংসারের সাইনবোর্ড টানিয়ে এজাতীয় নিজস্ব অস্তিত্ব বজায় রাখার দরকার কী? সংসারের বাইরে থেকে ও তো নিজের পছন্দের জীবন যাপন করা যায়। কেউ কী বাধা দেবে?মনে হয় সেটা মেনে নেয়া সহজ্।
কিছু মনে করবেন না ,এটা আমার একান্তই নিজস্ব মতামত ।
ছেলে মেয়ে বড়ো হয়ে গেলে মা-বাবা আর কোনো প্রেম করতে পারবে না
নিজেদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি করতে পারবে না
এই বিষয়টা আমি মানতে পারি না
মা-বাবা হয়ে যাবার পরে কি তারা আর মানুষ থাকে না?
শুধুই মা-বাবা?
আর ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলেকে মা বাবা কি কোলে নিয়ে ঘুরবে?
নাকি বুকে করে ঘুমাবে?
ওর চাওয়াটা একেবারেই ন্যাকামির পর্যায়ে পড়ে বলে আমার মনে হয়
ওর এই ধারণাগুলো তৈরি করেছে আমাদের রূপকথা সিমেনা আর উপন্যাসওয়ালারা
ব্যাপারগুলো কি আপেক্ষিক?
আসলে এই ব্যাপারে আরো কিছু মতামত জানতে চাচ্ছি।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিমুল আপার লেখার আঙ্গিক টা আমার দারুন লেগেছে।খুব ভাল্লাগ্লো পড়তে।দারুন লেখা।
--------------------------------------------------------
যাগায় খাইয়া যাগায় ব্রেক...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
থ্যাংকস, নিঝুম।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মাহবুব লীলেন আপনার সাথে একমত।
লীলেন , আমি কিন্তু আপনার সাথে দ্বিমত পোষন করছি না। মানুষের নিজস্ব ইচ্ছা, ভাললাগার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে ই বলছি মা বাবার জীবনে নতুন প্রেম, সম্পর্ক হাজির হলে পুরোনো সংসার বয়ে না নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া দরকার। তাহলে হয়তো অনাকাঙ্খিত জটিলতা র সম্মুখীন হতে হবে না। তবে সংসারের যে ছবি আমাদের মনের মধ্যে আছে সেটা কী শুধু সিনেমা, উপন্যাস, রূপকথার তৈরী?এর বাইরে কিছু নেই?
সুন্দর লেখা। ...হিমেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
আমারো হয়...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মাহবুব লীলেন-এর দুই মন্তব্যেই সহমত (সহমত বললে কমই বলা হয়, তবে অন্য কোনও শব্দ খুঁজে পেলাম না)।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
তাই?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
গল্প, মন্তব্য, প্রতিমন্তব্য - সবকিছুই ভাল লেগেছে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
থ্যাংকিউ।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিমুল আপনার লেখাটা ভালো লেগেছে। আবার লীলেন-এর কথার সাথেও একমত পোষন করছি।
তবে মা-বাবা'র প্রতি সন্তানদের ভালোবাসার প্রত্যাশা এমনই থাকে। আমরা কখনো আমাদের ভালোবাসা ভাগাভাগি করতে চাইনা। সে মা-বাবা হোক বা অন্য কেউ। ছেলেটির বেলায়ও তাই হয়েছে বলে আমি মনে করি।
আমি ব্যক্তিগত জীবনে আমার বাবার কাছে অপরাধী। আমার বাবা বিগত হয়েছেন এক বছরের অধিক হয়। আজন্ম একা আমি প্রতি মুহুর্তে তাকে ফিল করি, আর তার জীবনের শেষ কয়েকটা দিনের জন্য কান্নায় ভাসি।
আজ এতদিন পর ও আমার মনে হয় আমার বাবা এখনও বেচেঁ আছেন। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট, যা কখনো আমাকে মুক্তি দেবেনা সেটা হলো আমার বাবাকে আমি শেষ দেখা দেখতে পারিনি।
বড় অভিমান নিয়ে বাবা তার একমাত্র ছেলে আমাকে, আর আমার মা'কে ছেড়ে পৃথিবী ছেড়েছেন।
আমি আমাকে সেই ছেলেটির জায়গায় দাড় করিয়ে অনুভব করলাম, ভালোবাসার বিনিময় হয়না, ভালোবাসায় কোন দখলদারিত্ব খাটেনা, ভালোবাসায় অবহেলা,উপেক্ষা কিংবা প্রত্যাখ্যান অনুভবের পরিবর্তন ঘটায়।
.........................প্রীয়ক
স্যরি, প্রীয়ক...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বা: আগে পড়িনি, পড়ে ফেললাম৷৷ গল্পটা পড়তে বেশ লাগল৷
আমিও মোটামুটি মাহবুব লীলেনের সাথে একমত৷ তবে, তার পরও কয়েকটা কথা থেকে যায়৷ এই ছেলেটির কষ্ট পাওয়াটা খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়েছেন শিমুল৷ তাইজন্যই দু'কথা লিখতে বসলাম৷
আসলে দেখুন বহুদিন ধরে ধীরে ধীরে আমাদের মনে "মা' "বাবা' এইসব আর্কিটাইপগুলো গড়ে উঠেছে৷ ৷ আমরা তারজন্য আমাদের কালেকটিভ কনশাসনেসে একরকম টেমপ্লেট বানিয়ে নিয়েছি, তার বাইরে গেলেই কেউ খুব রেগে যাই, কেউ বা খুব আপসেট হয়ে পড়ি৷ অথচ সত্যি সত্যিই জীবন তো আর একটা থেমে থাকার জিনিস না, তার বাঁকে বাঁকে অনেককিছুই আসতে পারে৷ সেটাকে গ্রহণ করতে পারাটা শিখতে হয়৷ আবার দেখুন, ভালবাসার সাথেই আসে একধরণের অধিকারবোধ৷ তাই অনেকক্ষেত্রে বাবা-মা যেমন মনে করেন ছেলে-মেয়ের জীবন তাঁরাই সাজিয়েগুছিয়ে তৈরী করে দেবেন; অনেকক্ষেত্রে তেমনি ছেলেমেয়েরাও বাবা-মা'কে তাদের এক্সপেক্টেশান অনুযায়ীই দেখতে চায়৷ এমনিতেই আমাদের সমাজে সাধারণত: "ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য' ব্যপারটাকে তেমন স্বীকারটিকার করা হয় না৷ তো, তার ফলে ছেলেমেয়েরা ছোট থেকেই সাধারণত: ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিসর্জন দিয়ে চলতেই শেখে, সেটাকেই খুব মহান কাজ বলে মনে করে৷
কিন্তু এরপরেও একটা কথা থাকে, সেটা হল ছোট ছেলেমেয়েরা "ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য' সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পারে প্রথমে তাদের বাবা মায়ের কাছ থেকেই৷ একেবারে ছোটবেলা থেকেই যদি তাদের একটু একটু করে পরম যত্নে, ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়ে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ধারণাটি শেখানো হয়, আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা হয়, তাহলে বড় হয়ে তারা এমন কষ্ট পায় না৷ এক্ষেত্রে যেমন বোঝাই যাচ্ছে যে ছেলেটির বাবা মা'য়ের সাথে তার কোন "কমিউনিকেশান' হয় না৷ ছোটবেলায়ও তেমন ছিল কিনা, তা পরিস্কার নয়৷ তা, সেইটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয় আমার কাছে৷ বাবা মা কখনও ছেলেটিকে বন্ধু মনে করেন নি, ছেলেটিও করে না৷ এক্ষেত্রে ছেলেটির নিজের জীবনের প্রতি ধিক্কার আসাটা স্বাভাবিক৷
অনেকক্ষেত্রে যা হয়, কোনভাবে একটি সন্তান এসে গেছে, যা হয়ত বাবা-মা উভয়ের কাছেই, বা কোন একজনের কাছে তেমন কাঙ্খিত ছিল না, কিন্তু সমাজ সংসার ইত্যাদির চাপে সন্তান সৃস্টি করতে হয়েছে, তাকে বড় করতে হয়েছে, কিন্তু ভালবাসাটি আর তেমন করে আসে নি৷ সেই সন্তান সত্যিই বড় দূর্ভাগা হয়৷ তার জন্য বড় কষ্ট হয়৷
আরও দু এক কথা ছিল৷ কিন্তু বড্ড বড় হয়ে যাচ্ছে৷
-------------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
বেশ তো লাগছিলো। থামলেন কেন?
বড়ো হলে সমস্যাটাই বা কী?
এটা কিন্তু গল্প না দময়ন্তী, সত্যি।
পাওয়ায় কমতি থেকে গেলে একটা ব্যালান্সড লাইফ লিড করা বোধহয় কঠিন হয়ে পড়ে, তাই না? আর তার জন্য সাফার করে একই সাথে কতগুলো মানুষ।
বাকিটা বলে ফেলুন...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিমুল, আপনাদের আলোচনায় অযাচিতভাবে একটু নাক গলাই?
"পাওয়ার কমতি" কথাটা কিন্তু আপেক্ষিক - কার কাছে যে কোন জিনিসটা 'কম পাওয়া হলো' বলে মনে হবে, তা সত্যিই কোন ফর্মূলাতেই পড়ে না। সমস্যাটা সেখানেই ...
আর, আমি জ্ঞানীলেন এর সাথে একমত। ছেলেটার কষ্টটা একদম সত্যি, যাকে বলে রিয়েল, কিন্তু আমাদের দেশে যদি বাবামাদের কে শুধু বাবামা হিসেবেই না দেখে একজন মানুষ হিসেবে দেখার চলটাও থাকতো, তাহলে কিন্তু অনেকেই অনেক কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পেতো।
হা হা হা
পাওয়ার কমতি আসলেই খুবই আপেক্ষিক একটা ব্যাপার, স্নিগ্ধাজী। আর ছোটখাট অনেক হাবিজাবি কমতি বা অপ্রাপ্তি নিয়েই আমরা প্রতিনিয়ত বাঁচি। আমি বোধহয় গুছিয়ে কথাগুলো প্রকাশ করতে পারিনি। আমার কাছে বারবারই মনে হয়, এই ব্যাপারগুলো আপেক্ষিক। হয় এদিক, বা ওদিক বলেই এটা শেষ হয়ে যায় না বোধহয়।
জ্ঞানীলেন - নামটা পছন্দ হয়েছে।
.....................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
খুব সুন্দর লেখা। বারবার মনে হচ্ছিল গল্প, উপরে গিয়ে আবার ভাল করে দেখে আসলাম ক্যাটেগরীটা যে এটা আসলেই দিনপঞ্জি।
আমার কাছেও মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজের ইচ্ছায় জীবন কাটানো উচিত, তবে সেই সাথে এটাও মনে হয় যে, সেই ইচ্ছারও অবশ্যই একটা সীমানা থাকা উচিত, যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই ইচ্ছা অন্য কারো জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর হয়ে না যায় বা অসুবিধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। তাই হিমেলের বাবা-মা'র এই 'জীবনদর্শন' ঠিক মেনে নিতে পারলাম না। নিতান্তই ব্যক্তিগত মত।
সেই হিমেলের জন্য খারাপই লাগল। নিরপেক্ষ স্থানে থেকে অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু ওরকম পরিস্থিতিতে এই ধরনের কিছু মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর।
নিরপেক্ষ স্থানে থেকে অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু ওরকম পরিস্থিতিতে এই ধরনের কিছু মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর।
খুব সত্যি কথা।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমারো তাই মনে হয় ।
অনেকদিন পর পুরোনো আলোচনা দেখে ঢুকলাম।
ভালবাসার অধিকারবোধ আর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ দুটোর অবস্থান বড্ড গোলমেলে।
কোনটার অস্তিত্বকেই তো অস্বীকার করা যায় না।
তবু আমার মনে হয় আমরা নিজেদের যতই উদার ভাবি না কেন নিজেদেরকে তেমন অবস্থানে চিন্তা করলে ততটা নির্লিপ্ত থাকা কঠিন ই হবে।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা কঠিন সামাজিক আচার আচরণ হয়ত আমাদের অগোচরে মনে গেঁথে গেছে।
আবার সামাজিক প্রাণী হিসেবে যদি সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে আমরা মেনে নেই তাহলে তার কিছু দায় ও তো নিতে হবে।
কোনদিকেই খুব extrem কোন কিছু ভাবা শুধু হয়ত বিড়ম্বনাই বাড়াবে।
যা কিছু বিড়ম্বনা সব তো আমাদের মধ্যবিত্তেরই।
হুম......এইতা কি আসলেই দিনপঞ্জী শিমুলাপা?
আফসোস এই লেখাটা চোখ এড়িয়ে গেল কিভাবে। লেখার বিষন্নতা ছুয়ে গেল।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
এইতা --> এইটা
দিনপঞ্জী --> দিনপঞ্জি (সচলায়তনের ক্যাটেগরী দেখে বললাম)
বিষন্নতা --> বিষণ্ণতা
ছুয়ে --> ছুঁয়ে
ভয়ে মন্তব্য দান থেকে বিরত রইলাম
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধুর মিয়া! মন্তব্য দিবা না কেন?! অবশ্যই দিবা কিন্তু
এইবার তাইলে বলেন চারুকলার শুদ্ধ বানান কী?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
তোমার কপালে মাইর আছে!
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এইটা কোনো গল্প নয়, নিবিড় ভ্রাতঃ
আসলেই দিনপন্জি...
..........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বেসিক্যালি মধ্যবিত্ত তো, তাই লীলেন্দা'র উক্তিটা মানতে মঞ্চাইছে না।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্ত নিয়ে বেশি সমস্যা কিন্তু নেই, প্রবলেমটা যেখানে নৈতিক।
সমস্যা ফেইস করি আমরা মধ্যবিত্তরাই।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ঐগুলা ব্যাপারনা, যে যেমনে দেখে অভ্যস্থ।
তবে ব্যাপার হবে মুজিব ভাই দেখলে, নাম্বার পাবে আরো চারটা
...........................
Every Picture Tells a Story
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন