দৈনিক আমাদের সময়ে 'ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা জিহাদী বইয়ে সয়লাব' শিরোনামে একটি সংবাদ ছেপেছে। তাতে নাসির উদ্দিন নামের রিপোর্টার বিভিন্ন বইয়ে জিহাদের বর্ণনা থাকা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
15 এপ্রিল 2006 সংখ্যায় প্রকাশিত এ সংবাদে নাসির উদ্দিন বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন বইগুলোর। 'যুদ্ধের শক্তি ও কলাকৌশল, উপায়-উপকরণ, সাজ_সরঞ্জাম প্রস'ত রাখা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য। সামরিক প্রশিক্ষণ; তীর, লাঠি, তলোয়ার, বন্দুক, রাইফেল, সাঁজোয়া গাড়ি, কামান, ট্যাঙ্ক, হাওয়াই জাহাজ ও সামুদ্রিক যুদ্ধজাহাজ পরিচালনাও এ প্রস'তির শামিল।' 'আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে যারাই বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তাদেরকে উচ্ছেদের জন্য সর্বাত্দক জেহাদ ঘোষণার নামই ইসলাম। এরূপ ইসলামি জীবনব্যবস্থার সঙ্গে মানব রচিত জীবন ব্যবস্থার সংঘাত অনিবার্য।' এ কথাগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ আয়োজিত বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের বইমেলার দুটি বইয়ের দুটি অধ্যায় থেকে নেয়া।
প্রথম অংশটি খোদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত এবং একই প্রতিষ্ঠানের স্টলে প্রাপ্ত বই 'ইসলামি আইন বনাম মানব রচিত আইন'_এ লেখা রয়েছে। দ্বিতীয়টি ইসলামিক পাবলিকেশনের 'আগামী বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' বইয়ের অংশ বিশেষ।
নাসির উদ্দিন জানাচ্ছেন এছাড়াও ইসলামি ফাউন্ডেশনের 'গৌরবোদ্দীপ্ত জেহাদ' ও আধুনিক প্রকাশনীর 'জিহাদ' নামের বইসহ জিহাদকে উৎসাহিত করে লেখা অসংখ্য বই দেখা গেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলায়।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ের উদ্্বিগ্ন হওয়াটা কিছুটা বিস্ময়করই মনে হয়। কিছুদিন আগে হিজবুত তাহরীর নামক একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে যখন প্রথম আলো ও অন্য দুয়েকটি পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয় তখন দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক তীব্র আপত্তি জানিয়ে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন। অথচ এখন তাদেরই রিপোর্টার জিহাদ বিষয়ক ইসলামি বইয়ের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন। কিন্তু কে না জানে জিহাদ ইসলামের একটি নিজস্ব পন্থা। রিপোর্টার আরো জানান, প্রথম দুটি প্রতিঠানের উল্লেখিত দুটি বইয়ে কোরআনের ব্যাখ্যাসহ জিহাদের বিষয়টি এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা পড়লে যে কোনো সহজ সরল মানুষই প্রভাবিত হবেন। 'ইসলামি আইন' বইটির 172 থেকে 174 পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, 'ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মুসলমানদের উপর ফরয। এ জিহাদে শুধু দৈহিক শক্তি ব্যবহার করলে চলবে না, বরং জান-মাল সর্ববিধ উপায় উপকরণ এ পথে নিয়োজিত করতে হবে।' অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে 'ওদেরকে যেখানে পাও সেখানেই হত্যা করো' 'হালকা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এবং ভারি অস্ত্রশস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে বের হয়ে পড়।' দ্বিতীয় বইটির 60 থেকে 86 পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, 'প্রতিষ্ঠিত সমাজ কাঠামো, মানুষের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা সবকিছুই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে জাহেলীয়াতের উপর। ইসলামি আন্দোলনের মুজাহিদদেরকে ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে আধুনিক উপকরণ, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদে সজ্জিত হয়ে এসবের বিরুদ্ধে জিহাদে যোগ দিতে হবে।' আরেক জায়গায় বলা হয়েছে 'মানুষই আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের শাস্তির বিধান দিয়ে, স্বরাষ্ট্র পররাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থা (এমপি, মন্ত্রী ও বিচারপতি) পরিচালনা করে মূলত আল্লাহর ক্ষমতায় ভাগ বসিয়েছে। এসব ফেরাউনদেরকে সমূলে উচ্ছেদ করে আল্লাহর ক্ষমতা আল্লাহর হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে।'
এ বর্ণনার পর প্রতিবেদক নাসির উদ্দিন প্রশ্নও করেছেন যে, ফাউন্ডেশনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত সরকারের শরিক একটি সংগঠনের প্রতি মানুষের যে অভিযোগ, তা কি তাহলে সত্যিই?
অবাক লাগে এ যে সত্যি তা নিয়ে কোনপক্ষ কবে সন্দেহ প্রকাশ করলো। সচেতন ধর্মপ্রাণ বাঙালি সবসময়ই এ ধরণের কূটচালের বিরোধিতা করে আসছেন। যারা দেখেও না দেখার ভান করেন তারাই এখন বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিস্ময় দেখান।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন