লন্ডনে আগের সপ্তাটায় গরম ছিল গনগনে। 37 ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল তাপমাত্রা। এরকম গরমে আমি ঘরের বাইরে পা ফেলি না। ঘাম না হলেও এই গরমে শরীর একেবারে পানিশূন্য হয়ে যায়। টবের ফুল পানি না দিলে যেমন নেতিয়ে পড়ে মানুষের অবস্থাও হয় সেরকম। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথি বলে কথা। নিয়ে গেলাম সমুদ্র দর্শনে। লন্ডনের কাছেই সাউথএন্ড অন দ্য সি। ব্রাইটন, বোর্নমাউথ বা পুলের মত জাঁকজমক এখানে নেই। তবে গর্ব করার মত আছে অনেক কিছুই।
সৈকত তেমন আহামরি কিছু না। সমুদ্র সৈকত না বলে টেমস নদীর মোহনা বললেই বেশি ঠিক হয়। তবে এখানেও আছে বিশ্বসেরা একটি জিনিস। সে হচ্ছে এর পিয়ার। সৈকত থেকে আরো গভীর জলের সীমানায় চলে গেছে অতি লম্বা এক পিয়ার। যা 1.33 মাইল দীর্ঘ। বিশ্বে সবচে দীর্ঘ পিয়ার। পিয়ারের ওপর বসানো আছে রেললাইন। ছোট্ট বিশেষ ধরনের রেলগাড়ি চলে তাতে। রেলে চড়ে পিয়ারের শেষ মাথায় যাওয়া যায়।
সমুদ্র স্নানে যেহেতু আসিনি, রোদটাও সহ্য হচ্ছে না, সেহেতু চড়ে বসলাম রেলেই। পিয়ারের শেষ মাথায় কাজ চলছে। আরো সুন্দর করে বিনোদনের নতুন ব্যবস্থা করার জন্য। চাদর পেতে কাঠের পাটাতনে আমরা বসলাম। যদিও মাথার উপর গনগনে সূর্য তবু সমুদ্রের বাতাস ভুলিয়ে দিচ্ছিল রোদ্রের প্রচন্ডতা। পিয়ারের পাইপ দিয়ে চুঁইয়ে পড়া পানি পান করছে একজোড়া কবুতর। গরমটা বুঝা যায় এ দৃশ্য দেখলেই। দূরে নোঙর করে আছে সমুদ্রগামী জাহাজ। আর আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা। থেকে থেকে ভেসে আসছে টু্যরিস্টদের নিয়ে চক্কর দিতে থাকা স্পিডবোটের আওয়াজ। অনেক দূরে দেখা যাচ্ছে শহর আর সৈকতে রৌদ্রস্নান করতে আসা পর্যটকদের। একরকম নীরবতা, একরকম শানত্দি শানত্দি ভাব পিয়ার জুড়ে।
প্রায় ঘন্টাখানেক পিয়ারে বসে থাকলাম আমরা। তারপর আবার চড়ে বসলাম ফিরতি ট্রেনে। সমুদ্রতীরের তাজা কড মাছ দিয়ে প্লেটভরা ফিশ এ্যান্ড চিপস খেয়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। পেটও ভরে আছে সবার। কিন্তু গরমের জন্য কিছুক্ষণ পর পর খেতে হচ্ছিল আইসক্রিম অথবা কোক জিরো।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন