আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম - আপন মনে গান গেয়ে চলেছে শ্রীকান্ত । দুপুরবেলাতেও অন্ধকার হয়ে এসেছে চারদিক । প্রচন্ড ঝড়ের আগের অদ্ভুত এক অন্ধকার । এই অন্ধকার ভীষন টানে প্রিয়তিকে । ও বেরিয়ে এসেছে বারান্দায় । মনোযোগ দিয়ে গেঁথে নিচ্ছে প্রকৃতিটাকে । রাস্তার ওপাশের সাদা বিল্ডিংটাকে কেমন সবুজাভ দেখাচ্ছে । আকাশের বিষন্নতাকে ধারণ করে তিরতির করে কাঁপছে ছোট্ট পুকুরটা । সমস্ত প্রকৃতি আয়োজন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে লন্ডভন্ড হওয়ার, নতুন করে স্নিগ্ধ হওয়ার । মেঘবৃষ্টি এমন করে কেন টানে ওকে, জানে না প্রিয়তি । শুধু জানে এরকম ঝড়ো অন্ধকার বা প্রচন্ড বৃষ্টি ঘরে থাকতে দেয় না ওকে । ভরা শ্রাবণের রাতে ওর জন্ম বলেই কি?
সামনে ওর অনার্স ফাইনাল । পরীক্ষার আর মাত্র দুইদিন বাকি । মা এখনো টের পায়নি পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে এসেছে ও । প্রচন্ড শব্দ হলো কোথাও । থেমে গেল শ্রীকান্ত । ভয় পেল নাকি ? আপন মনেই হেসে উঠল মেয়েটি । ইলেকট্রিসিটি ফেইলিওর ।
পাক খেয়ে খেয়ে উঠে আসছে ঠান্ডা বাতাস । মেঘগুলো খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে কোথাও যাচ্ছে । যেন ফিরতি ট্রেন ধরতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ! প্রিয়তির খুব ইচ্ছে করে মেঘ হয়ে ওদের সঙ্গে ভেসে যেতে । ’ও মেঘ, নেবে আমাকে ?’ ফিসফিস করে ঝড়ো বাতাসের কানে বার্তা পাঠিয়ে দিল প্রিয়তি ।
তারপর হঠাৎ মনে পড়ল আশিকের কথা । এইরকম এক বৃষ্টিমুখর দিনে কলেজ থেকে ফেরার পথে ভিজেছিল ওরা । রেললাইন ধরে ভিজতে ভিজতে চলে গিয়েছিল বহুদুর । কখনো কখনো স্লিলপারে পা পিছলে যাওয়ার ছলে হাতটা আরেকটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরা । কি উদ্দাম আর আনন্দের ছিল দিনগুলো, দু বছর আগেও । নিজেকে ভীষণ পরিপূর্ণ একজন মানুষ মনে হতো ওর ।
মানুষ এত দ্রুত বদলে যায় ! মেনে নিতে কষ্ট হয় ওর । কত দিন দেখা নেই ! আশিকের কথা মনে হলেই বুকে ব্যথা করে ওর । ভাবতে চায় না ওকে প্রিয়তি । থাক না যে যার মতো করে ! খুব বেশি কিছু কি আসে যায় ?
’এক জীবনের কতটা আর নষ্ট হবে ?
একটা মানুষ কতটাই বা কষ্ট দেবে ?’
বিড়বিড় করল ও । কার যেন কবিতা, মনে করতে পারল না । দরকার নেই । প্রিয়তি এখন ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া মেঘ হবে, প্রবল বৃষ্টি হবে, প্রচন্ড ঝড় হবে ।
ও-ঘর থেকে মার চিৎকার শোনা গেল । ’কিরে ? কখন থেকে ফোনটা বেজেই যাচ্ছে, ধরছিস না কেন ?’ ঘরে এসে মোবাইলটা তুলে নিল ও । অচেনা নাম্বার । ’হ্যালো...’
ওপাশে নীরবতা । বেশ কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করল প্রিয়তি । ছেড়ে দেবে, হঠাৎ একটা হার্টবিট মিস করল ও । ওপাশে চেনা কন্ঠ । কত দিন, কত যুগ পরে শুনল এই স্বর, ’প্রিয়তি. তোর প্রিয় বৃষ্টি হচ্ছে । ভিজবি আমার সাথে... ?’
প্রিয়তির চোখের কোণ ভিজে উঠল । রাগ, ক্ষোভ, কষ্ট, অভিমান - সব একসঙ্গে উথলে উঠছে । ফোনটা শক্ত করে কানে চেপে ধরে থাকল ও । বাইরে তখন প্রথম বর্ষণে তৃপ্ত মাটি সোঁদা গন্ধ ছড়াচ্ছে....
মন্তব্য
এরকম লেখা পড়লে বুকের ভেতরে কী যেন শক্ত হয়ে যায়! এই লেখার সাথে কিছুটা মিল আছে এমন একটি গানের কয়েকটি লাইন তুলে দিচ্ছি আপনার জন্য। গানটি লিখেছেন শহীদুল ইসলাম রিপন-
আয়রে আয় মেঘবালিকা
বৃষ্টির বোন রঙধনু
আয়রে আয় প্রজাপতি
আয়রে আয় রোদের সোনা
একটা গল্প শুনে যা,
আয়রে আয় সাগরের লোনা
একটা গল্প শুনে যা।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শ্রীকান্তের গানটি আমার খুব প্রিয়। তেমন এখন হলো আপনার এই লেখাটিও।
মানুষ বদলায় না। নিয়তি বদলায় কাঙ্খিত জীবন। অথবা এইতো জীবন আপনি যেভাবে যাপন করবেন। অনুভুতিগুলোর জয় হোক আমাদের অন্ক কষা জীবনকে ম্লান করে দিয়ে।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
হা হা হা.........
আপনিও বৃষ্টি নিয়েই লেখা দিলেন !
ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। স্বপ্নবিলাসী মানুষদের সাথে বৃষ্টির সম্পর্কটা যে ঠিক কোথায়, এটা নিয়ে একটা গবেষনা করা যেতে পারে। কি বলেন ?
-------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
দারুন !
আপনি শুরু করে দিন না মশাই,
আমারো জানতে ইচ্ছে করে বৃষ্টি কেন মানুষকে অন্যরকম করে দেয়|
..........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এ সংক্রান্ত সকল গবেষণা আপাতত স্থগিত করতে হচ্ছে। এমনিতেই আজকে বৃষ্টি সংক্রান্ত লেখাটা দিয়ে কিছুটা তোপের মুখে আছি। আপাতত আর বিপদ বাড়াতে চাই না।
তবে অন্য কেউতো লেখতেই পারেন। সচলে এত দুর্দান্ত লেখক/লেখিকারা থাকেন, যারা কলম তুললেই অসাধারণ লেখা জন্ম নিবে। তাদের অপেক্ষায় থাকলাম আমি।
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কিছু মানুষ আছে বৃষ্টি যাদেরকে খায়
আর কিছু মানুষকে খায় বৃষ্টি
বৃষ্টি একটা হাবিজাবি জিনিস
শিপু, তোমার এই লেখাটা আমার খুব পছন্দের।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
'বৃষ্টি তোমার ছাট এসে লাগে অন্তরে আমার
ভিজে যাচ্ছি ভিজে যাচ্ছি আমুণ্ড আমূল
তেমন কারো নিজস্ব তোয়ালে হলে সুগন্ধ সমাহৃত
গা মাথা মুছে ফের কাজে যাওয়া যেত'
..................................................................................
অপরিপক্কতা সবসময় একরোখা হয়, আর পরিপক্কতা হচ্ছে সর্বগ্রাহী
-সেলিম আল দীন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
ভিজে যাচ্ছি ... ভিজে যাচ্ছি...
অদ্ভুত সুন্দর !..........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ছুঁয়ে যাওয়া লেখা। আরো বড় করুন, গল্প লিখুন। তবে, মনে হয় ছ্যাঁক খাওয়া লোকদের জন্য আলাদা একটা ট্যাগ তৈরি করা দরকার যা দেখে আগেই সাবধান হয়ে যাওয়া যাবে। ইদানিং এই ঝামেলাটায় পড়তে হচ্ছে প্রায়ই।
ট্যাগটা থাকলে মন্দ হয় না
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
অসম্ভব ভালো লেখা।
প্রাণকাড়া। এরকম ছোট্ট কিন্তু গভীর অনুভবের লেখা পড়তে ভালো লাগে।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
এই লাইন দুটো তা অসাধারণ।
----------------------------------------
একটি সতর্কতা: ইশতিয়াক রউফের কথায় কান দেবেন না। আমার লেখা সবসময় বড়ো হয় বলে নালিশ করেন। এখন আপনার কাছে বায়না করছেন বড়ো লিখতে!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
সহমত। সব ভাল কথা ফিরিয়ে নিলাম। এমনিতেই সচলাসক্ত হয়ে দিনের অনেকটা সময় চলে যায়। লেখার আকার নিয়ে আমার মাথা-ব্যাথা নাই, তবে অন্তত আমার মত মানুষের কথা ভেবে একটু আজেবাজে লেখা দিন দুই জনেই। লেখা ভাল হলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও পড়তে হয়। যতবার সচলায়তনে আসি, ততবার একটা করে বুকডন দিলে তিন সপ্তাহে পালোয়ান বিশেষ হয়ে যেতাম!
হা হা হা ...
তাই নাকি ?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বৃষ্টি পড়ে টুপটাপ টুপটাপ
জানলা দিয়ে দৃষ্টি মেলে
বৃষ্টি দেখি চুপচাপ।
বৃষ্টি পড়ে ঘাসের ডগায়,ফুলের পরে
কেউ দেখেনা মনের মেঘে
নিত্য কত বৃষ্টি ঝরে।
ঐ আকাশে মেঘ ফুরোলেই বৃষ্টি থামে
এই আকাশে টিপ টিপিয়ে
বৃষ্টি তবু বৃষ্টি নামে।
বৃষ্টি পড়ে টুপটাপ টুপটাপ
চোখটা ভেজে,গালটা ভেজে,
মনটা ভেজে চুপচাপ।
-- আমার অনেক ছেলেমানুষী লেখার একটা।লেখাটা পড়ে মনে হল দিয়ে দেই।
লেখাটা পড়ে ভেতরে কোথাও যেন বৃষ্টি নামার শব্দ পেলাম।আপাতত সেটাতেই ভিজি...
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আর আপনার এই ছড়াটা ভিজিয়ে দিলো আমাকে। আপনার ছেলেমানুষী লেখার আরো কিছু সচলায়তনে দিয়ে দেবেন তো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
-
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ।
কম লিখি কারণ মাথায় ঘিলু কম।
..........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার ভাল লেগেছে খুব খুব খুব বেশি !!
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
ধন্যবাদ।
জেনে ভাল লাগলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বেশ মিষ্টি!
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
সত্যি !
থ্যাংক ইউ।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
kub e nice likha....ak khotai okritim....
এ যেনো প্রকৃতির সৰ্বগ্ৰাসী সৌন্দর্য
নতুন মন্তব্য করুন