বন্ধুমহলে যারা একটু সুশীল টাইপ, তাদের সাথে গল্প করাটা মিশাতের জন্য ইদানিং একটা মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।। ওর গল্পে নাকি বড়োদের ব্যাপার স্যাপার বেশি থাকে। সেদিন রেনুকার সাথে কথা হচ্ছিলো ওর।
কথাপ্রসঙ্গে বললো, তোকে একটা গল্প বলি শোন
: গল্প? তোর গল্প মানেই তো পঁচা গল্প।
: কেন?
: তোর গল্পগুলো সব ইয়ে টাইপ..
: ইয়ে টাইপ, মানে?
: মানে হলো তোর সব গল্প শুধু একদিকেই যায়..
: আরে নাহ! এটা ভালো গল্প।
: সত্যি তো?
: হুম সত্যি।
: ঠিক আছে। বল।
: এক হাজব্যান্ড আর ওয়াইফ, নতুন বিয়ে হয়েছে..
: এই যে, বলছিলাম না? তোর গল্পই শুধু এইসব নিয়ে!
: আহা শুনবি তো আগে?
: বল
: তো ওয়াইফ ছিলো ঘরে। হাজব্যান্ড অফিসে। সারাদিন অফিস করে। ফেরে বেশ রাতের দিকে। যখন ছুটির সময় প্রায়, তখন ওয়াইফ বেশ একটু সাজুগুজু করে নিলো। একটা বেশ অ্যাট্রাকটিভ ড্রেস পরলো। তারপর দরজা খোলা রেখে কেয়ারফুলি কেয়ারলেস ভঙ্গিতে টুকিটাকি কাজ করার ভান করতে থাকলো। তারপর হাজব্যান্ড এসে তো দেখে দরজা খোলা। সে উঁকি দিয়ে বউয়ের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তারপর প্রশান্তির একটা হাসি দিয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়।
: এই যে.. শুরু হচ্ছে
: ও মা! ঘরে এসে সে বাইরের দরজা খোলা রাখবে নাকি? আজব তো! সিকিউরিটির একটা ব্যাপার থাকবে না!
সেটাও তো ঠিক কথা। সায় দিয়ে মাথা নাড়ে রেনুকা।
: হুম। তারপর?
: পা টিপে টিপে সে বউয়ের পেছনে এসে দাঁড়ায়। পেছন থেকে চোখ চেপে ধরে। খানিকক্ষণ চোখের ওপর চেপে রাখা হাত ধরেটরে বউ যেন চিনতে পারে যে এটা তার পতিদেব। হাজব্যান্ড এবার বউটাকে কাছে টানে। মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে নিজের মুখ নামিয়ে আনে..
: শুনবো না, যা। তুই ওইসব শুরু করছিস আবার!
: কিছুই শুরু করিনি। হাজব্যান্ড মুখ নামিয়ে আনে কানের কাছে। তারপর ফিসফিস করে বলে, "আজকে এশার নামাজ পড়েছো, জান্টুশটা?"
: ওহ। তারপর?
: বউ ভীষণ লজ্জা পেয়ে গলে গিয়ে বললো, "ইয়াল্লা! ভুলে গিয়েছি"। হাজব্যান্ড বললো, "চলো তাহলে আজ আমরা একসাথে নামাজ পড়ি।" তারপর ওরা ওযু করে একসাথে নামাজ পড়ে। ব্যাপারটা কম রোম্যান্টিক না, কি বলিস?
: হুম। তারপর কী হলো?
: নামাজ শেষ করার পর ওরা একটু কোরানশরিফও পড়লো। সকালবেলা তাড়াহুড়োয় সময় পায় না তো। তারপর জায়নামাজ গুছিয়ে রাখলো। এবার হাজব্যান্ডের মুখে অর্থপূর্ণ একটা হাসি। সে হাত বাড়ায় বউয়ের দিকে। কেমন খসখসে কন্ঠে বলে, খিদে পেয়েছে...
: এই যে, শেষমেষ আর পারলি না তো! ..তুই না..
: আচ্ছা, একটা মানুষ সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরেছে। কে জানে কিছু খেয়েছে কি খায়নি। তার কি খিদে পাবে না? তুই এমন ক্যান? যা তোকে বলবোই না আর!
: আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। তারপর কী হলো বল..
: তারপর ওরা দুইজন একসাথে খেলো। একজন আরেকজনের মুখে তুলে একবার দুইবার খাইয়েও দিলো। তারপর টেবিল পরিষ্কার করে ঘুমাতে এলো। বিছানায় বউটাকে যেই না একটু জড়িয়ে ধরতে যাবে, বেরসিক মোবাইল বেজে উঠলো। ধেত্তেরি, বলে হাজব্যান্ড উঠে গেলো। কিছুক্ষণ পর যখন ফিরে এলো, দেখলো বউ তার ঘুমিয়ে পড়েছে। মন খারাপ হয়ে গেলো। কি আর করা। টাঙানোর পর মশারি ভেতরে গুঁজে দিতে থাকে ও। দিতে দিতে বউয়ের ঘুমন্ত মুখটার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকায়। কি সুন্দর লাগছে ওকে। শালার ফোনটা! কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে কী যেন ভাবে ও। তারপর হাত বাড়ায়। ওর বুকের ওপর...
: ছি ছি, তুই এতো খারাপ!
রেনুকার দিকে এবার আহত চোখে তাকায় মিশাত। বলে
: ওর বুকের ওপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে ওপাশে থাকা বেডসুইচটা অফ করে দেয় ও। লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাবে নাকি!
: ওহ!
রেনুকা এবার একটু লাজুক হাসে।
: তারপর?
: তারপর আর কী? একটু পরে হাজব্যান্ডও ঘুমিয়ে পড়লো।
: ঘুমিয়ে পড়লো? আর কিচ্ছু করলো না?
রেনুকা অবাক। গলার স্বরে স্পষ্ট হতাশা। মিশাত এবার ক্লান্তস্বরে হাই তোলে।
: নাহ। ভালো গল্পে লোকজন এরচেয়ে বেশি কিছু করে না।
- - - - - - -
অফটপিক : গল্প না। কৌতুক ট্যাগটাই যুক্তিসঙ্গত বলে ট্যাগ বদলে দিলাম।
মন্তব্য
হা হা হা ! অসাধারণ !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনিও তাহলে ইয়ে টাইপ লিখতে লিখতে সুশীল হয়ে গেলেন!
নাহ্ ভালো গল্পে এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবা ঠিক না।
দারুন লিখেছেন।
নামাযের বেপারটা কেন আসলো বুঝলাম না। এটা ছাড়া পুরা গল্পটা টান টান উত্তেজনাময়
খুব ভালো গল্প!
বেশ ইয়ে ইয়ে টাইপ
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বেশ ভালো লিখেছেন শিমুল আপু !
বাচ্চারা আসো, তোমাদের শিমুলান্টি তোমাদের জন্য গল্প লিখেছে, পড়ে যাও।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এসেছি। পড়েছি দাদা।
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপস'দা!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিমুলতুলান্টির একশ পার্সেন্ট হালাল গল্পের জন্য একখানা থিম গীত। গল্পের কোনো এক জায়গায় গীতটা ফিট করে দিয়েন, নামাজের আগে নাইলে পরে। গীত হুনতে হুনতে ক্ষুধা মিটাইলো নাইলে গীত হুনতে হুনতে ঘুমায়া গেলো! গীতের তালে তালে হাসবেন্ড-ওয়াইফ বিরাট সৌদী আলখাল্লা আর জুব্বা বোরখা পরে ব্রেক ড্যান্স দিলেও দিতে পারে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভালো গল্পগুলো বোধ হয় এরকমই হয়। এইযে আরেকটা
http://www.sachalayatan.com/nazrul_islam/19964
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এত্ত পুরানা লেখাটাও আপ্নে পড়ছেন! আপ্নেতো ক্রমেই এনসাইক্লোপিডিয়া অফ সচলিকায় পরিণত হচ্ছেন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কখনো যদি আপনার সাথে দেখা হয়, তাহলে আপনার মাথা আমার মাথার সাথে একটু ভালো করে ঘষে দেবেন তো! মেমোরির একটু উন্নতি যদি হয়।
রিসেন্টলি শোনা গল্প। ভাবলাম, লিখি...
নীড়পাতা থেকে সরানোর চেষ্টা করছি। দেখি পারি কিনা, আমি তো আবার বিশাল টেকি...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সরাবেন কেন? থাকুক না। একই থিম হলেও দুইটা দুইরকম লেখা। বরং এইটাতে ডিটেইলিং বেশি।
স্যরি।
আমি পারি না।
বরং মডুদের অনুরোধ করছি, এটা নীড়পাতা থেকে সরিয়ে আমার ব্লগে দেয়ার জন্য।
কেমন নকল নকল লেখা লাগছে এখন, অপ্র। সরানোই ভালো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সরাবেন কেন ? ছি ছি !! আমি তো ভয়ানক বিব্রত হয়ে গেলাম। আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলবার ইচ্ছে ছিলোনা মোটেও। পড়তে গিয়ে লেখাটা মনে পড়ে গিয়েছিল, ভাবলাম শেয়ার করি।।। ব্যাপারটা এভাবে ঘুরে যাবে ভাবিনি।
তাছাড়া অপ্র ঠিকই বলেছেন, একই থিম হলেও হাতের গুণে একই লেখা দুরকম হতে বাধ্য। কদিন আগেই যেমন আমি আর কৌস্তুভ একই সচলাড্ডার গল্প লিখেছি কিন্তু দুটো দুরকম হয়েছে।
অস্বস্তিতে ফেলবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ধুরো!
আপনি কেন অস্বস্তিতে পড়বেন?
আমার মেমোরি প্রায়ই বিট্রে করে বলে আমি বরং নানা ঝামেলায় পড়ি।
ইট'স ওকে, আশালতা দেবী। সত্যি।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমি সাক্ষী, অ্যাশলোটা আর বিডিআর আপনের লেখার গীবত করছে।
উইদিন থার্ড ব্র্যাকেট- ইরি মুতাব্বির আঁরে হপকর্ন দিয়া যা, ইয়ানো অন কিলাকিলি লাইগবে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
একদম ঠিক ধরসেন।
আশালতা দেবী, একটু আসেন তো ভাই, মনের সুখে ধুগোর পিঠে দু'জনে মিলে কিলাকিলি করি।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হুঁ হুঁ, খালি রং দেখছেন, রঙের ডিব্বা দেখেন নাই ! এইবার ধুগোদা ?!!
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
হা হা হা। আসলেই ভালো গল্প।
নাহ-- মানুষ বড়ই অদ্ভুত জীব।
তা না হৈলে ভালো গল্প শুনতে চাইয়া -- তারপর তারপর-- করব ক্যান??
-----------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ--
শিবরামের একটা গল্প মনে পড়ে গেল। নামটা মনে নেই। মাসীকে জানানো হচ্ছে বোনপো আজ কেন বাড়িতে ফিরতে পারবে না। প্রতি মূহুর্তেই একটা দূর্ঘটনার আশংকা। ফাটাফাটি গল্প ছিল। প্রায় ২০ বছর পর মনে করিয়ে দিলেন।
খবরদারি সহজ নয়
ইয়েসসসস ! থ্যাংক্যু !
কোথাও পড়েছিলাম আগে গল্পটা।
বেশ ভালো গল্প
টুইটার
ওহ, আমি ভাবছিলাম এইডা আসল গল্প।কিন্তু এখন দেখতেছি এইডা একটা নকল গল্প
ইজি...
থিম এক হতে পারে, মোটামুটি পরিচিত কৌতুকই তো, হুবহু তো আর এক না (এবং কারও মৌলিক গল্প থেকে মেরা দেয়া না) যে "নকল গল্প" ট্যাগ লাগাতে হবে। তবে হ্যাঁ, বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ তো আছেই। সেটুকুর দায় লেখিকারই।
ওই লেখাটায় কিন্তু উনি মন্তব্য করেছিলেন। অর্থাৎ গল্পটা ওনার পড়া ছিল। হয়তো লেখার সময় মনে ছিল না।
খুব ভালু গল্প
আমি আবার আপনার সব গল্পই ভালু পাই
ভালু গল্পু চালু থাকু
পড়ার সময় সেটাই মনে হচ্ছিল- পুরানো জোকস! ঐ লেখাটার কথা মনে ছিলো না।
একটা কাজ করতে পারেন-
লেখাটা সম্পাদনা করে একটা 'পাদটীকা' জুড়ে দিতে পারেন। আর কোন ঝামেলা থাকে না তাহলে।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আমারো মনে ছিলো না।
পাদটিকা জুড়ে দিলাম, মর্ম।
থ্যাংকস।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার তো বরং একই থিমে দু'জনের লেখা ভালোই লাগলো। মোটেই নকল মনে হয়নি।
নজরুল ভাইয়ের একটা পোষ্ট ছিল এই গল্পটা নিয়ে।
কোন এক বিখ্যাত অভিনেতা একবার শুটিং স্পটে এই গল্প বলে ভীষন হাসিয়েছিল সবাইকে।
আমি পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, শেষে এসে সেই অভিনেতার নামটা জানতে পাব। পেলামনা ।
যা বলার উপরেই দেখি সবাই বলে দিয়েছে।
লিখার প্রথম লাইন থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম, এই গল্পটা অন্য কোথাও পড়েছি। ভাবছিলাম চরম উদাসের প্রোফাইল সার্চ করলেই বোঝা যাবে।
যাক, শার্প মেমোরির সচলিয়ানরা বের করে দিলেন, এটা নজরুল ইসলামের লিখা একটা অভিজ্ঞতার গল্প । পার্থক্য হচ্ছে, নজরুল ভাইয়ের গল্পটা জানতো, ঠিক কোন জায়গায় এসে থামতে হবে।
হা হা হা, দারুন ।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
আপনি পারলেন এভাবে শেষ করে দিতে…..
যাক আমিও বড় হয়ে ভালু গল্প লিখব। থিক থিক।
ডাকঘর | ছবিঘর
একটুকরো হাসি।
cresida
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন