বড় মাছের দাপটে পুকুরে ছোট মাছগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা থাকে। একই ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও ইসলামে সবচে' ছোট এই ভাগটির নাম কদাচিৎ শোনা যায়। তারা হচ্ছে খারিজী। বর্তমানে ইবাদি নামেই তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে। আর বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার মাত্র 1% হচ্ছে এই খারেজিরা।
খারেজি মানে হচ্ছে যে খারিজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ যে ছেড়ে চলে গেছে। তো আনুষ্ঠানিকভাবে খারেজিরা সুন্নীদেরকে ছেড়ে চলে যায় 658 সালে।
ছোট গ্রুপ হলেও অন্তত: একটি দেশে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সে দেশটির নাম হলো ওমান। 43% ওমানিরা খারেজি এবং সেখানে সুন্নীদের সংখ্যা 25%। এছাড়া খারেজিরা আছে লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে, তিউনিসিয়ার জারবা অঞ্চলে, দক্ষিণ আলজেরিয়ায় এবং পূর্ব আফ্রিকায়। তবে এদের বেশিরভাগই মূল খারেজিদের উত্তরাধিকার নন। (কারণ সুন্নী মুসলমানরা ব্যাপকহারে খারেজি নিধন করে এবং অনেকে আবার সুন্নীদের নেতৃত্ব মেনে নেন।) বরং 700 সালের দিকে আব্দুল্লাহ ইবন ইবাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের অধিকারী।
সুন্নীদের বিষয়ে খারেজিদের মূল আপত্তি ছিল ইসলাম ধর্মের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কুরাইশ গোত্রের প্রাধান্য। তাদের বক্তব্য ছিল ইসলাম পৃথিবীর সব অঞ্চলের, সব জাতির জন্য আল্লাহ প্রেরিত ধর্ম। সুতরাং এর খলিফা নির্বাচিত হবেন যোগ্যতার ভিত্তিতে, বংশসূত্রে নয়। তারা অনেকটা সাম্যবাদের ব্যাখ্যায় সাজান ইসলামকে। তারা বলেন ইসলামে আরব ও অনারবদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না। কিন্তু আরব মুসলিমরা তাদের প্রাধান্য ছেড়ে দিতে রাজী ছিলেন না। কিন্তু যেহেতু তখন ইসলাম ছড়িয়ে পড়ছে আরবের বাইরে সেহেতু খারেজিদের একটা বিপুল সমর্থনও তৈরি হচ্ছিল আরবের বাইরে। কিন্তু 680 সালে যখন উমাইয়ারা আবার মক্কা দখল করে নেয় তখন খারেজিদের উপর নেমে আসে প্রবল অত্যাচার। তারা তখন পালিয়ে যায় আরবের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বা আরো দূরে। উমাইয়া খলিফারা খারেজিদের নির্বিচারে খুন করতে থাকে। এবং তারা পরিণত হয় মুসলিমদের এক অতি ক্ষুদ্র অংশে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন