আপনার ডাক্তার আপনাকে যেসব ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন তার বাইরে অন্যান্য লোকদের মত আপনি প্রেসক্রিপশন ছাড়া বা ওভার দি কাউন্টার (ওটিসি) ওষুধ বা হার্বাল বা কবিরাজী চিকিৎসা নিতে পারেন। বাস্তবে, আমেরিকাতে প্রায় 70% লোক প্রত্যেক দুই সপ্তাহে নিজে নিজে একটা বা তারও বেশি ওষুধ খেয়ে থাকেন। অনেক ওটিসি ওষুধ খুব ভালো কাজে দেয় এবং এমন কি আপনার ডাক্তারও এটা খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি নিজেই এই ওষুধ নিয়ে থাকেন, তবে আপনার জানা উচিত আপনি কি খাচ্ছেন, কেন আপনি এটা খাচ্ছেন, এটা কিরকম কাজ করে, এবং কিভাবে এই ওষুধগুলো ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়।
বিপুল সংখ্যার ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া সাধারণ লোক বা পাবলিকের কাছে বিক্রি করা হয়। এগুলো মধ্যে 500 কার্যকর উপাদান রয়েছে। আমেরিকাতে এ ধরনের ওষুধের জন্য প্রতি বছর প্রায় 8 বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়। প্রায় 75% লোক টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র, এবং ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন বা এডভার্টাইজিং থেকে ওটিসি'র বিষয়ে জানে। খারাপ কথা যে, এসব ওষুধ সম্পর্কে বিভিন্ন দাবী বা ভালো কথাগুলো আসলে সত্য নয় বা অল্প কিছুটা ভুল তথ্য দিয়ে সাজানো।
আপনার মত সাধারণ লোককে উদ্দেশ্য করে ওষুধের প্রচুর বিজ্ঞাপন দেয়া হয়ে থাকে। এ থেকে সাবধান। এসব বিজ্ঞাপনের মূল বক্তব্য হচ্ছে যে সব ধরনের লক্ষণ, ব্যথা বেদনা, সব সমস্যার জন্য কোনো কোনো ওষুধ আছে। যদিও বেশ কিছু ওটিসি ওষুধ খুব কাজের, তারপরও বেশিরভাগ এরকম ওষুধ কেনা মানে আপনার টাকা নষ্ট করা এবং আপনার অসুখের যত্ন নেয়ার আরো ভালো উপায় থাকা সত্ত্বেও আপনার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে রাখা।
যদি আপনি নিজেই নিজের ওষুধ ঠিক করে খান, তবে এখানে আপনার জন্য কিছু পরামর্শ:
1. সবসময় ওষুধের লেবেল এবং রোগীর লিফলেটের তথ্য পড়বেন এবং নির্দেশগুলো ভালোভাবে মেনে চলবেন। আইন অনুযায়ী লেবেলগুলোতে ওষুধের সক্রিয় উপাদানের নাম ও পরিমাণ, সাবধানতা এবং নিরাপদ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট নির্দেশ থাকা উচিত। তথ্য গুলো ভালোভাবে পড়লে, এবং প্রত্যেকটি উপাদানকে খেয়াল করলে হয়তো অতীতে ওষুধ ব্যবহারের জন্য আপনার যেসব সমস্যা হয়েছে সেসব তা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। যদি লেবেলে ডোজ সম্পর্কে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে তা বুঝতে আপনার কোনো অসুবিধা হয় তবে কেনার আগে ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞেস করে নিন।
2. আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের সাথে আলোচনা না করে আপনাকে দেয়া ডোজের অতিরিক্ত খাবেন না বা ঠিক করে দেয়া সময়ের বেশি চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন না।.
3. যদি আপনি অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করেন তবে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। ওভার দি কাউন্টার ও প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলো এলকোহল বা অন্য ওষুধের প্রভাব হয় বাতিল বা বাড়ানোর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করতে পারে। ওষুধের নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়ার বিষয়ে যদি আপনার কিছু জানার থাকে তবে সেগুলো খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞেস করুন।
4. যদি সম্ভব হয় তবে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে তৈরি (একের ভেতর অনেক) ওষুধের বদলে একটা সক্রিয় উপাদান দিয়ে তৈরি ওষুধ বেছে নিন। অনেক ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করলে আপনার যেসব অসুবিধা নেই সেসবের জন্যও আপনি ওষুধ পাচ্ছেন। সুতরাং কেন আপনি যেসব ওষুধের দরকার নেই সেগুলোর সাইড এফেক্টের ঝুঁকি নেবেন? একটি উপাদানের ওষুধ ব্যবহার করলে আপনি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া এবং সাইড এফেক্ট কম রাখার জন্য প্রত্যেকটা ওষুধের ডোজ আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
5. ওষুধ বাছাই করার সময়, উপাদানগুলোর নাম জানুন এবং জেনেরিক ওষুধ কেনার চেষ্টা করুন। জেনেরিক ওষুধে ব্র্যান্ড ওষুধের মত একই সক্রিয় উপাদান থাকে, কিন্তু সাধারণত এগুলোর দাম কম হয়।
6. লেবেল নেই এমন কোন কনটেইনার বা লেবেল পড়া যায় না এমন কনটেইনার থেকে কখনও কোনো ওষুধ খাবেন না। আপনার ওষুধগুলোকে আসল লেবেল লাগানো কনটেইনারে রাখুন। অথবা লেবেল লাগানো কোনো ওষুধের অর্গানাইজার বা ট্যাবলেটের ডিসপেন্সারে এগুলোকে তুলে রাখুন। একই বোতলে ভুল করে সব ওষুধ মিশিয়ে ফেলবেন না।
7. যদি আপনার একই রকমের অসুখ হয়ে থাকে তবুও অন্য কারো জন্য প্রেসক্রাইব করা ওষুধ, বা আগের অসুস্থতার সময়ের বেঁচে যাওয়া ওষুধ খাবেন না। সব সময় ওষুধগুলো আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টকে দেখিয়ে নেবেন।
8. ট্যাবলেট বা বড়ি কখনও কখনও ওসোপ্যাগাস বা "খাবারের নালী" -তে আটকে যেতে পারে। এটা যাতে না ঘটে সেজন্য অবশ্যই অন্তত: আধা গ্লাস পানি পান করবেন এবং ওষুধ গেলার পর কয়েক মিনিটের জন্য সোজা হয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন। (কিছু ফলের রস ওষুধের সাথে বিক্রিয়া বা ইন্টারএ্যাক্ট করে, সেজন্য পানিই সবচে ভালো।)
9. যদি আপনি গর্ভবতী হোন বা আপনার ছোট বাচ্চা থেকে থাকে, সেইসাথে পুরনো অসুখ থাকে, বা আগে থেকেই একসাথে কয়েকটা করে ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাহলে নিজে নিজে ওষুধ ঠিক করে খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের সাথে পরামর্শ করে নিন।
10. যেকোন শিশুর নাগাল থেকে দূরে একটা নিরাপদ জায়গায় আপনার ওষুধগুলো রাখুন। ওষুধ থেকে বিষক্রিয়া প্রায়ই ঘটে থাকে এবং এটা বন্ধ করা যায়। ওষুধ রাখার জন্য বাথরুম কোনো ভালো জায়গা নয়। সেখানে বাতাস খুব ভেজা ভেজা থাকে এবং ওষুধ সব সময় শুকনা জায়গায় রাখা উচিত। তালা দেয়া যায় এমন একটা ছোট বাঙ্ েওষুধগুলো রাখুন।
11. বেশিরভাগ ওষুধ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় এবং নষ্ট হওয়ার তারিখ ওষুধে উল্লেখ করা থাকে। তারিখ চলে যাওয়া সব ওষুধ নিরাপদে ফেলে দেয়ার জন্য ফার্মেসিতে নিয়ে যান। এগুলোকে ফ্লাস (কমোডের পানির সাথে বের করে দেয়া) করা উচিত নয় কারণ অনেক রাসায়নিক পদার্থকে পানির সিস্টেমের নাগালের বাইরে রাখতে হয়।
ওষুধ উপকারে আসতে পারে বা অপকার করতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনি এ ব্যাপারে কতটা যত্নশীল এবং আপনি আপনার ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টের সাথে কতটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন তার ওপর।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন