গতকাল রাত নয়টায় চ্যানেল ফোর শুরুকরে দিলো বিগ ব্রাদার 7। সুতরাং আগামী তিন মাস আমার গড়ে অন্তত: এক ঘন্টা কাটবে টিভির সামনে। চ্যানেল ফোরের এই রিয়েলিটি টিভি শো দেখতে। যারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা প্রশ্ন করতেই পারেন, বিগব্রাদার কি? এককথায় বলতে গেলে মানুষের চিড়িয়াখানা। এবারের কথাই ধরুন। 14 জন বিভিন্ন চরিত্রের 18-40 বছর বয়সের মানুষকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে একটি বড় বাড়ির মধ্যে। তারপর তালা। মোট 13 সপ্তাহ তারা থাকবে এই বাড়ির মধ্যে। বাকী পৃথিবীর সাথে তাদের সব যোগাযোগ বন্ধ। ফোন, মোবাইল কিছুই না। আত্মীয়-স্বজনরা শুধু টিভির পর্দায় তাদের দেখতে পারবে। বাড়িতে অন্তত: 30 টা ক্যামেরা লাগানো আছে। টয়লেটে শুধু কমোডের অংশটুকুতে ক্যামেরা না থাকলেও মাইক্রোফোন আছে শব্দ শোনার জন্য। সুতরাং এমন কোনো জায়গা নেই যে জায়গায় ক্যামেরাকে লুকিয়ে কিছু করা সম্ভব। সবচে' বড় কথা কি ঘটছে বাড়ির মধ্যে তা 24 ঘন্টা লাইভ দেখা যাচ্ছে টিভির পর্দায়। আনসেন্সরড।
বাড়িটা যে খুব বড়ো তা না। একটি বড় ড্রইং রুম আছে, বসে গল্প করার জন্য। রান্নাঘর আর ডাইনিং রুম আছে। আর আছে বড় একটি বেডরুম, তাতে 12টি বিছানা। দুটি ডাবল বেড। বাইরে একটি গোলাকার ছোট সুইমিং পুল আছে। এবার একটু বড় করা হয়েছে যাতে 14 জন ঠেসেঠুসে জায়গা হয়। গতবার একজোড়া হাউজমেট সুইমিং পুলের মধ্যে ভালবাসাবাসি করেছিল। ক্যামেরায় তাদের শরীরের উপরের অংশ দেখা গেছে। সুতরাং আয়োজকরা এবার বসিয়েছেন আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যামেরা। কোনোকিছু দেখা থেকে দর্শকরা যাতে বঞ্চিত না হয়। সুইমিং পুলের সাথে মাঝারি সাইজের একটি ঘাসের লন আছে। এখানে বিভিন্ন সময় হাউজমেটদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনের ক্ষেত্রে বিগব্রাদার কতর্ৃপক্ষ খুবই ইনোভেটিভ। বাড়ির কোনো ফার্নিচার পৃথিবীর কোনো দোকানে কিনতে পাবেন না। এগুলোর ডিজাইন অভিনব এবং শুধু এই অনুষ্ঠানটির কথা মাথায় রেখে করা।
প্রশ্ন হচ্ছে একটি বাড়ির মধ্যে এতগুলো লোক থাকলোই বা, তো 24 ঘন্টা তাদেরকে দেখার কি আছে? কিছুক্ষণ পরই বিষয়টা বোরিং হয়ে যাওয়ার কথা না। কিংবা যখন তারা ঘুমাচ্ছে। তাকিয়ে থাকার কি আছে? এখানেই অনুষ্ঠান নির্মাতাদের সৃজনশীলতা। বিভিন্ন কিসিমের 14 জনকে এখানে আনা হয়েছে। গে, লেসবিয়ান, ট্রান্সভেস্টাইট থেকে স্ট্রেইট সব ধরনের সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশনের লোক আছে। কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ মডেল, কেউ রক সঙ্গীত শিল্পী, অর্থাৎ বিচিত্র জগতের লোক এরা। আর দুয়েকজন স্বাভাবিক লোক ছাড়া বাকী সবার তার ছিঁড়া। দর্শকদেরকে বিনোদিত করতে তারা বিচিত্র জিনিস করে যাবে এই 13 সপ্তাহে। এর মধ্যে কারো কারো মধ্যে প্রেম হবে। ঝগড়া হবে কারো কারো মধ্যে। ঠাসাঠাসি করে একটি বাড়ির মধ্যে থাকার কারণে নানা গ্রুপিং হবে। তার উপর আছে প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত যে টিকে থাকতে পারবে সে পাবে 100,000 পাউন্ড। কয়েক সপ্তাহ পরেই হাউজমেটরা গোপন ভোটে ঠিক করবে কোন তিনজনকে তারা এই বাড়ি থেকে বের করে দিতে চায়। পরে টিভিদর্শকরা তিনজনের মধ্যে থেকে একজনকে ভোট দিয়ে বের করে দেবে। সুতরাং কে কাকে ভোট দিলো ইত্যাদি নিয়ে চরম একটা নাটক জমে উঠবে বাড়িটির মধ্যে। স্ক্রিপ্ট ছাড়া নাটক। এর মজাই আলাদা। এই হচ্ছে রিয়েলিটি টিভি।
আরেকটি বিষয় বলা বাদ থাকলো, বিগব্রাদারটা কে? জটিল প্রশ্ন। কখনও পুরুষ কণ্ঠে, কখনও নারী কণ্ঠে কথা বলে বিগব্রাদার। কিন্তু তাকে দেখা যায় না। হাউজমেটদেরকে বিভিন্ন রকম কাজ, প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দেয় বিগব্রাদার। সমস্যা সমাধানসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ করে বিগব্রাদার। ছোটখাটো প্রতিযোগিতা হয় হাউজমেটদের মধ্যে। তার পুরষ্কারও দেয় বিগব্রাদার। অর্থাৎ তাদের এই 13 সপ্তাহের জীবনের নিয়ন্তা হচ্ছে বিগব্রাদার। ছোটখাটো এক ঈশ্বর।
তো ছোট এই ঈশ্বরের ছোট দুনিয়ার বিচিত্র ধরনের মানুষের কার্যকলাপ টিভি পর্দায় দেখার মজা নিতে আহ্বান সবাইকে। আমি কখনো পুরো 24 ঘন্টা দেখি না। রাত 9টার দিকে গত দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার একটা ঘন্টাখানেক সার-সংক্ষেপ দেয়া হয়। তাতে ঠাস বুনোটে মজা থাকে। তবে এবার যে 14 পাগল এক জায়গায় করা হয়েছে তাতে হয়তো 2/1 রাত 24 ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারি। আর আপনারা? দেখুন নীচের লিংকে গিয়ে, অনেক অনেক মজার মজার ফুটেজ দেখা আছে। রাতে বিছানায় কে কার সাথে শুলো তাও বাদ যাচ্ছে না।
http://www.channel4.com/bigbrother
(ছবিতে দেখুন সব হাউজমেটদের। বাঁ থেকে তৃতীয় লাল গলফ শার্ট কালো প্যান্ট পড়া হাউজমেটটি হচ্ছে পাকিসত্দানী অরিজিনের শাবাজ। স্বঘোষিত হিজড়া।)
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন