এক টুকরো শাহবাগ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি
লিখেছেন সুলতানা পারভীন শিমুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০২/২০১৩ - ২:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিকেল চারটে থেকে চারটে তিন মিনিট পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী ছিলো। তিন মিনিটের জন্য থমকে যাওয়া দেশ। সবখানে, সবখানে একটা দাবীতে সোচ্চার কোটি কোটি মানুষ। ব্যাপারটাই কি অদ্ভুত!

আমার নিজের ভেতরেও অস্থিরতা ছিলো। কিন্তু ক্লাস নিতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যাপারটা। টানা পাঁচটা ক্লাস নিয়ে, আরো হাবিজাবি কাজ সেরে তারপর মনে পড়লো। লাস্ট পিরিয়ডের তখন আর অল্প কিছু সময় বাকি। বেছে বেছে সবচেয়ে বড় ক্লাসটাতে গেলাম। দুই মিনিট সময় নিয়ে ওদেরকে সচেতন করে দিলাম সময়টার ব্যাপারে। ওই সময়ে ওদের স্কুলবাসে ওঠার সময়। জানে তো ওরা সবাই। কি করতে হবে শুধু মনে করিয়ে দিয়ে বাকিদেরকেও মনে করিয়ে দিতে বললাম।

বাসস্ট্যান্ডে এসে ওস্তাদকে বললাম, আমরা সময়টা পালন করে তারপর স্টার্ট করবো কি না। সে বললো, বাস নাকি যথাসময়েই ছাড়তে হবে। আবারো জানতে চাই, ওই সময়ে কি উনি গাড়ি থামিয়ে দেবেন না তিন মিনিটের জন্য? সেটাতেও নাকি ঝামেলা হবে। মন খারাপ হলো। কিন্তু আমি আর কথা বাড়াই না। আমরা তাহলে আমাদের মতো করেই করবো।

গাড়িতে উঠে বসলো সবাই, ছাড়লোও গাড়ি। চারটে বাজার কয়েক মিনিট আগে আমি উঠে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদেরকে অল্পকিছু কথা বললাম । ওদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমি মুগ্ধ। চারটে বাজার কথা জানালাম যখন, সবাই দাঁড়িয়ে গেলো। নিমেষেই গাড়ির ভেতরটা হয়ে উঠলো এক টুকরো শাহবাগ। কারো মুখে কথা নেই। একটা চলন্ত গাড়িতে ওতোগুলো দুরন্ত বাচ্চা, অথচ কোথাও কোনো শোরগোল নেই, শব্দ নেই, এই ব্যাপারটাই তো অস্বাভাবিক অন্যরকম! আমি কচি কচি মুখগুলোর দিকে তাকাই। কি দৃপ্ত ভঙ্গি একেকজনের! কেউ কেউ বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। কি যে অদ্ভুত অনুভূতি! তিন মিনিট পার হয়ে গেলে ওদেরকে বসতে বলি। মনে মনে কোটি কোটি ধন্যবাদ জানাই।

পরেরদিন।
ছেলেরা কোথায় কোন কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছে, কী কী করতে যাচ্ছে, এসে এসে জানিয়ে যাচ্ছে। শুনলাম, সাতমাথার সমাবেশে আমাদের তিন বালিকা গতদিন বক্তৃতাও দিয়েছে। একজনকে কাছে ডেকে জানতে চাইলাম, কী বলেছে ওখানে।
মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি ওরা, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মনেপ্রাণে ধারন করে আছে ওরা... এইসব আরো অনেক কথা বলেছে। এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে প্রায় প্রতিদিন বকা খাওয়া আমাদের এইসব বাচ্চারা! চোখ ভিজে ওঠে আমার।
সাতমাথায় ব্যানার নিয়ে, প্ল্যাকার্ড নিয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়েরাই।

সত্যি বলতে কি , অনেক অনেক কারণেই এই প্রজন্মের বাচ্চাদের মানবিক বোধগুলো নিয়ে আমি অনেকটাই হতাশ ছিলাম।
এখন, আমি গর্বিত।
এরাই যদি হয় আমাদের ভবিষ্যত, আমাদের আর ভয় নেই।
কোনো ভয় নেই।

***
(পান্ডব'দার লেখা পড়ে মনে হলো, এইটুকুই নাহয় লিখে ফেলি)


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সেদিন অফিসে মিটিং চলছিলো।
চারটা বাজতেই মিটিং স্থগিত রেখে নিচে নেমে এলাম।
অবাক হয়ে দেখি বিভিন্ন অফিস থেকে লোকজন নেমে রাস্তায় নিরবে দাঁড়িয়ে গেছে!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

লুৎফর রহমান রিটন আর আমীরুল ইসলামের একটা ছড়ার বই ছিল রাজাকারের ছড়া নামে।
দারুন কিছু ছড়া ছিল সেই বইটাতে। কারও কাছে ছড়াগুলো থাকলে কপি করুন দয়া করে!

আমার কপিটা আমার শিবির করা ফুপাতো ভাই সেই কবেই গায়েব করে দিয়েছিলো!
শালা কমিনা !!

রিটন ভাই আমার আবদার পড়লে হয়তো কিছু নতুন ছড়া ও যোগ করে দেবেন !!!

রাজাকার মানে গোলাম আযম আর সাইদির মত ভনডো
ধরমের নামে রাজনীতি করে যতসব অপগনডো(বানান ঠিক করতে পারছিনা !)
,,,,,,

কনতো দেখি আইজকা দেশে সবচেয়ে শরীর তাজা কার? (বানান আবার !)
যেই শালারা রাজাকার ,,,

পাকসার জমিন সাদবাদ
এ জীবন করেছে বরবাদ
,,,

মুস্তাফিজ এর ছবি

হৃদয়ে শাহবাগ

...........................
Every Picture Tells a Story

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গুড জব! ইতিহাসগুলো এভাবেই লিখে রাখতে হবে যাতে পরে কেউ নিজের ইচ্ছেমতো গল্প ফাঁদতে না পারে।

*******************************

এক সচলের সাথে কথা হচ্ছিলো (ইচ্ছে করেই তার নাম বললাম না) শাহ্‌বাগে দেখা এমনসব ঘটনা নিয়ে। তিনি বললেন, "এক সময় নিজেই এমন লজ্জা পেলাম এই কথা ভেবে যে এই আপাত সাধারণ লোকগুলোকে এতোদিন অবিশ্বাস করেছিলাম"! আসলে আমাদের মতো সুবিধাবাদী শিক্ষিত মধ্যবিত্তের দল অজ্ঞতাবশত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে আস্থায় নেয় না। অথচ এরা যদি ইতিহাসটা ঠিক মতো জানার চেষ্টা করতো তাহলে জানতে পারতো ৪২ বছর আগে এই লুঙ্গি-গামছা পরা চাষাভুষার দল নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিল বিপদগ্রস্থ মানুষের জন্য। নিজের জীবনকে বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। সম্মুখ সমরে এরাই বুক পেতে দাঁড়াতো। দেশটা এমনি এমনি স্বাধীন হয়নি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, কোন কিছু পাবার আশা না করেই, একমাত্র স্বাধীনতা ছাড়া।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কিসের টানে এতগুলো মানুষ শাহবাগ চত্বরে বসে আছে নয়দিন ধরে? প্রতিদিন কিসের টানে আমরা প্রেসক্লাব চত্বরে ছুটে যাই? সেই একই শ্লোগান প্রতিদিন, একই গান প্রতিদিন, একই উল্লাস প্রতিদিন। তবু তৃষ্ণা মরে না। এই তৃষ্ণা সহজে মরার নয়। এর নাম চেতনা। এই আনন্দ চেতনার আনন্দ। এটা যার নাই সে দুর্ভাগা। তার জন্য করুণা ছাড়া আর কি?

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

স্যাম এর ছবি

'শাহবাগ' এর জন্য কাজ করে যেতে হবে, কাজের শক্তি পাওয়ার জন্য শাহবাগে যেতে হবে - ছোট, বড়, দেশে, বিদেশে যত শাহবাগ আছে ।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

চমৎকার লাগলো চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।