(ধর্মীয় মৌলবাদের চাষাবাদ -9 (প্রথম কিসত্দি)রসুনের কোয়াগুলো যেমন গোড়ায় এসে মিলে একাট্টা হয়, মৌলবাদী দলগুলোর ধর্মের ভিন্নতা সত্ত্বেও দাবীদাওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য তেমনি একসূত্রে গাঁথা। হিন্দু প্রধান দেশের হিন্দু মৌলবাদী দল ও মুসলিম প্রধান দেশের ইসলামিক মৌলবাদী দলের মধ্যে সমঝোতা দেখে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের মূল শত্রম্ন বর্তমান সময়ের মানুষ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিনত্দা-চেতনা, রাষ্ট্রপদ্ধতি, যা ধর্মকে মসজিদ-মন্দিরে ঠেলে রেখেছে, ৰমতাযন্ত্রের উপর ছড়ি ঘোরাতে দেয় না। কিন্তু ধর্মগুলো তো ভীষণ আলাদা-আলাদা, তাহলে ভিন্ন-ভিন্ন ধর্মের মৌলবাদগুলোর মধ্যে মিল থাকা কিভাবে সম্ভব? সেদিকেই আলো ফেলা যাক, চলুন। যত ধর্মের মৌলবাদী গোষ্ঠী পৃথিবীতে আতংকিত করে তুলতে পেরেছে তাদের মধ্যে বর্তমানে পৃথিবীতে খ্রিস্টান ও ইসলামিক মৌলবাদই হচ্ছে সবচে শক্তিশালী। অনুসারীর সংখ্যা ও ভৌগলিক বিস্তৃতি এর একটা কারণ। তবে বড় কারণটি হচ্ছে এই দুটো ধর্মের অনুসারীরাই চান সারা পৃথিবীতে তাদের ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হোক শ্রেষ্ঠ ধর্মরূপে। যদিও ইহুদি ধর্মের অনুসারীরাও এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তাদেরও একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আছে, এবং ধর্মীয় আইনকানুনও আছে তবু তাদের মধ্যে অন্যান্য ধর্মের মানুষকে ধর্মানত্দরিত করার কোনো তাগিদ দেখা যায় না। সে কারণেই ইহুদি মৌলবাদ খুব অল্প মানুষ ও অল্প জায়গাতেই সীমাবদ্ধ। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মও কখনও ইসলাম ও খ্রিস্টান মৌলবাদের মত বড় করে মৌলবাদ ছড়াতে পারেনি। কারণ তাদের ধর্মের রয়েছে নানা বিভাজন ও শাখা-প্রশাখা - স্থানীয় সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একেক দেশে তাদের ধর্মের রূপ পেয়েছে একেকরকম এবং কোনো একটি শাখা বা গোষ্ঠী পুরো ধর্মের সব অনুসারীকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। অন্যদিকে আমরা কখনও মৌলবাদী রোমান ক্যাথলিকের কথা শুনিনি। কারণ তাদের ধর্ম-প্রতিষ্ঠানই অন্যরকম। ক্যাথলিক বিশ্বাস অনুযায়ী পোপ হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতিনিধি। নতুন যুগে কিভাবে জীবন-যাপন করতে হবে, ক্লোনিংটা বৈধ না অবৈধ হবে সে বিষয়ে ঈশ্বরের ব্যাখ্যা পোপই দিয়ে থাকেন। পোপই বাইবেলের নীতি ও আইন অনুযায়ী ক্যাথলিকদের পরিচালনা করেন। অন্যদিকে প্রোটেস্ট্যান্ট বা মুসলিমরা ব্যক্তিগতভাবে ধর্মগ্রন্থ পড়ে নিজেদের মত করে ঈশ্বরের মতামতের ব্যাখ্যা দিতে পারে। এতে এসব ধর্মে ব্যাখ্যা দেয়ার স্বাধীনতা অবাধ। ফলে বিভিন্ন রকম মৌলবাদী আন্দোলনের জন্ম হয়েছে এসব ধর্মে। ক্যথলিকদের মধ্যে রৰণশীল থেকে উদার বিভিন্ন ধরনের মত-বিশ্বাস চালু আছে। কিন্তু ক্যাথলিক মানেই পোপের কর্তৃত্ব মানতে হবে। কোনো ক্যাথলিককে ভিন্নরকম ধর্মীয় আন্দোলন করতে হলে আগে ক্যাথলিক চার্চ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যদিও মৌলবাদী আন্দোলনগুলোর নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে তবু তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মিল। যেমন সব ধর্মের সবগুলো মৌলবাদী দলই 'সেকুল্যারিজম'কে নিজেদের শত্রম্ন জ্ঞান করে। ধর্মনিরপেৰতা মৌলবাদীদের দু চোখের বিষ। আর একারণেই যারা মৌলবাদকে সভ্যতার শত্রম্ন মনে করেন তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, মৌলবাদকে নিমর্ূল করতে হলে পৃথিবীব্যাপী ওড়াতে হবে ধর্মনিরপেৰতার ঝান্ডা।ধর্মনিরপেৰতাকে আক্রমণ করার পাশাপাশি সব ধর্মের মৌলবাদীরা একটি ধারণাকে ভীষণভাবে আক্রমণ করে। সে ধারণাটি হলো গণতন্ত্র। অন্যদিকে সব ধর্মের মূল বক্তব্য শানত্দি, ভালবাসা ও শুভেচ্ছা হলেও সব ধর্মের অনত্দর্গত মৌলবাদীরা ধর্ম বাসত্দবায়নে সহিংসতাকে জায়েজ মনে করে। ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য রক্তপাতে তাদের আপত্তি নাই। বরং সেটিই মৌলবাদী সদস্যদের জীবনের লৰ্য থাকে। বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদীদের এই দুটি মিল নিয়ে বিসত্দারিত আলোচনা পরের কিসত্দিতে।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন