আমি আর্লি বেডার, আর্লি রাইজার। তবে ঘুমিয়ে যাবার আগে অন্তত একবার আমাকে বারান্দায় যেতে হয়। বারান্দার খোলা উদ্দাম বাতাস ভীষন ভীষন প্রিয় আমার। কোনোভাবে এই বাতাস মন ছুঁয়ে গেলো তো হয়ে গেলো, পড়ে থাকে আমার বিছানা অনেক অনেক রাত পর্যন্ত।
কাল রাতে ঘুমুবার প্রস্তুতি নিয়ে শেষবারের মতো গেলাম বারান্দায়। ভয়ংকর বেহায়া বাতাস ছুঁয়ে দিলো আমাকে। বরফ পানি খেলার মতো করেই, আমি হয়ে গেলাম বরফ। আটকে গেলাম। যে জায়গাটাতে দাঁড়ালে বাতাসের এদিক ওদিক দুদিকটাই অনুভব করা যায়, সেই জায়গাটাতে দাঁড়াই আমি। গ্রিলে চিবুক ঠেকিয়ে। কি যে দুরন্ত বাতাস ! তার সাথে উড়ে আসছে দু এক ফোঁটা বৃষ্টি। বারান্দা, বাতাস, অন্ধকার আর বৃষ্টি। এতো এতো তীব্র হয়ে আমার ভেতর ঢুকে যেতে থাকে সবকিছু ! বাতাসের জোর বাড়তে থাকে। উড়তে থাকে ওড়না । আলতো করে খুলে দিই চুল। মুক্তির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ওদের মাঝেও।
এর মধ্যে প্রহর পেরিয়ে গেছে অনেকটা। দুই একবার আলতো ডাক শুনলাম, ”কি রে, ঘুমাবি না?” জবাব দিই না আমি। আমাকে আর ঘাঁটায় না ওরা। জানে লাভ নেই।
খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনতলার এই বারান্দাটা ভীষন পছন্দ আমার। বিশাল। এখানে কিচ্ছু রাখতে দিই না আমি। এমন কি কোনো গাছ পর্যন্ত না। পুরোটা বারান্দা জুড়ে শুধুই আমি। আর বাতাস। আর অন্ধকার। ব্যস, আমরা।
কিন্তু আর বেশিদিন নয়। এই বারান্দার সুখ হারিয়ে ফেলবো আমি কিছুদিনের মধ্যেই। ভাবনাটা বিষন্ন করে তোলে। বারান্দার বিশালতা, বাতাসের দৌরাত্ম, নিঃসীম অন্ধকার, আর একা আমি। আর সবকিছুর মিশেলে তৈরী হওয়া প্রচন্ড, প্রচন্ড এবং প্রচন্ড ভালোলাগা বোধ। আর কখনো কি এভাবে ছুঁয়ে যাবে আমাকে? এমনি করে মাতাল করে তুলবে? হারিয়ে যাবে এই প্রিয় জায়গাটা, হারাবে এই মিশেল, এই বোধ। সেইসাথে কি আমার এই আমিও? আবার কি নতুন করে খুঁজে নিতে হবে আমাকে, অন্য কোথাও? চোখ বেয়ে গড়িয়ে নামে এক ফোঁটা জল...
মন্তব্য
বারান্দা কাঁদছে
বারান্দার চোখে জল
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
omg শিমুল আপু আপনার এই লেখাটা সত্যি আমাকে এত ছুঁয়ে গেল, খুব খুব ভাল লাগল, আপনার বাতাসের সাথে খেলা, চুল খুলে দেয়া ...... অসাধারণ! শেষে এসে আপনার কষ্টটাও ছুঁয়ে গেল
কোথায় যাচ্ছেন? *****
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ঠিকানা বদল হচ্ছে বুঝি!
লেখার জন্য জাঝা
কিন্তু ক্যান? ভাড়া না দেওয়ায় কি বাড়ি থেকে উৎখাত করা হইবে?
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
টানা পাঁচটা কবিতার সিকোয়েন্স ভাঙ্গার জন্যে ধন্যবাদ!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অসাধারণ লাগল! খুব ছুঁয়ে গেল লেখাটা। বারান্দা ছাড়ার কারণ কি? রায়হান যা বলল তাই কি ঠিক?
এই পাগল হাওয়া, অন্ধকার কি বগুড়া শহরের? ওখানে তো আমারও কিছু ভাগ আছে!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
লেখা ভাল্লাগছে।
লেখকের মনের কথা ভেবে খারাপও লাগসে।
আসল কাহিনী কি?
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
সুবিনয় মুস্তফির মতো আমাকেও বলতে হচ্ছে- কবিতা ভাঙার দুর্বহ অপরাধে অপরাধি হয়ে গেলেন শেষপর্যন্ত !
ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আর সবার মতো আমারও জানতে ইচ্ছে করছে কেন এত্ত সুন্দর অনুভূতি আর থাকবে না?
এমন বর্ণনার ঢং কোথায় পেলে ভাই?
আমার একটা ছাদ ছিল, আমার একটা শরশর বাঁশঝাড়ের বাতাস ছিল। একটা হিম ইঁদারা ছিল তারও আগে। এখন বাক্সে থাকি, বাক্সে করে খাবার খাই, বাক্সে চলি আর বাক্সে বসে কাজ করি। নিজেকেও একটা বাক্স মনে হয়। ওপরটা রং করে রাখি। কিন্তু ভেতরটা খুলি না...ভয়ে। প্যান্ডোরার বাক্স খোলার ভুল আর কে করে...জগতে?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হুমম..
কাহিনী তো আছে বলে বোধ হয়!
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
আহারে....
আপনার জন্য তো আপনার বারান্দা আর সেখানে বয়ে যাওয়া বাতাস ও কাঁদবে।
এসব ছেড়ে ছুড়ে কোথায় যাচ্ছেন?
কাহিনী ছাড়া মফস্বলি তরুণ আছে নাকি? কিন্তু ভাই, এটি দেবীপ্রসাদ চট্টপাধ্যায়ের যে গল্পের শেষ নাই জাতীয়...
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
শিমূল আমাদের কোওতুহল নিবারন করেন ভাই, কারন কি ঠিকানা বদলের। আমি একজনের পিসি থেকে লিখছি যার অভ্র নেই, সো বানানের দিকে কেঊ নজর দিয়েন না।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
পুরনো জায়গা থেকে নতুন জায়গায় যাওয়ার সময় মানুষ সাথে নিয়ে যেতে পারে শুধু স্মৃতিটুকু; কিন্তু রেখে যায় জীবনের কয়েকটি বছর অথবা মাস অথবা দিন।
এই স্মৃতিকাতরতা আর ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট যে কি তা আমি টের পাচ্ছি ইউনির লাস্ট টার্মে এসে......
আপনার জন্য শুভকামনা...
---------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
শেষ পর্যন্ত যখন জেনে গিয়েছিলাম বাড়িটা আটকানো যাবে না
তখন আমি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলাম এক মাসের জন্য
ওই বাড়ি ছেড়ে আসা যেন আমার দেখতে না হয়
আমার শুক্রবারিবাজার আর নিজের হাতে লাগানো শ পাঁচেক গাছ....
আবার মনে পড়ে গেলো
এখন মদের বোতলে পোষা নাম না জানা একটা মাত্র পাতাবাহারের মালিক আমি নগরীরর বস্তিতে...
আপনিও মন-খারাপীদের দলে যোগ দিলেন?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
- হায়হায় রে।
আপনের বারান্দাবিরহে, বরিষানবিরহে, পুবালহাওয়াবিরহে গড়াইয়া ইচ্ছা কর্তাছে।
পুনশ্চঃ কান্দোনের সিম্বল দিতে গিয়া ভুলে গড়াইয়া হাসোনের সিম্বল দিয়া ফেলছি, চরি। সেন্টু খাইয়েন না। তয় লেখা সেইরম হৈছে। জনগণের উদ্বেলিত প্রশ্ন দেইখাই আন্দাজ করোন যায়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জানি জিজ্ঞেস করে লাভ নেই তবুও জানতে ইচ্ছে করছে কেন ছেড়ে যেতে হচ্ছে ? বারান্দা আর বাতাসকে রূপক বলেও মনে হচ্ছে, আমার আবার বুদ্ধিসুদ্ধি কম বেশি প্যাঁচানো জিনিস বুঝিনে।
মুক্ত হাওয়াটাই আজকাল যেখানে দুর্লভ হয়ে পড়েছে সেখানে আস্ত একটা মনের মত বারান্দার সাথে বাতাসের সান্নিধ্যটাও অলীক মনেহয় যেন আমার কাছে।
--------------------------------------------------------
নতুন মন্তব্য করুন