আপনি কী ভাবছেনঃ পোষাকশিল্পে নৈরাজ্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ২৪/০৫/২০০৬ - ৬:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


দেশ শুধু রাজনৈতিক নেতাদের নয়। দেশ আমাদেরও। দেশের বিপর্যয় ও সংকট নিয়ে আমাদেরও ভাবতে হয়। আমরাও ভাবি। সম্প্রতি দেশে বিপর্যয় চলছে পোষাকশিল্পে। চলছে নৈরাজ্য। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোষাকশিল্পের অবদান আর ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে সব ধ্বনাত্মক হিসাবের মূলবিন্দু হিসেবে ধরা হয় এই শিল্পকে। অর্থনীতিতে এর অবদানের কারণে এই শিল্পকে ঘিরে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পখাতগুলোকে সমন্বয় করার দাবীও করেছেন অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক। তাদের মতে এই পথেই বাংলাদেশের উত্তরণ হতে পারে মধ্যআয়ের দেশগুলোর সারিতে।

এ কারণেই পোষাকশিল্পে সাম্প্রতিক নৈরাজ্য খুবই ভয়ংকর একটি সংবাদ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে যে শিল্পটি একটি উন্নয়নশীল দেশের বিস্ফোরন্মুখ জনপদকে আশার আলো দেখাচ্ছিল, সেই ক্ষেত্রভূমিতে এখন অশান্তির আগুন।

সব সংকটের মত এখানেও আছেন নানা পক্ষ, যাদের মত ও চাহিদার রয়েছে বিশাল পার্থক্য। প্রথমেই আমরা ভাবতে পারি মালিক ও শ্রমিক পক্ষের কথা। বিজিএমইএ ও ট্রেড ইউনিয়নের কথা। যারা পত্রিকায় সংবাদগুলো পড়েছেন তারা হয়তো লক্ষ করেছেন কিভাবে বিভিন্নপক্ষ দোষ চাপাচ্ছেন একে অন্যের ঘাড়ে। দেশের উত্তর প্রজন্ম হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?

মালিকরা রাস্তায় শুয়ে হাহাকার করছেন যে এসব আক্রমণ বহিরাগতরা করছে। শ্রমিকরা এর সাথে জড়িত নয়। বাংলাদেশের বাজার নষ্টই এর মূল উদ্দেশ্য। জার্মান একটি ক্রেতা গোষ্ঠী ঢাকায় উপস্থিত থাকা অবস্থায় ষড়যন্ত্র করে এটি করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিক পক্ষের দাবী বেতন-ভাতা, অমানুষিক অত্যাচার ও কষ্ট থেকে পরিত্রাণ, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এর সাথে দেখছেন বিরোধী দলের যোগসাজশ। বিরোধী দলের নেত্রী সরকার ব্যর্থতাকে ঢাকতে ও জনরোষকে ভিন্নপথে প্রবাহিত করার গোপন কারসাজিতে এই সাজানো আক্রমণের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

পুঁজি ও উদ্্বৃত্ত অর্থ সৃষ্টির প্রচেষ্টায় মালিক-শ্রমিকের দ্্বন্দ নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশের পোষাকশিল্পে শোষণ ও শ্রমিক নির্যাতন কি সীমা ছাড়িয়ে গেছে? দেশের অর্থনীতির জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই খাতটিতে কি রাষ্ট্র শৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। শ্রমিকেরা মৌলিক অধিকার/মানবাধিকারগুলো কি পাচ্ছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে?

রাস্তায় পরম উল্লাসে মার্সিডিজ গাড়ির শো-রুম ভাঙার মধ্যে আপনি কি শ্রমিকদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের প্রকাশ দেখতে পান। নাকি আপনি বেশি সমব্যথী সেই গার্মেন্টস মালিকটির, যিনি কাঁদতে কাঁদতে মিডিয়ার লোকদের জানাচ্ছেন যে তার গার্মেন্টস থেকে চুরি হয়ে গেছে 21 লাখ পিস তৈরি পোষাক।

কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রই কি এখানে মূল ভূমিকা রাখছে? কেউ কি বাংলাদেশ থেকে এই শিল্পকে অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাবার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক কোনো চেষ্টা করছে?

দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশের এই বিপর্যয়ে আপনি কতটা উদ্্বেল? কি ভাবছেন আপনি? কতটা গুরুত্বের সাথে এগিয়ে আসা উচিত একটি সমাধানে? কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। আসুন, উত্তর প্রজন্ম হিসেবে বিষয়টি নিজে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তা-চেতনা ভাগ করে নেই পরষ্পরের সাথে। আর একইসাথে একধরণের মেসেজ পাঠাই নীতিনির্ধারকদেরও কাছেও।

আপনার ভাবনাগুলো জানান মন্তব্যের বাক্সে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।