সরকার কবিতা পড়তে পারলে কী হয়?

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০২/২০০৯ - ৯:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(শিরোনামের প্রশ্নটির উত্তর আমরা জেনে গেছি। যারা অনলাইনেও দেশের দৈনিক পড়েন না তারা নীচে জ্বিনের বাদশার পোস্টে উঁকি দিতে পারেন। তবে পত্রিকা আর পোস্ট থেকে আপনারা যা জানবেন তার সাথে আরো কিছু যোগ করার জন্যই এই পোস্ট। শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।)

আবু করিমের দুর্ভাগ্য যে কবি হিসেবে তার নামটা ফাটলো আমলা হিসেবে তার চাকুরি যাওয়ার পর। এই বিশ্বমন্দার সময়ে একদা সহকর্মী হিসেবে তার চাকুরি যাওয়ার সংবাদে আমি খুশি হতে পারি না তবে কবি হিসেবে তিনি বহুবার এই আমলার চাকুরি ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। তার কবিতা সংগ্রহের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন:
...আমার কবিতা এখনও বৃহত্তর পাঠক-পাঠিকাদের কাছে আমি পৌঁছুতে পারিনি। জীবিকার জন্য আমলার পেশা বেছে নিয়ে আমার ব বৈষয়িক জীবনে কিঞ্চিত তরক্কি হয়েছে কিন্তু কবি-জীবনে আমি প্রচন্ড বাধাগ্রস্থ হয়েছি। মন খুলে বা হাত খুলে লেখার যে স্বাধীনতা তা আমি কবরস্থ করেছি। (পৃষ্ঠা-৮)

তার এই আক্ষেপ পাওয়া যাবে তার বিভিন্ন কবিতায়।
চাকুরি যাওয়ায় কবি হয়তো এখন মুক্ত হলেন। অবিরাম কাব্য চর্চা করতে পারবেন।

২.
কবি হিসেবে তিনি আরো একবার মিডিয়ার আলোচনায় এসেছিলেন। তখনকার কারণ ছিল তার ভাষায় তার বেগম-পসন্দ কবিতার সংকলন প্রকাশন। ২০০৬ সালে বের হয় তার একটি কবিতা সংকলন যার নাম ছিল ‘নারীদের পছন্দকৃত আবু করিমের কবিতা’। তাঁর ঘনিষ্ঠ তিন নারীর বাছাই করা তার কবিতা নিয়ে একটি সংকলন। কেন এরকম বেগম-পসন্দ সংকলন? বইটির ভূমিকাতেই তিনি সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন: ‘আম যদি বেগমপসন্দ হতে পারে কবিতাও হতে পারে বেগমপসন্দ’ (পৃষ্ঠা ৭)। তবে সংকলনটি নিয়ে তার আবেগের দেখা মিলবে ঐ ভূমিকার তৃতীয় অংশে (পৃষ্ঠা ৮):

এখনকার অনেক তরুণ কবি আমাকে আমলা কবির কাতারে ফেলে দিতে চায়। সুতরাং নিজের কবিতাকে বৃহত্তর পাঠক সমাজের দরোজায় হাজির করার একটি জ্বালাময়ী ও অন্তর্গত তাগিদ আমি অনুভব করছি। তারই অংশ হচ্ছে এই সংকলন।

মানে ‘নারীদের পছন্দকৃত আবু করিমের কবিতা’ একটা জ্বালাময়ী অন্তর্গত তাগিদের ফসল।

৩.
সংকলনটি উল্টাতে গিয়ে বুঝলাম চাকুরি আবু করিমের যেতে পারতো বহু আগেই। কিন্তু সব সরকার মনে হয় কবিতা পড়ে না। অথবা সব সরকারের সমর্থকরা বইমেলায় যায় না। আবু করিমের চাকুরি যাওয়ার নেপথ্যের কারণ হলো বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নিয়ে রূপকধর্মী একটা কবিতা লেখা। যে কবিতায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের মানহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবু করিম নিজে তা অস্বীকার করেছেন এবং নি:শর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপির সমর্থকরা যদি তার দিকে আঙুল তুলতেন তবে তিনি অস্বীকার করার উপায় পেতেন না। কারণ একটি কবিতায় কয়েকটি জায়গায় তিনি জিয়াকে সরাসরি খুনি বলেছেন। তার বিশ্বাসঘাতক নামের কবিতার কয়েকটি লাইন:

‘ফলে পেশাদার খুনি জেনারেল জিয়া
তাহেরকে হত্যা করার জন্য শেষমেষ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিনথেটিক ফাইবার আমদানি করেছিল’।

‘নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে
আবু তাহেরকে হত্যা করা ছাড়া
জিয়ার সামনে আর কোনো পথ ছিল না।
মানুষ কেনায় দক্ষ জিয়া
কোনো মূল্যেই আবু তাহেরকে কিনতে পারেনি’।

‘মানুষ নামধেয় কিছু বিশ্বাসঘাতক সেদিন
আবু তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর কাজে
খুনি জিয়াকে সহযোগিতা করেছিল’।

এই কবিতা লেখা হয়েছিল জানুয়ারি ১৯৮০তে। কিন্তু জিয়া সমর্থকদের রোষানলে তিনি পড়েননি। তবে আওয়ামী লীগের শেখানো রাস্তায় হাঁটতে পছন্দ করে বিএনপি। তারাও পরের দফায় ক্ষমতায় এসে কবিতা পড়তে শুরু করতে পারে। সে হিসেবে এই কবিতার জন্য দ্বিতীয়বার চাকুরি যেতে পারে আবু করিমের।

৪. একটি গল্প লেখার জন্য সরকারী কর্মকর্তা ও কবি রবীন্দ্র গোপ দীর্ঘদিন চাকুরিহীন ছিলেন খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে। কিন্তু সে তো গল্পের জন্য। কবিতার কারণে বিএনপি আমলে কোনো সরকারি কর্মকর্তার চাকুরি গেছে বলে মনে পড়ছে না। তবে মোদ্দা কথা হলো সরকার কবিতা পড়তে শুরু করলেও বিপদ আছে।

৫. আমার এই লেখার উদ্দেশ্য আবু করিমের কবিশক্তি বিচার ছিল না। তবু জিয়া সংক্রান্ত তার লাইনগুলো পড়তে গিয়ে মনে হলো অনেক পাঠকের কাছে এগুলোকে কবিতার চরণ মনে নাও হতে পারে। তাতে আবু করিমের কবিতার প্রতি তাদের একধরনের নাক সিঁটকানো মনোভাব জন্মাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে কবির একটা কবিতায় এর জবাব দেয়া আছে সেটা আমি তুলে দিলাম ভুল বুঝাবুঝি দূর করতে:

উদ্ধৃতি

এখন যদি কেউ ভাবেন আমি ছন্দ জানি না তাই
গল্প কবিতা করে দিতে চাই একাকার
তাদের অবগতির জন্য বলি
ছড়া লিখেই আমার কবিতায় হাতেখড়ি
এখনও ছন্দের ওপর ঘুরাতে পারি ছড়ি
তা ছাড়া আমি ছিলাম বাংলা অনার্সের বাঘা ছাত্র
ছন্দ সেখানে পাঠ্য
আমি যা লিখি সেটা নয় অলীক কুনাট্য।

(সীমানা: আবু করিম)

আশা করি এই অংশটুকু পড়ার পর পাঠকরা তার কবিতার শক্তি বুঝতে পারবেন।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যে কবিতার জন্য কবি করিম সাহেবের চাকুরি কবরস্থ হলো সেই কবিতাখানি পড়ত মন চাইছে।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

লিখে একজনের চাকুরি গেছে। আর আপনাকে পড়িয়ে আমি চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনায় কুড়াল মারি...এই আপনি চান?

নতুন এই কবিতা পড়তে বইমেলায় নজরুল ইসলামরে ফোন্দেন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

জিজ্ঞাসু এর ছবি

হো হো হো
আগের যেটা আমাদের পড়িয়েছেন তাতেও আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ slander আইনে যিনি অন্যের আপত্তিকর লেখা প্রকাশ করেন, বা অন্যকোন মাধ্যমে quote করেন তিনিও সমান অপরাধী বিবেচিত। এই পোস্টটা সরিয়ে দেয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন বা কবিতাটা পোস্ট থেকে বাদ দিলেও চলে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য আবু করিমের কবিশক্তি বিচার ছিল না। তবু জিয়া সংক্রান্ত তার লাইনগুলো পড়তে গিয়ে মনে হলো অনেক পাঠকের কাছে এগুলোকে কবিতার চরণ মনে নাও হতে পারে। তাতে আবু করিমের কবিতার প্রতি তাদের একধরনের নাক সিঁটকানো মনোভাব জন্মাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে কবির একটা কবিতায় এর জবাব দেয়া আছে সেটা আমি তুলে দিলাম ভুল বুঝাবুঝি দূর করতে:

এখন যদি কেউ ভাবেন আমি ছন্দ জানি না তাই
গল্প কবিতা করে দিতে চাই একাকার
তাদের অবগতির জন্য বলি
ছড়া লিখেই আমার কবিতায় হাতেখড়ি
এখনও ছন্দের ওপর ঘুরাতে পারি ছড়ি
তা ছাড়া আমি ছিলাম বাংলা অনার্সের বাঘা ছাত্র
ছন্দ সেখানে পাঠ্য
আমি যা লিখি সেটা নয় অলীক কুনাট্য।

(সীমানা: আবু করিম)

আশা করি এই অংশটুকু পড়ার পর পাঠকরা তার কবিতার শক্তি বুঝতে পারবেন।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আশা করি এই অংশটুকু পড়ার পর পাঠকরা তার কবিতার শক্তি বুঝতে পারবেন।
তা আর বুঝতে বাকি? কবিতো জোড় করেই বুঝিয়ে দিলেন চোখ টিপি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

কবিতার ক্ষেত্রে এরকম জোর খাটানো কি ঠিক?

চাকুরির ভয়ে আমি কিন্তু মুখ খুলছি না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আহহারে !! চোখ টিপি আপনি তো বেচারার শেষ আশাটাতেও পেরেক ঠুকে দিলেন ... ভেবেছিলাম আন্দোলনের জন্য হলেও বিএনপিওয়ালারা হয়তো আবু করিমের জন্য অশ্রুবিসর্জন দেবেন ... এমনকি আবার বিএনপি ক্ষমতায় এলে হয়তো তিনি ক্ষতিপূরণসহ সচিবের চাকুরী ফিরেও পাবেন, চাইকি মন্ত্রী-ফন্ত্রীও হয়ে যেতে পারতেন .... এখন তো সব আশা শেষ!!

সরকার ব্লগ পড়তে পারলে কি হতও, তাই ভাবছি!!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ফারুক হাসান এর ছবি

সরকার ব্লগ পড়তে পারলে কি হতও, তাই ভাবছি!!

*********************************
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী,
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আরে না আবু করিম মন্ত্রী না কবি হতে চান।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হিমু এর ছবি

রবীন্দ্র গোপ কি সেন্সর বোর্ডের প্রধান ছিলেন?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। সে হিসেবে সেন্সর বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান হতেই পারেন। চেয়ারম্যান হন তথ্য সচিব।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সবজান্তা এর ছবি

সেন্সর বোর্ডের প্রধান ছিলেন সম্ভবত অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, আর তাঁর পরের পোস্টেই ছিলেন, রবীন্দ্র গোপ।

সে'সময়কার পপুলার খবর হল, রবীন্দ্র গোপের কবিতার বই যথেষ্ট পরিমাণে না কিনলে, ছবির সেন্সর মিলে না দেঁতো হাসি


অলমিতি বিস্তারেণ

হিমু এর ছবি

আমি আরো শুনেছিলাম, সিনেমার প্রযোজকেরা চড়া মূল্যে তাঁর আঁকা পেইন্টিঙও কিনতেন হাসি । মঞ্চায় এমন বহুমুখী প্রতিভা হই, যার কদর সবাই নগদে করবে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার দুই কেজি প্রতিভা দরকার



অজ্ঞাতবাস

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আপনার তো প্রতিভা ব্লগের পাতায় পাতায় স্বীকৃত। বহুৎ কবিতা আছে। এখন নতুন কইরা দুইটা কবিতা লেখেন।
একটা নয়া রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে। উনি আনটাচড্ রয়ে গেছেন।
আরেকটা সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে। উনার অনেক ক্ষমতা।

ক্ষমতাবানদের চ্যালেঞ্জ করে লেখা কবিতাতেই বুঝা যায় কবির কত ক্ষমতা। এই ক্ষমতাময় কলম দেখলেই সবাই ভাববে আপনার অনেক প্রতিভা। কয়েক কেজি তো হবেই।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

রায়হান আবীর এর ছবি

উদ্ধৃতি

আশা করি এই অংশটুকু পড়ার পর পাঠকরা তার কবিতার শক্তি বুঝতে পারবেন।

তা আর বুঝতে বাকি? কবিতো জোড় করেই বুঝিয়ে দিলেন চোখ টিপি

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

=============================

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।