(যন্ত্রকে বশে আনুন, বস বানাবেন না)
মানুষ নিজের চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখে। ক্যামেরার দেখার চোখ আলাদা। ক্যামেরার মধ্যে নানা তেলেসমাতি বিষয় যুক্ত করা থাকে – যাতে সে মানুষের চোখের কাছাকাছি দেখতে পায়। কিন্তু এত কলকব্জার পরও ছবি তুলতে গেলে দেখা যায় নানা বিভ্রাট। অন্ধকার-অন্ধকার হয়ে যাওয়া, আলোয় সাদা হয়ে যাওয়া, দানা দানা কিংবা ঝাপসা ছবি - বাজে ছবির কি আর শেষ আছে?
যে রকম ছবি তুলবো বলে আমরা আশা করি ঠিক সেরকম ছবি তোলার জন্য বা সবসময় ঠিকঠাক ছবি তোলার দক্ষতা অর্জনের জন্য আমাদেরকে কিছু জরুরি ক্যামেরাবাজির তত্ত্ব আঙুলের ডগায় নিয়ে আসতে হবে।
ঠিকঠাক নিয়ম ও পদ্ধতি শিখে ফেললে আমরা পছন্দমত যেকোনো বিষয়ের ছবি ধরতো পারবো ক্যামেরায়। ক্যামেরাবাজির বিজ্ঞানের চোরাকাদায় আটকে গেলে কিন্তু সর্বনাশ। (এই চোরাকাদা কিরকম জিনিস তা চোখে দেখতে হলে উঁকি দিন এসএম মাহবুব মুর্শেদের ব্লগে)। সৃজনশীলতা যদি না থাকে তবে টেকনিক্যালি ভালো ছবিকে মনে হবে প্রাণহীন। সুতরাং আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো, সেটিংস বদলে কী ফল আসে তা দেখবো এবং মাঝে মধ্যে কিছু নিয়ম ভাঙবো। সব মজা এই ভাঙাভাঙিতে।
যদি সব টেকনিক্যাল কল-কব্জা নাও চেনা থাকে তবু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভয়ের কিছু নাই। ক্যামেরা কামড়ায় না। যেমন আমরা যারা কখনও রিফ্লেক্টর ব্যবহার করি নাই, তারা সেটা ব্যবহার শুরু করতে পারি। ভুল থেকে শেখাটাই হচ্ছে সত্যিকারের শেখা। তাছাড়া ডিজিটালে বাজে ছবি উঠলেই বা সমস্যা কি? প্রিন্টিং খরচের ঝামেলা তো নাই।
কারিগরী বিষয়গুলোকে বশে আনতে হবে কিন্তু যন্ত্রকে বস মানা যাবে না। ছবি তোলার আনন্দে ছবি তুলে গেলে কিছু চমৎকার ছবি ধরা পড়বেই।
হাতে মাত্র তিনটা কল-কব্জা
ক্যামেরা হাতে নিয়ে অটো থেকে ম্যানুয়াল মোডে এসেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নাই। ছবি তোলার জন্য চিনতে হবে মাত্র তিনটা কল-কব্জা – শাটার স্পিড, এ্যাপারচার এবং আইএসও। (এই লেখা কিন্তু ডিজিটালের জন্য, সুতরাং নীচের কথাগুলো ফিল্ম ক্যামেরার ক্ষেত্রে হুবহু প্রযোজ্য হবে না বিশেষত: আইএসও-র ব্যাপারটা)।
ছবি কীভাবে তুলে সেই মূল বিষয়টা আমরা জানি। অন্ধকার একটা ঘরের ভেতর দিয়ে ছোট্ট একটা আলোর রেখা ঢুকলে আলোর ওই মাথায় থাকা জিনিসের ছবি উল্টা হয়ে ঘরের ভেতর এসে পড়ে। আলোর এই কারসাজিকে বশ করেই ক্যামেরা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু ছবি তোলার জন্য সারাক্ষণ আলো আসতে দিলে হবে না। একে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নতুবা ফিল্ম বা ডিজিটাল সেন্সর যাবে ক্ষেপে – ছবি যাবে গুলিয়ে। আলোর এই নিয়ন্ত্রণের একটা কব্জা হলো শাটার স্পিড।
শাটার স্পিড
শাটার মানে পর্দা। এটা কত দ্রুত পড়বে তা ঠিক করে দেয়াটাই হচ্ছে শাটার স্পিডের কাজ। বেশি আলো পড়লে ছবি আলোয় যাবে ধাঁধিয়ে।রবীন্দ্রনাথের মত কাঁদবে আলো আমার আলো তোমার বলে। কম পড়লেও কাঁদবে এই অন্ধকার দূর করো বলে। সুতরাং আলোর জোর কেমন, ক্যামেরায় আলো ঢোকার ছিদ্রটা কত বড় এসবের ওপর নির্ভর করে পর্দা পড়ার গতি বদলাবে।
সাধারণত: এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যেই কারবার হয়ে যায়। আবার আপনি চাইলে ঘন্টাখানেক ধরে নেকাব খুলে রাখতে পারেন।
সুতরাং নিয়মটা জলের মত সহজ; বেশি আলো চাইলে বেশিক্ষণ নেকাব খুলে রাখতে হবে। কিন্তু ক্যামেরা যদি হাতে ধরা থাকে তাহলে হাত কাঁপার কারণে ছবি যাবে কেঁপে। সুতরাং নেকাব বেশিক্ষণ খুলে রাখতে চাইলে ক্যামেরা বসাতে হবে তিনপায়ার (ট্রাইপড) ওপর। ছবিকে কাঁপাকাঁপি থেকে রক্ষা করতে হলে নেকাব খোলা আর বন্ধ করার গতি থাকবে হবে দ্রুত। আব্রু দ্রুত রক্ষা করাই ভালো। তবে সাধারণভাবে ১/১২৫ সেকেন্ডে করতে পারলে ভালো হয়।
শাটার স্পিডের নানা মাপকে বলা হয় স্টপ। অনেকটা বাসস্টপের মত – যে যে স্টপে ক্যামেরার চাকতি থামে তাকে স্টপ বলে। তো শাটার স্পিড হতে পারে ১ সেকেন্ড, ১/২ সেকেন্ড, ১/৪, ১/৮, ১/১৫, ১/৩০, ১/৬০, ১/১২৫, ১/২৫০, ১/৫০০ ইত্যাদি।
শাটার স্পিড ১/৩০ এর কম হলেই ক্যামেরা কাঁপে। তখন তিনপায়ার দরকার হয়।
(এখান থেকে কোর্স দৌড়াতে থাকবে। সুতরাং সিটবেল্ট বেঁধে বসেন। প্রতিদিন উঁকি দিন সচলে। ছবি তুলতে থাকুন জোরে-শোরে। ফ্লিকারে হানা দিন ভালো ছবির কম্পোজিশন দেখতে, রং বুঝতে, আলো চিনতে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা সব আলোচনা ছেড়ে দিয়ে শুধু ছবি তোলায় থাকবো। সুতরাং প্রস্তুত হয়ে নিন)।
এখন নীচের ভিডিওটা দেখুন। তারপর ক্যামেরা নিয়ে চলুন বের হয়ে পড়ি।
মন্তব্য
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আগেই কইছিলাম আপনার রেফারেন্স ছাড়া আমরা সামনে আগাইতে পারবো না। আপনি সচলে ক্যামেরাবাজি বিষয়ে ব্লগিংয়ে পাইওনিয়ারদের একজন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
সেকেন্ডের ৫ ভাগের ১ ভাগ পর্যন্ত ট্রাইপড ছাড়া ছবি তোলার চর্চা করছি ডিজিটাল ক্যামেরা হাতে পাবার পর থেকে। আমার হাত মোটামুটি স্টেডিই ছিলো, এখন দেখলাম বেশ ভালোই কাজ চালাতে পারি। এইচডিআর না করলে কিংবা নিজের ছবি নিজে না তুললে ট্রাইপড নিয়ে আর বেরোই না।
নিচের ছবিটা তেপায়া ছাড়া ১/৮ এ তোলা। সামান্য ব্লার আছে, খেয়াল করলে বোঝা যায়।
হিমুর হাত বলে কথা!!
যাক, সচলে ছুপা রুস্তমদের আপনি একজন।
নিজের তোলা একটা জুতসই ছবি বাছাই করেন। আমাকে মেইলে পাঠালে আরো ভালো হয়। তারপর সেই ছবির বিষয়ে আপনার মিনি সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। কীভাবে ছবি তুললেন, কী কারসাজি করলেন, মনে কী আশা ছিল, আর কী করতে পারলে আরো ভালো হতো ইত্যাদি।
সময় ৩ দিন। এর মধ্যে ছবি পাঠিয়ে দিন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনার দুই নম্বর সিরিজের কাজগুলো আমার এখনো সমাধা করা হয়নি যে...!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কোর্স এখান থেকে দৌড়াবে।
সমস্যা হচ্ছে গুগলের গ্রুপ মেইল কাজ করছে না। ব্লগ থেকে এ্যাড্রেস কাট-পেস্ট করায় ঘটনাটা ঘটে থাকতে পারে। তবে অনেকেই মেইলে যোগাযোগ করেছেন।
ফ্লিকারে সদস্যও হয়েছেন অনেকে।
গুগল কাজ না করায়, ফেইসবুকের আশ্রয় নিতে হবে।
তবে কাজগুলো দ্রুত শেষ করুন।
নতুন অনেক কাজ আসছে। একবার পিছিয়ে গেলে কিন্তু এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আমি ফ্লিকারের সদস্য হয়েছি কিন্তু গুগলের ব্যাপারটা..........আর হ্যাঁ অ্যাসাইনমেন্ট কতটুকু করতে পারলাম তা কি ভাবে জানব।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
গুগলে হচ্ছে না আপনি বরং ফেসবুকে আমাদের গ্রুপে সদস্য হোন।
এ্যাসাইনমেন্টের বিষয় নিয়ে ফ্লিকার, ফেসবুক বা সচলে আমরা আলোচনা করতে পারি।
ফ্লিকারকে আমরা রাখছি ছবি আপলোড ও তা নিয়ে আলোচনা করার সুবিধার জন্য।
ফেসবুক থেকে আমরা মেসেজ আদান প্রদান করবো।
সচলে মূল লেখা, পোস্ট ও লিংকগুলো থাকবে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আমি ক্যামেরা দিয়ে যতটা না ভাল ছবি তুলি তার তুলনায় শতগুন ভালো পোস্টপ্রসেসিং করতে পারি।
আপনাকে আমাদের আরো বেশি দরকার।
আপনি আমাদেরকে পিপি শেখাবেন।
শুভেচ্ছা। চলে আসুন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ছবি তোলায় ভয়ানক রকমের অজ্ঞ আমি। দেখি কিছু শেখা যায় কি না! ধন্যবাদ!
*********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
চলুন দল বেঁধে ছবি তুলি, কথা বলি।
এর মাঝেই শেখা হয়ে যাবে। অনেকটা শিক্ষা সফর - আন্তর্জালিক।
ফ্লিকারে কিন্তু আমার নামটা তীরন্দাজ....
স্বাগতম।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
http://www.facebook.com/groups/edit.php?officers&gid=96811647626#/group.php?gid=96811647626
ফেসবুকে আমাদের গ্রুপের লিংক এটা।
ওখানে যোগ দিলে সবাইকে একসাথে মেসেজ পাঠানো সহজ হবে।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নতুন মন্তব্য করুন