শোয়েব আমাকে শিখিয়ে গেছে অনেক কিছু। কষ্ট কী জিনিস আমার জানা ছিল না। এতদিন যাকে কষ্ট বলে জানতাম, ওগুলো ছিল আসলে এক ধরনের বিলাস। নিহত শোয়েব, শোয়েবের লাশ, শোয়েবের জানাজা - ওহ গড! কী ভয়ংকর এই শব্দগুলো!
একটা মানুষের শেষ হয়ে যাওয়া কি এত সোজা? এতগুলো মানুষ তার অভাবে যে কী পরিমাণ কষ্ট পাবে তা কি ও ভাবেনি? বোধহয় না। ভাবলে এত সহজে শেষ হয়ে যেত না ও। শোয়েব মরে গেছে - কী অর্থহীন বাক্য! মানুষ মরে গেলে গায়েই লাগেনি কখনো। দাদা, চাচা, লিটন - ওরা মরে গেলে আমার অতটা খারাপ লাগেনি। কান্না পায়নি। নিজেকে আমি পাষাণ ভাবতাম। আর ভাবতাম, কোনো মৃত্যু কি সামনে অপেক্ষ্া করে আছে অসীম কষ্ট নিয়ে? কে বলে মিথ্যে কথা?
আজ আঠারো দিন হয়ে গেলো, অথচ এখনো আমার চোখ শুকায়নি। যখন একা থাকি, বা রাতে যখন কান্না পায়, নিজেকে আমি বাধা দিই না। ভাবি, যত কান্না আমার ভেতর শেষ হয়ে যাক। কারো সামনে কাঁদতে আমার ভালো লাগে না। কষ্ট কাউকে দেখাতে নেই - শোয়েব বলতো। কষ্ট পুষে রাখতে হয় বুকের ভেতর। আমিও তাই করি।
কী যে জঘন্য লাগে ভাবতে, ক্যাম্পাসে ওকে কখনোই, আর কখনোই দেখব না। হারিয়ে গেছে অতি প্রিয় এক চেনা মুখ। উপরওয়ালা এমন কেন? অতি বৃদ্ধ একজন, যে কোনো কিছু করতে অক্ষম, চোখে দেখতে পায় না, কানে শুনতে পায় না, তাকে বাঁচিয়ে রাখে। আর প্রাণচন্চল, উচ্ছল হাসিতে উজ্জ্বল তরুণ, যে সবাইকে মাতিয়ে রাখে, তাকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়া হয় না।
ওর চোখ দুটো যে কী অদ্ভুত সুন্দর ছিল। যাই বলুক, ওর চোখ সেটা করত। যখন তাকাতো, কী যে আদর মাখানো থাকত ওর দৃষ্টিতে! কোনো কিছু খাওয়াতে চাইলে কী যে যতœ করে জিজ্ঞেস করত! হাসি ছিল ওর আরেকটা মারাত্মক অস্ত্র। আকাম তো কম করত না, কিন্তু ওর সেই বিখ্যাত হাসি দিলে কারো সাধ্য কী ওকে কিছু বলে। এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে বলেই কি ও এতটা মায়াকাড়া ছিল? মাঝে মাঝে প্রচন্ড বিশ্বাস উঠে আসে, ও আবার ফিরে আসবে। অর্থহীন মনে হয় পত্রিকার সব খবর।
ও গড, তুমি কি নিজে বোঝ, আপনজনের মৃত্যু ঠিক কতটা বুকে বাজে? আমার সন্দেহ হয়। বুঝলে মানুষের মরণ হয়তো হতো, কিন্তু এত নিষ্ঠুরভাবে হতো না। শোয়েব কষ্ট সহ্য করতে পারত না। আর এত কষ্ট পেয়ে ওকে মরতে হলো! পুলিশদের হার্ট কি ট্রেনিংএর সময় খুলে নেয়া হয়? নাহলে মারতে মারতে একজন মানুষকে পুরোটা কীভাবে মেরে ফেলে তারা? মানুষকে শেষ করার জন্য কি একটা বুলেটই যথেষ্ট নয়? ভেজা শরীরে ইলেকট্রিক শক দেয়ার কোনো দরকার কি ছিল?
ইস্... কি যে কষ্ট পেয়েছে ও! ওর জায়গায় নিজেকে ভাবি আমি। এত কষ্ট কেন পায় মানুষ? কার কষ্ট বেশি? ওর? না ওর অভাবে যারা কাঁদে তারা? জানি না।
বিখ্যাত লোকদের যে শোয়েব পছন্দ করত না সেই আজ মরে গিয়ে বিখ্যাত হয়ে গেলো। ওর নামে ব্রিজ হবে, রাস্তা হবে, কিন্তু তার মৃত্যুতে কারো বুকের ভেতর যে শূন্যতা, সে শূন্যতা পূরণ করবে কে? সময়? সময় কি পারে সব ঘাটতি পূরণ করে দিতে?
জানি না
মন্তব্য
মনে হয় পারে না। কষ্ট ,শূন্যতা শুধু একা বয়ে বেড়াতে হয়।
সময় সব ঘাটতি পূরণ করতে পারে না।
পারে না তাই মানুষ শেষ পর্যন্ত মানুষ থেকে যায়।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
সচলায়তনে মড়ক লেগে গেছে
খালি মরা আর মাইর খাওয়ার গল্প
একটা পুতুপুতু প্রেমের গল্প লিখতে পারেন না কেউ?
চারদিকে তো মরা আর মাইরের-ই ঘটনা! পুতুপুতু প্রেমের অস্তিত্বে মাইরের ছোঁয়া সারাক্ষণ। আশপাশটাই তো এরকম।
শিমুলের জন্য কোনো কথাই বলতে পারলাম না...
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
গল্প বলে কোন বাস্তব মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে একটা জিসিন সত্যি যে, কিছু শূন্যতা পূরণ হয়না এবং আমরা নিজের অজান্তেই তা পূরণ হতে দিতে চাইনা। এই শূন্যতা গুলোই আমাদের অনেক ভালো লাগার ভালোবাসার স্মৃতিকে অমলিন করে রাখে।
কল্পনা আক্তার
...........................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
শোয়েবকে আর গল্পের চরিত্র মনে হচ্ছে না। গল্পগুলি জোড়া দিয়ে উপন্যাসের চিন্তা করতে পারেন।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
- বলা কার? (বলাৎকার বলি নাই কিন্তু)
অদিতি নাকি প্রিয়তি'র?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পৃথিবী... পৃথিবীর মানুষ
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
নতুন মন্তব্য করুন