আঠারো মাসের মধ্যে দেশে নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদা নিজেই এটা জানিয়েছেন। কারণ তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে ঐ সময় তার লাগবে। তাহলে কি জনপ্রতিনিধি নন এমন একটি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে এই 18 মাস বাংলাদেশ চলবে? সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক দেশই যেখানে আমাদের প্রত্যাশা সেখানে এই সংবাদ নিশ্চয়ই বিভ্রান্তিকর। কে দেবে জবাব?
জরম্নরি অবস্থা চলছে দেশে। সাংবিধানিক রীতি মেনেই ঘোষিত হয়েছে জরুরি অবস্থা। বিগত সরকারের দু:শাসনের বিরম্নদ্ধে শেষ সময়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলো বিরোধী শক্তি। ক্ষমতা দখলের নানা ষড়যন্ত্রের আভাসে ও সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের কান্ডকারখানায় হত-বিহ্বল হয়ে পড়েছিল জাতি। সে কারণেই রাষ্ট্রপতির তত্ত্বাবধায়ক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার সেনাবাহিনী-সুশীল সমাজ- আমলাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার নিন্দা হয়েছে খুব কম। সংবিধানের বিধি-বিধানকে আরেকটু উদারভাবে টেনে-টুনে তাদেরকে বৈধ ঘোষণাও করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তাদেরকে মেনে নেয়া হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবেই। যদিও সংবিধানের সংজ্ঞা কড়াকড়ি অনুসরণ করলে তা হয় না।
এখন তারাই জানাচ্ছেন নির্বাচন করে দেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে আরো 18 মাস সময় লাগবে। কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া এরকম অনত্দবর্তীকালীন সরকার অবশ্যই কি সাংবিধানিক বলে গৃহীত হবে? এই সাংবিধানিক জটিলতার সমাধান কি করবেন বর্তমান সরকার?
কীভাবে দেশ চলবে সে বিষয়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হচ্ছে সংবিধান। বাংলাদেশের সংবিধানের 141ক ধারা মতে জরম্নরি অবস্থা 120 দিনের পর কার্যকর নয়। 120 দিনে 4 মাস পার হয়। জরম্নরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াতে সংসদের অনুমোদন লাগে। যুক্তি বলে, যেহেতু সংসদ নেই সেহেতু এই বাড়ানোর অনুমোদনের জন্য সংসদ নির্বাচন করতে হবে।
সংসদ নির্বাচনের বিধান দেয়া আছে সংবিধানের 123 ধারায়। সেখানে বলা আছে সংসদ নির্বাচনে 90 দিনের বেশি সময় নেয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুযের্াগ (এ্যাক্ট অব গড) এর ক্ষেত্রে দুর্যোগ অতিক্রানত্দের আরো 90 দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দেশে খোদার কোনো গজব নামেনি যে 90 দিনের পর বেশি সময় নেয়াটা সংবিধানসম্মত বলে চালিয়ে নেয়া যাবে। (আমাদের মনে রাখতে হবে এদেশের আদালতেই সব সামরিক শাসনকাল অবৈধ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। যদিও তা নানা হস্তক্ষেপের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছে।) সংসদের প্রথম বৈঠকের পর জরুরি অবস্থা বজায় রাখা যায় আরো 30 দিন। কিন্তু তার আগে তো সংসদ নির্বাচন করতে হবে।
সুতরাং সংবিধানকে যতভাবেই টানাটানি করা হোক না কেন বর্তমান সরকার এই দীর্ঘ 18 মাস ক্ষমতায় থাকাটা জায়েজ করতে পারবেন না। শেখ হাসিনা বলেছেন তারা ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের কর্মকান্ডকে বৈধতা দেয়া হবে। কিন্তু একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের ইচ্ছা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়।
আমরা সুষ্ঠ, অবাধ ও কালোটাকার প্রভাব মুক্ত নির্বাচন চাই। আর তা করতে সরকার চাচ্ছেন আরো 18 মাস সময়। সংবিধানে সে সুযোগ নেই। অনেকের মনে হতে পারে গণভোট নিয়ে এই সরকারের বিষয়ে জনমত যাচাই করা চায় বা জনসমর্থন নেয়া যায়। কিন্তু আমাদের সংবিধানের গণভোটের যে ধারাটি সংবিধান সংশোধনের জন্য আছে তাতে সেরকম সুযোগও নেই। তাহলে কি এই 18 মাস দেশ একটি অসাংবিধানিক সরকারের শাসনে থাকবে? জাতির ভবিষ্যত সংকুল সময়ের জন্য এটা কি একটা ভালো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে নাকি ক্ষমতালোভীদের জন্য একটি মোক্ষম সুযোগ তৈরি করে রাখবে? নির্বাচিত সরকার আসার পর এই 18 মাসকে বৈধতা দেয়াটাই বা কতটা যৌক্তিক হবে? 18 মাস ক্ষমতাবাসের আগেই বর্তমান সরকারকে এর একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে। দায়দায়িত্বটা তাদেরই।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন