অভিনন্দন জানানোর সংবাদটা আমিই দিলাম

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৭/১২/২০০৬ - ৬:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


সে প্রায় দুই-আড়াই ঘন্টার দরকষাকষি। তবে মানুষের আবিষ্কৃত ঘড়ি দিয়ে এই সময়ের দৈর্ঘ্য মাপা ঠিক হবে না। কারণ প্রশ্ন যে করছিল তার একেকটা প্রশ্নের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের পড়াশোনা, গবেষণা আর চিনত্দা-ভাবনার বিন্যাস। ঐ মূহুর্তে প্রথমবারের মত এরকম একটা প্রশ্নটা শুনে এ বিষয়ে নিজের অজ্ঞানতাকে ঢেকেঢুকে, কোন বিরাট তাত্তি্বক ভুল না করে ঠিক-ঠাক উত্তর দেয়ার প্রক্রিয়া যখন চলছে তখন মনের বিভিন্ন কোণা-ঘুঁপচিতে যে চিনত্দা-ভাবনার মেশিন ঘুরতে থাকে তার একটা ভিন্ন যন্ত্রণা আছে। মানসিক চাপের কারণে নানা শারীরিক অসুবিধা হয় জানতাম, তবে এই প্রথম আমি অন্যরকম একটা শারীরিক অস্বসত্দির সাথে পরিচিত হই - যেন আমার তৃষ্ণা পেয়েছে অথচ পাকস্থলীর ভেতর থেকে একধরণের জলবাষ্পভরা ঢেঁকুর গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে চায়। বিজ্ঞ মানুষ কেন কারো সামনেই শব্দ করে এমন গ্যাস উৎপাদন করাটা শোভনতার পর্যায়ে পরে না ভেবে আমি শরীরের সব অপচেষ্টাকে ঠেলে আবার পাকস্থলীতে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে কায়দা করে চেহারায় ভাবগাম্ভীর্যতা ধরে রাখি। কিন্তু অস্বসত্দি বাড়তে থাকে সময়ের সাথে যতক্ষণ না তারা আমাকে বলে যে আমি বাইরে গিয়ে বসতে পারি এবং অল্প কিছুক্ষণ পরে তারা আমাকে ডেকে পাঠাবেন।

দরজা আটকে তারা শলা-পরামর্শ করতে থাকেন এবং আমি নাদানের মত ব্যাগ, বই হাতে নিয়ে সিঁড়ির গোঁড়াটায় দাঁড়িয়ে থাকি আত্মবিস্মৃত মানুষের মত উদভ্রানত্দ চোখে। সময় এমন পরিস্থিতিতে কেউ বোধ হয় মাপতে পারে না এবং আমিও সঠিক জানি না কখন দরজা খোলে বব (মানে বব ব্র্যাডনক) আমাকে ভেতরে ডাকে। আমিও আমলনামা দেয়া হবে এমন একটা আবছা ধারণা নিয়ে ভেতরে আবার আসি। এতক্ষণ যারা বসেছিল তারা উঠে দাঁড়িয়েছে, হয়তো চলে যাবার জন্য। তারা মানে রয়্যাল হলোওয়ে, লন্ডন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ক্লাউস ডডস্ আর ডারহাম ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের প্রধান পিটার এ্যাটকিন্স। যদিও ভেবেছিলাম তারা চলে যেতে চাচ্ছে দেখি যে তারা হাত বাড়িয়ে আছে আমার দিকে, বাড়ানো হাত থেকে শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমিও তাড়াতাড়ি তাদের হাতে একে একে হাত ঘষাঘষি করি। তারা আমাকে বলে, "কনগ্র্যাচুলেশনস, ড. চৌধুরী"।

অস্পষ্ট ছায়া-চিত্রের মত দৃশ্যের মধ্যে বিচিত্র সব শারীরিক-মানসিক অস্বসত্দি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও আমি বুঝতে পারি যে থিসিসের ভাইভার দেয়ালটা আমি সফলভাবে অতিক্রম করে ফেলেছি ফলে পিএইচডি ডিগ্রিটা আমার মুঠোয় চলে এসেছে। এই অর্জনের আনন্দ, পাসের আনন্দ কতটা তা পরিপূর্ণ উপলব্ধি করতে পারছিলাম না, কিন্তু যখন দু'জন এক্সটার্নালই জানালেন যে, আমার থিসিসে কোনো সংশোধনই করতে হবে না তখন ভীষণ খুশি লাগলো মনে এই ভেবে যে পুরনো কাগজ-পত্র আবার ঘাঁটতে বসতে হবে না। একটা বিষয়ের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের মানসিক একঘেঁয়েমি থেকেও মুক্তি। সাফল্যের কথাটা জানান দেয়ার জন্য আমি খুব বেশি মানুষকে চিহ্নিত করতে পারি না, যদিও মোবাইলে বহু মানুষের নাম্বারই সংরক্ষিত। আমার এ সংবাদে তো আর সবার চিত্ত আন্দোলিত হওয়ার কথা না। তবে ব্লগের কথা আমার মনে হয়, এখানে একটি পোস্ট দিলে অনেকেই হয়তো খুশি হবেন, অভিনন্দনও জানাবেন।

(এই ঘটনাটি ঘটেছে কাল 6 ডিসেম্বর বিকাল 4 টায়)।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।