পান্না-সবুজ পানির হ্রদ 'লেক ব্লেড'-২ (উৎসর্গ: সাদিক মোহাম্মদ আলম)

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৫/২০০৬ - ২:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মাথার টিপের মত ছোট্ট দ্বীপ (ইংরেজিতে কথাটা টিয়ার-শেপড, অর্থাৎ চোখের জলের ফোঁটার মত।)। আমাদের গনডোলা এসে ধীরে থামলো অনু-দ্বীপটির উত্তরদিকের সিঁড়ির গোড়ায়। আধঘন্টা সময় পাবো আমরা। গনডোলা চালককে জিজ্ঞেস করলাম দক্ষিণ দিকের সিঁড়িতে সে আমাদের নিয়ে যাবে কিনা। নেতিবাচক উত্তর আসলো। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ঠিক দক্ষিণ দিক থেকেই দ্বীপের গির্জাটার সবচে ভালো ছবি পাওয়া যায়। পেছনে তখন বরফ-চূড়া পাহাড় থাকে। কি আর করা। উত্তরের সিঁড়ি বেয়েই উঠলাম উপরে। 17দশ শতাব্দীর বারোক স্টাইলের গির্জা সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে দ্বীপের মাঝে। সাথে চ্যাপলেইন এবং প্রভোস্টের বাড়ি। চার্চে কিছু ফ্রেসকো আছে যেগুলো আরো আগের। চতুর্দশ শতাব্দীর। চার্চের মাঝে ঝুলছে ঘন্টার দড়ি। মনের কামনা পূর্ণ হওয়ার আশায় বিশ্বাসীরা একসময় সেই ঘন্টা বাজানোর জন্য দড়িতে টান দিতো। এখন পর্যটকরা হরহামেশা টানছে। লেকের পাড়ে যেকোনো জায়গা থেকে শোনা যায় সেই ঘন্টার আওয়াজ। আমিও টানাটানি করলাম কিছুক্ষণ। বেশ কঠিন মনে হলো ঘন্টা বাজানোর কাজটা। কিন্তু দড়ি টানার ছবি আসলো না। চার্চের স্বল্প আলোয় দড়ি টানার জন্য হাত যেটুকু নড়ে তা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে যায় ছবিতে।

দ্বীপের দক্ষিণে যে সিঁড়ি সেটিই বেশি সুন্দর। কিন্তু এর ছবি তুলতে হলে পানিতে যেতে হবে। আমাদের গনডোলা চালক এদিকে তো আসবে না। পরে ঐ পাড়ে যদি যাই তখন তুলবো। দক্ষিণ দিক থেকে গির্জাটির কিছু ছবি তুললাম। 9ম শতাব্দী থেকে এখানে চার্চ ছিল। কিন্তু প্রত্নতাত্তি্বক খননের পর দেখা গেছে এখানে আরো অন্তত: এক শতাব্দী আগে পর্যন্ত পাগান মন্দির ছিল।

আধঘন্টা সময় দ্রুত ফুরিয়ে গেল। নীচে নেমে দেখলাম সবাই গনডোলায় চড়ে বসেছে। উঠার আগেই চালক টাকা চাইলো। মনে মনে হাসলাম। লেকের মাঝে রেখেই টাকা নিয়ে নিচ্ছে। যদি না দেই তবে কি ফেলে রেখে চলে যাবে?

(স্লোভেনিয়া যাওয়ার আগে সাদিক বলেছিলেন স্লোভিন মুসলিম ও মসজিদের ছবি তুলতে ও তথ্য জোগাড় করতে। কিন্তু স্লোভেনিয়ার মাত্র 2.5% লোক মুসলমান। সংখ্যায় তা মাত্র 50,000। এর বেশিরভাগই মনে হয় বসনিয়ান মুসলমান। অটোমান সাম্রাজ্যের কালে তুর্কীরা বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেছিলো স্লোভেনিয়া। বেশ কিছু কাবাবের দোকানে আছে লুবিয়ানায়। তারা মনে হয় তুর্কী মুসলমান। তবে স্লোভেনিয়ায় স্থায়ী কোনো মসজিদ নেই। আমাদের হোটেলের ড্রাইভার জানিয়েছিল (যদিও জিজ্ঞেস করিনি তবু আমার ধারণা সে বসনিয়ান মুসলমান) আগামী বছরের মধ্যে একটি মসজিদ বানানো হয়ে যাবে। সাদিক যেহেতু সর্ব ধর্মের বিষয়ে সমান শ্রদ্ধাশীল সেহেতু লেক ব্লেডের গির্জাটির ছবিগুলোই সাদিকের জন্য উৎসর্গ করলাম।)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।