সুধা কেনা ও পানি বেচা

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০৬/২০০৭ - ৯:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
ক্রেতা আমরা সকলেই। জীবন বাঁচাতে ও সাজাতে কেনা-কাটা লাগে না এমন সাধু-দরবেশও আজকের বাজারে মিলবে না। কিন্তু তাই বলে বেচা-বিক্রিও কি সবাই করি? অবাক লাগলেও সত্য, ভবের এই বাজারে, বিকি-সিকির কাজও করতে হয় সবাইকে। ফকিন্নি থেকে রাজরাণী বিক্রেতার তালিকায় নাম পাওয়া যাবে সবার। কেউ বেচে ভিক্ষার চাল, কেউ হীরে-জহরত। তফাৎ এইটুকুই। তবে বিকি-কিনির যে ক্রিয়াকর্ম, তাতে হাত ময়লা করে সকলেই। তার তাতেই নাকি আজকের দুনিয়ায় অর্থনীতির চাকা এতো গতিতে ঘুরে। আমাদের মাঝেই কেউ কেউ আবার দক্ষ ক্রেতা-বিক্রেতা। পেশাদার। বেশি মূল্যের জিনিস তারা কেনে কম মূল্যে। বিক্রির সময় এই সমীকরণটাই তারা উল্টো বুঝে। কম দামের জিনিস বেচে বেশি দামে । দামের কথা যখন এসেই গেল, তাহলে বলে নিতেই হয়, কেনাবেচা কাজকর্মের চাবিকাঠি হচ্ছে এই দাম। দামেরা মোটে দুই ভাই। কেনা দাম আর বেচা দাম। দামেদের দুই ভাইদের মধ্যে যে ফারাক তাই হচ্ছে লাভ বা ক্ষতি। ক্ষতি কেউ চায় না। লাভটাই সবাই কোঁচড়ে ভরতে চায়। তাই চলে দরদাম, প্রতিযোগিতা। সব মিলে তাই কেনা-বেচার এত পসার। প্রশ্ন করতে পারেন, আমার আছেই কী আর বেচবোই বা কী? আছে, আছে। শরীরটার কথাই আগে আসে। শরীর বেচা মানে, চলতি কথায় লোকে যাকে বলে গতর বেচা, তাকে কেউ সম্মানের কাজ হিসেবে দেখে না (কানে-কানে বলি, মানুষ মাত্রই হিংসুটে। অন্যকে খুব সহজে পয়সা বানাতে দেখলে তাদের চোখ টাটায়। তাছাড়া সব শরীর তো আর বেচা চায় না। তার ছিরি-ছাঁদ ভালো হওয়া চাই। সবার তো আর ফর্মা মাপে শরীর হয় না। যাদের অমন লক্ষ্মী-কার্তিক গঠন-গাঠন তারা তা বেচে উপরি কামাবে সে দৃশ্য খ্যাংরা-কাঠিদের চোখে সহ্য হয় কি করে। অবশ্য কার্তিকদের চেয়ে লক্ষ্মীদেরই এ লাইনে বাজার ভালো)। শরীরের কথা বেশি চটকাতে চাই না, লোকে ভালোভাবে কানে তোলে না। শরীর নাই বেচলেন, কিন্তু শরীরের তাকত, পেশি-শক্তি, তার ক্রেতা ম্যালা। যদিও দাম কম, খরিদ্দার প্রচুর। বেচা যায় মগজও। ঘটে যদি বুদ্ধি থাকে, কিংবা স্কুল-কলেজে দৌড় ঝাঁপ করে সনদ জুটে থাকে, তাহলে চামড়া দিয়ে ঘাম ফেলতে হয় না। তবে তেল ওরা ঠিকই বের করে নেবে। মাস শেষে যে বেতন দেবে তার দ্বিগুণ যদি আপনাকে দিয়ে কামিয়ে নিতে না পারে তাহলে কর্মচারি পোষা কেন? ধনী হওয়ার কায়দাই ওই। দেবে কম আর পকেটে ঢুকাবে বেশি। ও যদি আপনাকে দিয়ে দিনে চলি¬শ টাকা ফলাতে পারে তা হলে কুড়ি টাকা রোজে আপনাকে বেন্ধে ফেলবে। হররোজ কুড়ি টাকা তার মুনাফা। ঠিক যেন মুরগির খামার। দিনশেষে খাঁচা ভর্তি ডিম। যত মুরগি তত ডিম। মুরগি কেনা আর ডিম বেচা। মুরগি যখন ডিম পাড়া ক্ষ্যান্ত দেবে, তখন খাঁচা ভরে আস্ত মুরগিও বাজারে নিয়ে ঝেড়ে দেবে। তারও ক্রেতা আছে। লোকে মুরগির হাড়-মাংসের স্যুপ খাবে। খেয়ে শরীরের তাকত বাড়াবে। তারপর আবার বাজারে এসে জায়গামত সেই তাকত বেচবে। লোকে একে আদর করে বলে শ্রম-বাজার। কেনাবেচার কারবারটা বড় মজার। দেখতে খুব ভালো লাগে। ছোট থাকতে যেখানেই ক্যানভেসার দেখতাম দাঁড়িয়ে যেতাম। প্রথমে উদ্দেশ্য অবশ্য কেনাবেচা দেখা ছিল না। প্রথম যেদিন এক ক্যানভেসারকে দেখি, ও বলেছিল এক পেটি তাস থেকে নাকি সবার চোখের সামনে এক বস্তা তাস বানাবে। তাসে তাসে নাকি খোলা জায়গায় রাখা ওর চাদরটা ভরে যাবে। চারপাশে লোক গিজগিজ করে। ব্যাটা খেলাটা দেখাতে শুরু করে। কিন্তু এরপরই অন্য কথায় চলে যায়। কেনাবেচার কথা। তাসের পেটি হাতেই থাকে ওর। এর মাঝে ও কয়েক কার্টন ’মরা বেঁচে উঠার’ সুধা বেচে ফেলে। খেলাটাই ব্যাটা দেখায় না। ওসব সুধা নিজে কিনিনি কিন্তু শুনেছি ও তে নাকি মাল-মসলা কিছু নাই, হুদাই পানি। দেশটা খালে-বিলে ভর্তি। তা পানি না বেচে ও বেচবেই বা কি? শুধু পানি বললে তো আর লোকে কিনবে না। গোলাপজল বললেও দরদাম করবে। তাই বলে সুধা? তা ওর দোষ কি? দুনিয়ার এ্যাব্বড় এ্যাব্বড় কো¤পানী তাই করছে। কত বাহারি নাম, কোচাকোলা, ফানডা, মিশিন্দা। কিছু রং, কিছু চিনি আর পানি। অতটুকু বোতলের পানি বড় জোর এক টাকা চাওয়া যায়। ওরা বেচে ছয় টাকা। তবে বাংলার জলের নাকি সুনাম ছিল এককালে। তা সিটি কর্পোরেশনের পাইপে যখন পানির সাথে কেঁচো আসতে লাগলো তখন নাগরিক সাহেবেরা ধৈর্য ধরলেন না। বোতলের পানি কিনতে দোকানে ছুটলেন। পানির দেশে চিনি, রং ছাড়াই এখন বোতল ভর্তি কাঁচা পানির দাম ছয়-নয় টাকা। সবাই কিনছে। প্রশ্ন করতেই পারেন, নাগরিকরা যদি ধৈর্য ধরতো তাহলে কি এমন কচুটা হতো? ঃ হুমম, হতো। আশাতীত ঘটনা ঘটতে পারতো। পাইপ দিয়ে কেঁচো আসছিলো। ক’দিন পর কেঁচোর পেছন পেছন পুঁটি মাছটাও আসতো। ধরো আরো কড়াইতে ভাজো। তা ওতো ধৈর্য কার আছে? কিনতে হলে এখন সবাই বাজারেই যায়। খাল-বিলের মাছ কিনতেও বাজার। গাছ-লতার ফল-মূল কিনতেও বাজার। এমনকি উঠতি ছোঁড়ারা বিয়ের কনে দেখতেও বাজারে যায়। বলতে ভুলে গেছিলাম বাজারের শুদ্ধ বাংলা হচ্ছে মার্কেট। ও বিষয়ে লোকজন পড়ালেখাও করে। যে যত বড় মার্কেটার তার তত বেশি রোজগার। তো এই মার্কেটারের কাজ কি? ঐ ক্যানভেসার যা করে। সুধার নামে পানি বেচে। তারিখঃ ২০০৬-০৭-০৫।

মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি
জব্বর!!!!
শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
সালাম!!!

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নজমুল আলবাব এর ছবি
পড়লাম। ভালো লাগল। মনে হচ্ছে জমে যাচ্ছে। !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নজমুল আলবাব এর ছবি
পড়লাম। ভালো লাগল। মনে হচ্ছে জমে যাচ্ছে। সচল হচ্চে সচলায়তন... !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
নজমুল কী বলে? সচল জিনিস আবার সচল হয় কেমনে? সচল হচ্ছে অচলায়তন। শুভেচ্ছা।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লাইনে আহেন। নতুন লেখা নামান। ....................................... ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
হাসান মোরশেদ এর ছবি
আশাটা ও পণ্য এখন বাজার দরে, বিকোতে পারলে টাকা আসবে ঘরে... -------------------------- আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।