ঝির ঝির করে যেরকম ধারায় বৃষ্টি পড়ছিল তার জন্য রেইনকোটই যথেষ্ট। কিন্তুদুজনের ভাগে ফোল্ডিং ছাতাটার যে অর্ধেকটা পড়ছিল তাতে কারো মাথাই রক্ষা হচ্ছিল না। ইন্টারলেক ইস্ট স্টেশন থেকে বেরিয়েই ছাতার খোঁজে আশেপাশের দোকানগুলোতে ঢুঁ মারছিলাম। যদিও জিনিভা বা বার্নে রোববারে দোকানগুলো বন্ধ দেখে এসেছি, পর্যটকদের বাজার বলেই কিনা এখানে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত দোকান খোলা। তাতে অবশ্য আমাদের ছাতা কেনার কোনো সহজ সমাধান হচ্ছিল না। লন্ডনে 5 পাউন্ডে যে ছাতা পাওয়া যায় এখানে তা 25 ফ্রাঁ। মূল রাস্তা ছেড়ে গলিতে ঢুকলাম দাম কম হবে এই আশায় (ছবি-1)। ভবনগুলো সুন্দর। বারান্দায় ফুল ঝুলে আছে। বিল্ডিংগুলোর ফাঁক গলে যেটুকু আকাশ উঁকি দেয়ার কথা তার সবটা জুড়েই পাহাড়। আর বৃষ্টির দিনে পাহাড়ের ঘন-সবুজ গাছগুলো সাদা সাদা মেঘের হিজাবে ঢাকা। কিন্তু ছাতার দাম সেরকমই চড়া। বেশ একটা ফুল ফুল ছাপা ছাতা কিনে আমরা পরম উৎসাহে বৃষ্টিভেজা রাস্তায় নেমে পড়লাম। হেঁটেই চলে এলাম ইন্টারলেক ইস্ট থেকে ওয়েস্ট স্টেশনে। কাছেই পাহাড়ে চড়ার বিশেষ বাহন ফিউনিকুলার (ছবি-3)। অন্তত: ছয়রকমের বিশেষ বাহন আছে সুইজারল্যান্ডে পাহাড়ে চড়ার জন্য। দেখতে ছোট্ট ট্রেনের মত ফিউনিকুলারগুলো উপরে ওঠে নামে অনেকটা লিফটের প্রযুক্তিতে। কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট বগিগুলোর উচ্চতা সমান নয়, একটার সাথে আরেকটা কেমন একটা ধাপে ধাপে যুক্ত। ফলে উঁচুতে উঠার সময়ও বগিগুলোর মেঝে আনুভূমিকই থাকে। স্টেশনে নেমেই লেকের ফিরোজা ফিরোজা জল দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এবার মুগ্ধ হলাম সেই লেকে ভ্রমণের জাহাজ দেখে (ছবি-4)। সুইসপাসের সাথে সব লেকভ্রমণ ফ্রি। লেকের উপর দিয়ে মহাসড়কের সেতু চলে গেছে। দেখে মনে হয় সেতুটি হঠাৎ করে যেন পাহাড়ের মাঝে হারিয়ে গেছে। যেন ফটোশপের কারুসাজি- হাইওয়ে টু মাউন্টেন (ছবি-5)। লেকের দু'পাশে বিভিন্ন রকমের হোটেল, হোস্টেল, ক্যাম্পিং সাইট। খুব ঝকঝকে তকতকে সাজানো ভবন যেমন আছে (ছবি-6) তেমনি আছে ছিমছাম কম খরচে থাকার ব্যবস্থাও (ছবি-7)। একেতো বৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘক্ষণ অন্যদিকে দিনের আলো ম্লান হয়ে আসায় যথেষ্ট শীত শীত লাগছিল। পাহাড়ে ট্রাডিশনাল বাড়ির পাশে শীতের জন্য লাকড়ির গুদাম দেখে ঠান্ডার অনুভূতি গেল আরো বেড়ে (ছবি-8)। সবুজ বিশাল পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আবার আমরা ফিরলাম পূর্বদিকে। পার্কের কাছেই দেখি পাথর, ঝর্ণা দিয়ে বানানো একটা জাপানি বাগান (ছবি-9)। এই দামী দেশে একমাত্র জাপানি পর্যটকরাই হাত খুলে খরচ করতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি ওদের কদরও বেশ। তাদের খুশি করতেই এই বাগান, এটা বুঝা যায়। ভেজামাথা থেকে যাতে জ্বর না বাঁধে সে আশায় হিটার আছে এমন একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করলাম। ক্যাসিনোর সাথে লাগোয়া রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টের বাইরে ব্ল্যাকবোর্ডে ইংরেজিতে লেখা মেনু অব দ্য ডে-তে গরুর মাংসের যে বর্ণনা পড়লাম তাতে জিভের ডগায় তখন বৃষ্টি। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত গরুর মাংস দাঁতে কেটে বেঁচে ছিলাম বছর দেড়েক। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ি নাদুসনুদুস গরুর নরম নরম মাংসের যা স্বাদ। আহা! পাকস্থলীর খুশিতে দিনের সব কষ্ট-যন্ত্রণা দূর হয়ে গেল।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন