কাকে বলে শ্যালে? - চাঁড়ালের মত এমন প্রশ্ন করে বোকা বনতে আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু আঙুল তুলে কাঠের বাড়িগুলো দেখানো ছাড়া বেশি কিছু জানাতে পারেন এমন লোকের সাথে আমার দেখা হয়নি। সুতরাং আমিও আপনাদেরকে বলি ছবিগুলো দেখুন। খুব একটা অচেনা ঠেকছে না বোধহয়। কারুকাজ করা কাঠের তৈরি বাড়ি। আমাদের কুঁড়েঘর বা দোচালা টিনের চালগুলো যেমন অনেকটা নেমে এসে নীচের ঘরটাকে ঢাকা দিয়ে থাকে, এও অনেকটা এমনি। তবে বরফের দেশের ঘর বলে চালগুলো তৈরি টালি দিয়ে (বাংলাদেশ থেকেও টালি রফতানি হয় এসব দেশে)। সুইজারল্যান্ডের শ্যালে হিসেবেই বাড়িগুলো বিখ্যাত হয়েছে। কিন্তু আল্পাইন পর্বতমালার যেকোনো অঞ্চলে এমন কাঠের বাড়ি দেখা যায়। নামটা অবশ্যই এসেছে ফ্রেঞ্চ ভাষা থেকে, সুতরাং সবচে সুন্দর শ্যালেগুলো পাওয়া যাবে সুইজারল্যান্ডের ফ্রান্স সীমানত্দের কাছাকাছি অঞ্চলে। পাহাড়ে গরম্নর খামার করা রাখালদের ঘরই ছিল এগুলো। গরমকাল শেষ হয়ে গেলে তালা-টালা মেরে গরম্ন, মাখন ও পনির নিয়ে রাখালরা চলে যেত সমতলভূমির বাড়িতে। এখন পর্যটক ভাগ্য জুটেছে শ্যালেদের কপালে। বরফ-শীতেও থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রত্যনত্দ গ্রাম বা বরফ ঢাকা পাহাড়ের চূড়ার শ্যালেও এখন ইন্টারনেটে বুক করা যায়। আর এ কারণেই শ্যালেগুলোর অতি-অবশ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যোগ হয়েছে বিশাল ঝুল-বারান্দা। রং-বেরংয়ের টবের ফুলও ঝুলে থাকে এসব বারান্দায়। আর বারান্দাগুলো অবশ্যই মুখ করে থাকে বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে। হতে পারে তা স্বচ্ছ জলের লেক, অথবা মেঘের ওড়না পরা পাহাড়। শ্যালে কে পৃথিবীব্যাপী খ্যাতি এনে দিয়েছে কুক্কু-ক্লক বা কোকিল-ঘড়ি। ঘন্টা বাজার সময় ছোট্ট যে কাঠের ঘর থেকে কোকিলটি বের হয়ে এসে সময় জানান দিয়ে ডাকে সেটিই শ্যালে। গ্রিন্ডালওয়াল্ড স্টেশনের পস্ন্যাটফর্ম থেকে ম্যাপ ছাড়াই অচেনা পথ ধরে নেমে যেতে থাকি দ্রম্নত নানারকম শ্যালে দেখবো বলে। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে কাঠের তৈরি শ্যালেগুলো একেকটা অনন্য স্থাপত্য। দেখলেই লোভ হয়, এরকম একটা শ্যালে নিজের থাকলে মন্দ হতো না। ওমর খৈয়াম সম্ভবত: সুইজারল্যান্ড আসেননি; এসে থাকলে তার স্বর্গের বিষয়বস্তুর তালিকায় বাস করার জন্য একটি শ্যালের কথাও বলতেন।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন