ঈশ্বর, তুমি ভুলিয়ে দাও

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৪/২০০৬ - ৫:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


হাজার হাজার বছর ধরে ধর্ম শিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আছে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী। তারা পয়গম্বরদের কথা ও ধর্মীয় নেতাদের ব্যাখ্য নিয়ে গবেষণারত ও নিজেদের বিশ্লেষণ লিখে মোটা মোটা বই বের করছে। প্রথমে ধর্মের অনুসারীরা নিজেরাই নিজেদের ধর্মের বিভিন্ন বিষয় গবেষণা করে সময় কাটিয়েছে। এ ধরণের গবেষণা ও পাঠ সংক্রান্ত বিদ্যাকে আমরা বলি Theology.
পরে তূলনামূলক ধর্মপাঠের বিষয়টি এসেছে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে পার্থক্য ও মিলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু আজকের বিশ্বে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ধর্ম নিয়ে গবেষণা করা হয়।

যেমন, সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন সমাজে ধর্মের ভূমিকা কি এই নিয়ে। নৃতত্ত্বের গবেষকরা খুঁজে ফেরেন ধর্মের বিভিন্ন রকম আচার-আচরণ-বৈশিষ্ট্য-চর্চা। ইতিহাসবিদরা খুঁজেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনায় ধর্মের প্রভাব ও ভূমিকা; অন্যদিকে Phenomenologist-রা বুঝতে চেষ্টা করে ধর্মের প্রতীক, মতবাদ ও প্রথাগুলোর মর্ম। আধুনিক কালের যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এবং বহুজাতি-ধর্মের সমাজ গড়ে উঠার কারণে বিচিত্র ধর্ম বিষয়ে জানা-শোনার সুযোগ আরো বেড়েছে।
এর সাথে স্কুলগুলোতে ধর্ম বিষয়ক শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বে যেমন শিশুদেরকে বিভিন্ন ধর্ম বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়, উন্নয়নশীল বিশ্বে তা এখনও অনুসরণ করা হয় না। সেখানে শিশুরা শুধু নিজের মা-বাবার অনুসৃত ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কেই জানতে পারে। ধর্মের মূল সুরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সেটিই সবচে' যুক্তিসঙ্গত পথ।

কার্লমার্কসের একটি কথা দিয়ে শেষ করি। উনবিংশ শতাব্দীর এই সমাজ-দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ধর্মকে চিহ্নিত করেছিলেন এমন একটি উপায় বা কৌশল হিসেবে যা আসলে ব্যবহৃত হয় মানুষের দুর্দশা ও আর্থ-সামাজিক দুরবস্থার মূল কারণকে ধামাচাপা দিয়ে রাখার জন্য। আর ধর্ম বিষয়ে মার্কসের সেই অমর বাণী বোধহয় সবসময়ই বিশেষত: ধর্মের সামাজিক প্রভাব বিষয়ক আলোচনায় সবসময়ই আলোচিত হবে; তিনি বলেছিলেন:

Religion is the sigh of the oppressed creature, the heart of a heartless world, the spirit of unspiritual conditions. It is the opium of the people."

বঞ্চিত, দরিদ্র, নিপীড়িত ও নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর আর কি আছে ধর্ম ছাড়া। সেই তো তাদের শত দু:খ, কষ্টে নি:শ্বাস নেবার এক খন্ড আকাশ। নিষ্ঠুর, নির্দয় পৃথিবীতে কিঞ্চিত দয়া-মায়া-করুণার আশ্রয়। ভীষণ বস্তুবাদী পৃথিবীতে ভোগবাদী হওয়ার সামর্থ্যের অভাবে আল-টপকা ভাববাদী হওয়ার শীতল ছায়াতল। বঞ্চনা, বেদনা, ব্যর্থতাকে ভুলে থাকার এক পুরিয়া নেশা।

(কার্লমার্কস বলেছিলেন বলেই মেনে নিতে হবে তা নয়। যদি আমাদের অভিজ্ঞতার সাথে মেলে তবেই মানবো। মেলে কি?)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।