১.
ব্রিটেনের মতো দেশগুলির ভীষণ দুর্ভাগ্য। এইসব দেশে কোকো রহমানের মত বিজ্ঞাপন-বন্ধু প্রধানমন্ত্রী-পুত্ররা জন্মাতে পারে না। তাহলে রাজধানী শহরের সব ভবন, সব রাস্তা, ঢাকা হয়ে যেত বিলবোর্ড দিয়ে, বাহারি বিজ্ঞাপনের চকচকে ছবি দিয়ে। এসব দেশে যেকোনো দেয়ালে পেরেক পুঁততে গেলেই ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে টান দেয়। রাস্তায় বিলবোর্ড খাড়া করতে গেলে যে কোর্ট-কাছারি করতে হবে না তার গ্যারান্টি কী?
২.
আইনের বাধা পেলে মানুষ সৃজনশীল হয় হয়তো। লন্ডনের অক্সফোর্ড সার্কাস এলাকায় গেলেই দেখা যায় বিচিত্র একরকম বিজ্ঞাপন-বোর্ড। একেবারে জ্যান্ত বোর্ড। আইন অনুযায়ী ফুটপাতের রেলিং-এ বোর্ড, ব্যানার বাঁধা যাবে না। সুতরাং এই অস্থায়ী ব্যবস্থা। কায়দা করে মানুষের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন। এখন কী? সর্বনিম্ন মজুরিতে মানুষজন দাঁড়িয়েও থাকছে এরকম জ্যান্ত বোর্ড হয়ে। ভাবখানা এমন, অক্সফোর্ড স্ট্রিটে কেনা-কাটা করতে এসে বোর্ড হয়ে গেলাম।
৩.
আগের মত নিয়মটা মনে হয় কড়াকড়ি নেই। কারণ দুয়েকজনকে দেখলাম বোর্ডটা কাপড়ের ফিতা দিয়ে বেঁধেছে রেলিং-এর সাথে। বছর তিনেক আগে 'গলফ সেলের' বিজ্ঞাপন-বোর্ডটা দেখতাম মানুষটার প্যান্টের বেল্টের সাথে বাঁধা। সে একটু একটু দুলতো আর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পেপারব্যাক পড়ে সময়টা কাটিয়ে দিত। সেই চলন্ত 'গলফ সেল' বিজ্ঞাপনটা এখন লন্ডনের বাণিজ্য পাড়ার আইকন হয়ে গেছে প্রায়। তবে এখন আর অমন করে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে না। অক্সফোর্ড স্ট্রিটে এক বাংলাদেশি ছাত্রকে দেখলাম আরো সাহসী। সে ভাঁজ করা যায় এমন একটা স্টিলের চেয়ার পেতে বসে ধরে থাকে বোর্ডটা। সেইসাথে মনে হয় বাড়তি একটা কাজও জোগাড় করেছে লিফলেট বিতরণের। একসাথে দুই কাজ। ছবি তোলার জন্য গিয়ে দেখলাম চেয়ারটা ফুটপাতে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আর মাটিতে বসে ধরে আছে বোর্ডটা। আহা কত কষ্ট হচ্ছে ছেলেটার! ছবিটা তুলতে আর ইচ্ছা করলো না। এই ব্লগে পরিচিত কেউ যদি দেখে ফেলে তাকে!
৪.
তবু এরকম একটা কাজ ছিল বলে হয়তো ছাত্রটা এখানে থাকা-পড়ার খরচ জোগাড় করতে পারছে। এসব বোর্ডের মূল উদ্দেশ্য অবশ্য একটু দূরের দোকানের জন্য ক্রেতা টানা। সেজন্য বড় একটা তীরচিহ্ন থাকে। লন্ডনে আসা ট্যুরিস্টরা অক্সফোর্ড স্ট্রিট বা রিজেন্ট স্ট্রিট ছেড়ে পরের রাস্তায় ঢুকতেই চায় না। সম্ভবত: পথ হারিয়ে ফেলার ভয়ে। সুতরাং ঠিক লাগোয়া রাস্তার দোকানদারেরা এভাবেই ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে চেষ্টা করে।
ঢাকায় তো অনেকরকম বিজ্ঞাপনী বোর্ড চলছে। এ জিনিস হয়তো নাই। এটুকু লেখে দুশ্চিন্তা দেখা দিলো মনে, ছব্লগ পড়েই হয়তো কোনো ফোকো-সোকোর মাথায় আইডিয়াটা ঢুকে গেলো। মানুষতো আবার আমাদের দেশে ভীষণ সস্তা।
মন্তব্য
আমি তো শুনেছিলাম আড়ং-এর সামনে কিসের যেন বিজ্ঞাপনে একজন জ্যান্ত মানুষ দোলনায় দোল খাচ্ছে- এরকম কোন একটা কনসেপ্ট ব্যবহার করা হয়েছিলো।
কিসের যে, সেটা ভুলে গেছি। কেউ হয়তো কনফার্ম করতে পারবে।
তবে এরকম বিজ্ঞাপন এখানেও দেখেছি। বিলবোর্ডের লেখাটা কায়দা করে নিজের গায়ে ঝুলিয়ে মূল দোকানটার আশপাশেই রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। লোকে জিজ্ঞেস করলেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
জ্যান্ত মানুষ দোলনায় মডেলিং করছে- এ বিষয়টা ভিন্ন। এটা হচ্ছে বিদেশে বড় বড় দোকানে ক্রিসমাসে উইনডো সাজানোর আইডিয়া থেকে আসা। এখানে মানুষটা মডেল। ঠিক বিজ্ঞাপনের বোর্ড না।
মেলবোর্নে মায়ারসকে করতে দেখেছি। বড় বড় জানালার মতো অংশে কয়েকদিন ধরে গোটা পাঁচেক মানুষকে রেখে দেয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার মতো, কাঁচের ঘরে। তারা হাঁটে, খায়, বই পড়ে, গান শোনে, ফোনে কথা বলে। শুধু বাথরুমটা করে লুকিয়ে।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ভাল লাগল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দারুন তো!
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
- কনফু, ওটা কিটক্যাট বা কোন রঙের একটা বিলবোর্ড মনে হয়। রাপার উল্টা দিকে। ওখানে যে দোল খায়, তাকে আসল মানুষ বলে মনে হলেও সেটা আসলে একটা পুতুল।
এই ধোঁকাটা আমিও খেয়েছিলাম!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ওটা আগে জ্যান্ত মানুষই ছিল ।পরে সেখানে পুতুল বসিয়েছে।@ধূ.গো ।
ধন্যবাদ।
মালিবু'র নারকেলের গন্ধ কি খারাপ লাগলো?
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আরে মালিব্যু নিজেই তো ককটেল, এরে আবার ককটেল বানালে তো বেশি মসলার রান্নার মত হয়ে যাবে। হুম, ২০% নারকেল থাকাতে যারা ঠিক শ্রীলংকা, নোয়াখালি বা ক্যারিবিয়ান ধরনের অঞ্চলের মানুষ না তাদের একটু গন্ধ লাগে। নারকেল দিয়ে রান্না তরকারি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তো খারাপ লাগার কথা না।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
কি কাহিনী!
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
ওরে বাবা!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
মারাত্মক আইডিয়া।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বেশ মজা লাগছে ছবির কথা বলা। চলুক।
নতুন মন্তব্য করুন