শিবিরের হুমকির মুখে আছেন কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক। শিবিরের কর্মীরা তার বক্তব্যের কারণে তাকে কেটে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। তার কুশপুত্তলিকা তৈরি করে পোড়াচ্ছে। কি বলেছিলেন হাসান আজিজুল হক? কি কথায় এত প্রতিক্রিয়া শিবিরের। গত 21 আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, রাষ্ট্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে একটি সেমিনার ছিল। সেই সেমিনারে হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ধর্মব্যবস্থার উপরে ভিত্তি করে কোনো দেশে শিক্ষা বা আইনব্যবস্থা প্রণয়ন করা উচিত নয়। তার এই কথা শিবির জামায়াতের মূল রাজনৈতিক দাবীর বিরুদ্ধে যায়। কারণ শিবির-জামায়াত দেশে ইসলাম ধর্মভিত্তিক শরীয়া আইনের প্রবর্তন চায়। সে হিসেবে শিক্ষা ব্যবস্থাও চাইবে তাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবাই তো আর জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী নয়। সর্বশেষ নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করলে বাংলাদেশে জামায়াতের সমর্থক ভোটার মোট নাগরিকের 6-7%। কিন্তু তারপরও শিবির এ নিয়ে জল ঘোলা করেছে। তারা হাসানের বক্তব্যকে খন্ডিত করে বিকৃত করে প্রচার করেছে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উস্কানোর জন্য শিবির বলেছে যে তিনি ধর্মের বিপক্ষে কথা বলেছেন। তারা তাকে নাস্তিক, মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে তাকে হুমকি দিচ্ছে তার পরিণতি হুমায়ূন আজাদের মত হবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। হাসান আজিজুল হক বলেছেন সেই সেমিনারের বিষয়বস্তু ধর্মবোধ ছিল না। সেখানে ধর্মনিয়ে কোনো কথা হয়নি। বরঞ্চ তাদের এসব শঠ বক্তব্যবিবৃতির প্রতিবাদ করে তিনি পালটা বলেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে যদি কেউ নিজেকে 'আস্তিক' দাবী করতে পারে তবে অন্য কেউ নিজেকে 'নাস্তিক' দাবী করারও অধিকার রাখে। সুতরাং তাকে ঘটা করে নাস্তিক ঘোষণা করে ফাঁসির দাবী করাটা অযৌক্তিক। প্রথম আলো পত্রিকায় রাজশাহীর সুলতানাবাদের এক মাওলানার বক্তব্যও এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন ধর্মের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্যের পর কেউ মুসলমান থাকতে পারে না। হাসান আজিজুল হক যদি তওবা না করেন তবে তাকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। হাসান আজিজুল হকের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের এই বিষোদগার, প্রকৃতপক্ষে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার একটি মরণ চেষ্টা। দেশের মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে তারা বিভিন্ন সমাজ-হিতৈষীদের বিরুদ্ধে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে, জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখাচ্ছে। তাদের এই কর্মকান্ডের মধ্যে তারা নিজেদেরকে যে ধর্মের বলে দাবী করে তার কোনো চিহ্ন নেই। এসব ধুম্রজাল সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের মনের খায়েস ক্ষমতার গদি। নিজস্ব স্বার্থউদ্ধার। এদের লক্ষ করেই নজরুল বলেছিলেন, হায়রে ভজনালয়,তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!দেশের সিংহভাগ জনগণ নিশ্চয়ই এসব ভন্ডের স্বরূপ চেনে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন