প্রথম খসড়া থেকে চূড়ান্ত রূপ: গবেষণার একাকীত্ব-১

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ২৯/০৩/২০০৬ - ২:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ব্লগ লিখছি না কিন্তু পড়তে তো হয়ই। একধরনের অদৃশ্য আড্ডা হচ্ছে সবার সাথে। তর্ক-বিতর্ক জমছে; মন্তব্য রূপ নিচ্ছে গালাগালিতে; এ এক সাংঘাতিক প্রাণবন্ত অবস্থা। তো এসব রেখে গবেষণার কাজে যাই কি করে। কিন্তু গবেষণা তো সাংঘাতিক মনোযোগ দাবী করে। এই দোটানায় শেষ মেষ সিদ্ধান্ত নিলাম 'পাহাড়কে মুহাম্মদের কাছে' আসতে হবে। তাই এই লেখা। গবেষণার সময় ও ভাবনাকে আমি নিয়ে আসছি ব্লগে। তাতে আড্ডাটা বজায় থাকলো আবার ব্লগানোর অজুহাতে নিজের চিন্তাগুলোকে বিন্যস্ত করা গেলো।
যারা দীর্ঘকালীন গবেষণা করেছেন তারা জানেন গবেষক তার ক্ষেত্রেবড় একা। নানা তত্ত্ব আর তথ্যের মধ্য দিয়ে সে হাঁটে আর তার মাথায় কিলবিল করতে থাকে সেগুলোকে একটা বিশেষ আঙ্গিকে সাজিয়ে কোনো বিশেষ প্রশ্নের উত্তর তৈরি করা। সেসব অন্তর্গত চিন্তার কথা কাউকে বলে বুঝানো যায় না। নিজেই তাই নিজের সাথে সংলাপ চালিয়ে যেতে হয়। এ এক একাকী জীবন। ভীষণ একাকী।

তো আমার এই একাকীত্বের ফাঁকে যদি কিছু কথাও এখানে বলি আমি না হয় হালকা হলাম। কিন্তু পাঠকদের কী লাভ। খুব বেশি পাঠক পাবো আশা করি না। তবে লাভ তাদের হবে না তা নয়। যারা দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা শুরু করেছেন তারা গবেষকের যন্ত্রণা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। যারা শুরু করার কথা ভাবছেন তারা একটি আগাম সাবধান-সংকেত পাবেন। আর তাছাড়া আমার পিএইচডি ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে সে দেখেও কেউ কেউ আনন্দ পেতে পারেন। প্রক্রিয়াটিকে অন্যের অভিজ্ঞতায় দেখে ফেলার সুবিধা অনেক। ছোটখাটো গবেষণার ক্ষেত্রেও, তথ্যমূলক কোনোকিছু লেখার জন্য , এ অভিজ্ঞতাটি কাজে আসবে। কারণ প্রাথমিকভাবে থিসিসের একটি খসড়া তৈরি করে ফেলেছি। এখন চূড়ান্ত একটি রূপ দিতে হবে একে। সুতরাং লেখার এই বিবর্তনের সাথে লেখকের সময়ের এক দিনলিপি হয়ে থাকবে এই লেখা।

চলুন তাহলে সব বাদ দিতে ডুবে যাই নিজের গবেষণার ভুবনে। আগেই বলেছিলাম গি্নন, মানে আমার দ্্বিতীয় সুপারভাইজার, প্রথম খসড়াটা দেখে ফেরত দিয়েছে। তা প্রায় একমাস হলো। সংশোধনের কাজ শুরু করতে পারিনি। মনটাকে গোছাতে হয়। বিক্ষিপ্ত মনটাকে জড়ো করে এনে সাধকের মত নিবেদন নিয়ে বসতে হয়। আর কোনো ভাবনা এসে যেন তার ধ্যান না ভাঙায়।

প্রায় 6 পৃষ্ঠার মন্তব্য লিখেছে গি্লন। প্রতি বাক্যে নানারকম বুদ্ধি-পরামর্শ-সমালোচনা-সংশোধনের ইংগিত-সাহস আরো কতকি। এগুলো মনে রাখাই তো একটা বিপদ। প্রথমেই তার মন্তব্য নিয়ে বসলাম। পড়লাম বার দুয়েক। এসব মন্তব্যের বিষয়ে ধারণাগুলো তৈরি হওয়ার পর তাকে ই-মেইল করলাম সাক্ষাৎকারের জন্য। হায়। একমাস সে ইউনিভার্সিটি আসবে না। আবার নতুন সেমিস্টার শুরু হলে। পরিকল্পনা বদলালাম। মন্তব্যগুলো এক পাতার এক টেবিলে সংক্ষেপে সাজাতে হবে। সেখানেই লিখে রাখাতে হবে আমার কি করণীয়। আর এই টেবিলটা গি্লনের কাছে পাঠিয়ে মতামত চাইতে হবে ই-মেইলে।

গি্লনের আরেকটা পরামর্শ ছিলো তথ্য পরিবেশনের পদ্ধতি সম্পর্কে। ও বললো, James Ferguson এরThe Anti Politics Machine বইটির মত পরিবেশনা হলে ভালো হয়। তাতে মূল সরকারী দলিলপত্রের লেখাগুলোর স্বাদও পাওয়া যাবে আর বিশ্লেষণটাও সাথে থাকবে। কিন্তুআমার কাছে মনে হলো, আমিতো সেভাবেই লিখেছি। পার্থক্যটা কোথায়। বইটা জোগাড় না করলে হচ্ছে না। আমাজনে সার্চ করে দেখলাম দাম প্রায় 15 পাউন্ড। তবে ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে এক কপি আছে। আজকে বইটা নিয়ে এলাম। প্রথম প্রকাশ হয়েছিলো 1990 তে। ফাগর্ুসন পিএইচডি করেছিলো 1985 তে। গবেষণা থেকে বই হতেও 5 বছর লাগে। বইটা সুখপাঠ্য মনে হলো। বাসে বসেই পড়া শুরু করলাম। শেষ হোক তখন সংক্ষিপ্ত সার না হয় বলবো। তবে এখন বলি, কি করে গবেষণার নাম বদলে বইয়ের নাম হয়। এও এক বড় কায়দা। শেখার আছে। ফাগর্ুসনের ডিজারটেশনের নাম ছিল, "Discourse, Knowledge, and Structural Production in the 'Development' Industry: An Anthropological Study of a Reral Development Project in Lesotho"
অথচ সেই গবেষণার উপর ভিত্তি করে যে বইটি ছাপা হলো, তার নাম অন্যরকম: The Anti-Politics Machine: 'Development', Depoliticization, and Bureaucratic Power in Lesotho.

গবেষণা থেকে বই। এই যে পরিবর্তন , পরিবেশন ও পাঠকতুষ্টির জন্য এও এক চিন্তা-জাগানিয়া বিষয়।
সে যাক, বইটি পড়া শুরু করি।

@এই একাকী গবেষণার পোস্ট পড়ে কারো যদি মাথায় কোনো ভাবনার উদ্রেক হয়, যাই হোক না কেন, তবে মন্তব্য করতে ভুলবেন না। একাকীত্বের একটু রফা হয়।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।