ধর্মীয় মৌলবাদের চাষাবাদ-১

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৪/২০০৬ - ৩:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


কাকে বলে মৌলবাদ?
মৌলবাদ মানে হচ্ছে নিজের কাছে যে ধর্মগ্রন্থ পবিত্র তার মূল শাব্দিক অর্থকে সরাসরি অনুসরণ করা। অন্যভাবে বলতে গেলে, মৌলবাদীরা ভাবেন তাদের নিজস্ব ধর্মগ্রন্থের কথাগুলোই হচ্ছে প্রকৃত সত্য। তারা ঘটনার অন্য কোনোরকম ব্যাখ্যা শুনতে নারাজ। হোক তা ইতিহাস, হোক তা বিজ্ঞান, হোক তা মিথ। ধর্মগ্রন্থে যেভাবে বলা আছে, সেভাবেই এটি সত্য। এসবের অন্য কোনোরকম ব্যাখ্যা করা যাবে না। ধার্মিকদের মধ্যে কিঞ্চিত পাশ্চাত্য পড়ালেখায় যারা নাম লিখিয়েছেন তারা বুঝতে পারেন সরাসরি এসব শাব্দিক অর্থ বললে অনেকেই মুখ টিপে হাসেন। তারা তখন একটি ঘুরিয়ে অর্থ করেন এসব ধর্মকথার। একটু ভাব সমপ্রসারণের আশ্রয় নেন। এবং তাদের এই অতি উদার দিল খোলা ভাব সমপ্রসারণের কারণে তাদের ভাবেন নৌকা গাছের পাতায় পাতায় চলে। মৌলবাদীরা সেদিক থেকে বলা যায় কম ভন্ড। তারা মূল নিয়েই আছেন। শালিস যাই হোক, তালগাছ আমার।

মৌলবাদী বিষয়টি বোধহয় গালিই হয়ে গেছে এখন। আর মুসলিমরাই ইদানীং এই বিশেষণে বেশি অভিষিক্ত হচ্ছেন। এতে অনেকে ভারতে পারেন মৌলবাদের সাথে ইসলাম ধর্মটাই বোধহয় সংযুক্ত। আসলে বিষয়টি মোটেই তা নয়। বরং ইসলামী মৌলবাদীরা বিষয়টির ধারণা পেয়েছে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের কাছ থেকেই। আবিষ্কার, উদ্ভাবনে আমরা খুব একটা মাথা খাটাই না। মৌলবাদ আবিষ্কারের একটা চরম সুযোগ ছিল আমাদের কিন্তু ক্রেডিটটা নাসারারা নিয়ে গেছে। খটমটে পরিভাষা দেখে বুঝা যাচ্ছে মৌলবাদ শব্দটি আমরা অনুবাদ করে তৈরি করেছি। মূল শব্দটি ফান্ডামেন্টালিজম। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে প্রোটেস্ট্যান্টরা আমেরিকাতে একটি আন্দোলন শুরম্ন করে। সেই আন্দোলন থেকে এই ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের উৎপত্তি।

বিংশ শতাব্দীর শুরম্নতে আমেরিকাতে যখন ক্ষমতাসীনরা খ্রিস্টান ধর্মের বিভিন্ন আধুনিক ব্যাখ্যা দেয়া শুরম্ন করে তখন এই প্রতিবাদ শুরম্ন হয়। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মাবলম্বীরা এর প্রতিবাদ জানাতে বারোটি লিফলেটের একটি সিরিজ বের করে। যার শিরোনাম ছিল ফান্ডামেন্টালস্ অব ফেইথ। এই শিরোনাম থেকেই জন্ম ফান্ডামেন্টালিজমের। শব্দটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব অবশ্য আমেরিকার সাংবাদিক কার্টিস লি লজের। তো কী বলা হয়েছিল সেসব লিফলেটে? প্রোটেস্ট্যান্টদের বক্তব্য ছিল, সব খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদেরকে কিছু মূল নিয়মনীতিতে বিশ্বাস করতে হবে। যেগুলো কিছুতেই বদলানো যাবে না। এই মূল বা মৌল বিষয়গুলো হলো: ধর্মগ্রন্থ বাইবেল হচ্ছে নিভর্ুল, এতে কোনো ভুল নেই; মানুষ হচ্ছে পাপাচারী, পাপ কর্মের মধ্যে সে ডুবে আছে; যীশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে কুমারীর গর্ভে; মৃতু্যর মধ্য দিয়েই মানুষ মুক্তি পায়। কার্টিস এ থেকে মৌলবাদীদের একটি সংজ্ঞা তৈরি করেন। তার সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাসের মূল বিষয়গুলো আঁকড়ে বসে আছে এবং তা রক্ষার জন্য যুদ্ধ পর্যনত্দ করতে প্রস্তুত, তারাই মৌলবাদী।

1980 এর পরে মৌলবাদ অভিধাটি অন্যান্য ধর্মের আন্দোলনগুলোর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে শুরম্ন হয়। খ্রিস্টানদের সূত্রে পাওয়া মৌলবাদ শব্দ ও ধারণা তখন অন্যান্য ধর্মের গোড়াদেরকে চিহ্নিত করতেও ব্যবহৃত হতে থাকে। এরকম যেসব ধর্মীয় আন্দোলন বা বাহিনী আছে তারা সবাই পবিত্র ধর্মগ্রন্থের শাব্দিক অর্থকেই বড় করে দেখেন না। কিন্তু শব্দটি যখন ব্যবহার শুরম্ন হয়ে গেছে তখন এদের সবার উপর এই শব্দটি প্রয়োগ করেই যাচ্ছেন সুধীসমাজ। তবে বিভিন্ন ধর্মের এসব আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে বেশ মিল রয়েছে। এই মিলটুকুকেই এখন চিহ্নিত করা হয় মৌলবাদ হিসেবে এবং যারা এসব বাসত্দবায়ন করতে চান তাদেরকে বলা হয় মৌলবাদী।

এখন প্রশ্ন হলো, মৌলবাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।