১.
আপনাদের অনেকের হয়তো জানা থাকতে পারে যে দোপেঁয়াজা রান্নায় দুইবার পেঁয়াজ দেয়ার একটা কৌশল আছে। আমি জানতাম না। দোপেঁয়াজাকে আমি সব সময় মোল্লা দোপেঁয়াজার প্রিয় খাবারই ভেবে এসেছি। সুতরাং নামের আগের দো যে সংখ্যা দুই এমন আমার কখনও মনে হয়নি। তবে আমার এরকম ধারণা তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে গুরু সিদ্দিকা কবীরকেও কিছুটা দায়ী করা যায়। দোপেঁয়াজায় যে আসলে পেঁয়াজের দুইনম্বরির বিষয় আছে, ‘রান্না, খাদ্য ও পুষ্টি’-তে সেরকম কোনো ইঙ্গিতই করেননি তিনি। তার বইয়ের নতুন ‘কচুয়া’ রঙের সংস্করণটি অবশ্য আমার কাছে নাই। সুতরাং তথ্যসূত্র পুরনো সংস্করণেরই।
২.
দুইটা দোপেঁয়াজা রান্নার পদ্ধতি আছে সিদ্দিকা কবীরের বইয়ে। ১৭৯ পৃষ্ঠায় ডিমের ও ১৮৩ পৃষ্ঠায় মাছের। তবে এর আলোকে মুরগির দোপেঁয়াজা বানাতেও আমার অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এই দুই পদ্ধতির কোথাও দুই ধরনের বা রান্নার দুই সময়ে আলাদা করে দুইবার পেঁয়াজ ব্যবহার করার পরামর্শ দেননি সিদ্দিকা কবীর।
৩.
সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় ইন্টারনেটে একটা সন্ধান চালালাম। তাতেই নিশ্চিত হলাম বাঙালির ঘরে ঘরে একপেঁয়াজাই চালু হয়ে আছে দোপেঁয়াজা হিসেবে। বাঙালি রসনাকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচাতেই তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ব্লগের আশ্রয়।
৪.
প্রশ্ন হলো, একপেঁয়াজাকে দোপেঁয়াজায় রূপান্তরের উপায় কী? বিভিন্ন রেসিপিতে আসলে বিভিন্ন পদ্ধতি বাতলানো আছে। বাটা পেঁয়াজ দিয়ে প্রথমে মাছ/মাংস ভেঁজে পরে রান্নার মাঝ পযার্য়ে কাটা পেঁয়াজ দেয়াটাই সহজ সমাধান। তবে পাকিস্তানী মাংসের দোপেঁয়াজা রান্নাতে প্রথমে পেঁয়াজের দুই স্তরের মধ্যে মাংস কিছুটা সিদ্ধ করে পরে কাটা পেঁয়াজ যোগ করে। দো-র দুই যে কত ভিন্নরকমের হতে পারে সে বর্ণনায় গেলে এটা গবেষণাপত্র হয়ে যাবে। আমার ব্যক্তিগত পছন্দের একটা রেসিপি বইয়ের উদাহরণ দিয়ে দো-র বৈশিষ্ট্য আরেকটু খোলাসা করি। এভরিডে চিকেন কুকবুকের সংজ্ঞাটাই আমার বিশেষ পছন্দ সেখানে দোপেঁয়াজার দুইকে বিশেষ মাহাত্ম্য দেয়া হয়েছে। এই বইয়ের মতে দুই ধরনের পেঁয়াজ রান্নার দুই পযার্য়ে দেয়াটাই দো-পেঁয়াজার মূল বৈশিষ্ট্য। ছোট ছোট পেঁয়াজকে আধা-আধি করে ভাগ করে প্রথমে ভেঁজে তুলে রাখা হয়। আর বড় পেঁয়াজ কুঁচি করে কেটে রান্নায় দেয়ার পর শেষের দিকে তুলে রাখা পেঁয়াজগুলো যোগ করা হয়। এতে জিহ্বায় দুই ধরনের পেঁয়াজের সোয়াদ মেলে। তবেই না দোপেঁয়াজা নামের স্বার্থকতা।
আশা করি এই পোস্টের পর দোপেঁয়াজা নিয়ে গাণিতিক বিভ্রাটটি আর থাকবে না।
মন্তব্য
kamrultopu@yahoo.com
ভাইয়া দোপেঁয়াজা নিয়ে আমার কোন গাণিতিক আগ্রহ নেই। কিন্তু আপনার দেওয়া ছবি দেখে ক্ষিধেটা চাড়া দিয়ে উঠল। কি যে খেতে ইচ্ছে করছে...
সমস্যা তো এখানেই। গণিতটা প্রয়োজন ঠিক স্বাদের খাবারটা খাওয়ার জন্য।
রান্না যে কি পরিমাণ গণিত তা বলবে শেফরা। আমার বিস্ময় এতোদিন দোপেঁয়াজা বলে আসলে একপেঁয়াজা খেয়ে এসেছি।
দোতারার স্বাদ কি আর একতারে মিলে?
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আরে উস্তাদ! বহুত দিন পর দেখা। সুস্থ আছেন তো?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বহু কষ্ট করে সুস্থ হয়ে বসলাম। ল্যাপটপটা অবশ্য এখনও অসুস্থ।
সুমনের তো দিনকাল ভালোই যাচ্ছে মনে হয়। গিটারটা বেজেই চলেছে!
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনার সমস্যা আইডেন্টিফাই করার ধরণটা ভালো লাগল। আমার রিসার্চে কাজে দিবে।
রান্না নিয়ে কথাবার্তাই যদি রিসার্চে সাহায্য করে তবে রিসার্চ নিয়ে কথাবার্তা নিশ্চই আরো কার্যকর হবে।
অর্ধেকের বেশি সচল আসলে গবেষক। খোঁচা দেন, দেখবেন নানা কসরত ও কৌশল বাতলাবেন তারা। যেসব কথা রিসার্চ ম্যানুয়াল পড়ে সহজে বুঝা যায় না সেসব কথা....
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
দোপেঁয়াজার গাণিতিক বিভ্রাট দূর করার জন্যে আপনাকে বিপ্লব
খাবারের ছবিটাও জব্বর
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ভাগ্যিস আমি শুধু ভক্ষকপার্টির সদস্য...... এতো গাণিতিক ফর্মুলা জানার পিরিয়োজন নাইক্কা... সো বিভ্রাটেরও কোন সুযোগ নাই...
দৃশা
ভক্ষণটা ঠিকমতো হলো কিনা তা বুঝতে হবে না। এক না দুই...এই বিভ্রাট দূর না করলে কেমনে চলে?
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আমি একটা গাণিতিক সমস্যায় ভুগছিলাম বেশ কিছুদিন যাবৎ। আপনাকে সুস্থ দেখে ভালো লাগলো। কে যেন সেদিন বলছিলো শোমচৌ খুব সিক, আমি সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলেছিলাম, হতেই পারে না, উনি একজন যথার্থ ভদ্রলোক! পরে শুনলাম যে আসলে তার কথাই সত্য ;)।
হাঁটুপানির জলদস্যু
সত্য, সত্য।
জ্বর আর কাশি গেলেও শরীরটাতে কোনো যুত পাচ্ছি না।
দেশি এ্যান্টিবায়োটিকের ধাক্কা এখন্ও চলছে।
তবে ল্যাপটপের বিশ্বাসঘাতকতাই সবচে কষ্টের হয়ে দেখা দিয়েছে।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনার কথা গতকালও ভাবছিলাম, এ কয়দিন ব্লগে কয়েকটা বিষয়ে বেশ মজার মজার মন্তব্য বিনিময় হয়েছে (দ্রোহী আর ধূসরের মধ্যেকারটা উল্লেখযোগ্য)। তখনই আপনার কথা মনে হয়েছিল, আহা আপনি মিস করলেন।
খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমার খুব একটা অনাপত্তি না থাকলেও খাবারের নাম মনে রাখার বিষয়ে আমার কিছুটা সমস্যা আছে। কোনটা কোর্মা আর কোনটা রেজালা সেটা এই মুহুর্তেও মনে করতে পারছিনা।
একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, আমার ধারনা ছিল দোঁপেয়াজো মানে দুইটা পেঁয়াজ দিয়ে করা কোন খাবার। দুই বারের ব্যাপারটা আপনার কাছেই জানলাম। সেজন্য ধন্যবাদ। আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন সেই কামনা করছি।
আপনি অসুস্থ ছিলেন নাকি?
আমি আর ও ভাবছি, গেলো কোথায় মানুষটা।এখন তো দোপেয়াজার বাটি হাতে দেখা যাচ্ছে, শুকরিয়া
সুস্থ দেখে নিশ্চিন্ত হলাম।
রেসিপি মনোযোগে থাকলো।
আশা করি এইবার ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন কীবোর্ডের উপর...
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বিগ সি ভ্রাতঃ, অনেক অনেক দিন বাচঁবেন !
গতকালই হিমু ভাইকে জিজ্ঞেস করছিলাম, আপনাকে কেন দেখি না আজকাল সেই ব্যাপারে।
অনেক দিন পর দেখা দেওয়ার জন্য জাঝা আর চমৎকার লেখার জন্য (বিপ্লব)
-----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
- আমার একটা সবিনয় প্রশ্ন ছিলো- গরু-খাশী-ছাগলে কি দোপেঁয়াজা থিওরী এ্যাপ্লাই করা যায় না? গেলে সেটার সোয়াদ কেমন হয়? এই রেসিপির একটা এ্যালগোরিদম দিলে বিশেষ কৃতজ্ঞ থাকতাম!
(বস, শোনার শোনা শুনলাম, ইদানিং নাকি ভাবী আপনাকে কিচেনে যেতে বাধ্য করছেন! শারীরিক ভাবে প্রদত্ত নানান হুমকি ধামকিও নাকি কানে আসে আপনার ফ্ল্যাট থেকে! আমি অবশ্য এইসব বিশ্বাস করি নাই )
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দোপিঁয়াজার যাত্রাটাই শুরু মাংশ দিয়ে। মোঘলদের রসুইঘর, যেখানে এর জন্ম, সেখানে মাছের কদরদার বেশী ছিল না। আমরা মাছখেকোরাই বোধহয় মাছের দোপিঁয়াজা উদ্ভাবক।
আমি কিন্তু খুব ছোটবেলায় "মোল্লা দোপেঁয়াজা" খাবারের নাম বলে মনে করতাম
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
জনৈক আরিফ জেবতিককে বহুকষ্টে রাজি করানো হয়েছিলো এরকম একটি ব-eসম্পাদনার জন্য, কিন্তু তিনি অনিবার্য কারণবশত প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় গা ঢাকা দিয়েছেন বলে ঢাকা সংবাদদাতা জানিয়েছেন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
দোপেঁয়াজা যে মোল্লা দোপেঁয়াজার প্রিয় খাবার হতে পারে এটা আমার মাথায় এসেছিলো। আবার দুইবার পেঁয়াজ দেবার রেয়াজ থেকেও আসতে পারে সেটাও মাথায় ছিলো। আপনার পোস্ট পড়ে আসল কাহিনী কোনটা তা নিশ্চিত হলাম। (বিপ্লব)
প্রিয় পোস্টে রাখলাম।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন