আশি মিনিটে বিশ্ব ভ্রমণ ঃ১

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: রবি, ২৫/০৬/২০০৬ - ৭:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


পাশ্চাত্যে যেকোনো কিছুতেই একটা 'থিম' থাকা ফ্যাশনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আমি ঠিক থিম পার্কের কথা বলছি না। সে আমাদের বাংলাদেশেও আছে গোটা কয়েক। যদিও সেগুলোতে পার্ক আছে থিমটাই নেই। রাজধানী ঢাকায় থিম রেস্টুরেন্টও বোধ হয় আছে। আমি নিশ্চিত না। কিন্তু এখানে আধা-খেঁচড়া থিম নয় থিম থাকে বেশ জাঁকিয়ে। এদের বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকে থিম। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে থামে থিম। ক'দিন আগে রিটা ও লরেন্সের নতুন বাসায় উঠার 'গৃহপ্রবেশ' অনুষ্ঠানে গেলাম। তার থিম ছিল মার্ডার মিস্ট্রি। খুনের রহস্য সমাধান করতে গিয়ে পুরো বাসার প্রতি কোণ আমাদের আবিষ্কার হয়ে গেল। লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বার্ষিক 'স্টাফ বল' ছিল জুনের 23 তারিখ। এবার তাদের থিম ছিল 'এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ'। এরকম বার্ষিক 'গেট টুগেদার' আমাদের দেশেও প্রায় সব বড় প্রতিষ্ঠানেই হয়। কর্তাব্যক্তিরা এই ফাঁকে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা ঝাড়েন। শেষে ভোজনের একটি বিষয় থাকে। অনুষ্ঠান শেষে সবার মূল আলোচ্য বিষয় থাকে বাবুর্চির রন্ধন-দক্ষতা। পাশ্চাত্যে গলাধ:করণ ছাড়া বিনোদনের অন্যান্য বিষয়ে আগ্রহ বেশি জনতার। তাদের মন থাকে সেদিকে। বক্তৃতাও শুনে না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-কে একবার দেখলাম আইসক্রিম চুষছে আর একবার দেখলাম বিরাট বপু দুলিয়ে নাচানাচি করতে। তো আশি মিনিটে কি করে বিশ্বটা ভ্রমণ করে ফেল্লাম তার একটা বর্ণনা আপনাদেরকে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। খুব বেশি আপত্তি না থাকলে চলুন বিশ্বভ্রমণে।

স্টাফ বলের নাম এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ'-ই ছিলো। তবে সময় সন্ধ্যা 7টা থেকে রাত 2টা। ঠিক আশি মিনিটে পারিনি আমরা ভ্রমণ শেষ করতে নিলাম 4 গুণন 80 মিনিট। মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির মূল ভবনটাই তখন দুনিয়া। সদর দরোজা দিয়ে ঢুকতেই 'পোর্ট অব লন্ডন'। ডিপার্চার লাউন্জে আমাদেরকে দেয়া হলো পাসপোর্ট। দু'পাতার পাসপোর্ট, ব্রিটিশ পাসপোর্টের আদলে তৈরি। ভেতরে একটি ম্যাপ। ভবনের কোন অংশে পৃথিবীর কোন মহাদেশ বা দেশকে পাবো তার হদিস। তাছাড়া কোন সময় কি পাওয়া যাবে তাও বলা আছে। পৃথিবী ভ্রমণে যেসব এলাকা দেখতে পাবো, যাদের খাবার চাখতে পারবো তার তালিকায় দ্রম্নত চোখ বুলালাম সোৎসাহে। প্রথমেই চীন ও জাপানের প্রাচ্য, তারপর প্যারিসের 'মোঁলা বলরুম' (যারা 'মোঁলা রুজ' ছবিটি দেখেছেন তারা বুঝতে পারছেন), আল্পস পর্বতমালার আবহ বুঝিয়ে দিতে 'আল্পাইন আইস বার', ভবনের বাইরে খোলা জায়গায় আকাশের নীচে 'আরব মরুদ্যান', উল্টাদিকে আরেকটি খোলা জায়গায় আমেরিকার বাগান - সেখানেই খাবারের ব্যবস্থা, ল্যাটিন আমেরিকা - কিউবা, ব্রাজিলের আবহ তুলে ধরতে আলাদা মঞ্চ করা হয়েছে, সারা পৃথিবীর বিয়ার দিয়ে সাজানো হয়েছে 'ওয়ার্ল্ড বিয়ার বার' সেখানেই রয়েছে সুমো রেসলিং রিং, ইটালিয়ান কফি আর আইসক্রিম দিয়ে ছোট্ট করে সাজানো ভেনিসিয়ান পিয়াজ্জা, সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে খোলা জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে ভারত ও তার সংস্কৃতির জন্য। মোটামুটি এই হলো পৃথিবীর ম্যাপ। কিছু দেখার, কিছু চাখার, কিছু উপলব্ধি করার, ও কিছু নিজে করে দেখার আয়োজন।

প্রাচ্যেই সূর্যোদয়। আমরাও পা রাখলাম জাপানে। কিমোনো পরা মেয়েরা এগিয়ে দিলো প্রাচ্যের খাবার 'সুশি'। পানীয়ও রয়েছে, চীনা সাদা মদ, জাপানিজ 'সাকে'। যদিও কাগজের তবু ছাদ থেকে ঝুলছে চীনা লণ্ঠন। তার লাল আলোয় মায়াবী একটা পরিবেশ। পাসপোর্টের সাথে পাঁচ ড্রিংকের কুপন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো। সেগুলো ভরসা করে ঢুকলাম আল্পাইন আইস বারে। আহারের আগে পানটা যুৎসই হওয়া দরকার। বারের টেবিলে বরফ কেটে একটি ভাষ্কর্য তৈরি করা। তাতে উপর থেকে নীচ পর্যনত্দ দুটা ছোট ছোট নালা কাটা হয়েছে। সে নালার নীচে মুখ লাগিয়ে দাঁড়াতে হয়। সাকী বরফের ভাষ্কর্যের উপরে ঢেলে দেবে পছন্দের ভদকা বা হুইস্কি। বরফের গা বেয়ে নেমে আসতে আসতে তা হয়ে উঠবে হিমশীতল। রসিক পিয়াসী নীচে মুখ লাগিয়ে দেবেন চুমুক। এক চুমুকে আলপাইনের চূড়ায়। জামা-কাপড় নষ্ট করার ইচ্ছে ছিল না। সুতরাং আমি এসব ঝকমায় গেলাম না। নানারকম ককটেইল ছিল। অর্ডার দিলাম লিঞ্চবার্গ লেমোনেড। জ্যাক ড্যানিয়েলের সাথে কন্ট্রো ও লেমোনেড, উপরে ভাসছে এক টুকরো লেবু। সঙ্গীরা কেউ নিলো লিঞ্চবার্গ কেউ বা হোয়াইট রাশান। আরেক দফা এসে আমি তাও পরখ করলাম। স্মিরনফ ভদকার সাথে কাহলুয়া আর তার মাঝে ঠান্ডা দুধ, বরফ তো থাকছেই। আল্পাইন এলাকা থেকে বেরিয়ে পানীয় নিয়ে বসলাম আরবের মরুদ্যানে। খোলা জায়গায় রাজকীয় ভঙ্গিতে আরবের বিশাল তাঁবু লাগানো হয়েছে। বড় বড় কুশন ও আরবীয় আসবাবপত্র দিয়ে শরীর ছেড়ে আয়েস করে বসার আয়োজন। সামনে উট চড়ার ব্যবস্থা। সত্যিকার উট নয়। কৃত্রিম। চড়ে বসার পর যন্ত্র চালু করে দিয়ে সেটিকে নানা কায়দায় ঘুরানো হবে। কে কতক্ষণ উপরে টিকে থাকতে পারে তার পরীক্ষা। আরবীয় সংস্কৃতিরও একটা আবহ রাখার চেষ্টা হয়েছে মিউজিকের মাধ্যমে। আমরা বসার কিছুক্ষণ পর শুরু হলো মিশরের 'বেলি ড্যান্সিং'। আরবী মিউজিক, তাঁবুর আয়েশ আর চোখের সামনে বেলি ড্যান্সার, হঠাৎ করে মনে হলো সত্যি সত্যিই আছি কোনো আরব মরুদ্যানে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।