যে দেশে একটি ধর্ম প্রধান সে দেশে ধর্ম নিয়ে সরকারকে তেমন বিপাকে পড়তে হয় না। কিন্তুইউরোপের যেসব দেশে অনেক ধর্মের মানুষ এখন বাস করছে তারা বিচিত্র ধর্ম নিয়ে আছে নানা সমস্যায়। তাদের আগামী প্রজন্মকে মুক্তবুদ্ধির নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধান বাধা হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে বিভিন্ন অভিবাসী গোষ্ঠীর নিজ ধর্মকে বিদেশ এসে আরো বেশি মাত্রায় আঁকড়ে ধরাকে। 9/11 এর পর পাশ্চাত্য এ বিষয়ে আরো বেশি করে ভাবছে।
ধর্ম-কর্মের উপর একধরনের খবরদারি এখন শুরু হয়েছে বিশ্বময়। অনেক সময় একচোখা দৃষ্টিভঙ্গির জন্য আমাদের কাছে মনে হয় আঘাতটা বোধহয় শুধু ইসলামের উপর আসছে। আর নিশ্চিতভাবেই তা খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র। আসলে তা সঠিক নয়। এই ব্লগে আপনারা ইউ.কে.'র মেয়ে সাবিনার হিজাব নিয়ে মামলা সংক্রান্ত খবর পড়েছেন। কিন্তু হিজাব এক্ষেত্রে চিহ্নিত হয়েছে ধর্মের চিহ্ন হিসেবে। আগামী প্রজন্মকে ধর্ম-বিভেদের চিন্তা থেকে দূরে রাখতে চাইছে পাশ্চাত্য দেশগুলো। অবশ্য মুক্তভাবে যেকোনো ধর্মচর্চার সুযোগও শুধু পাশ্চাত্য দেশগুলোতেই পাওয়া যায় এবং তা আইন দ্্বারা স্বীকৃত। যে কারণে সাবিনার মত মেয়ে বা অন্য ধর্মের অনুসারীরা আদালতে গিয়ে মামলা করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জয়লাভও করে। সকল ধর্মের প্রতি এই উদারতা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোতে একেবারেই অনুপস্থিত। কিন্তু এই উদারতার সুযোগে অর্থাৎ ধর্ম পালনের জন্য নির্বিরোধ সুযোগ দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্ত বিশ্বের দেশগুলোতে মৌলবাদের আবাদ হচ্ছে তা সবার নজরে আসে 9/11-এর পর। তারপরই শুরু হয় নতুন ধারায় আইন প্রণয়ন।
যেমন ফ্রানেস 2004 সালে সরকারী স্কুলগুলোর জন্য একটি আইন পাশ করা হয়। সে আইনের দ্্বারা পাবলিক স্কুলের ক্লাশরুমে ধর্মীয় প্রতীক ও পোষাক পরিধান নিষেধ করা হয়। এই আইনের ফলে শুধু মুসলমান ছাত্রদের সমস্যা হচ্ছে তা নয়। খৃস্টান শিশুরা ক্রস পড়তে পারছে না, ইহুদিরা তাদের টুপি পড়তে পারছে না, মুসলিমরা স্কার্ফ(বা হিজাব) পড়তে পারছে না এবং শিখরা তাদের পাগড়ি পড়তে পারছে না। পাগড়ি খুলতে অস্বীকার করায় তিন শিখ ছাত্রকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি ফ্রানেসর একটি প্রশাসনিক আদালতে তারা মামলায় হেরেও গেছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত সংবাদ পাবেন নীচের লিংকে।
http://www.panthic.org/news/124/ARTICLE/1260/2005-04-24.html?sid=5caf265576d56bc9e9f6cfc70c2b62f0
তো এই নিয়ম বা আইন যে শুধু মুসলিমদের টার্গেট করে করা হয়েছে তা নয়। বরং বলা যায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে মৌলবাদী প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এরকম নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু এরা সবাই আশা করছেন যে ইউরোপিয়ান কোর্টে গেলে যেহেতু ইউরোপিয়ান কমিশন অনেক বেশি উদার ও বহুজাতিত্ব ও বহুধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেহেতু ধর্মের পক্ষে একটি রায় পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে ধর্মীয় উদারতার আইনের সুযোগ নিয়ে মৌলবাদের বিস্তার রোধ করার জন্য এরকম আইন বাস্তবায়ন করাটা কি অনুচিত? উদারতার মূল উদ্দেশ্য যেখানে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে সেখানে কি ঐ উদারতা থেকে পিছিয়ে এসে আরেকটু নিয়ন্ত্রণমুখী হওয়াটাই মানব-সভ্যতার এখনকার কৌশল হওয়া উচিত?
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন