এসিড সন্ত্রাসের বিষয়ে তীরন্দাজ একটি আবেগঝরা লেখা পোস্ট করেছেন। সেজন্য অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। সে লেখা লিখতে গিয়ে তিনি পুরুষদের বোরকা পরা উচিত বলে যেভাবে শিরোনাম করেছেন তা যারা বোরকার পক্ষে তাদের কাছে কেমন লাগবে আমি জানি না। তারা একে হয়তো বোরকার অপমান ধরতে পারেন। আমি বোরকার পক্ষের লোক নই। সুতরাং বোরকার বিপক্ষে তীরন্দাজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি সমর্থন করি। সেইসাথে আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যেখানে তিনি খর্ব করে দেখেছেন তার বিপক্ষে আমি আমার মত জানাচ্ছি। তার লেখার শেষের আগের প্যারাটি নিয়েই শুধু আমার আপত্তি। তিনি অভিযোগ করেছেন যারা আমরা শাখামৃগ বা বানর নিয়ে অহেতুক মহাকাব্য রচনা করলাম তা নিয়ে। অভিযোগ করেছেন সেইসব প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে যারা ইসলাম ও ধর্মের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখছেন তাদের বিরুদ্ধে। (তিনি নিজে অবশ্য খেয়াল করেননি যে তিনি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক বোরকার বিরুদ্ধে কড়া কড়া কথাও বলেছেন। নিজের দোষ হয়তো অনেকের চোখে পড়ে না।)।
তার লেখাটির পরিপ্রেক্ষিতে আমার মন্তব্য আমি দিয়েছি। এখানে আরেকটু বিস্তারিত করে তা লিখছি। আমার মনে হয়, যত সহজে তীরন্দাজ রায় দিয়ে দিলেন, সমাজ বিশ্লেষণ তেমন একটা সহজ কাজ নয় । বর ং অনেক জটিল। প্রতিদিন বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাতে আমাদের দেশ, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থার অধ:পতন নিয়ে কত বিশ্লেষণই বের হয়। এদের একজনও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞানের গবেষক নন (হাতে গোণা দুয়েকজনকে বাদ দিচ্ছি)। কেন নেই? কারণ তারা গভীর জ্ঞান রাখেন বলেই জানেন সমাজ বিশ্লেষণ বিষয়টি এত সহজ নয়। অথচ আনাড়িরা তা সহজে করে যাচ্ছেন। কতটা কঠিন সেই কাজ। আসুন নীচের একটি উপাদান (ধর্ম আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে।) নিয়েই কথা বলে দেখা যাক।
বাংলাদেশ তো সিংহভাগ মুসলিমের দেশ। এবং সেসব মুসলমানদের অধিকাংশ (75-80% হবে) অন্তত: শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়ে। তো এরকম ধর্মপ্রাণ দেশে ধর্মের ছায়াতলে থাকা যুবকেরা কেন এসিড ছুঁড়ে মারে তাদের প্রেমাস্পদকে? (এক্ষেত্রে চাচাতো বোনকে)। আমি নিশ্চিত না হলেও প্রমাণ করা সম্ভব এসব এসিড সন্ত্রাসীরা, এক্ষেত্রে আসমা আকতারের চাচাতো ভাইও সেরকম ধর্মপ্রাণ মুসলিম যুবকই হবেন। এত ধর্মপ্রাণের দেশে, নামাজির দেশে যুবকদের মনে এই বর্বরতার জন্ম হচ্ছে কিভাবে?
হ্যা এই দেশে এসিড সারভাইভাল ফাউন্ডেশনও আছে। তার প্রতিষ্ঠাতা মনিরা রহমান? ছাত্রইউনিয়ন করা কমু্যনিস্ট কমরেড। বলতে গেলে ধর্মে-কর্মে তার মন খুব একটা নিবেদিত না। তা এ রক্ষায় তিনি এগিয়ে আসেন কেন? কেনো বোরকা পড়া মেয়েরা এগিয়ে আসে না? কেন? কেন ধর্মের অনুসারীদেরকে শুধুএসিড ছুঁড়তেই পাওয়া যায়। উদ্ধার কাজে পাওয়া যায় না।
উত্তর খুঁজতে বেশিদূর যেতে হবে না আপনাকে। এখানে এই ব্লগের কিছু লোকের লেখা পড়লেই পেয়ে যাবেন তারা কেনো মনে করেন এসিড ছোঁড়াটা ঠিক আছে। বুরখা না পড়লেই এসিড মারাকে তারা খুব একটা দোষের দেখেন না।
তাদের কথা বাদই দিলাম। এই যে এতো ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ আর সেই দেশে এরকম বর্বরতা। এ দুয়ের মধ্যে কি কোনো যোগসূত্র আছে? (নিজের উত্তর নিজে খুঁজে বের করুন)।
আমাদের অনেকেরই নিজস্ব উত্তর আছে। আর সে কারণেই আমরা আমাদের মতো করে প্রতিবাদ করি, সোচ্চার হই। এ কারণেই সমাজের অনেক গোড়ার বিষয় উঠে আসে অনেকের ব্লগে। আর এ কারণেই বানরদের বেসবল ঠেকাতে সৃজনশীল প্রতিবাদ হয়। আমাদের মত প্রগতিশীলরাই এসিড সারভাইভাল ফাউন্ডেশন খোলে। আপনার কাছে প্রতিবাদকে সময় অপচয় মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাস তা বলে না। মানুষের পুরো সভ্যতায় যা কিছু অর্জন বা আবিষ্কার হয়েছে তার চেয়ে বেশি অর্জন হয়েছে দ্্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। তেমনি বানর বিষয়ক প্রতিবাদের সময়ও আমরা পেয়েছি বিভিন্ন স্বাদের অনেকগুলো লেখা। যেগুলো ব্লগের সবগুলো লেখার মধ্যেই শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করতে পারে। আপনি নিজেই বলুন, করে না?
তীরন্দাজ, আপনি ধরতে পারছেন যে এরকম যারা আপনার অপছন্দের লেখা লেখে (ধরা যাক আমি) তাদের সাথে আপনার চিন্তার মিলটাই বেশি। কিন্তু চিন্তার বেশ কিছু দূরত্বও দেখতে পান আপনি। কারণটা হয়তো ধরতে পারছেন না। কারণ বুঝা না গেলে তা নিয়ে অনুসন্ধান করুন। বুঝতে চেষ্টা করুন। শেষ রায় দেবেন না। বর্তমান সভ্যতায় এরকম জাজমেন্টাল হওয়াকে একটি বিশাল দোষ হিসেবেই দেখা হয়।
সবশেষে বলি, সমাজের যে অসংগতি আপনার চোখে পড়ে তা সারানোর জন্য নামতেই পারেন তবে আগে ভাগেই জানিয়ে রাখি রোগের লক্ষণটাই রোগ নয়। সত্যিকার প্রগতিশীলরা রোগটাকেই আক্রমণ করে লক্ষণকে নয়। আর ওষুধ প্রয়োগ না করলে রোগী বাঁচানো যায় না। যদিও অনেকে ইনজেকশন বা অপারেশনে ভীষণ ভয় পায়, আপনাকে নিশ্চয়তা দেই এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। আর অপারেশন যদি করতেই চান তবে রোগের মূল কারণ টিউমারটিকেই অপারেশন করে সরাতে হবে, টিউমার থাকায় যে মাথা ব্যথা হয় তার জন্য প্যারাসিটামল খেয়ে কোনো কাজ হবে না।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন