কাল রাতে আমাদের শহরে লন্ডভন্ড করা বৃষ্টি হয়েছে। সকালে যখন স্কুলে যাই, তখনো তার রেশ পুরোপুরি কাটেনি। গাছপালা, রাস্তাঘাট সবই ভেজা ভেজা। ভালোবাসা তারপর দিতে পারে গত বরষার সুবাস... বৃষ্টির গন্ধেই বোধহয় গতবছরের এরকম একটা দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার। কিছু কিছু দিন কাটে সত্যি অন্যরকম...
সেদিনটাও এরকমই সময়ে ছিলো। স্কুলে ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষা চলছে। সেকেন্ড শিফটে সেদিন দু'টো না, একটা পরীক্ষা ছিলো। বাইরে অতোটা মায়াবতী না হলেও, অন্ধকার। সকলে মনখারাপ করার মতো অল্প একটু বৃষ্টি হয়েছে। পিয়ন এসে ক্লাসে ক্লাসে বলে গেলো, বাচ্চারা পরীক্ষা শেষ করে ঘন্টা না দেয়া পর্যন্ত ক্লাসেই বসে থাকবে। আর আমাদেরকে যেতে হবে নিচের স্টাফরুমে। মিটিং। প্রিন্সিপাল কথা বলবেন। মিটিং সবসময়ই বিরক্তিকর। এই শিফটে পরীক্ষা ছিলো থ্রি থেকে সিক্সের স্টুডেন্টদের। পরীক্ষা শেষ হলে ওদেরকে ক্লাস থেকে বের হতে নিষেধ করে আমরা চলে গেলাম জায়গামতো।
কোনো কারণে প্রিন্সিপাল আসতে দেরি করছেন। আমরা বসে আছি তা আছিই। মিটিং আর শুরু হয় না। এদিকে একটা দুইটা স্টুডেন্ট ক্লাস থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে। আমরা গায়ে লাগাই না। আমাদেরকে এখানে বসতে বলেছে, বসেছি। মাঝেমাঝে বাড়তি কাজ আমরা নিজে থেকে করি না। এরমধ্যে নামলো ঝুম বৃষ্টি। একটা দুটো করতে করতে ক্লাস থেকে দেখি অনেক বাচ্চা নেমে ভিজতে শুরু করলো। আমরা পাঁচ-ছয়জন বারান্দায় বের হয়ে আসি। বৃষ্টির ছাঁটে অনেকখানিই ভিজে যাচ্ছি, খেয়াল নেই।
বাচ্চাদের লাফালাফি করে ভেজার দৃশ্য যে কি চমৎকার! শৈশবকে মনে করিয়ে দিলো আবার। এখনকার বাচ্চারা তো সব মোমের পুতুল, মোমের দেশের ছেলেমেয়ের মতো। এভাবে অনিয়ম করার সুযোগই নেই ওদের। ওদের আনন্দটা তাই অন্যরকম। অনেক বেশি। এর মধ্যে কয়েকজন টিচার, বাচ্চাদেরকে তুলে আনার চেষ্টা করে। ক্লাসে যাও, ক্লাসে যাও - বলে চিৎকার। আর আমরা কয়েকজন চাচ্ছি, ওরা একটু সুযোগ পেয়েছে, ভিজুক ইচ্ছেমতো। এরমধ্যে দূরে দেখা গেলো ইনচার্জকে। সাথে সাথে কেউ কেউ দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাজি যে, সে করলো কি, হাত দিয়ে বাচ্চাদেরকে ইশারা করছে, "উঠে এসো," আর মুখে বলছে, "নামো, কে কে ভিজতে চাও, নামো।" এর মধ্যে দুইজন টিচার নেমে গেলেন ছাতা নিয়ে, ওদেরকে তাড়িয়ে তুলে দেবার জন্য। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়রজন বলেন, "হ্যাঁ, যারা ভিজেছে, এদেরকে তুলে দাও। আর যারা ভেজেনি, তাদেরকে নামিয়ে দাও।" শিলু আপার ছেলে পড়ে ক্লাস থ্রিতে। সে বারবার বলে আমাদের সিনিয়রজনকে, "আপা, ওদেরকে তুলে দেন, প্লিজ। আজকে ভিজলে কাল এরা কেউ পরীক্ষা দিতে পারবে না।" কিন্তু ওর কথা কেউ শোনে না।
একটু পরে একজন স্যার ইনচার্জ রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের কাছে এলেন। সিরিয়াস মুখ। এখানে যে কয়জন ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের মধ্যে দুইজনকে ইনচার্জ ডেকে পাঠিয়েছেন। আমরা কয়েকজনই সুড়ুৎ করে স্টাফরুমে ঢুকে যাই। বসার পর টের পেলাম, আমার সামনের দিকটা বেশ ভালোরকমই ভিজেছে। ভেতরে ঢুকেই আমাদের সিনিয়রজন লেডি টিচারদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে নুতন যারা জয়েন করেছে, ওখানেই বসে আছে, তাদের দুইজনকে বললেন, "এই, তোমাদেরকে ইনচার্জ দেখা করতে বলেছে, এখনই।" কেন আবার ডাকলো, এইসব বলতে বলতে ওরা উঠে গেলো দেখা করতে, ইনচার্জ রুমের দিকে। একটু পরে এসে দুজনেই অবাক মুখে বললো, "কই, ডাকেনি তো!"
এইসব করতে করতে প্রিন্সিপাল স্যার আসলেন। আমরা কয়েকজন বরাবরই বসি পেছনের দিকে। আর শুরুতেই মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো কোনো বিষয় না থাকলে কোনো মিটিং আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। মিটিং পরবর্তী আলোচনা শুনেই দিব্যি বুঝে নেয়া যায় ঘটনা কী ছিলো। আমি আর শিলু আপা বসেছি পাশাপাশি। আমাদের সামনের সারিতে অমাদেরই একজন। ওর চেহারা আর স্বভাব-চরিত্রের কারণে ওকে আমরা বিজ্ঞানী বলি। ওকে বলি, "বিজ্ঞানী, একটু ডানদিকে সরে বসো তো। প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন।" ও জিজ্ঞেস করে, "ডানদিক মানে কোন দিক?" আমি বলি, "যে হাতে তুমি ভাত খাও, সেই হাত হলো ডানদিক, ওই দিকে সরো।" ও একটু সরে বসে। মিটিং হলো। হাবিজাবি প্যাঁচাল হলো। শেষ হলো। বের হলাম আমরা। ততক্ষণে বৃষ্টিও শেষ। দুই এক ফোঁটা পড়ছে শুধু...
মন্তব্য
ট্যাগে দুর্নীতি দেখে সবচে মজা পাইছি। বাচ্চারা দ্যাখো এসে তোমাগো আণ্টি কনফেস করে গ্যাচে। তাত্তারি। আমিও ফাস্ট পড়ে গ্যাচি।
ডাকঘর | ছবিঘর
বাচ্চাদের কথা ভেবেই না আমরা একটু ওদেরকে ভেজার সুযোগ করে দিলুম,আর আপনি কিনা কীসব কনফেস করার কথা বলচেন, দাদা!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আহা সেটাই তো বললুম নাকি ...... আমিও ওদেরই দলে পরি কিনা, তাই বাচ্চাদের সাথে একাত্ম হলুম।
ডাকঘর | ছবিঘর
বৃষ্টিতে ভেজার যে কী সাধ মোমের পুতুলেরা কি তা জানে? ইচ্ছে করছে এখনই যেখানে ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে গিয়ে ভিজে আসতে।
হুম, বৃষ্টিতে ভেজার কথা শুনলে অনেক বাচ্চাই বলে, ঠান্ডা লাগবে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমি বৃষ্টিতে ভিজতাম চাইইইই...
এই তো দিন এসেই গেলো...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বৃষ্টি আমার প্রচন্ড ভালো লাগে। আপনার লিখা আমাকে মেলা আগের স্কুলবেলায় নিয়ে গেল আপু। আপনার জন্য এক্টা গানটা দিলাম, আজকে সারাদিন গান্টা শুনেছি, আমার এখানে ও যে বৃষ্টি হচ্ছে।
http://www.youtube.com/watch?v=Uz2u3UsEhVA&feature=autoplay&list=PLC7B905D72678D116&index=1&playnext=10
আমি বৃষ্টি চাই, আমি বৃষ্টি চাই, বারবার...
গানটা দারুণ! শুভমিতার গান এমনিতেই ভালো লাগে আমার।
প্রত্যেকটা ছবিও কি সুন্দর, না?
অনেক অনেক ধন্যবাদ, বন্দনা।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হবে না, আপনারা টিচাররা আর আপনাদের "নতুন" স্টুডেন্টরা স্কুলে এত মজা করেন কেন? আমি আবার স্কুলে ভর্তি হব, না হলে খেলবো না।
সাফায়াতুল ইসলাম
শুধু মজা! পেইনও কম না। এখনকার বাচ্চাদের কান্ডকারখানা কখনো কখনো এতো যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে যে আমরাই কান্দি আর গান গাই, আগে কি সোন্দর দিন কাটাইতাম...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
রিম ঝিম রিম ঝিম বৃষ্টি---
facebook
গান গাইলেন?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সব শিশু বৃষ্টি, জলে নামেওনা, ভেজেওনা। যারা পারে সেইসব শিশুদের জন্য এইরকম মানসিকতার শিক্ষকরাই ভালো। ট্যাগ জুড়ে কি সব দিয়ে রেখেছেন!
কিজানি। কেউ কেউ তো বকে, ওদেরকে বেশি মাথায় তোলা হচ্ছে বলে।
হাহাহা
ট্যাগ!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ইনজার্জ ডাকছিলো ক্যান? ঝাড়ি দেওনের জন্য?
লেখাটাতো মনে হচ্ছে হঠাৎ থামিয়ে দিলেন, নয়তো মাঝখানে কিছু বাদ দিয়ে দিয়েছেন...
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ইনচার্জ ক্যান ডাকছিলো, কে জানে!
উঁহু। বৃষ্টি থেমে গেলো যে, আর কী লিখবো...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভালো লেগেছে। ভালো লেখাগুলো বোধ হয় দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।
থ্যাংকিউ।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনি তো দেখি শিক্ষক হিসেবে বেশী ভাল
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শিক্ষকের আগে ফাঁকিবাজ লাগাইবেন না?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনি তো পুরা ট্যাগ-সন্ত্রাস শুরু করেছেন দেখি! হা হা হা। লেখাটা হুট করেই শেষ হয়ে গেল। মনে হলো কেমন যেন একটু খাপছাড়া। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
ওহ! ট্যাগে "সন্ত্রাসবান্ধব পরিবেশ" বাদ পড়সে।
পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম, মানে!!!
আপনার হজমশক্তি তো বেশ ভালো দেখি!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ট্যাগ দেখে ডরায়ছিলাম। এমন অনিয়ম না হলে কি হয়? আমাদের স্কুলে যেদিন এরকম হঠাত অন্ধকার করে বৃষ্টি আসত সেদিন সবচেয়ে কঠিন স্যারটিও কেমন যেন হয়ে যেতেন। ক্লাস বাদ দিয়ে চলত গল্প বলা ও শোনার আসর। আর যদি শেষ ক্লাসে হতো তবে আর ঘন্টা পড়তে হতো না। অনেকদিন স্যারই বলতেন যে - যা মাঠে যা।
লেখাটা খুব ভাল লাগল।
আমরা ওদেরকে মাঠে যেতে বলতে পারি না।
কিন্তু বৃষ্টির দিনে পড়ানো, আর পড়া করানো, দুটোই সত্যি কঠিন।
থ্যাংকস।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার এখানে বৃষ্টির ঠিকঠিকানা নাই। প্রতিদিনই হয়, ছিটেফোটা/রিমঝিম/বিড়াল-কুকুর সব!!! কিন্তু দেশ ছাড়ার আগেরদিনেও যে হালকা বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগিয়ে এসেছিলাম সেটা এখানে পাচ্ছি না।
আমাদের বৃষ্টি বলে কথা...
দেশে আসবেন কবে?
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ট্যাগ পড়ে টাশকিত । বারে বারে পড়লাম কি মিস করলাম কিংবা কি না কি? এইসবের মাঝে ট্যাগ ভুলে যেতে চেয়ে শেষ বার পড়লাম।
হা হা হা যারা যারা ভিজেছ তারা উঠে এসো আর যারা ভিজনি তারা নেমে পরো। ইস!!!!!!!!!
হাহাহা
প্রখর-রোদ্দুর কি প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজতে চায় নাকি!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বৃষ্টিতে ভিজতে মন চায়, এটা আবেগ। বৃষ্টিতে ভিজলে অসুখ হয়, এটা বর্তমানের বাস্তবতা। এটা আমার একান্তই নিজের বিষয়।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বৃষ্টি টা না থামলেই ভাল হত।
তবে আমার আবার এখন বৃষ্টি দেখলেই একটা আতঙ্ক হয় - 'এই বোধহয় নেট চলে গেল !'
আপনাদের ওখানে শুধু বৃষ্টি এলে নেট যায়! আপনারা তো ভাগ্যবান, মশাই!
আমার এখানে তো যখন তখন যায়। আপনার এই কমেন্টের উত্তর দিতে এসেছিলাম দুইবার। দুইবারই গেলো!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন