ধর্মের শত্রু বিজ্ঞান-১

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ২১/০৬/২০০৬ - ৮:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের শত্রুতা পুরনো। বিজ্ঞানের নানা অগ্রসরতার ক্ষেত্রে এখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিজ্ঞান। ধর্মীয় মৌলবাদের চাষাবাদ সিরিজের চার নাম্বার লেখাটি এই নিয়েই ছিলো। এ লেখার সাথে ঐ পোস্টটিও (http://www.somewhereinblog.net/durerjanala/post/7219) পড়তে অনুরোধ করি পাঠককে। যারা বিজ্ঞানমনস্ক ধার্মিক তারা বিজ্ঞান পড়ে গিয়ে মোলস্না-পুরোহিতদের বুঝাতে চেষ্টা করেন আপনারা বৃথাই বিজ্ঞানকে শত্রুভাবেন। বিজ্ঞান যা বলছে তাতো ঈশ্বরের ধর্মগ্রন্থে আগেই বলা আছে। কিন্তু শুধু ধর্মগ্রন্থ পড়া লোকজন এসব কথায় খুব একটা আস্থা রাখতে পারে না কখনই। রাখার কোনো কারণও নেই। কারণ বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও দাবীর সাথে ধর্মভিত্তিক জ্ঞানের বিরোধ দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে। দেখা গেছে বিভিন্ন বিষয়ে।

জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন, প্রাণীবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন শাখায় বিজ্ঞান নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া এসব তথ্যের কারণে মানুষ ধর্মগ্রন্থ ভিত্তিক বর্ণনা বা তথ্যকে বাদ দিয়ে এগুলোকেই যৌক্তিক মেনে নিয়েছে। এমনকি ধর্মবেত্তারাও বিজ্ঞানের নতুন তথ্য অনুযায়ী তাদের ধর্ম ব্যাখ্যাও বদলে নিয়েছেন। এতে বুঝা যায়, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের রচয়িতারা বিজ্ঞানপূর্ব সময়ের ধ্যান-ধারণা দিয়েই ঈশ্বরের কাজ-কর্মের বয়ান করেছিলেন। জ্ঞানের অগ্রসরতার সাথে সাথে তাই প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছে সৃষ্টি, জীব ও জগত সম্পর্কে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যাগুলো।

বর্তমান বৈজ্ঞানিক ধারণার আলোকে ধর্মগ্রন্থের অনেক বয়ান তাই পরিত্যাজ্য। বাইবেলের তিনসত্দর বিশিষ্ট ব্রহ্মান্ড, আমাদের মাথার উপরে স্বর্গ আর পায়ের নীচে পাতালে নরক, পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকা সূর্য আর ঈশ্বরের নির্দেশে সূর্যের থেমে যাওয়া-এসব বয়ানে কেউ আর আস্থা রাখে না। একইসাথে কেউই বিশ্বাস করতে চায় না যে, পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে 6,000 বছর আগে এবং মানুষসহ সকল প্রাণী এখন যে আকারে দেখছি সেভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। কিংবা, ভবিষ্যতে কোনো একদিন পচে গলে মাটিতে মিশে যাওয়া মরদেহ আবার চমৎকার স্বাস্থ্যে উঠে দাঁড়াবে বিচারের জন্য। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় এরকম আজগুবি গল্পকে মানুষ সম্ভবযোগ্য মনে করে না। ফলে বিতর্কটি এসে দাঁড়ায় আমরা বিজ্ঞানের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যুক্তি-বিশ্লেষণে পাওয়া নতুন তথ্যে আস্থা রাখবো নাকি প্রাচীন সব ধর্মগ্রন্থের অতি পুরনো ব্যাখ্যাকেই ধর্মের খাতিরে মেনে বসে থাকবো। যারা বিনাপ্রশ্নে বিশ্বাসী তারা ধর্মের জ্ঞান বা বয়ানের প্রতিই পক্ষপাত দেখান। বাকীদের ভোট বিজ্ঞানের দিকে।

কিন্তু ধর্মগ্রন্থে উলেস্নখ করা তথ্যের বিরোধিতা করলে প্রতিটি ক্ষেত্রে চার্চ/উপাসনালয় থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। নতুন তথ্যকে ধরা হয় ধর্মের প্রতি অপমান ও ষড়যন্ত্র হিসেবে। যেখানেই প্রথাগত বিশ্বাসের সাথে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্তের দ্বন্দ্ব দেখা গেছে সেখানেই ধর্মীয় মৌলবাদীরা সোচ্চার হয়েছে সহিংস ভঙ্গিমায়। রক্ষণশীল অতি ধর্মপ্রাণ মানুষ, যারা ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তথ্য ও তত্ত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট, নতুন ও বিরক্তিকর (তাদের ধারণায়) ব্যাখ্যাগুলো সম্পর্কে যাদের আপত্তি, তারাই মূলত: এভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে দৈববাণীর প্রতি তাদের একধরণের প্রবল আনুগত্য। তাদের ধারণায় ধর্মগ্রন্থের সব বক্তব্যগুলো ঈশ্বরের বাণী। সুতরাং এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা মানে হচ্ছে ঈশ্বরকে মিথ্যা বলার অজুহাতে অভিযুক্ত করা অথবা বাইবেল বা ধর্মগ্রন্থগুলো যে ঐশিবাণী তাকে অস্বীকার করা।

আধুনিক সমাজের সচেতন মানুষের কাছে ধর্মের অবস্থান অবশ্য পাল্টে গেছে অনেক। ধর্ম এখন মূল্যবোধ নির্ধারন করে দেয় না। ধর্মের শেখানো অনেক মূল্যবোধ থেকে সরে এসেছে সভ্য মানুষ। যেমন, সমকামীরা বিশপের দায়িত্ব পাচ্ছে অনেক চার্চে। যদিও ধর্ম কখনই সহানুভূতি দেখায়নি সমকামীদের প্রতি। তেমনি ধর্মের দেয়া জ্ঞান, তথ্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে ব্যাখ্যাগুলোও বেশ খেলো মনে হয় অনেকের কাছে। যুক্তির নিক্তিতে ওগুলো টিকে না। বিজ্ঞানের সাথে বিরোধে পেছাতে পেছাতে ধর্মের অবস্থান এখন এতটাই খারাপ যে এটা এখন হয়ে গেছে প্রাইভেট ফ্যান্টাসি বা ব্যক্তিগত অলীক কল্পনায়। অনেকের বক্তব্য হলো, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে ধর্মকে হটিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞান। ধর্মের অবস্থান এখন অনেকটা জোতিষবিদ্যার সমতুল্য। জ্যোতিষবিদ্যা, রাশিফল, হসত্দরেখা দেখে ভাগ্যগণনার বিষয়টি যেমন এখনও টিকে আছে, মানুষের সমাদর পাচ্ছে। কিন্তু তাতে সিরিয়াসনেসের চেয়ে নানা কৌতুহল আর একধরনের মজা পাওয়ার বিষয়টিই বেশি গুরম্নত্বপূর্ণ। ধর্মের অবস্থাও এখন অনেকটা এরকম, জ্যোতিষবিদ্যা বা রাশিফলের মত। এগুলো অতীতের বিভিন্ন ঐতিহ্য, গালগল্প আর মানসিক সন্তুষ্টির দোহাই দিয়ে কোনোরকমে টিকে আছে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।