আমাদের কথা ওরা কেউ বিশ্বাস করেনি। ওরা আপনার আক্রান্ত হওয়া নিয়ে নানা অশ্লীল গল্প ফেঁদেছে। জামাতী মন্ত্রীর দেয়া ইংগিতের গন্ধ শুঁকে ওরা কেচ্ছা ছাপিয়েছে নিউজপ্রিন্ট ম্যাগাজিনে। যখন বাংলাদেশ ক্ষোভে সোচ্চার, শিক্ষার্থীরা কফিন বানিয়ে প্রতিবাদ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। তখন ওরা লেলিয়ে দিয়েছে মাস্তানবাহিনী আর ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর বইয়ে দিয়েছে ঝড়। আমরা চিৎকার করে বলেছি এ আক্রমণ হিংস্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর। যারা আপনার ছাপপান্ন হাজার বর্গমাইলের পাতা থেকে বের হয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আপনার উপর। চিরচেনা বাংলা একাডেমি, রমনা পার্কআর টিএসসির আলো-আঁধারিতে তারা আপনার শরীর থেকে ঝরিয়েছিলো রক্তবন্যা। ক্ষতবিক্ষত করেছিলো আপনার মুখমন্ডল। আমরা মুহুর্তেই চিনেছিলাম কারা তারা। ওরা স্বাধীনতার শত্রু। ওরা দেশের শত্রু, ওরা মানবতার শত্রু। ওরা নব্য রাজাকার-আলবদর আর অন্ধকারের ঘৃণ্য কীট। আমরা ঠিকই চিনেছিলাম তাদের। কিন্তু কিছু চেনামুখ সংস্কৃতিসেবী আমাদের কথা বিশ্বাস করেনি। তারা ঘাতকের পৃষ্ঠপোষকদের কাঁধে কাঁধ ঘষে আমাদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গের হাসি হেসেছে।
হুমায়ুন আজাদ আপনি কি কখনো কল্পনা করেছেন এই তাদের সত্যিকার রূপ?
যখন বিপন্ন হয় একজন অধ্যাপক-লেখকের জীবন তখন সব সাংবাদিক-সম্পাদক-লেখক কেনো একজোট হতে পারেন না প্রতিবাদে?কেনো তারা গল্প ফাঁদেন হামলাকারীর হয়ে? হুমায়ুন আজাদ তো কারো দিকে ছুরি নিয়ে তেড়ে যান নি। নিভৃতে নীরবে তিনি করেছেন সাহিত্য চর্চা । লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সভ্যতা ও ভাষাতত্ত্বের বই। রাজনীতিও করেননি কোনো দলের হয়ে । তবে কেনো আমরা একযোগে দাঁড়াতে পারিনা তার হামলার বিপক্ষে। কেনো আমাদের তাড়িত করে না একজন লেখকের জীবন ও স্বাধীনতার আকাঙ্খা ।
যখন আপনি চার কি পাঁচটি বইয়ের জনক, তখন থেকেই আমার সংগ্রহে ছিল আপনার বই। রাতভর বন্ধুরা মিলে আবৃত্তি করে যেতাম জ্বলো চিতাবাঘ আর অলৌকিক ইস্টিমার। কী আবৃত্তিযোগ্য ছিলো একেকটি কবিতা। কবিতার সে পাতাগুলো, চরণগুলো এখনও ভাসে চোখে। যদিও আপনার কোনো ক্লাসে ছাত্র হয়ে বসিনি পাঠ নিতে তবু তো শিক্ষক আপনি আমার। কিশোরদের জন্য লেখা লাল নীল দীপাবলী (বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী) আর কত নদী সরোবর ( বা বাংলা ভাষার জীবনী) পড়ে পড়েই তো বাংলা ভাষার সাথে আমার হৃদ্যতা। আজো দেশের শত-সহস্র কিশোরের লাইব্রেরিতে শোভা পায় সেই বই। শুধু আপনি আপনিই চলে গেছেন অকস্মাৎ হুমায়ুন আজাদ। যদিও ফিরে এসেছিলেন ঘাতকের আক্রমণকে মিথ্যে প্রমাণ করে, যদিও পেয়েছিলেন দ্্বিতীয় জনম, তবুও তা ছিল ক্ষণকালের।
আকর-গ্রন্থ নারী লিখে আপনি ঠাঁই করে নিয়েছিলেন অজস্র বাঙালি রমণীর হৃদয়ে। আর আজ নারী দিবসে ঘাতকেরা স্বীকার করলো সেই মর্মবিদারক সত্য। অন্ধকারের সেনাপতি সে, যদিও নাম তার 'সানি' সেই ছিলো দায়িত্বে আপনার হত্যাযজ্ঞের। আপনাকে হত্যা করে তারা এদেশে অন্ধকারের শাসন চেয়েছিলো। আর এই কথাটাই আমরা যখন অভিযোগ করে বলেছিলাম, তখন কত খ্যাতিমান সাংবাদিক আর সম্পাদক অশ্লীল গল্প ফেঁেদে আমাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করলো। কিছু কিছু মানুষকে তৃপ্তির ঢেকুঁরও তুলতে দেখেছি আপনার আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে। অনেকেই নির্বিকার ছিলেন যেন তারা নিজেরা আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বলার কিছু নেই। আজ যখন এসব ধর্মের গুন্ডারা স্বীকার করে আপনার হত্যাচেষ্টার কথা তখন তারা বিস্মৃতির ভান করে। তারা মনে করতে পারে না কে এই হুমায়ুন আজাদ। এইসব ঘৃণ্য মানুষের দেশে, বিবেকহীন ভদ্রলোকদের ছায়ায় এখনো হাঁটছি আমরা।
সোয়াস লাইব্রেরীতে এখনও আপনার পিএইচডি থিসিসটি আছে। পরম মমতায় আমি তাতে রেখেছি হাত। আর নির্মম ধ্বংস কামনা করেছি সেসব অন্ধকারের কীটদের আর তাদের যারা সাময়িক স্বার্থের আশায় হাত মিলায় ওদের সাথে।
আজ আপনি নেই হুমায়ুন আজাদ। বাংলা সাহিত্যের সাহসী যুবরাজটিই নেই আজ। বুকে তাই আগলে রাখি আপনার সৃষ্টির বিচিত্র বর্ণের দীপাবলী। বাংলায়, বাংলা সাহিত্যে তারা ছড়াবে নানা রঙের ছটা। আর অশ্রুসজল চোখে স্মরণ করবে আপনার নাম। মৃতুর মুখ থেকে ফিরে এলেও আপনাকে পারিনি রাখতে ধরে আমরা হৃদয়ের উষ্ণতায়। আপনি বেঁচে থাকতে পাকড়াও করতে পারিনি ঘাতকদের বরং কাদা ছোড়াছুড়ি করেছি অক্ষম আমরা।
যে সাহসে আপনার কলম সাহিত্যে প্রজ্জ্বলিত করেছে আলোকবর্তিকা আমরা তাকে দিতে পারিনি নিরাপত্তার ছায়া। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে আপনাকে আমরা দিতে পারিনি নির্বিঘ্নে লেখবার একটি টেবিল। বরং তাকিয়ে দেখেছি নিষ্কর্মা 'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে' গেছে। আমাদের এই ব্যর্থতা ক্ষমা করবেন হুমায়ুন আজাদ। ক্ষমা করবেন।
মন্তব্য
(দীর্ঘশ্বাস)
*মুহম্মদ জুবায়েরের পুরনো লেখাটি প্রথম পাতায় দেখে মনে হলো যারা চলে গেছেন তাদের কত সহজে আমরা ভুলে যাই। আমাদের শোক শুধু মৃত্যুদিবসের জন্য তোলা থাকে। তাও বছর বছর এই পৌনপুনিকতায় অনেক কথাকে নিজের কাছেই খেলো মনে হতে থাকে। তখন আবেগকে আমরা অবজেক্টিভলি দেখার চেষ্টা করি এবং বিস্মৃত হয়ে দার্শনিক সাজার চেষ্টা করি।
যেদিন সানি স্বীকার করেছিল হত্যা-প্রচেষ্টার কথা সেদিন এটা পোস্ট করেছিলাম। এখন নতুন করে পোস্ট করলাম।আগের তারিখ হারায়নি নিশ্চয়।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
-
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আগে পড়ি নি, এবার পড়লাম, এবং খুব ভালো লাগলো। এমন লেখার দরকার ফুরোয় নি আজও, দুঃখের কথা এটাই।
আমাদের অনবরত দেরী হয়ে যাচ্ছে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
এইসব আর্কাইভ হওয়া দরকার। যে কোন দুর্বিপাকে কার কি ভূমিকা থাকে, পরে কে কি রকম ভূমিকা বদলায়।
হুমায়ূন আজাদ আক্রান্ত হওয়ার পর প্রগতিশীল ছাত্ররা যখন আন্দোলনে নামে তখন ছাত্রলীগের এক নিরপরাধ কর্মী আব্বাস'কে পুলিশ ভিক্টিম করেছিলো, জানিয়েছিলো এ হলো ভয়ংকর সন্ত্রাসী 'বোমা আব্বাস'
যখন আসল সত্যগুলো বের হয়ে আসে তখন পেছনের ঐসব রাখঢাকগুলো ও উন্মোচন দরকার, কারা অপরাধীদের আড়াল করে? কারা অপরাধীদের প্ররোচিত করে?
না হলে বারবার,আবারো এরকম আক্রমনের আশংকা থেকে যায়,আছে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভীষন মর্মস্পর্শী!
..................................................................
ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো প্রাসঙ্গিকতা হারায় না। কিছু কিছু লেখা আছে যেগুলো পুরোনো হয় না। দেশ যেভাবে চলছে তাতে শোমচৌ-এর এই লেখা আরো পাঁচ-দশ বৎসর পর পোস্ট করলেও পুরোনো বলে মনে হবে না।
হাসান মোরশেদের মত আমিও আর্কাইভ চাই। নয়তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ব্যাপারে সময় বুঝে নিজেদের সুযোগ-সুবিধামত অবস্থান পালটানো কাপ্তানদের আবার ভোটের সময় আসলে চেনা যাবে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রতিক্রিয়াশীল মোল্লারা সর্বকালেই মুক্তচিন্তকদের শত্রু হিসেবে দেখেছে, তাদের হত্যা -নির্যাতন করেছে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে' চলে যেতে পারে না।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
সব্যসাচী লেখক ড. হুমায়ুন আজাদের হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে গ্রেফতারের আহব্বান জানানো হয়েছে। বহুমাত্রিক লেখক ড. হুমায়ুন আজাদের আগামীকাল মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি এ আহবান জানান।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে।
- নিয়াজ
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে আমার একটা স্মৃতিচারণমূলক লেখা আছে এখানে। পাঠকেরা পড়তে পারেন।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন