গণতন্ত্রে বহুদল ও বহুমতের অবস্থান সৌহার্দ্যমূলক। উদ্দেশ্য এক, পন্থা ভিন্ন; তাই বিভিন্ন পন্থার পক্ষে মানুষ যুথবদ্ধ হয় একই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য। দল নিয়ে যাদের অনেক দ্্বিধা তাদেরকে তাজা একটি সংবাদ জানাই। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংসদে তার শিক্ষা বিষয়ক বিলটি উপস্থাপন করেছিলেন তখন তার দলের 52 জন সাংসদ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তো নিজ দলের 52 জন যদি বিপক্ষে ভোট দেয় তবে টনি'র হারার কথা।
কিন্তুতাকে রক্ষা করেছেন বিরোধী দলের নতুন নেতা ডেভিড ক্যামেরন। তিনি তার দলের এমপি-দের নিয়ে টনি'র শিক্ষা বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। দলাদলি ও দলবাজির কি অদ্ভুত উদাহরণ। তাও ব্রিটেনের মত গণতান্ত্রিক দেশে। বিরোধী দল ও সরকারী দল হ্যা ভোট দিলো অথচ সরকারী দলের একটি অংশ ও অন্যান্য বিরোধীরা ভোট দিল না। তো এই যে সরকারী দলের 52 জন বিপক্ষে ভোট দিলো, এটা কি অনৈতিক বা অগণতান্ত্রিক? (নিজের জবাব নিজেই খুঁজে নিন)।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এই 52 জনকে হয়তো দেশছাড়া হতে হতো। দলবাজি বলে কথা। কারণ যদিও আমরা গণতন্ত্র আর সংসদীয় পদ্ধতি শিখেছি ব্রিটেনের কাছ থেকে তবু নিজেদের সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ যোগ করেছি তা হলো 70। এই অনুচ্ছেদের কারণে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন না কোনো সাংসদ। একে বলে ফ্লোর ক্রসিং। (কেনো আমরা এই 70 আবিষ্কার করলাম, কোথা থেকে করলাম সে বিস্তৃত বিষয় আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে এটুকু বলতে পারি আমরা গণতন্ত্র চাই কিন্তু দলবাজি চাই না। আমরা চাই বড় হুজুরদের তালে মাথা নাড়ানো কিছ ুশাখামৃগ।)
কিন্তু ব্রিটেনে এখন এই বিদ্রোহী 52 জনের অবস্থা মোটেই খারাপ নয়। বরং তারা বলছেন টোরি পার্টি না বাঁচালে টনি হারতো 11 ভোটে। সুতরাং দলের মধ্যে সিংহভাগ তার প্রস্তাবের বিপক্ষে। সুতরাং তিনি নীতিগতভাবে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার হারিয়েছেন। তাছাড়া বিরোধী আদর্শের টোরি পার্টির সাথে যোগসাজশ করে তারা তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের অপমান করেছেন বলেও বিদ্রোহীরা প্রথম সারির নেতাদের প্রতি অভিযোগ তুলেছেন। ফলে বিদ্রোহীরা নয় বরং টনি ব্লেয়ার নিজেই আছেন ঘোরতর সংকটে।
আমাদের দেশে নেতারা কখনো সংকটে পড়েন না। তারা এসে জাঁকিয়ে বসে যান আসনে। তাদের নেতৃত্ব কখনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে না। ব্যক্তিই এখানে দল। প্রধানমন্ত্রী ও সভানেত্রীর সিদ্ধান্তই দলের সিদ্ধান্ত। তো সেই দেশের নাগরিকদের দল, দলবাজি ও দলাদলির সমীকরণ বুঝতে সমস্যা হওয়ারই কথা।
প্রিয় ব্লগারবৃন্দ, কারো যদি বুঝবার ক্ষমতায় ঘাটতি থাকে তবে তা নিয়ে ঠাট্টা করা অনুচিত। বরং দল, দলবাজি, দলাদলি ও গণতন্ত্র বিকশিত হওয়ার জন্য আমরা প্রার্থনা করতে পারি। আমিন, সুম্মা আমিন।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন