প্রোটিন বা আমিষ এ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি (জীবকোষ গঠনের মৌলিক উপাদান)। খাবার হজম হওয়ার পর ভেঙ্গে এটা তৈরি হয় যা শরীর শুষে নেয়। প্রোটিন থেকে হরমোন ও এনজাইম তৈরি হয় যা আমাদের শরীরের কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ শক্তিকে বজায় রাখার জন্য এগুলো দরকার হয়। যা অসুখকে মোকাবেলা করে এবং শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত টিসু্যকে আবার ঠিক করে। প্রোটিন আমাদের শরীরকে শক্তি জোগায়। আমাদের শরীর কিছু প্রোটিন তৈরি করে। কিন্তু সব কাজ করার জন্য দরকারি সব প্রোটিন তৈরি করে না। সেজন্য আমরা যেসব খাবার খাই সেসব থেকে এসব প্রোটিন নিতে হয়। মাংস, মাছ, হাঁস-মুরগি, ডিম এবং দুধ থেকে তৈরি খাবার আমাদেরকে সম্পূর্ণ প্রোটিন দেয়। শাকসব্জি যেমন শিম বা মটর জাতীয় সব্জি, দানাদার শস্য, বাদাম বা বীজ (বা বিচি) থেকে যেসব প্রোটিন পাওয়া যায় তা হচ্ছে অসম্পূর্ণ প্রোটিন। কিন্তু যদি ঠিক মত মিশিয়ে খাওয়া যায় তবে শাকসব্জি থেকেও সম্পূর্ণ প্রোটিন পাওয়া যায়। শাক-সব্জির প্রোটিন আমাদের বাড়তি স্বাস্থ্য সুবিধা দেয় কারণ এসবে চর্বির পরিমাণ কম এবং আঁশ বা ফাইবার বেশি এবং কোনো কোলেস্টেরল নেই।
কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসার শরীরের মাসল ও বিপাকের (খাদ্য হজমের প্রক্রিয়া) জন্য দরকারি শক্তি দেয়। এজন্য আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার ও ক্যালরি খাই তার বেশিরভাগ কার্বোহাইড্রেট দিয়ে তৈরি হওয়া উচিত। বিভিন্ন রকমের অনেক খাবারে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে স্টার্চ, বা জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন, দানাদার খাবার, চাল, পাস্তা, ব্রেড, শিমজাতীয় সব্জি, আলু, গাজরের মত মাটির নীচের সব্জি এবং অন্যান্য সব্জি। শস্য দানা ও শাকসব্জি থেকে অাঁশ বা ফাইবারও পাওয়া যায়। সাধারণ কার্বোহাইড্রেট বা চিনিও রয়েছে যা ফল এবং দুধ থেকে তৈরি খাবারে পাওয়া যায়। এগুলোও কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস। প্রসেস করা খাবারে যেসব কার্বোহাইড্রেট থাকে এগুলো শরীরের জন্য খুব একটা ভালো নয়। যেমন চিনি, মধু, সিরাপ এবং জেলি প্রচুর ক্যালরি দেয় কিন্তু এগুলোর কোনো পুষ্টিগত মূল্য নেই।
ফ্যাট বা চর্বিতে ফ্যাটি এসিড এবং গ্লাইসেরল থাকে, যা ফ্যাটি এসিডকে একসাথে বেঁধে রাখে। এগুলো স্যাচুরেটেড, মনোআনস্যাচুরেটেড, বা পলিআনস্যাচুরেটেড হতে পারে। শরীর চর্বি থেকে শক্তি পায়। টিসু্য তৈরি করা, শক্তিশালী ও মেরামত করার কাজে চর্বি লাগে। কিন্তু আমরা অতিরিক্ত যেসব চর্বি খাই তা শরীরে জমা হয়, এতে আমাদের ওজন এবং হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মাংস, হোল-মিল্ক (পূর্ণ ননীযুক্ত) দুধের তৈরি খাবার, বাদাম, বীজ, এবং তেলে সবচে বেশি চর্বি থাকে। প্রোটিন বা কার্বোহাইড্রেটের তুলনায় চর্বিতে প্রতি গ্রামে দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যালরি থাকে। এজন্য কম পরিমাণ চর্বি বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেতে বলা হয়, যা প্রাণী বা প্রসেস করা ফুডে পাওয়া যায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার কম করে খেলে খাবারের কলেরেস্টরেল পরিমাণ কম রাখা যায়। কলেস্টেরল কোন চর্বি (বা ফ্যাট) নয় কিন্তু মাংস বা হাঁস-মুরগি বা বেশি চর্বির দুধ থেকে তৈরি খাবারে এটা থাকে।
ভিটামিন ও মিনারেল খুব কম পরিমাণে দরকার হয়। এগুলো শক্তিশালী হাড় ও মাসল তৈরিতে এবং শরীরের কাজকর্ম ঠিকভাবে চালু রাখতে সাহায্য করে। আমরা যেসব খাবার খাই তাতে বিভিন্ন পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। এজন্য আমরা যদি বিভিন্ন ধরনের খাবার খাই তবে দরকারি ভিটামিন ও মিনারেলগুলো খাবার থেকে পেতে পারি। তারপরও শরীরের চাহিদার কারণে কিছু লোকের বাড়তি বা সাপ্লিমেন্ট ভিটামিনের দরকার হতে পারে। তবে ব্যালান্সড খাবারের প্ল্যানের বদলে নয় বরং প্রতিদিন যেটুকু ভিটামিন এবং/বা মিনারেল দরকার সেজন্য এসব সাপ্লিমেন্ট খেতে বলা হয়। যদি সাপ্লিমেন্ট দরকার হয় তবে যেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল 50ু100% থাকে সেগুলো বেছে নিন। যেমন, সেন্ট্রাম, সানাটোজেন, হ্যালিবোরেঞ্জ এবং জেনেরিক স্টোর ব্রান্ডস। যদি ডাক্তার না বলে থাকেন তবে খুব বেশি করে বা "মেগাডোজ" সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার দরকার নেই। কোনো কোনো ভিটামিন ও মিনারেল বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি বিষক্রিয়াও হতে পারে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন