লেখা যদি নিজের হয় যত খুশি পোস্টান

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ২৫/১০/২০০৬ - ৭:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


[লেখালেখি নিয়ে ভাবাভাবির কী আছে? সুমন চৌধুরী জার্মান কিছু পত্রিকা থেকে আমাদের জন্য অনুবাদ ধরনের লেখা পোস্টাতে চাচ্ছে। মনে শংকা, একে না আবার ফ্লাডিং বলা হয়। তার এই শংকাগ্রস্ততা নিয়ে আমার এই পোস্ট]বেশি লেখালেখিকে অনেকেই তেরচা চোখে দেখেন। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্ররা। সুতরাং অনিবার্যভাবে বাংলা সাহিত্য থেকে পাশ করা ছাত্র বা বাংলার শিক্ষকেরা কলম খুলেন কদাচিৎ। (বাংলা সাহিত্যের সেবা করেছেন এমন বেশিরভাগ লেখক অন্য বিভাগের ছাত্র। আর সাহিত্যের যদি হন তবে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। বাংলা বিভাগের শিক্ষক অথচ লেখালেখি করেন এমন লোকজন বিরল প্রজাতির মধ্যেই পড়েন।) হাফিজি পাশ করা মাদ্রাসার ছাত্র যত কোরান খতম দেবে তত সওয়াব। ওয়াহিদুল গণির ছাত্র আশরাফুলের ব্যাট থেকে যত বেশি রান আসবে জনগণ তত খুশি। রিপোর্টাররা যত বেশি রিপোর্ট ফেনাবে তত তাদের সুনাম। কেবল অভাগা বাংলা লেখকের কলম খুললেই বদনাম। এ কেমন কথা? মানুষ দিনরাত কথা বলে। এগুলো তো বেদ-পুরান-কোরানের আয়াত আবৃত্তি না। চ্যাটিং করছে ঘন্টার পর ঘন্টা। মোবাইলে চলছে ধুন্দুমার মাতামাতি আর টেকস্ট মেসেজিং। কেউ কেউ এক ঘন্টার কমে ফোন ছাড়েনই না। আর তীরন্দাজের লেখা যদি দুই পর্দা-দৈর্ঘ্যের সমান লম্বা হয় তখন সবাই হাঁপাতে শুরু করে দেন। পড়তে গেলে কি বাড়তি ট্যাক্স দিতে হয় না কি?লেখা তো মনের ভাব প্রকাশ করার একটা উপায়। এর খুব কাছাকাছি আরেকটা কাজ হলো কথা বলা। দৈনন্দিন কথাবার্তা চালাচালি, রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি, আড্ডার গুলতাপিপ, ক্লাসরুমের পাঠদান, কনিষ্ঠদের বকাবকি ও উপদেশ, ধর্মশালায় মরণের পরে কী শাস্তি হবে তার কচকচানি; কথা বলারও নানা রকমফের আছে। লেখারও নানা প্রকারভেদ আছে। কিন্তু মুখে খই ফুটলেও যারা মুখ খোলেন না তারা কলম চলতে দেখলেই মুখিয়ে উঠেন। বড় মুর্খামি!বেদ-পুরান-কোরান-বাইবেল-মহাভারত-রামায়ণ এর সবকিছুই লেখালেখি, তা মানছি। কিন্তু এসবের কারণে সব লেখককেই খত দিতে হবে এমন কালজয়ী কিছু না বেরুতে চাইলে কলম খুলবো না বা কি-বোর্ডে আঙুল ছোঁয়াবো না, এ কেমন বাঁদর-মুল্লুকের আবদার। সময়কে জয় করা ছাড়াও লেখার আরো কাজ থাকতে পারে এটা ভাবাটাও কি কষ্টের?অনেকেই বলবেন, লেখাটা শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। তৈলচিত্র, চলচ্চিত্র,স্থাপত্য এসবের সাথে তুলনীয়। রবীন্দ্রনাথ তো পত্রলেখাকেও পাঠযোগ্য করে তুললেন। লোকজনের ডাইরি অন্যান্যরা পড়ছে সেই কবে থেকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোয়ার-গোবিন্দ ওয়েইন রুনিরও বই বাজারে চলছে। দলিল-লেখক বা জিপিও'র সামনের পত্রলেখকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ছি না। তবে শাড়ি বেচতে গিয়ে টিভিতে যে ঢোলের বাড়ি দেয় সেই বিজ্ঞাপন-নির্মাতাও যদি নিজের কাজকে শিল্পকর্ম ভাবে, তবে দোষ কি? না কি মডেলদের মত তাদের মুখে মেকাপ না থাকায় তাদেরকে সেলিব্রিটি ভাবা কষ্টকর? ব্লগ, নিজের কথাগুলো বলার জায়গা। এক ধরনের বিচ্ছিন্ন জীবনে (প্রযুক্তি, কাজের ধরণ, প্রবাস যাপনের কারণে বিচ্ছিন্নতা এখন বাস্তবতা) সবার সাথে সংযুক্ত বোধের সুযোগ। সেখানে যার যার ভাবনা যত খুশি তা সে বলতেই পারে। যখন যেমন খুশি। তাতে কার কী অসুবিধা?হুম, কেউ যদি বাংলা দৈনিক পত্রিকার সাইটে ঢুঁ মেরে রিপোর্ট কেটে এনে এখানে আঠা মারে, যার মধ্যে তার নিজস্ব চিন্তা বা বোধের কোনো প্রতিফলন নেই, এমনকি টাইপটাও সে করেনি তাতে পাঠকতো বিরক্ত হবেই। একে ফ্লাডিং বলবেই। যে ব্লগের সাইটে এসেছে সে বাংলা পত্রিকার সাইটগুলোও বা ইন্টারনেটের অনেক সাইটের খবরও জানে। কোথাও কোনো লেখা পড়ে থাকলে বা কোনো ছবি দেখে থাকলে তার খবর জানানোই যায়, তবে তাতে নিজের চিন্তা-অনুভূতির কথাসহই হতে হবে। নতুবা যিনি ব্লগিং করলেন তিনি লিখলেন কী? তিনি যদি নাই লিখে থাকেন, অন্যের লেখা (অথবা সামান্য অদল-বদল করে, যা Plagiarism-এর আওতায় পড়ে এমন চুরি করা লেখা) এখানে আঠা মারেন তবে তাকে ব্লগোস্রাব বলাকে আমি দোষের মনে করবো না। সুতরাং সুমন চৌধুরী, লেখার আনন্দে লেখেন। নতুন নতুন বিষয়, চিন্তা, জ্ঞান-কণিকা, আনন্দ-বিনোদনের মুহূর্ত যাই আপনাকে ভাবায় তাই নিশ্চিন্তে পোস্টান। খোঁজাখুজির কষ্টটা আপনার। পড়ার ও জানার আনন্দ আমাদের। লেখার তৃপ্তিটা অবশ্যই আপনার।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।