কারসাজির ক্যামেরাবাজি-৭
এই জায়গাতে এসে অনেক দামী লেন্স আর বাহারি ক্যামেরার কাঁধে কাঁধ ঘেষে দাঁড়াতে পারে সাধারণ একটি কম্প্যাক্ট ক্যামেরা। কারণ দৃষ্টি কাড়ে এমন আলাদা ছবি মানে তিনটি বিষয়:
ক. ভালো বিষয়বস্তু,
খ. ভালো আলোছায়ার ব্যবহার, এবং
গ. ভালো কম্পোজিশন।
সৃজনশীলতা যদিও ব্যাখ্যার অতীত একটা বিষয় তবু চিত্রকর বা ক্যামেরাবাজরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কীভাবে ফ্রেমে তাদের বিষয়বস্তুকে সাজান সেসব গোপন রেসিপি কৌতুহলীরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করেছে। অনেকে এগুলোকে কম্পোজিশনের রুল বা নিয়ম বলে মানেন। তবে শিল্পের ক্ষেত্রে এরকম জবরদস্তি শুধুমাত্র পাঠশালার শিক্ষকরাই করতে পারেন। আমরা এগুলোকে দেখবো বিখ্যাত শিল্পী বা ক্যামেরাবাজদের কারসাজির তরিকা হিসেবে। আরেকটা কথা, কোনো একটা নির্দিষ্ট ছবিতে একের বেশি নিয়ম প্রয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে আবার এমনও হতে পারে ছবিটি ভালো লাগছে কোনো একটা বহুল ব্যবহৃত নিয়মকে ভেঙেছে বলে।
. ১. আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু (সেন্টার অব ইন্টারেস্ট): ছবির মূল ফোকাস একটা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু হওয়া দরকার। ছবি তোলার আগেই ভাবতে হবে ছবির কেন্দ্রবিন্দুটা কী?
. ২. সহজিয়া: ছবির কম্পোজিশন ভিড়মুক্ত রাখতে হবে। ছবির ফ্রেমে যত কম জিনিস থাকবে ততই বেশি মনোযোগ পাবে ছবিটি।
(কাজটা খুব কঠিন। ভিড়বাট্টার দেশে এমন সুযোগ কই? ক্যামেরাটা নীচে নামিয়ে আকাশটা একটু বেশি ধরলে অনেক খাটো জিনিস বাদ পড়ে যাবে। ফটো প্রসেসিং-এ গিয়ে বেয়াদব জঞ্জালগুলো মুছে দিতে পারেন।খুব একটা ভালো ছবি নয় তবু এক বরফপড়া দিনে আমি তুলেছিলাম দুটো মুখোমুখি চেয়ার। আরেকবার বরফ পড়লে একই ছবি শক্তিশালী ক্যামেরা দিয়ে তুলে দেখা যাবে কেমন দাঁড়ায়।)
. ৩. মাঝমাঠ থেকে সরিয়ে: ছবির মূল বিষয়বস্তু ফ্রেমের একদম মাঝে থাকবে না। রুল অব থার্ডস কড়াকড়ি অনুসরণ করাটাই ভালো (খেয়াল রাখতে হবে নবীনরা স্বাভাবিকভাবে বিষয়বস্তু মাঝে রেখেই ক্যামেরা ক্লিক করে। সুতরাং অন্য কোনোভাবে ভালো ফ্রেমিং করা গেলে মধ্যমাঠে বল না রাখাই সুবিধার)। (সাধারণ একটা ছবি দেই উদাহরণ হিসেবে। একটু জলের দিকে নেমে গিয়ে দম্পতিটিকে আমি মোটামুটি রুলস অব থার্ডের আওতায় ফেলে দিয়েছি।)
. ৪. দিগন্ত রেখা: দিগন্ত রেখা বা অন্য কোনো শক্তিশালী আনুভূমিক বা উলম্ব রেখা ছবির মাঝে রাখা যাবে না। খেয়াল করতে হবে রেখাগুলো কোনো একদিকে যেন বেঁকে না থাকে।
. ৮. ফ্রেমিং: ছবির বিষয়বস্তুর কাছে গিয়ে ডিটেইলস্ ধরার আশায় ফ্রেম করুন অথবা জুম ইন করে ফ্রেমটাকে আঁটোসাঁটো করুন। ফ্রেমের মধ্যে পরিবেশের অন্যরকম ফ্রেম যোগ করে ছবির ফ্রেমিং-এ ভিন্ন মাত্রাও আনা যায়। (ফ্রেমের ভেতরে ফ্রেম এটাও একটা ছবির বিষয়বস্তু হতে পারে। এই ছবিটা স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল গ্যালারিতে তোলা। ভিন্ন একটা মাত্রার মজা আছে ছবিটাতে্)
কম্পোজিশনের এসব উপায়গুলো ব্যবহার করে দৃষ্টিনন্দন ছবি তোলার জন্য দামী বা ইয়াব্বড় লেন্সসহ ক্যামেরা দরকার নাই। যেকোনো কম্প্যাক্ট ক্যামেরায় ছবি তোলার সময় এসব নিয়ম প্রয়োগ করা যায়। তাতে হয়তো দামী লেন্সের শার্পনেস্, ডেপথ্ অব ফিল্ডের কারসাজি, ম্যাক্রো বা টেলিলেন্সের কারিগরী দক্ষতা পাওয়া যাবে না কিন্তু ভালোলাগার ছবি তোলার মত যথেষ্ট মশলা আছে এসব নিয়মে। যা চর্চা করলে আমরা কম্প্যাক্ট ক্যামেরায়ও মনকাড়া ছবি তুলতে পারবো।
(বি:দ্র: উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত আমার ছবিগুলো ৩.২ মেগাপিক্সেলের কম্প্যাক্ট ক্যামেরায় তোলা।খুব ভালো ছবি হয়তো সেগুলো হয়নি কিন্তু এই পর্যায়ের দক্ষতা অর্জনের পর এসএলআর কেনার একটা ঝুঁকি নেয়াই যায়, কি বলেন!)
এতদূর পড়তে পড়তে যারা ভুলে গেছেন ঠিক কী কী নিয়মের কথা আমরা আলোচনা করছিলাম তাদের জন্য একটা ভিডিও থাকলো নীচে।
[b]ঘর গোছগাছ
সবাই নিশ্চয়ই ছবি তুলছেন মেমরি কার্ড ভরে। আমার মত আপনাদেরও হয়তো হার্ডড্রাইভ ভরে গেছে ছবিতে। এখন বেছে বেছে ছবি জমা দেন ফ্লিকারে। অন্যের ছবির কম্পোজিশন, ফোকাস, এ্যাংগেল নিয়ে আলোচনা করুন। সৃষ্টিশীলতা ও কারিগরী উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে শুরু করুন নিজের ও অন্যের ছবিকে। শুভ ক্যামেরাবাজি।
মন্তব্য
(যে ছবিগুলোতে ক্যামেরাবাজের নাম দেয়া হয়নি সেগুলো আমার তোলা)।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
বস, চাইলে [center] আর [/center] ট্যাগ ব্যবহার করে ছবিগুলিকে মাঝে বসাতে পারেন। সব বাম অ্যালাইনমেন্টে দেখতে কেমন যেন লাগছে।
ভালো পরামর্শ দিছেন হিমু। ফ্লিকারের জিনিস বসানোর সময় এ্যালাইনমেন্ট ঠিক করা যায় না।
তবে পুরা পোস্টটা দেখে হতাশ হইলাম। কোথাকার জিনিস কোথায় গিয়া জুড়ছে। সচলায়তনে ফরম্যাটিং জিনিসটা শিক্ষা হইলো না।
ওয়ার্ডে ফরম্যাটিং করে যদি হুবহু পেস্ট করে দেয়া যেত।
আমার বিশেষভাবে পছন্দ আর ইচ্ছা যদি অভিজিৎ-এর মত ফরম্যাটিং করতে পারতাম। কিন্তু তা আর হইলো না।
একটা সহজ উপায় বাইর করেন না। এইখানে কম্পিউটারে কত কামেল লোক। ফরম্যাটিং-টা সহজ করে দিলে এরকম পোস্টগুলো দৃষ্টিনন্দন করে দেয়া যেত।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
কিচ্ছু না-জেনে এতদিন শুধু শাটারই টিপে গেছি।
যেজন্য এটুকু জেনেই কেমন শিক্ষিত-শিক্ষিত লাগছে!
কত অজানা রে!
..................................................................................
সত্যকথন-স্বভাব
যুদ্ধঘোষণার মতো একটা ব্যাপার প্রায় কথাসভ্যতায়
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
নেন একটা মোমবাতি জালাইলাম।দূর হোক অন্ধকার।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
এখানে একটা কথা মনে পড়ছে। উচু জায়গা থেকে কোন এঙ্গেলে ছবি তুললে ছবিতে উচ্চতার তারতম্যটা বোঝা যাবে। আমি বারো তলার ছাদের উপর থেকে ছবি তুলেও দেখেছি যে সমতল মনে হয়। উচ্চতার ব্যাপারটা বোঝা যায় না। সমস্যা আমার হাতের টিপের কিনা বুঝতে চাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
রেফারেন্স পয়েন্ট রাখেন ফোরগ্রাউন্ডে। তাহলে তুলনা করে বুঝা যাবে।
লেকের ওপারে দুর্গের ছবিটা দেখুন। কত উপরে দুর্গ তা বুঝা যাচ্ছে কিছুটা সামনে বেঞ্চে বসে থাকা দম্পতির জন্য।
উপর থেকে তুললে আপনি যদি সেরকম একটা রেফারেন্স পয়েন্ট রাখেন তবে উচ্চতা বুঝা যাবে। মানে দুই মাত্রায় যতটুকু বুঝা সম্ভব।ছবি অনেক বড় হলে আরো ভালো বুঝা যাবে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নীচ থেকে উপরে ছবিতে ব্যাপারটা বোঝানো সম্ভব। কিন্তু উপর থেকে তোলা ছবিতে কঠিন হয়ে দাড়ায়। উপর থেকে তোলা ছবির ক্ষেত্রেও কি বিপরীত কাজটাই করতে হবে?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নীড়সন্ধানী আপনি একটা ছবি দেন তাহলে বুঝা যাবে কেন আপনার ছবি ফ্ল্যাট দেখাচ্ছে বা উপর থেকে তোলা বুঝা যাচ্ছে না।
তবে একদম ৯০ ডিগ্রি সোজা করে তুললে ফ্ল্যাট লাগার কথা। পারস্পেকটিভ বুঝা না গেলে তো সমতল মনে হতেই পারে। আগে ছবি আপলোড করুন।
আমার তোলা ছবি দিলাম। উপর থেকে। দেখুন কেন বুঝা যাচ্ছে যে এটা উপর থেকে:
অথবা এই ছবিটা দেখে কি বুঝা যাচ্ছে যে আমরা উপর থেকে নীচের দিকে তাকাচ্ছি:
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনার সবাই ভালো করে ছবি তোলা শিখুন আর আমি পোজ দেয়া শিখি। তারপর আমি খাড়ামু আর আপনারা আমার ছবি তুলবেন।
বিগ সি, আলোক উৎসের উপস্থিতি নিয়ে একটা পর্ব ছাড়েন। মানে বলতে চাইছি আলোক উৎসকে বিভিন্ন জায়গায় রেখে [সামনে, পেছনে, কোনাকুনি] কিভাবে পছন্দমত ইফেক্ট তৈরি করা যাবে তা নিয়ে লিখুন। ওটা জানার খুব ইচ্ছা।
খালি আমাকে পর্বের অনুরোধ করলে চলবে?
পোস্টপ্রসেসিং বা ইমেজ প্রসেসিং-এর ওপর আপনি একটা লেখা দেন। অন্তত: ফ্লিকার বা পিকনিক ব্যবহারের নিয়মকানুন বাতলে।
একটু জনসেবা করেন।
কত ফাঁকি দেবেন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
দারুন !
-----------------------
--------------------------------------------------------
আপনে বস মানুষ...
আমি কিন্তু জানি যে আপনি অনেক ভালো ছবি তোলেন। যুৎসই ক্যামেরাও আপনার আছে।
আপনার ভালো ছবি তোলার কলা-কৌশল সম্পর্কে দুয়েকটা লেখা দেন। জ্ঞান যত বিতরণ করবেন তত বাড়বে, ভয় নাই।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
এই সিরিজের এটাই সেরা লেখা। সবচেয়ে প্রয়োজনীয়ও। অ্যাপারচার, শাটার স্পিড, ইত্যাদি শেখা জরুরী হলেও অনেকের কাছেই অতটা প্রয়োজনীয় না। স্রেফ একটু চিন্তা করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিলে একটা সামান্য ক্যামেরা দিয়েই অনন্য সব ছবি তোলা যায়। কম্পোজিশনের এই বোধটুকু সবার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছবিগুলোর গড় মান অনেক বেড়ে যাবে।
এক্ষেত্রে রণ দা'র ছবিগুলোর উদাহরন দেবো আমি। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েই কী অপূর্ব সব ছবি তোলেন রণ দা! প্রতিটা ছবি যেন কথা বলে। কম্পোজিশন এবং সাবজেক্ট বিচারে ছবিগুলো খুবই সুন্দর। রণ দা'কে কেউ অধমের বার্তা পৌঁছে দিয়েন। তাঁর ছবিগুলো এই পোস্টে উদাহরণ হিসেবে চাই।
এনকিদু ব্যাটার কাছে আমার কার্ড রিডার, সেই অসহায়ত্বের কালে আমি ছবি আপ্লোড করতে পারতেছি না। মিজাজ খ্রাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তাড়াতাড়ি আপলোডান। সেইসাথে ছবি তোলার বর্ণনা দিয়েন যাতে অন্যরা শিখতারে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নতুন মন্তব্য করুন