‘শাহরিক ভূমিচিত্র বা নগরছবি: ভূমিকা’
আরবান ল্যান্ডস্কেপের আরেকটা সহজ পরিভাষা হতে পারে নগরছবি। বলতে মুখে আটকায় না।
নাগরিকরা নগরেই থাকেন। সুতরাং নাগরিকরা ক্যামেরা খুললেই নগরছবি: ইট-সিমেন্টের কাব্য – দালানবাড়ির জ্যামিতিক সুষমা; বিরাট বিরাট সব কাঁচে মেঘের প্রতিফলন; ব্যতিব্যস্ত মানুষদের ছুটে চলার শহরে মানুষের তৈরি সাজানো গোছানো রাস্তাঘাট; উড়ালপথ;সেতু,বাহারি রংয়ের বাতি,নকশাকরা পায়ে হাঁটার পথ,সড়কদ্বীপ,কত আয়োজন।এটা দিয়েই শুরু হোক ক্যামেরাবাজি।
আমাদের লক্ষ্য: দালানবাড়ির বিন্যাস, রেখা, আকৃতি, রং ইত্যাদিকে যথাযথভাবে ক্যামেরাবন্দী করে শহরের ছবি তুলে দেখানো।
আমাদের উদ্দেশ্য: ক্যামেরার মূল তিন হাতিয়ার এ্যাপারচার, শাটার স্পিড ও আইএসওকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা।
দৃশ্যের গভীরতা
শহরের ছবিতে আমরা শহরটাকে যতবেশি সম্ভব দেখতে চাই। সুতরাং দৃশ্যের বা জমিনের গভীরতাকে (ডেপথ্ অব ফিল্ড) নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব জরুরি। সাধারণত: এরকম ছবিতে সবচে বেশি গভীরতা পাওয়ার চেষ্টা করা হয়, যাতে ফ্রেমের এমাথা থেকে ওমাথা সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়। এজন্য দরকার সঠিক ফোকাস, যথাযথ এ্যাপারচার ঠিক করা এবং আইএসওকে কম রাখা। আইএসও সবচে কম রাখতে গিয়ে ক্যামেরা যাতে কেঁপে না যায় তাও দেখতে হবে।
প্রথমে স্থান নির্বাচন ও কম্পোজিশন
ছবির বিষয়বস্তুটাই মূল। কিসের ছবি তুলবেন – আগে তা ঠিক করুন। উঁচু ভবনের বাইরের দিকটা? সিঁড়ির ধাপগুলো? এঁকেবেঁকে যাওয়া রাস্তায় চলন্ত গাড়ির সারি? বিষয়বস্তুর আকার, আকৃতি, রং ইত্যাদি লক্ষ্য করে একটা আকর্ষণীয় কম্পোজিশন বের করুন।
একটা দৃষ্টিনন্দন কম্পোজিশনের কিছু সূত্র দেয়া আছে আগের পোস্টে।
তবে কম্পোজিশনই যথেষ্ট নয়। কম্পোজিশনটা বাঙ্ময় হয়ে ওঠে দেখবার ভঙ্গির জন্য – একটা শটের দৃষ্টিকোণ অর্থাৎ ক্যামেরার কৌণিক অবস্থানের জন্য।
একই বিষয়ের দুটো ছবির মধ্যে দুটোরই কম্পোজিশন যদি ঠিক থাকে তবে দৃষ্টি কাড়বে সেই ছবিটাই যার কৌণিক ভঙ্গিটা শক্তিশালী ও বিষয়ানুগ। হাঁটু ভেঙে নীচু হোন অথবা মই চড়ে উঁচু থেকে তাকান – আপনি হয়তো বিষয়টাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করতে পারবেন।
ক্যামেরার তুকতাক
ধরে নিচ্ছি শহরের দালান-কোঠা বা স্থাপত্য সৌন্দর্যের ছবি তুলছি আমরা এবং তা দিনের বেলাতেই। রাতের বেলার মামলা ভিন্নরকম।
শুটিং মোড:
আপনার ডিএসএলআরের এ্যাপারচার প্রায়োরিটি মোড বেছে নিন (নাইকন ক্যামেরার ক্ষেত্রে- এ)। এ্যাপারচার বেছে নিন এফ/১১ (উদ্দেশ্য দৃশ্যের গভীরতা বেশি পাওয়া)। এখন আপনার ক্যামেরা নিজেই ঠিক করে নেবে শাটার স্পিড। যদি শাটার স্পিড ১/৬০ সেকেন্ডের নীচে দেখায় তবে আপনার ক্যামেরায় কাঁপাকাঁপি থামানোর বোতাম (ভাইব্রেশন রিডাকশন) থাকলে তা চালু করে দিন। অথবা তিনপায়ার উপরে স্থির করে বসাতে পারেন ক্যামেরাটাকে।
এক্সপোজার:
যদি তেপায়া ছাড়া ক্যামেরা হাতে নিয়েই ছবি তুলতে চান তবে শাটার স্পিড যাতে ১/৬০ সেকেন্ডের নীচে না নামে সেজন্য আইএসও বাড়িয়ে নিতে পারেন। তবে আইএসও ১০০-তে থাকাই আদর্শ। তিনপায়া ব্যবহার করলে অবশ্য কম শাটার স্পিড কোনো সমস্যা না। যদি নীল আকাশকে নীল দেখাতে চান তবে কড়া রোদের দিনে ব্যবহার করতে পারেন পোলারাইজিং ফিল্টার।
মিটারিং:
শহরে ক্যামেরা খুললে ফ্রেমে যেহেতু নানারকম বিষয় ধরা পড়ে, দালানের আয়না, আকাশ, নানা মাত্রার আলোছায়া, সেজন্য সঠিক আলোর মিটারিংয়ের জন্য আদর্শ পছন্দ হলো ‘ইভালুয়েটিভ’ বা ম্যাট্রিক্স।
মিটারিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণার জন্য দেখতে পারেন এই ভিডিওটি:
ফোকাস পয়েন্ট:
যদি আপনি ফ্রেমের সামনা থেকে শুরু দূর পেছন পর্যন্ত সবকিছু স্পষ্ট চান তবে আপনাকে যথাযথ এ্যাপারচার ব্যবহার করতে হবে, যেমন এফ/১১, এফ/১৬ বা এফ/২২। এখন ফোকাস করবেন কোথায়? ফোকাস করতে হবে ফ্রেমের সামনা থেকে ১/৩ অংশে। ফোকাস পয়েন্ট বদলানো যায় সুতরাং ক্যামেরার ভিউপয়েন্টে দেখে নিন ফোকাসের এ্যাকটিভ পয়েন্ট আপনার ফ্রেমের তিনভাগের নীচের ভাগে আছে কিনা।
ব্যস… তুলতে থাকুন নগরছবি:
শুটিং মোড, এ্যাপারচার, মিটারিং আর ফোকাস পয়েন্ট ঠিক করে এখন একেবারে তৈরি আপনি। এখন বিষয়বস্তু খুঁজে বের করুন। আর ছবি তুলতে থাকুন। কম্পোজিশন ঠিক রাখুন, দৃষ্টিকোণে অভিনব্ত্ব এনে দেখুন ছবিকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় কিনা।চলতে থাকুক ক্যামেরাবাজি!
চর্চা-১:নগরছবি
এই পর্বে উদ্দেশ্য হলো শাটার স্পিড নিয়ন্ত্রণ করে ছবির সৃজনশীলতা কীভাবে বাড়ানো যায় তা পরীক্ষা করে দেখা। ক্যামেরার শাটার যদি বেশিক্ষণ খুলে রাখা হয় তাহলে ছবি একটু ঝাপসা দেখাবে। যদি ১/৬ সেকেন্ড খোলা রেখে মানুষের হাঁটাহাঁটির ছবি তোলা হয় তবে মানুষজনকে ঝাপসা দেখাবে। যদি পুরা ১ সেকেন্ড খুলে রাখা হয় তবে মানুষকে আর চেনা যাবে না।
আমরা কম্পোজিশন, দৃষ্টিকোণ, এবং শাটার স্পিড নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। এসব বিষয়কে এখন আমরা ছবি তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে চাই এবং দৃশ্যের মধ্যে জনমানুষকে সৃজনশীলভাবে সংযুক্ত করতে চাই।
কী করতে হবে?
আপনার পছন্দসই একটা স্থান নির্বাচন করুন। স্থির কোনো বিষয়বস্তু যেমন মুর্তি,দেয়াল বা দালানসহ স্থান হতে হবে। ফ্রেম ঠিক করুন এবং স্থির বিষয়বস্তুর ওপর ফোকাস করুন। ক্যামেরা ও স্থির বস্তুর মাঝে যথেষ্ট জায়গা ছেড়ে দিন যাতে এখান দিয়ে একজন মানুষ (মডেল) হেঁটে যেতে পারেন। এখন যখন আপনার মডেল হেঁটে যাচ্ছেন তখন বিভিন্ন শাটার স্পিডে ছবি তুলে দেখেন যে কোনটা আপনার কাছে গ্রহণীয় মনে হয়। সাধারণ অবস্থায় আপনি আইএসও ২০০ ব্যবহার করে ১/১৫ সেকেন্ড থেকে ১/২০০ সেকেন্ড স্পিডে ছবিটা তুলতে পারবেন।
প্র্যাকটিক্যাল ফটোগ্রাফির সৌজন্যে বাড়ির কাজের জন্য এই ভিডিওটি দেখুন এইখানে:
আপনার নিজের কাছে উত্তীর্ণ ছবি নীচের ফ্লিকারের লিংকে আপলোড করে দিন। কোনো অজুহাতের দরকার নাই।
ছবি (শুধু কোর্সের চাহিদামাফিক তোলা ছবি) জমা দিতে হবে ফ্লিকারে: http://www.flickr.com/groups/camerabaji_09
যাবতীয় খোশ-গল্প, নিজস্ব অভাব-অভিযোগ, একান্ত যোগাযোগ করার জন্য রয়েছে ফেসবুক গ্রুপ…
http://www.facebook.com/?ref=home#!/group.php?gid=96811647626&ref=ts
মন্তব্য
আমি ক্যামেরা কিন্ছি। আইতাছি ফুল স্পীডে খাড়ান।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দেরি করলেই সমস্যা। এই ছয়মাসে আমরা কিন্তু এনথুসিয়াস্ট ক্যামেরাবাজ থেকে সেমি-প্রো হয়ে যাবো। হা..হা..হা..
চর্চাগুলো কিন্তু মন দিয়ে করতে হবে।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
চর্চা-১ এর জন্য আমি বেশ কিছু ছবি তুলেছি বিভিন্ন স্থানে। ফ্লিকারে আপলোড করবো। এখানে উদাহরণ হিসেবে একটা:
গতিশীল মানুষ
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ধন্যবাদ...কয়দিনের ভিতরেই ছবি জমা দিব।
ভাল থাকবেন।
- আমার মোবাইলের ক্যামেরাটাও সন্দেহজনকভাবে ঠিক হয়ে গেছে। সুতরাং বলা যায় না, আমিও চলে আসতে পারি দৌঁড়ে শামিল হতে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মোবাইল পূবাইলের দিন গত। এসএমথ্রির কাছে কামান দেখছেন। ঐরকম কামান নিয়া আসেন। তাইলে হইতে পারে। নাইলে নাই।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
এহ্হেরে এমন পচাইলেন আমারে!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দারুন লাগলো।
--------------------------------------------------------
--------------------------------------------------------
নতুন ক্যামেরাবাজদের জন্যে খুবই প্রয়োজনীয় পোস্ট।
আপনার শেখানোর স্টাইলটা সুন্দর।
ধন্যবাদ।
মাঝে মাঝে টিপস্ দেবেন।
তাছাড়া এখানে বা ফ্লিকারে ছবির লিংক দিয়ে অংশগ্রহণ করলে ভালো হয়। যেমন মুস্তাফিজ ভাই করছেন।
ব্লগের মাধ্যমে কোনো একটা বিষয়ের দক্ষতা বাড়ানোর কোর্স কতটা সফল করে তোলা যেতে পারে তার নিরীক্ষাও এটা।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ভাইব্রেশন রিডাকশন সবসময় চালু রাখলে কী কোনো সমস্যা হবে? মানে ফাস্ট শাটার স্পিডেও যদি চালু থাকে তাহলে প্রবলেম ?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ব্যাটারী খাবে কিছুটা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ট্রাইপডে যদি ক্যামেরা থাকে আর ভাইব্রেশন রিডাকশন চালু থাকে তাহলে ছবি ১০০% স্পষ্ট হবে না। এটুকু নিশ্চিত। কারণ এটা চালু থাকলে ক্যামেরা ধরে নেয় ক্যামেরা কাঁপছে এবং সে ঐ কাঁপাকাঁপি সংশোধন করে।
প্রফেশনাল যেসব সচল আছেন তারা নিশ্চিত করতে পারবেন বিষয়টা।
এর সাথে আমার একটা বাড়তি ধারণা যে কাঁপাকাঁপির ব্যাপার না থাকলে এটা অন না করাই উচিত। কিছু একটা অটো কারেকশনের চেষ্টা সে করতেই পারে।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আলোচনা শুরু করেছি আসেন সবাই
...........................
Every Picture Tells a Story
কৃতজ্ঞতা মুস্তাফিজ ভাই, চমত্কার অংশগ্রহণ ও উদ্যোগের জন্য।
আড্ডাটা অনলাইনে হলে আলোচনায় অংশ নিয়ে আমরা সবাই শিখতে পারবো আশা করি।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ব্যাকবেঞ্চে বসলাম
আরে ওতো পেছনে কেউ বসে। আগায়া আসেন। ঝাঁপায়া পড়েন। যার যা কিছু আছে... ক্যামেরাবাজির দফারফা করে ছাড়বো না আমরা...চলেন...
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আমার ক্যামেরা নাই। বউয়ের একটা কমপ্যাক্ট ক্যামেরা আছে। ওইটা মাঝে মাঝে ধরতে দেয় আমারে।
তবে আমার ফটোশপ আছে।
ফটোশপের একটা সহজ ৩/৪ পাতার গাইড বই লেখেন।
ইমেজ এডিটিং-এর উপর কয়েকটা লেখা দেন। জ্ঞান বিতরণ করলে বাড়ে। এত আগলায়ে রাইখা কী লাভ?
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ফটো এডিটিংয়ের উপরও একটা সিরিজ থাকা প্রয়োজন। অনেকসময় ভালো ছবিও কারিকুরি করতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন