ভূমিকা
প্রতিটি নগরীরর বিখ্যাত ভবন বা দৃশ্যগুলোর হাজার হাজার ভালো ছবি তোলা হয়ে গেছে।এইসব অতি পরিচিত বিষয়বস্তুর নতুন করে দৃষ্টিকাড়া ছবি তোলা বেশ কঠিন।কতটা কঠিন তা পড়ুন মুস্তাফিজ ভাইয়ের এই আলোচনায়।
স্থায়ী কোনো কাঠামোর ছবি তোলার প্রথম অসুবিধা হচ্ছে কম্পোজিশনের সুবিধামত ভবন বা স্থাপত্যকে সরানো যায় না। দিনের ঠিক সময়ে হাজির না হলে প্রাকৃতিক আলোটাও ক্যামেরাবাজের পক্ষে থাকে না।সুতরাং ভরসা হচ্ছে দেখার ভঙ্গি এবং ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ। এ দিয়েই বাজিমাত করতে হবে।(এইচডিআর, ছদ্ম এইচডিআর,প্যানোরামা, ভেট্টোরামা ইত্যাদি আরো নানা কায়দায় ক্যামেরাবাজরা তাদের ছবিকে অনন্য করে তোলার চেষ্টা করেন – আশা করি এসবও আমরা শিখবো একদিন!)
প্রফেশনাল ক্যামেরাবাজরা ভবন বা স্থাপত্যের ছবি তুলতে ব্যবহার করেন ওয়াইড এ্যাংগেল লেন্স। তাতে সম্পূর্ণ ভবনটাকে সহজে ফ্রেমে ধরা যায়। তবে বেশিরভাগ এরকম ভবন এমনভাবে বানানো হয় যাতে সামনে বেশ খানিকটা জায়গা থাকে।
আমার তোলা এরকম একটা ভবন, উইন্ডসর প্রাসাদের ছবি:
চর্চা-১: মৌলিক দক্ষতা – ধীর শাটারস্পিড : গত পর্বের কথা
খুব সাধারণ একটা চর্চা ছিল গত পর্বে। ধীর গতির শাটারস্পিড দিয়ে গতিশীল বস্তুকে ঝাপসা করে দেয়া। যাতে গতি বুঝা যায়। এত সাধারণ বিষয়ে ছবি তুলতে অনেকেরই হয়তো আগ্রহ হয়নি। আমার অবশ্য বিষয়টা বেশ কঠিনই মনে হয়েছে। প্রথম সমস্যা সামাজিক। লোকজন সন্দেহের চোখে তাকিয়েছে। এক লোক এসে জিজ্ঞেস করেছে লুকিয়ে মেয়েদের ছবি তুলছি কিনা। অন্যদিকে কারিগরি সমস্যায়ও ভুগেছি। সব জায়গায় তেপায়া ছড়ায়া ক্যামেরা খোলা যায় না।সংকোচের কারণে। কোথাও কোথাও আইনি বাধা আছে – তেপায়া ব্যবহার করতে পূর্বানুমতির দরকার হয়। সে কারণে লোকে একপায়া ব্যবহার করে। আমি কাজ চালিয়েছে অন্য কোনো স্থায়ী জিনিসের যেমন বসার বেঞ্চ বা দেয়ালের ওপর ক্যামেরা রেখে। তাতে পছন্দসই দৃষ্টিকোণ পাওয়া যায় না।কিন্তু মূল কাজটা হয়।
সহজ কাজটা করতে গিয়ে নতুন একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম যে বেশিক্ষণ শাটার খুলে রাখলে বেশি আলো ঢুকে ছবি ওভারএক্সপোজড্ হয়ে যায়। তাই হওয়ার কথা। এর সমাধান কী? একটা ফিল্টার লাগিয়ে আলো ঢোকাটাকে আরেকটু কমাতে পারলে বেশি সুবিধা হতো মনে হচ্ছে। অন্য কিছু?
গিয়েছিলাম হ্যাম্পটন কোর্ট প্যালেসে। সেখানে বেঞ্চের হাতলে ক্যামেরা রেখে একটা করিডোর দিয়ে হেঁটে যাওয়া দর্শনার্থীদের কিছু ছবি তুললাম। সেগুলোর একটা নীচে:
ছবি: হ্যাম্পটন কোর্ট প্যালেস
উইন্ডসর প্যালেসের কাছে থেমস্ নদীর ওপর একটা ছোট্ট সেতু আছে। সেখানে তোলা একইরকম আরেকটি ছবি।
সতীর্থ JudasHerb – এর তোলা এরকম একটা ছবি..
এরকম চর্চায় লাভ কী?
খুব সাধারণ একটা চর্চা ছিলো গত পর্বে। চাইলেই করা যায়। অনেকেই করেননি। করে আমার কোনো লাভ হয়েছে? আমি মনে করি হয়েছে। তবে আরো বেশি চর্চা করা দরকার। যাতে দৃশ্য দেখামাত্র ধরে ফেলতে পারি এখানে শাটারস্পিডকে কীভাবে ব্যবহার করলে দৃষ্টিনন্দন ছবি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ টেকনিকগুলো একেবারে নখের ডগায় নিয়ে আসা পর্যন্ত চর্চা চলতেই পারে।
সময় বের করা কঠিন। বহু কষ্টে লেগে আছি। লেগে থাকুন আপনারাও।
পরের পর্বে স্থিরজীবন বা জড়জীবন আসার কথা ছিল। বাইরে এখন রোদের খেলা। এই মূহুর্তে বাইরে যাওয়াই ভালো। আগামী পর্বে তাই আসছে জীবজন্তুর ছবি তোলা - শিঘ্রই।
মন্তব্য
অপরাধ নিয়েন না, কিন্তু এত কাছে ঝাপসা হয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে কি দেখতে আসলে ভাল লাগছে?
কৌস্তুভ
আগে বলেন ছবি তুলছেন কিনা। অর্থাৎ বাড়ির কাজ চর্চা-১ করেছেন কিনা।
ছবি তোলার পর আমরা ছবিটা নিয়ে আলোচনা করবো।
যে ছবি নিয়ে আপনার প্রশ্ন সে ছবির ফ্লিকারে দুয়েকজনের মন্তব্য আছে তাতে অবশ্য আপনার প্রশ্নের কিছুটা জবাব পাওয়া যাবে। ছবিতে ক্লিক করুন ফ্লিকারের মন্তব্য পড়তে পারবেন।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনি তো আর মানুষের চেহার দেখছেন না ছবিতে। ছবিটা ধারণ করছে শহরটা আর তার মাঝে ব্যাস্ত মানুষের চলাচল। এটা বোঝায় শহরে প্রাণ আছে ব্যস্ততা আছে। তাই স্পষ্ট চেহারা দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফটোগ্রাফার জনারন্যে একা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হুমম...এই যে ওস্তাদের কথা শুনেন কৌস্তুভ। এখানে জনমানুষ মূল বিষয় নয়। বরং শহরের মাঝে তাদের ব্যস্ত চলাচল ফুটিয়ে তুলতে এই সৃজনশীল ঝাপসা।
তবে আপনার প্রশ্নের মূল সুর যদি হয় ক্যামেরার এতো কাছে ঝাপসা দেখানো ঠিক কিনা তবে সেক্ষেত্রে উত্তর ভিন্ন। আমার কাছে মনে হয় ক্যামেরা ও হেঁটে যাওয়া মানুষের মাঝে আরেকটু দূরত্ব থাকলে ভালো হয়। তখন মানুষটার মুখ দেখতে ইচ্ছা জাগে না। দূরে তো।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
শোনেন শোহেইল ভাই জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলা আমার বদঅভ্যাস। তাই বলে ফটোগ্রাফীতে আমি বিশেষজ্ঞ? কাভি নেহি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
সত্যি বলতে কি, চর্চাটা করেছি আমি। আমার নগন্য ক্যামেরায় যথাসাধ্য কম শাটারস্পিড দিয়ে।
"তবে আপনার প্রশ্নের মূল সুর যদি হয় ক্যামেরার এতো কাছে ঝাপসা দেখানো ঠিক কিনা তবে সেক্ষেত্রে উত্তর ভিন্ন। আমার কাছে মনে হয় ক্যামেরা ও হেঁটে যাওয়া মানুষের মাঝে আরেকটু দূরত্ব থাকলে ভালো হয়। তখন মানুষটার মুখ দেখতে ইচ্ছা জাগে না। দূরে তো।"
আমার মনের কথাটাই বলেছেন আপনি।
কৌস্তুভ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন